সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

মহাপুরুষ



কী জানি কী হয়, চটাশ করে একটা শব্দ হলো।
তারপরেই হুমহুম করে দীর্ঘ আওয়াজ। গুমরানো। মা কাঁদছেন।

বাবা আবার ছুটে আসেন। জোর করে ঠুকে দেয় মা’র মাথাটা। ড্রেসিং টেবিলের ওপরের যে কাঁচ তা শতভাগ হয়ে যায়। একটা দুটো এমনকি ছুটে যায় বাবার দিকেও। বাবা পরোয়া করেন না। চটাশ করে একটা চড় বসিয়ে দেন মা’র গালে। প্রথমে লাল, পরে বেগুনি পাঁচটা ছাপ বসে যায় মা’র চিবুকে। মা আবারো লুটিয়ে পড়ে ড্রেসিং টেবিলের ওপর। এবার ভাঙা কাঁচগুলো ঢুকে যায় মা’র কপালে, তিলঅলা মুখটায়।

বাবা থামেন না। চিৎকার করতে করতে মা’র চুল ধরে টেনে তোলে। মা’র মাথায় চুল বেশি না, বাবা মুঠি করে ধরে আরাম পান না বোধহয়। ফলে একটা হ্যাঁচকা দিয়েই ছেড়ে দেন। ভাবি, আর হবে না বোধহয়... কিন্তু...

মা কেমন এলিয়ে পড়েছিলেন। সা সা করে ফ্যানটা ঘুরছিলো। বাবা কিছুদিন থেকেই এসি কিনতে চাচ্ছেন, মা-ও খুব খুশি ছিলেন। এখন মা কেমন ঘোরলাগা চোখে ফ্যানের ঘুরে যাওয়া দেখছেন। ফ্যান ঘুরছে, তার চোখও ঘুরছে। ঘুরছে।

বাবা আবার ছুটে এলেন। পাশের ঘরে গিয়েছিলেন। এবার তার হাতে কী জানি কাগজপত্র। আর একটা ব্যাগও। মা’র বুকের ওপর ছুঁড়ে দিলেন সব। চিৎকার করে কী কী জানি বললেন। বাবা বললেন, মা-ও জানি কী কী বললেন। তারপর বলতেই থাকলেন দু’জনে। অনেক অনেক বললেন। অথচ কতো দিন গেছে কেউ কোনো কথা বলেন নি। কোনো কথাই ছিলো না এতোদিন। চুপচাপ আর চুপচাপ। বাতাস ভারী হয়ে যেতো... দিনের পর দিন। আর আজ এতো কথা! এতো কী কথা!

বাবা বাইরের দরজাটা খুলে দিলেন। ভারী দরজাটা সাপের মুখের মতো খুলে গেলো। মা, একহাতে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। একবার মনে হলো গেলেন না, ফিরে এলেন। কিন্তু না, আবার বেরিয়ে গেলেন। আর বাবা দরজাটা বন্ধ করে দিলেন। কিন্তু... কিন্তু না বাবা আবার বেরিয়ে এলেন। মা ফিরে তাকালেন। এখান থেকেও মা তো আগে ফিরেছেন। ফলে মা’র চোখে কেমন চকচকে একটা আশা ছড়িয়ে গেলো। এমনকি একটা স্বস্তিও। মা তাকালেন বাবার দিকে। বাবা ক’মুহূর্তের জন্য স্থির তাকালেন মা’র দিকে।
সবকিছুই যেন স্থির হয়ে গেল।

তারপর ঝটকায়, বাবা পা’টা চালালেন। মা’র কোমরটা দুলে উঠলো। স্প্রিং থেকে বেরোনো গুলির মতো মা ছিটকে পড়লেন সিঁড়িতে। পড়েই গড়িয়ে গেলেন। দড়াম করে বন্ধ হয়ে গেলো ওপরের দরজা। আর মা গড়িয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে সিঁড়ির শেষপ্রান্তে যখন পৌঁছালেন তখন রক্তে ভেসে গেছেন তিনি, রক্তে ভেসে গেছে সিঁড়ির প্রতিটা ধাপ।

ফলে আমি আর আসবো না।
সেও এক ভালো। এমন পৃথিবীতে না এসেই মরে যাওয়া ভালো। ভালো।