শুক্রবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

আমার প্রথম বাংলা লিখতে শেখা




পেছনে ফিরে তাকালে, মনে পড়ছে, আমি আসলে দুইবার বাংলা লিখতে শিখেছি।

প্রথমটা ছেলেবেলায়। 'নিশ্চিতভাবেই' ছেলেবেলায় লিখতে গিয়ে মনে পড়ল, সকলে নিশ্চিতভাবেই ছেলেবেলায় লিখতে শেখে না। আমাদের বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে একটি মেয়ে সহকারীর কাজে যুক্ত ছিলেন, নাম কচিমন, তাকে তার বড় বয়সে আমরা লিখতে শিখিয়েছিলাম। লিখতে শেখার পর, পড়তে শেখার পর তার যা আনন্দ হয়েছিল তেমন আনন্দ আমি আর কারো চেহারাতেই দেখি নি। একটা রুলটানা খাতায় আঁকাবাঁকা অক্ষরে 'কচিমন' লেখার পর তার কালো ত্বকের মুখে যে অনন্য আভা ফুটে উঠেছিল তার সাথে হয়তো রূপালি ইলিশেরই তুলনা হতে পারে, বা হয়তো কিছুই তার তুল্য ছিল না আসলে। সে চিৎকার করে আম্মাকে ডেকে বলেছিল, বুবু... বুবু... দ্যাখেন হামি লিখতে পারছি...

পরে আমি দুয়েকবার ভেবেছি এই আনন্দের উৎস কোথায়? হয়তো মুক্তিতে বা উন্মোচনে। ভীষণ অন্ধকার টানেল পেরিয়ে ট্রেন যখন আলোর মুখ দেখে তখন যাত্রীদের চেহারাতে হয়তো এরকম আনন্দ ঝলমল করে। পরে স্বল্পদিন একটা নৈশ বিদ্যালয়ের সাথে যুক্ত থাকায় দেখেছি নিশ্চিতভাবেই সবাই ছেলেবেলাতেই লিখতে শেখে না। এই তো কিছুদিন আগে পাসপোর্ট তৈরির কাজে পাসপোর্ট অফিসের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। বোরকা পরা এক মহিলা ও তার তরুণ ছেলে তাদের হাতের কাগজটা নিয়ে নাড়াচাড়া করছে আর অসহায়ভাবে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। তাদের কথায় বুঝলাম তাদের কেউই লিখতে বা পড়তে জানেন না, ফলে কাগজটা সঠিক কিনা, সঠিক হলে তাদের কী করণীয় কিছুই তারা ধরতে পারছে না। অদ্ভুত অসহায়ত্ব নিয়ে তারা কোনো ত্রাতার অপেক্ষা করছে।
কোনো কারণ ছাড়াই আমার চোখে পানি এসে গিয়েছিল। আহারে, লিখতে পড়তে জানে না বলে পৃথিবীর কত কিছু থেকেই না তারা বঞ্চিত হচ্ছে। মনে হয়েছিল এমন তো আমার ক্ষেত্রেও হতে পারতো। হয়তো আমিও লিখতে পড়তে জানলাম না। জাপানি বা রাশান অক্ষরের মতো বাংলা অক্ষরও আমার কাছে চিরদুর্বোধ্য হয়ে রইল-- আমি বেশিক্ষণ এমনটা ভাবতে পারলাম না। আমার পৃথিবী শূন্য হয়ে আসতে শুরু করল! মনে হলো এরকম হাহাকারের ভেতর বসবাসের জন্য মানুষের জীবন নয়!

তাই নিশ্চিতভাবেই নয়, তবে সৌভাগ্যবশত আমি বাংলা লিখতে শিখেছি ছেলেবেলাতেই। শৈশবেই। একটা পুরনো স্লেটে, চক দিয়ে দিয়ে আঁক টেনে, বড় বোনের কাছে, প্রথম যা লিখেছি তা নিশ্চয় অ। এবং লেখার স্টাইলটা ছিল বড় বোন স্লেটে একটি অ লিখে দিতেন আর আমি তার ওপর ওই আঁক দেখে দেখে অ লিখতাম। অ, অ, অ... আর আমার ভেতর চাহিদা তৈরি হতো পরবর্তী অক্ষর 'আ'এর কাছে যাবার। মনে পড়ছে আমি অ লিখতে লিখতে আ, আর আ লিখতে লিখতে শুধু ই এর কথা ভেবেছি। খুব বেশি স্থির থাকতে পারি নি কিছুতেই, কেননা আমার জন্য তখনও অপেক্ষা করছে পুরো ব্যঞ্জনবর্ণ। আমি ক এর দিকে তাকাই বইয়ে, আমি লিএর দিকে তাকাই। অদ্ভুত ঙ-এর দিকে তাকাই, ঞ-এর দিকে তাকাই। আর সবচেয়ে বেশি আনন্দ নিয়ে চন্দ্রবিন্দুর দিকে তাকাই। ওটাকে আমার তখনো অক্ষর মনে হয় না। মনে হয় যেন এক চাঁদ আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। ওই চন্দ্রবিন্দুর কাছে যাবার ইচ্ছা আমাকে তাড়িত করে। কারণ ওখানে গেলেই আমার সমস্ত অক্ষর আয়ত্ত হয়। তাই উ লিখতে লিখতেই আমি লুকিয়ে লুকিয়ে চন্দ্রবিন্দু লিখি। লিখি আর হাতের তালু দিয়ে টিপে টিপে মুছে ফেলি। একদিন বড় বোন দেখে ফেললেন আমার চন্দ্রবিন্দু কেচ্ছা। তিনি ভ্রুটা একটু কুঁচকে বললেন, চল, তোকে উল্টা দিক থেকে অক্ষর লেখা শেখাই!
আমি অত্যন্ত আনন্দের সাথে চন্দ্রবিন্দু থেকে ব্যঞ্জনবর্ণ লেখা শিখতে শুরু করলাম!

আর একদিন আমার কী আনন্দ, আমি ঠাশ ঠাশ করে সবগুলো অক্ষর লিখতে শিখে গেলাম। এমনকি না দেখে। তারপর বর্গ না মেনে। যে কোনো জায়গা থেকে। তখন সবাই বলল, এর তো হয়ে গেছে একে এবার স্কুলে ভর্তি করে দাও...
স্কুলে গিয়ে আমার তখন নতুন জীবন শুরু হলো।

কিন্তু আমি ভাবি যে আমি যদি অক্ষরগুলো লিখতে না শিখতাম! তাহলে এই যে রাশি রাশি মনের কথা, এই যে আপনাদের সাথে তোমাদের সাথে তোদের সাথে বলে চলেছি তার প্রকাশ করতাম কীভাবে?

তখনই ভাবি যে শুধু শৈশবের সেই শেখাতেই এই যোগাযোগ সম্ভব তো ছিল না। আমাকে তাই দ্বিতীয়বারের মতো বাংলা লিখতে শিখতে হয়েছে। খাতা-কলমে নয়, কম্পিউটারে।

আমার জন্য কম্পিউটার ছিল এক ভয়ানক দূরের জিনিস। দূরের এবং সংশয়ের জিনিস। মূল্যবান এবং খুব ঠুনকো জিনিস। ঠুনকো এই অর্থে যে আমার মনে হতো আমার স্পর্শে এলেই যে কোনো দুর্দান্ত দামী কম্পিউটার নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে যন্ত্রটা থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলতাম। তাছাড়া হাতের কাছে তখন কম্পিউটারই বা কই? যা দুয়েকবার দেখি সবই ব্যবহৃত হয় গান শোনা আর হিন্দি সিনেমা দেখার উদ্দেশ্যে।

অনেক দিন পর একটু সুযোগ এল কম্পিউটারের ব্যাপারে। ঢাকায় যে বন্ধুর বাড়িতে থাকছি তার ঘরে একটা কম্পিউটার আছে বটে। প্রতিরাতে সিনেমা দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে শেষে একদিন একটু কাছাকাছি বসলাম। মাউসের ওপর কম্পমান হাতটা রাখলাম। বললাম, বাংলা কী করে লেখে রে?
বন্ধু নিরুত্তর।
আমি বললাম, বাংলা লেখা যায় না?
বন্ধু খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে যা বলল তাতে জানা গেল বাংলা লেখা হয়তো যায়, কিন্তু কীভাবে কী করতে হয় এ সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই। কী সফটওয়ার লাগে, কই কই হাতড়াতে হয় ইত্যাদি। বলে সে একটা সাদা পাতা বের করে দিল পর্দায়। তারপর ঘুমাতে চলে গেল। আমি দীর্ঘক্ষণ সেই সাদার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। যতবারই কি-বোর্ডে চাপ দিই ততবারই ইংরেজি অক্ষর ওঠে। এরকম বারবার চাপ দিতে গিয়ে একটা দুর্ঘটনার মতো ঘটলো। আর তখনই আমি আবিষ্কার করলাম সাদা পর্দায় একটা বাংলা অক্ষর উঠেছে। যতদূর মনে পড়ছে অক্ষরটা ব। আমার হৃদপিণ্ড ছলকে উঠল। ভীষণ অবাক চোখ নিয়ে আমি পর্দাটার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। আমার লেখা বাংলা অক্ষর। কম্পিউটারের পর্দায়। যেন অবিশ্বাস্য। যেন এক দুর্ঘটনা! দুর্ঘটনাই তো! পৃথিবীর সব বড় বড় আবিষ্কার আর উদ্ভাবন কি দুর্ঘটনা নয়। পর্দায় তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনে হলো আমি যেন গুপ্তধনের নকশা পেয়ে গেছি!

কিন্তু পরক্ষণেই আর বাংলা লেখা ওঠে না পর্দায়। ইংরেজি ইংরেজি। বুক শুকিয়ে গেল। তাহলে কি বর্ণগুলো হারিয়ে গেল? আর পাবো না তাদের? প্রিয় বর্ণমালাগুলো কি আর লিখতে পারবো না? বন্ধু অঘোরে ঘুমাচ্ছে। আমি তার কম্পিউটার নিয়ে চেষ্টা করেই যাচ্ছি।

ভোরের আজান যখন হচ্ছে তখনো আমি কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে। ততক্ষণে আমি জেনে গেছি কোথায় চাপ দিলে ইংরেজির বদলে বাংলা অক্ষর ওঠে। অ কীভাবে লেখা যায়, আ কীভাবে লেখা যায়। আমি যে কি-বোর্ডটা ব্যবহার করছিলাম তাতে শুধু ইংরেজি অক্ষরেরই চিহ্ন দেয়া। ফলে কোথায় কোন অক্ষর, কীভাবে যুক্তাক্ষর তৈরি করতে হয় সবই ওই এক রাতের মধ্যে, কিছু ভুল আর কিছু শুদ্ধভাবে লিখতে শিখেছিলাম।

কাক যখন ডাকতে শুরু করে তখন কম্পিউটারের পর্দায় লেখা আমারই একটা কবিতা-
আমার সকল তোমাকে দিয়েছি তোমার কিছুই দাও নি
তবুও তোমার সকল নিয়েছি আমার কিছুই নাও নি

আমি আমার সমস্ত বিস্ময় আর আবেগ নিয়ে লেখাগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকি। যেন এইমাত্র পিতা হয়েছি, যেন এইমাত্র আমি স্রষ্টা হয়ে উঠেছি। যেন এইমাত্র আমি আবার বাংলা ভাষার হয়ে উঠতে পেরেছি।

কী করে সেভ করে রাখতে হয় না জানায় ওই প্রথম লেখাটা কোথাও জমিয়ে রাখতে পারি নি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমার হৃদয়ে আসলে ওই সকাল থেকেই লেখাগুলো জমে আছে একটা অবিশ্বাস্য প্রেম হয়ে!

বন্ধুর ঘরের সেই রাত না পেলে হয়তো আমার দ্বিতীয়বারের মতো বাংলা লেখা শেখা হতো না। আর না হলে, আমি ভাবি এই সহজ যোগাযোগ কী করে সম্ভব হতো? কী করে আমি আমার মনের কথা প্রকাশ করতাম এতটা সুলভে?

পরক্ষণেই ভাবি যে ভাষাটা দুইবার লিখতে শিখে আমি এত তীব্র আনন্দিত, যে ভাষাটা আমাকে এনে দিয়েছে যোগাযোগের এমন সরল পন্থা, একটা সময় এসেছিল যখন এই ভাষাটাই বাতিল করে দেয়া হচ্ছিল!

বুকটা ধ্বক করে ওঠে। তাহলে আমি আমার মনের ভাব প্রকাশ করতাম কী করে? এই যে ফেসবুকে ব্লগে পত্রিকায় লিখছি তা লিখতাম কীভাবে? আমার ভেতর ঝর্ণাধারার মতো উৎসারিত যে আবেগগুচ্ছ তার প্রবাহ কী করে হতো?

ফলে পূর্বপুরুষদের জন্য শ্রদ্ধাটা গাঢ় হয়। ভাগ্যিস আপনারা আমাদের এই প্রিয় ভাষাটা বাঁচিয়ে দিয়েছেন, না হলে আমরাই কি বাঁচতাম! আর তারপরেই মনে হয় বাংলা লিখতে শেখার যে প্রক্রিয়া তা বোধহয় এখনো ফুরিয়ে যায় নি। আমি, এখনো, প্রতিনিয়ত, লিখতে শিখেই চলেছি, শিখেই চলেছি!

আমি চাই বাংলা লিখতে শেখার এই আকুতি কখনো যেন ফুরিয়ে না যায়!


ছবি: গুগল।

শনিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

নাম নেই




ওই মাঠটার এপাশে, এখানে, এটা, গত বছরেও, একটা চায়ের দোকান ছিল। ছিল, তবে, এখন নেই। নেই, তবে, মাথার ওপর যে চালা সেটা আছে। আর টুটাফুটা চালার ভেতরে আছে ছাইতোলা চুলা। আর ডিসেম্বরের মফস্বলী শীত আছে। চুলাটা ঘিরে একটা মাদী কুকুর ও মরদ মুক্তিযোদ্ধা আছে। মরদ কি? সন্দেহ হয়।

মাদী কুকুরটা আছে প্রজননের স্বার্থে। তার  পেটভরা বাচ্চা। যে কোনও সময় সেগুলো বেরিয়ে আসবে, ছটফট করবে। কিন্তু ওই মুক্তিযোদ্ধাটা, যে মাটির মেঝেতে পড়ে ছিল ‘ও’ হয়ে, এখানে ঠিক কেন, বোঝা যাচ্ছে না। কুকুর ও সে, প্রায় পাশপাশি, শুয়ে আছে।

কুকুরটা জন্ম দিচ্ছে, আর মুক্তিযোদ্ধাটা কি মারা যাচ্ছে?

লোকটার শরীরে ছাই। মুখে ছাই। চোখে ছাই। চেহারা তাই ভালো চেনা যায় না। অবশ্য চেহারায় তেমন ভিন্ন কিছু নাই যা তাকে আলাদা করে। তবে, একটা লম্বা কাটা দাগ, তার বুকের কাছে আছে। সে থাকা আর না থাকা এমন কী! একটা মাছি ওড়ে কিছুক্ষণ ভনভন। একটা ডিসেম্বর শুয়ে থাকে। একটা লম্বা শীত বসে বসে ঝিমায়। একটা প্রজন্ম আসতে চায়... ছাই আর ছাই চারিদিকে ছাই।

একটা মিছিলের মত জনস্রোত, মাঠ ছেড়ে, প্যারেডের গতি ছেড়ে, রোদের কিনারা ছেড়ে, সরু পথ ধরে এগিয়ে আসে। এগিয়ে আসতে আসতে হুল্লোড় করে। একে অন্যকে ধাক্কা দেয়। পেছনে শীতমাখা ধুলো ওড়ে। ধুলো ছড়িয়ে যায়। একটা জনস্রোত ধুলো নিয়ে এগিয়ে আসতে থাকে। আর তারা কিছু না ভেবেই ঢোকে চায়ের ওই সাবেকি দোকানে। একটা লম্বা শরীর ছাই দেখে তারা চমকায় না। লাশ দেখে চমকায় না। শুরুতে এবং শেষে এখানে অনেক লাশ। স্তূপ স্তূপ লাশ। ওই সব গণ্ডগোলের দিনেও লাশ ভেসেছে নদীতে-নালায়-ডোবায়। এখনও অনেক লাশ ডোবে আর ভেসে যায়। সে তুলনায় এ তেমন অধিক কিছু তো নয়। একটা ছাইয়ের ভেতর আরেকটা শরীর গুমরায়। মিছিলে কণ্ঠ ওঠে, ক্যাটায় এই শুভ দিনটায় মরল আবার?
: শুভই বা কী?
: শুভ না ষোলই ডিসেম্বার...!
: হুহ মরণের জইন্যি আবার দিনক্ষণ চাই!
: তাও, মানুষের একটা লাগে না লাগসই... বাঁইচা আর মইরা যাবার কারণ... তারপর তারও লাগে কিছু কিছু দিন!

তারা খুব উৎসুক হয়ে ছাইয়ের ও দেহের আশেপাশে দাঁড়ায়। একটা ঠাণ্ডা বাতাস চারিদিকে হলকায়। একজন বলে, এ তো এই গেরামের নয়।

আরেকজন বলে, তাইলে কি আর কাম নাই? একটা মরণ পইড়ে আছে সাপের মতন তাকে তো কব্বর দেওয়া চায়...!

একমাথাচুল বলে, আর কেউ যদি থাকে দাবিদার! কেউ যদি কয় কই রাখছো আমার বেরাদর...?

ফুল শোয়েটার বলে, এই পাগলার আর কে রাখে খবর? গত রাইতেই হয়ত নামছে লাস্ট ট্রেইন থেইকা... তারপর ল্যাঙচাতে ল্যাঙচাতে আইসে এখানে... এখানে হয়ত ছিল আটকায়ে মৃত্যু তার। হয়ত ছিল তার এই মফস্বলেই কোনও স্মৃতি... হয়ত তার কিছু ছিল এই মাটিতেই... হয়ত মায়া ছিল হয়ত প্রেমপিরীতি ছিল... হয়ত ছিল কিছু...

কিন্তু এসব কথা হয় না বেশিক্ষণ। এই ছাইমাখা দেহটার পরিচয় নিয়ে খানিকক্ষণ ভার হয়। জনস্রোত কিছুক্ষণ আচানক উচাটনে, কিছুক্ষণ হুদাই দ্বিধায়। বিধায় অনেকক্ষণ হয়ে যায়। বিধায় আসে আরও কেউ কেউ, কেউ কেউ চলে যায়। একজন বুকের ও ছাপটাকে দেখে জ্ঞান বিছড়ায়। বলে, ডাকাত আছিল নিশ্চয়... এইখানে দেখি হাঁইসার ফোঁড়!

: চোরও হইতে পারে। এদের দিয়া তো কোনও ভরসাই নাই!

নীল মাফলার স্মৃতি হাতড়ায়। কিছুটা কাতরায়। বলে, হাঁইসা না হইয়া অন্যকিছুও তো হইতে পারে। এমন এক দাগ দেখা গিয়াছিল মতিউরের জাঙে... জঙ্গে গিয়াছিল সে...

এই মতিউর কে চেনে না যেন কেউ। মতিউরের নাম তাই স্থায়ী হয় না বেশিক্ষণ। একজন বলে, মরতে হইল তারে ওই কুত্তিটার কাছেই... এমন নাপাক মরণ... এই মরণের কোনও গতি নাই...!

কে জানি বলে, এইবার ধর... ধড়টাকে টান... সাবধান! সাবধানে টানতে হয় মুর্দাকে...

সবাই টানার জন্য হাত বাড়ালেও গুটিয়ে নেয় ফের। মুর্দার কী পরিচয়? কী তার ধর্ম কী তার জাত? একটা দেহের পরিচয় কী করে হয় নিশ্চিত? বিধায় জনস্রোত টান দেয় মলিন লুঙ্গিটায়! আর তেতাল্লিশ বছর পর ওই ছাইমাখা শরীরটা আবার নেংটা হয়। আবার। আসলে দুইবার। নেংটা হয়। লুঙ্গিটা টান দিয়ে খুলে নেয় জনস্রোত। আর তারা উদগ্রীব হয়ে দেখতে চায় পরিচয়। শরীরের পরিচয়। দেখে, ছাইমাখা দেহটার, প্রায় নাই হয়ে যাওয়া দেহটার, দুই পায়ের ফাঁকে কোনও পরিচয় তো নাই। পরিচয়ের স্থানে একটা গভীর ক্ষত, তেতাল্লিশটি বছরের শুকনো ক্ষত, ভাঁজ হয়ে থাকা শীতের মৃত পাতার মতন একটা ক্ষত যেন শরীর দুলিয়ে ঘরটা কাঁপিয়ে খিলখিল করে হেসে উঠতে চায়।

জনস্রোত খুব চমকায়। চমকে তারা পেছায়। এমন দেখায় তাদের মনেহয় দেখা শেষ হয় নাই। যেন আরও দেখা বাকি থেকে যায়। তারা দেখে আরও ঝুঁকে। দেখে সেই ক্ষতের ভেতর গোপন একটা ঝর্ণামুখ—যেন একটা প্লাবন বিশাল—আর তার থেকে একটা চিকন ধারা, মানুষের ভেতরের রুপালি তরল ধারা, বেরিয়ে এসেছে কোনও অভিপ্রায়ে, পুং-প্ররোচনায়। এসে, সাপের মতন এঁকেবেঁকে, একটা পিঁপড়ে-নদী হয়ে, চলে গেছে ধুলো আর ছাই... ছাই আর ধুলোর দিকে। যেতে যেতে, ঘুরে যেতে যেতে, ওই ধারাটা যেন বাংলাদেশের এক নিখুঁত ম্যাপ এঁকে গেছে।

দুই পায়ের ফাঁকে, শুকনো ক্ষতর নিচে, বাংলাদেশের ম্যাপ, থির হয়ে গাঢ় হয়ে জমে থাকে। বাতাসে তখন কেবল জন্ম নেয়া কুকুরের বাচ্চার ডাক।



প্রথম প্রকাশ- 
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
http://www.banglanews24.com/beta/fullnews/bn/366251.html

যেমন বোমা চাই



যেমন বোমা চাই

দেশজুড়ে ককটেল ফুটছে, ফাটছে পেট্রলবোমা। অচিরেই হয়তো ডিজেল, অকটেন, কেরোসিনবোমাও দেখা যাবে। কিন্তু এগুলো ছাড়া আরও কিছু বোমা হতে পারে!

পাপড়িবোমাএ বোমা রাস্তায় ফোটানো মাত্র আগুনের বদলে লাখ লাখ গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে পড়বে। ধোঁয়ার বদলে ছড়াবে সৌরভ। মানুষ দৌড়ে পালাবে না, বরং বোমা ফাটার স্থানে ছুটে যাবে।

বস্ত্রবোমা
এই বোমা ফাটানো মাত্র বিভিন্ন শীতবস্ত্র, যেমন: কানটুপি, সোয়েটার এমনকি কম্বল পর্যন্ত ছড়িয়ে যাবে আকাশে–বাতাসে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সবাই, বিশেষত শীতে জর্জরিত দরিদ্র মানুষেরা অপেক্ষা করবে কখন বোমা ফাটানো হবে, কখন বোমা ফাটানো হবে!
মিষ্টিবোমা
আন্দোলন এখন কারও কারও কাছে উৎসবের পর্যায়ে পড়ে গেছে। তাই আন্দোলনকারীরা মিষ্টির বোমাটা ফাটাতে পারেন। বোমাটা ফাটলেই ছড়িয়ে পড়বে হাজার হাজার রসগোল্লা, কালোজাম, চমচম আর জিলাপি। চোখ বন্ধ করে বলা যায়, এমন বোমা ফাটলে আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা বাড়বে।
বৃষ্টিবোমা
এক মাঘে শীত যেমন যায় না, তেমন মাঘের শীত শেষে গরমকালও ঠিক ঠিক আসে। প্রচণ্ড দাবদাহে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে মানুষের জীবন। আশা(!) করি, তখনো আন্দোলন চলবে। তখন এক টুকরো প্রশান্তির জন্য ফাটানো যেতে পারে বৃষ্টিবোমা। বোমাটা ফাটলেই ঝিরিঝিরি শীতল বৃষ্টি ছড়িয়ে পড়বে রাস্তায়, ফুটপাতে। যারা চাইবে তারা বৃষ্টিতে গোসল সেরে নেবে, যারা চাইবে না তারা ছাতা নিয়ে বাইরে বের হবে। ঘরে ঘরে রান্না হবে খিচুড়ি, সঙ্গে গরম গরম ইলিশ ভাজা! আহা!
বইবোমা
প্রতি বইমেলায় হাজার হাজার নতুন বই প্রকাশিত হচ্ছে। বেশির ভাগ বই থেকে যাচ্ছে বইয়ের দোকানের তাকেই। এসব বই দিয়েই তৈরি করা যায় বইবোমা। বোমাটা ফাটলেই ছড়িয়ে পড়বে শত শত নতুন বই। হাতে হাতে পৌঁছে যাবে মানুষের প্রকৃত বন্ধু। মানুষ হবে আলোকিত। খোশমেজাজে থাকবেন লেখক ও প্রকাশক।

প্রথম প্রকাশ: রস+আলো
২৬ জানুয়ারি ২০১৫

ধারাবাহিক উপন্যাস : আবু নাসিম বা লখিন্দর কোনোটাই তার নাম ছিল না... (আট)


আট.

রঞ্জনার উত্তরার ফ্ল্যাটে রঞ্জনা ছিল না। বসে ছিল আমান খান। কিছুটা মাতাল। ঘড়ির কাঁটা তিনটা পেরিয়ে গিয়েছিলআমান খান অবশ্য সেদিকে খেয়াল রাখে নি। অথবা খেয়াল রাখার প্রয়োজন মনে করে নি। 
তার লখিন্দরের কথা খেয়ালে এসেছিলএসেছিল বাবুভাইওকিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে এসব ছাপিয়ে তার ভেতর জ্বালাময় হয়ে ছিল যার ছবি সে সেই উঠতি হিরোইন-- চুমকি। তার ঠোঁট আর শরীরযেন ঠোঁটজোড়া শরীর থেকে আলাদাআর শরীর বলতে আসলে সেই সব অংশ যেগুলো পুরুষকে আলাদাভাবে ভাবায় নাড়ায়আমান খানের ভেতর সেগুলো আলোড়ন তোলে। আরো কিছুক্ষণ এমন কাটতে পারতো আমান খানেরকিন্তু তার শঙ্কাও হয়। শঙ্কাটা রঞ্জনাকে ঘিরে। রঞ্জনা,পার্টি থেকে বেরিয়ে গেছে তার আগেঅথচ সে ফ্ল্যাটে আসে নি। আমান খানের শঙ্কা ক্রোধের দিকে নিজেকে ছড়িয়ে দিতে থাকে। যেন শঙ্কাটা কেরোসিনছড়ানো রয়েছে মেঝেতেআর আমান খান ক্রোধের একটা ম্যাচ জ্বালিয়ে ছুঁড়ে দেয় শঙ্কার কেরোসিনেআর তা দপ করেই জ্বলে মেঝেতে বা তার মনে ছড়িয়ে যেতে থাকে।

বাইরে গাড়ির আওয়াজ হয়। আগুন হু হু করে জ্বলে ওঠে। দাঁড়িয়ে যায় আমান খান। আর তখন ঘরে ঢোকে রঞ্জনা। রঞ্জনা আমান খানকে দেখে যেন পাত্তাই দেয় না। বলেকী ব্যাপারতুমি এখানে?

আমান খানের ভেতর একটা সাপ ফোঁস করে ওঠে। রঞ্জনা কথা চালিয়ে যায়। বলেবলতে পারো আর কোথায় যাবেতাই নাতা যাওয়ার জায়গা তোমার তো কম নেইঘরে আছে সতীসাবিত্রী শাবানার মতো বউতার কাছে যেতে না চাইলে নতুন একজনের দিকেও তো নজর রাখতে দেখলামহুমওই যে ওই ডাইনিটা... কী যেন নাম?

কথা বলতে বলতে রঞ্জনা আয়নার সামনে গিয়ে কানের অলংকার খুলতে শুরু করে। ছুটে যায় আমান খান। পেছন থেকে রঞ্জনার ঘাড় চেপে ধরে। চিৎকার করে ওঠে রঞ্জনা। বলেছাড় কুত্তা ছাড়...

আমান খান বলেলখিন্দরের সাথে ফিল্ম পাইয়া তোর রঙ ধরছে নাতোর রঙ আমি বাইর করছি...

আমান খান টান দেয় রঞ্জনাকেদিয়েই ধাক্কা মারে। এমন অপ্রত্যাশিত আঘাতে রঞ্জনা কেঁপে ওঠে। অপ্রত্যাশিততাই কিরঞ্জনার ভেতরে যেন প্রত্যাশা আর অপ্রত্যাশা দুটোই যেন একসাথে ডানা মেলে ওঠে। অনেক দিন পর। একটা পাখির বাচ্চার কথা মনে হয় তার। পাখিটার ডানা ভাঙা ছিল। উড়তে পারছিল না। আর রঞ্জনার সৎবাবা সেটাকে ধরে হাসতে হাসতে আগুনে ঝলসেছিল। লবন-মরিচ লাগিয়ে খেয়েছিল। এতটুকু পাখিসৎবাবার মুখের ভেতর একবারেই ঢুকে গিয়েছিল পুরোটাকুড়মুড় করে চিবিয়ে খেয়েছিল। সেই হাড় ভাঙার শব্দ রঞ্জনার কানে এখনো বাজে। বাজতে থাকে। এখনো। আমান খান রঞ্জনাকে আবার টানে। টেনে ছেঁচড়ে নিয়ে যেতে চায় বিছানায়। পা চালায় রঞ্জনা। এইটুকু শক্তি প্রয়োগ করতে তার ভালো লাগে। যেন সে তার সৎবাবার ওপরেই লাথিটা মারে। আর লাথটা মারার পর আমান খানকে রঞ্জনার সৎবাবা মনে হয়। কেমন অশরীরি একটা জোর পায় সে। দুহাত দিয়ে ধাক্কা মারে আমান খানকে। আমান খান পড়ে যায়। তার চোখ থেকে বাহারী সানগ্লাশ খুলে যায়। ছড়িয়ে যায় দূরে। আমান খান সানগ্লাশটার দিকে একবার তাকায়। তারপর রঞ্জনার দিকে তাকিয়ে যেন মনের ফনাটা বের করে। বলেতোরে আমি বস্তি থেইকা উঠায়া আইনা হিরোইন বানাইছিতোর কীসের এত দেমাগঅ্যাকীসের দেমাগ?

রঞ্জনা বলেআমারে উঠাইয়া আইনা খুব পস্তানি লাগতেছে নাএখন তুই উঠাইতে চাস ওই চুমকিরে!

আমান খান উঠে দাঁড়ায়। বলেআমি আমান খানআমান খানআমি যাবে ইচ্ছা তারে উঠাইতে পারি যারে ইচ্ছা তারে নামাইতি পারি... আমি সব পারি!

খিলখিল করে হেসে ওঠে রঞ্জনা। বলেকী পারিস তা দেখায়ে দিছে বাবুভাইসামনে আর তোর কোনো ছবি নাইসবগুলা বানাইবো ওই লখিন্দররে দিয়াসবগুলাতুই হলে বইসা খালি তালি মারবি!

ঠাশ করে একটা চড় মারে আমান খান। রঞ্জনার মুখ ঘুরে যায়। ঠোঁট কেটে যায়। আর ঠোঁটের কোণায় ওই রক্ত দেখে ভেতরের সাপটা ছোবল মারতে চায় আমান খানের। হামলে পড়ে রঞ্জনার ওপর। ঠোঁট দুটোকে চুষে খেতে চায় আমান খান। আর খেতে গিয়ে তার চুমকির কথা মনে পড়েখুব করে পড়েআর তারপরেই মনে পড়ে লখিন্দরকে। ফলে আমান খান দাঁতের ব্যবহার করে। এবং ধাক্কা মারে রঞ্জনাকে। বিছানায়। আর এই ধাক্কা প্রত্যাশিত ছিল রঞ্জনার। ছিলপ্রত্যাশিত ছিল।

কিছুক্ষণের মধ্যেই আমান খানের ফনা ঝাঁপির ভেতর ঢুকে যায়। আমান খানের ক্রোধ স্রোত হয়ে যায়। আর স্রোত হওয়ার আগেআমান খান বলেততক্ষণে রক্ত কোমল হয়ে গেছেততক্ষণে রঞ্জনা রঞ্জু হয়ে গেছেআমান খান বলেরঞ্জুতুই হবি ওই লখিন্দরের সর্বনাশের কারণ...তুই হবি সর্বনাশ!

সর্বনাশ শব্দটা রঞ্জনা আর আমান খান দুজনকেই পুলকিত করে। রঞ্জনা কেমন যেন হেসে ওঠে। এলিয়ে দেয় শরীরটা আরো। আরো বেশি গ্রহণ করতে চায় আমান খানকে। আমান খান যেন একটা তীর ছোঁড়েএভাবে শরীরটা বেঁকিয়েরঞ্জনার সাথে নিজেকে পেঁচিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বলেতুই খেলবি এমন এক খেলা যা যুগে যুগে খেলে আসছিস তোরালখিন্দরকে এবার খাঁচায় ঢুকাবিতোর পায়ের তলায় রাখবি!যে মাথাটা উঠেছে ফনার মতোন সেইটা ধড় থেইকা আলাদা কইরা দিবিসাথে থাকবি পাশে থাকবি ছায়ার মতোন আর তার সবকিছুই কাইটা ছাড়খার কইরা দিবিপারবি না?

হিসহিস করে ওঠে আমান খান। তীরটা ছোঁড়ে। সাদা ঘোড়ার স্রোতে ভেসে যায় দুজনেই। একটা গভীর ষড়যন্ত্র কামজ ঘ্রাণের ভেতর শেষ হয়। শুধু শ্বাসের শব্দ থাকে। স্বেদ থাকে। অ্যালকোহলের মিষ্টি গন্ধ থাকে। এসির বিজবিজ আওয়াজ থাকে। আর রঞ্জনার প্রতীজ্ঞা থাকে।

রঞ্জনা বলেআমি ওই লখিন্দরের সব শেষ করে দেবোসবওর আমি সর্বনাশ ছাড়বো!

আমরা যারা পরের গল্পটা জানি এবং তারো পরের গল্পটা জানতে চাই তারা রঞ্জনার এই কথাটা মনে রাখতে পারি। রঞ্জনা বা আমান খান কেউই এই কথাটা জীবনে আর কখনো ভোলে নিভুলি নি আমরাও। অথচ যাকে নিয়ে এই কথাযার সর্বনাশ নিয়ে আমাদের এই মাথাব্যথা,সেই লখিন্দরের দিকে তাকালে দেখি 'আমার বাড়ি তোমার বাড়িছবির সেটে ক্যাবারে নাচের জন্য তৈরি। আমরা মাঝে মাঝে অবাক হই এই ভেবে যে ইঁদুর দৌড়ের এই সিনেমার হাইওয়েতে কী করে এত শান্ত থাকে লখিন্দর। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবি লখিন্দর বোধহয় সেই সবের একজন যারা জীবনটাকে কখনোই দৌড় হিশেবে নেয় নিসব সময় সেটাকে উদযাপন করতে চেয়েছে। মিউজিক বেজে উঠতেই আমান খান ফ্রেমের ভেতর ঢুকে পড়ে। অপর দিক থেকে নাচের ভঙ্গিতে ছুটে আসে মাধবী। যার এখনো কোনো নাম দেয়া হয় নি। যাকে এখনো এক্সট্রা বলেই ডাকা হচ্ছে। আর তখন লখিন্দরের মনে হয় তারও একটা নাম ছিলযে নামে তাকে এখন কেউ ডাকে নাযে নামে তাকে এখন কেউ চেনে না। আর যে নামে তাকে ডাকেযে নামে তাকে চেনে সে নাম তার নয়।

মিউজিক বেজে ওঠে। পরিচালক বলে ওঠেএ্যাকশন!


(ক্রমশ...)

ছবি: লেখক

শুক্রবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

আমার পুরনো কাপড়গুলো


তাদের ভাঁজ দেখি আর
স্মৃতি পাঠ করি।
কোথাও লেগে আছে একটা পুরো ভ্রমণের শ্বাস
এমনকি প্রেম। মৃদু ঘাম। হাতায় গুটানো ঘাসের চিহ্ন
পৃথিবীর সবচেয়ে স্বল্প ঘুমের ঘ্রাণ

জলপাকে পড়া দিনে
ভিজে যাওয়া বৃষ্টির ছাঁট এখনো স্থায়ী
শত সাবানেও রিমঝিম করে
কলারের দাগ মুছে যায় না সহজেই এই আদিমতা
সত্য হয়ে থাকে

আর এই ঘিয়েরঙা এলাস্টিক হারানো অন্তর্বাসে
রহস্যনারীর পাঁচাঙুলের বিজ্ঞান
খড়খড়ে মধুছাপ হয়ে এখনো বিদ্যমান
কীটদষ্ট স্বপ্নদষ্ট আর অপ্রিয় নেপথলিনের ভ্রম।

আমার পুরনো কাপড়গুলো এতই পুরনো যে সেগুলো কাউকে আর দেওয়া হয় না।