সোমবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

যাওয়া

পড়ে থাকে ময়ূরপুচ্ছ
ঝলমলে রোদ স্মৃতির উত্তাপে
এখনো আলগা

একটা উঠান, জ্বলে
একটা নদী বহে
কাশফুলে নেই কোনো চিহ্ন
চাহনিতে তবুও স্রোতের দিন
মাছরাঙা উড়ে যায় কামনার বনে

পড়ে থাকে ময়ূরপুচ্ছ
তাদের মাড়িয়ে চলে যায়
ধূলোমাখা পা।

ওগো সহোদরা

তোমাকে রাতের মতো লাগে
একা
তোমাকে চিরে চলে যাই একটা পৌরাণিক তীর

আমার আগে প্রামাণ্য হরিণ
ধাবমান
কস্তুরি ঘ্রাণ বাতাসে
বাতাসে রেশম খসখসে কাম


তোমার ভেতর প্রবেশ করি
সাপ হয়ে ছুটি রন্ধ্রেউপরন্ধ্রে
ঘাই মারি গর্জাই
মিনিটে মিনিটে
রাত্রি হয়ে যায় খান খান

এক প্রসারিত রাতের ভেতর
তোমাকে আদি করে বাসি
ভালো
ওগো সহোদরা।

Man vs Eid

[ঈদের ছুটে চলে এসেছে। গরুর হাম্বা ডাকের সাথে অবধারিতভাবে চলে এসেছে গ্রামে যাবার দিন তারিখও। চলছে জোর প্রস্তুতি। ঢাকায় যারা থাকে তাদের জন্য ঈদের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো শহর ছেড়ে বেরিয়ে যাবার এই প্রস্তুতিটা। কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
বেয়ার গ্রেইল আছে না! তার কথাবার্তা সব বাংলায় ডাবিং করে দেয়া হলো। সবাই তো আর আমার মতো ইংরেজিতে পাকা না!]

Man vs Eid


Ahmed Khan Hirok's photo.

হাই, আমি বেয়ার গ্রেইল। চড়েছি এভারেস্টের চূড়ায় আর ঘুরে বেরিয়েছি আমাজন জঙ্গলেও। উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু ছুটে বেরিয়েছি সমানে। আমি জানি টিকে থাকতে চাইলে সবচেয়ে জরুরী হলো মানসিক শক্তি। আর এটা সবসময় কাজে দিয়ে এসেছে। কিন্তু আজকে আমি নিজেও একটু ভীত। কারণ আমার পেছনে দেখতে পাচ্ছেন লোকারণ্য এক দুর্গম ঢাকা। এরা সবাই নিজের নিজের গ্রামে যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে আছে। আর আমাকে সেটি ঠেলে পৌঁছাতে হবে আমার গ্রামের বাড়িতে। ঈদের আগে আগে কাজটি সহজ নয়। কিন্তু বন্ধুরা, এটাই জীবন!

প্রথমেই আমি চেষ্টা করব ট্রেনে করে ফেরার। আমি এখন দাঁড়িয়ে আছি কমলাপুর রেলস্টেশনে। কিন্তু আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন এত মানুষের ভিড়ে এতটুকু নড়ার ক্ষমতা পর্যন্ত আমার নেই। এই ভয়ঙ্কর চাপ আর গরমের মধ্যে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে কেউ যেন আপনার নাকের কাছে তার বগল না নিয়ে আসতে পারে। নাহলে হঠাৎ করেই আপনার অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেবে আর আপনি সঙ্গে সঙ্গে দম আটকে মারা যেতে পারেন। মানুষের এই চাপের ভেতর টিকে থাকার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো কেবল চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকা আর মাঝে মাঝে রুই মাছের মতো মুখ উঁচিয়ে হা করে শ্বাস নিতে থাকা। এতে আপনার রক্ত চলাচল ঠিক থাকবে, আর আপনার হার্ট কার্যক্ষম থাকবে।

বন্ধুরা, শুনতে পাচ্ছো? হ্যাঁ এটা একটা হুইসেলের শব্দ। নিশ্চয় ট্রেনের হুইসেল। ট্রেনের হুইসেল শুনলেই আপনি স্মৃতিকাতর হয়ে উঠতে পারেন। কিন্তু এখন তেমন সময় নয়। বরং এটা ঠিক যেন একটা যুদ্ধক্ষেত্র। হুইসেলটা শুনতেই সবাই একসাথে নড়ে উঠল। ঝমঝম করে ট্রেন এগিয়ে আসছে। শব্দটা আমার কানে বৃষ্টির শব্দের মতো আনন্দদায়ক লাগছে। ট্রেনে চেপে বাড়ি ফিরছি এরচেয়ে মজার আর কীইবা হতে পারে!

এই ভিড়ভাট্টার ভেতর ট্রেনে উঠতে চাইলে আপনাকে প্রথমেই যা করতে হবে তা হলো যে কোনো একটি বগির যে কোনো একটি দরজা বেছে নিতে হবে। আর সেই দরজার দিকে আপনার নাকটাকে কম্পাসের মতো স্থির রাখতে হবে। আর বিশ্বাস রাখতে হবে আপনার পেছনের লোকগুলোর ওপর। তারাই আপনাকে ধাক্কা দিতে দিতে দরজা পর্যন্ত পৌঁছে দেবে। এভাবেই বৈরী অবস্থাকে আপনার নিজের পক্ষে কাজে লাগাতে হবে। টিকে থাকার এটাই প্রধান উপায় এবং অনুপ্রেরণা!

ট্রেনটা চলে এসেছে। কিন্তু অবাক কাণ্ড! ট্রেনটা আগে থেকেই লোকে ঠাসা। একটা মানুষ দূরে থাক ওখানে একটা পিঁপড়া ঢোকারও জায়গা নেই। কিন্তু এর ভেতরেও অন্যরা উঠতে শুরু করেছে। আর টিকে থাকতে চাইলে আপনাকেও তাই করতে হবে। আপনি আপনার নাকটাকে স্থির করুন। আর বাছাই করা দরজার দিকে এগিয়ে যেতে থাকুন। কিন্তু হায় খোদা... পেছন থেকে লোকজনেরা ধাক্কা দিয়ে আমাকে অন্যদিকে সরিয়ে দিচ্ছে আর ওরা নিজেরাই উঠতে চাচ্ছে! ট্রেন ছুটে যাচ্ছে কিন্তু আমি হাতলটা ধরতে পারছি না! ওহ নাহ! ওহ! ট্রেন এগিয়ে গেল আর আমি পিছিয়ে গেলাম... আর শেষ পর্যন্ত ট্রেনটা মিস হয়ে গেল!

:::বিজ্ঞাপন বিরতি:::

জীবনে মাঝে মাঝেই এমন পরিস্থিতি আসতেই পারে। টিকে থাকা কখনোই সরল কোনো খেলা নয়। মাঝে মাঝেই ব্যর্থতা আপনাকে ভেঙে ফেলতে চাইবে। কিন্তু কোনোভাবেই নিজেকে হারতে দেয়া চলবে না। রেলপথে যেতে না পারলে আপনাকে তখন বিকল্প ভাবতে হবে। আর এ মুহূর্তে আমার সামনে বিকল্প হলো বাসভ্রমণ। আমি এখন একটা বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি। চারিদিকে ভারী ভারী লাগেজ আর গিজগিজ মানুষ। বাসভ্রমণের ভয়ানক দিক এই যে এখানে বিনা পয়সায় ভ্রমণ করা যায় না। এজন্য আমাকে টিকেট কাটতেই হবে। কিন্তু কাউন্টার বন্ধ। কোনো টিকেট নেই। সব টিকেট নাকি অনেক দিন আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। আমি কয়েকবার টিকেটের কথা বলতেই একজন আমাকে টেনে নিয়ে এসেছে একপাশে, আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন। তার কথাবার্তায় আফ্রিকান চিতার মতো ধূর্ততা। এসব ধূর্ততাকে সামলেই আপনাকে পরিস্থিতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে।

আফ্রিকান ধূর্ত চিতা তার টিকেটটা আমার কাছে বিক্রি করতে চাচ্ছে।

প্রতিকুল পরিস্থিতিতে কখনো কখনো প্রকৃতি নিজ উদ্যোগে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। তখন তা গ্রহণ করতে হয়। একটু বেশি টাকায় টিকেটটা কাটলেও কোনো আফসোস আমার নেই। কারণ এখন টিকেট পাওয়া মানে বিষয়টা সোনার হরিণ পাওয়ার মতোই দুর্লভ! জোড়াসাঁকোর কবি রবীন্দ্রনাথ সোনার হরিণ চাইতে গিয়ে গান লিখতে পারেন আর আমি কি বাড়তি ক'টা টাকা গুনতে পারি না?
বাসে ওঠার আগেই আমি লম্বা ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী যেমন হেডফোন আর স্মার্টফোনে পর্যাপ্ত চার্জ আছে কিনা সেটা দেখে নিই। এ দুটো ছাড়া কোনো লম্বা ভ্রমণ কখনোই আনন্দদায়ক হতে পারে না!

আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন বাসটা লম্বাটে আর ভেতরেও মানুষের সমাগম আছে। আমাকে এর মধ্যেই নিজের জায়গাটা করে নিতে হবে। আমার টিকেটে সিট নম্বর লেখা E3। আর এই যে এখানে E3। তবে এই সিটে আগে থেকেই একজন শুয়ে আছে। উনি হয়তো ভুল করে সিটটায় শুয়ে পড়েছেন।

: এই যে ভাই, হ্যালো, এই যে, হ্যাঁ হ্যাঁ আপনাকেই বলছি!
: কী হইছে? ডাকেন ক্যান? দেখতেছেন না ঘুমাইতেছি!
: ভাই এটা আমার সিট... এই যে আমার টিকেট... E3!
: ওই রকম E3 আমার কাছেও আছে! এই যে... এইটা কাউন্টার থেকে কাটছি দশ দিন আগে! আপনে এই টিকেট কই পাইছেন? দালালের কাছে?

:::বিজ্ঞাপন বিরতি:::

আর কখনো কখনো আপনার সাথে এমন ঘটনা ঘটবে... যখন মনে হবে পুরো পৃথিবীটাই আপনার বিপক্ষে চলে গেছে। আর কোথাও থেকে আপনি কোনো সাহায্য পাচ্ছেন না। কিন্তু এর মধ্যেই আপনাকে টিকে থাকা শিখতে হবে। দেখতেই পাচ্ছেন আমাকে ছাড়াই বাসটা চলে যাচ্ছে। আমি নকল টিকেটটা ছুঁড়ে ফেলেছি রাস্তায়। কিন্তু আমি থেমে নেই। কারণ থেমে গেলে আপনি আর আপনার লক্ষে পৌঁছাতে পারবেন না। মানুষ অদম্য। কোনো কিছুই তাকে আটকে রাখতে পারে না। আমি তাই হাঁটতে শুরু করেছি। আমার গন্তব্য অনেক দূর... কিন্তু আমি থেমে যেতে চাই না।
আর দেখুন ওই যে... ওখানে একটা খালি ট্রাক। ওটি গ্রামের দিকেই যাচ্ছে। শহরে ভারতীয় গরু পৌঁছে এখন ফিরে যাচ্ছে। আমার উচিত হবে আপনাদের সাথে কথা বন্ধ করে এক দৌড়ে ট্রাকের পেছনে ছুটে যাওয়া।

: এই যে... ও ভাই... ও ভাই ট্রাকচালক... হ্যালো... হেই... আমি... দাঁড়াও দাঁড়াও... আমাকে নিয়া যাও ভাই...!

দাম্পত্যের দিনলিপি

যাপিত রস

দাম্পত্যের দিনলিপি

আহমেদ খান | ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫  
.
একই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিত যদি ডায়েরি লিখতেন স্বামী এবং স্ত্রী, তাহলে কেমন হতো?

৫ জুন ২০১৩স্ত্রী: আজ আমাদের বিয়ে। সকাল থেকে এত্ত বৃষ্টি যে মেজাজ খারাপ। ঠিক করে পার্লারেও যেতে পারিনি। আর আমার জিগরি দোস্ত আসতে অনেক লেট করেছে। সো, আমার এত্তগুলা মন খারাপ ছিল। আর বিয়ের সময় দেখি বরটা কেমন ভ্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে আছে। ওকে প্রেমের সময় অনেক স্মার্ট লাগত। আজকে এমন লাগল কেন কে জানে! বিয়ের শেষের দিকে কান্নাকাটির যে নিয়ম আছে, আমি ভুলেই গেছিলাম! তখন আমি জিগরি দোস্তের সঙ্গে খিলখিল করে হাসছিলাম। ভাগ্যিস ভাবি এসে কানে কানে বলল, ‘এভাবে হাসছিস কেন?’
স্বামী: বিয়ে যে এত জটিল জিনিস আগে বুঝিনি। বিয়েতে অদ্ভুত অদ্ভুত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। হঠাৎ ছোট ভাই এসে বলল, যে গরু কেটে দাওয়াত খাওয়ানোর কথা, সেই গরু নাকি দড়ি ছিঁড়ে পালিয়েছে! আমার তো ত্রাহি অবস্থা! এক দিকে কাজি কবুল পড়াচ্ছেন, অন্য দিকে আমার মন পড়ে আছে গরুতে। কবুল বলার সঙ্গে সঙ্গে বুকটা হঠাৎ ফাঁকা হয়ে গেল। বড় দুলাভাই এগিয়ে কানে কানে বললেন, ‘শালা রে, তোর আর আমার মধ্যে আজ থেকে কোনো পার্থক্য থাকল না! আজ থেকে তুইও আমার মতো স্বাধীনতা খুঁজে বেড়াবি, কিন্তু পাবি না।’ কিন্তু যত যা-ই বলি, সব টেনশনের মধ্যেও স্ত্রীকে দেখে আমার মনটা ভালো হয়ে গেল!

৭ আগস্ট ২০১৩
স্ত্রী: কী সুখেই না দিন কাটছিল! কিন্তু একটা জিনিস বুঝলাম না, আমার রান্নায় যে লবণ কম হয়, তা এত দিন সে বলেনি কেন? লবণ কম লাগে লবণ নিয়ে খাবে...এতে বলা না-বলার কী?
স্বামী: ওর তরকারিতে লবণ কম, এটা আমি এত দিন বলিনি কেন? আরে, বলিনি কেন এটা ও বোঝে না। এটাই তো ভালোবাসা, নাকি? এটা নিয়ে মন খারাপের কী আছে?

১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩
স্ত্রী: প্রতিদিন তাকে সন্ধ্যা পার করে বাসায় ফিরতে হবে? কিসের এত আড্ডাবাজি? বাসায় থাকতে পারে না? আমাকে সময় দিতে পারে না? আমি বলে দিয়েছি, এরপরে দরজা খুলব না!
স্বামী: সারা দিন কত কাজ থাকে। সন্ধ্যায়ই না একটু আড্ডা দিই। সেটাও সে কেড়ে নেবে আমার জীবন থেকে? আমার অবিবাহিত বন্ধুরা কত ভালো আছে, কত স্বাধীন ওরা! ওদের দেখলেই চোখে পানি চলে আসে। মনে হয় আবার ফিরে যাই
ওই জীবনে!

২ ডিসেম্বর ২০১৩
স্ত্রী: আজকে বলেই দিলাম, বিয়ের এত দিন পরেও আমরা হানিমুনে যাইনি। এইটা কোনো কথা হলো? নীলার সেই দিন বিয়ে হলো, এরই মধ্যে ওরা দুইবার হানিমুনে গেছে! একবার নেপাল, একবার মালদ্বীপ। আমরা তো পতেঙ্গাও গেলাম না!
স্বামী: শুনেছিলাম হানিমুন একটা মিষ্টি ব্যাপার। এটাও কি ঝগড়ার উপাদান হতে পারে! নাহ্‌, এবার মরে গেলেও হানিমুনে যেতে হবে! কিন্তু ছুটি পাব কীভাবে?

৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪
স্ত্রী: আজ এত্তগুলা বই কিনেছি। হেব্বি খুশি!
স্বামী: এত বই এক দিনে মানুষ কেনে? আমার কোমর বাঁকা হয়ে গেছে বইয়ের ব্যাগ ধরে ধরে মেলায় হাঁটতে!

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪
স্ত্রী: আই লাভ ইউ! কিন্তু ভালোবাসা দিবসে তুমি এইটা কী বললা? আমি যেন ঠিক করে তরকারিতে লবণ দিই! ভালোবাসা দিবসে কেউ এই জিনিস চাইতে পারে?
স্বামী: বুকে অনেক সাহস নিয়ে শেষ পর্যন্ত বলেই ফেললাম কথাটা। ভালোবাসা দিবসে আমি তার কাছ থেকে চাই তরকারিতে সঠিক পরিমাণে লবণ!

২৭ মে ২০১৪
স্ত্রী: ক্রিকেট ক্রিকেট ক্রিকেট! এত কিসের ক্রিকেট!
স্বামী: সিরিয়াল সিরিয়াল সিরিয়াল! এত কিসের সিরিয়াল!

৫ জুন ২০১৪
স্ত্রী: যে লোকের নিজের প্রথম বিবাহবার্ষিকী মনে থাকে না, তার সঙ্গে কথা নাই...
স্বামী: গ্রেট মিসটেক! বিবাহবার্ষিকী ভুলে গেছি! আগামী তিন মাস আমার সঙ্গে কী কী হবে বলা মুশকিল!

১৭ অক্টোবর ২০১৪
স্ত্রী: তুমি জানো না, বেশি লবণ খাওয়া খারাপ? তারপরেও কেন এত লবণ লবণ করো?
স্বামী: হয় লবণ দিবা নাহয় রিমোট!

ডিসেম্বর ৫, ২০১৪
স্ত্রী: হাসলে তোমাকে সুন্দর লাগে। কিন্তু তুমি হাসো না। সব সময় কপাল কুঁচকে বসে থাকো। কপাল কুঁচকে থাকলে তোমাকে ক্যাঙারুর মতো লাগে।
স্বামী: ক্যাঙারুর কপাল কুঁচকে থাকে? দেখেছে সে? আজগুবি এমন সব কথা বলে যে রাগ লাগে! এসব উদ্ভট কথা কোথায় শিখছে কে জানে!

জানুয়ারি ১৮, ২০১৫
স্ত্রী: বিয়ের আগে কত ভালো ছিল সে!
স্বামী: বিয়ের আগে কত ভালো ছিল সে!

মার্চ ১৫, ২০১৫
স্ত্রী: ও মা! এখন তরকারিতে লবণ বাড়িয়ে দিলে বলে লবণ বেশি লাগছে! মানে কী? তরকারিতে লবণের সমাধান কী তাহলে?
স্বামী: কী মুশকিল? এত দিন ধরে কম লবণের তরকারি খেতে খেতে অভ্যাস হয়ে গেছে। এখন লবণ একটু বেশি হলেই জিব যেন পুড়ে যায়। তা ছাড়া লবণ বেশি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খারাপও!

এপ্রিল ২২, ২০১৫
স্ত্রী: আর এই যে এই ছেলেটা মুস্তাফিজ... এত্ত কিউট! ইয়েস ক্রিকেটে যে এত এক্সাইটমেন্ট, উফ্! ওর সঙ্গে বসে বসে বাংলাদেশ বাংলাদেশ বলে চেঁচাই খুব। আই লাভ সাকিব। ওর সামনে বলি না। বললে যদি আবার মাইন্ড করে!
স্বামী: সিরিয়ালগুলা খুব যে খারাপ তা কিন্তু না। পরপর কয়েক দিন দেখলে না নেশার মতো হয়ে যায়! আর ছাড়া যায় না।

জুন ৪, ২০১৫
স্ত্রী: কাল আমাদের বিবাহবার্ষিকী। আমি যে তাকে কী গিফট দেব, ভেবেই পাচ্ছি না! আর সেই-বা কী গিফট দেবে...উফ্‌, এক্সাইটমেন্টে ঘুম আসছে না!
স্বামী: বউ খুব ছটফট করছে। কেন কে জানে?
কালকে আবার কোনো কিছু নাকি? কারও বাসায়
দাওয়াত আছে নাকি? 

পাদটীকা:
দাম্পত্য জীবন একটি দীর্ঘ ধারাবাহিকের নাম। এর শুরু আছে, শেষ নেই। এটি চলতেই থাকে। পরবর্তী সময়ে কী হলো তা জানতে আবার এই লেখাটিই প্রথম থেকে পড়া শুরু করতে পারেন।

ফেসবুকের আগে ও পরের জীবন

ফেসবুকের আগে ও পরের জীবন

.আগের জীবনঘড়ির অ্যালার্ম শুনে ঘুম ভেঙে তাড়াতাড়ি পরীক্ষা দিতে গেল মইন।
পরের জীবনসারা রাত জেগে ফেসবুকিং করেছে মইন। সকালে তাই অ্যালার্ম বাজার পরও ঘুম ভাঙল না তার। ১০ মিনিট পর আবার অ্যালার্ম বাজল। মইন উঠল না। আরও আধা ঘণ্টা পর মইনের মা এসে ডাকলেন। অনবরত ডাকের পর মইনের মাথার ভেতর ‘ওএমজি’ করে উঠল। সে ধড়ফড় করে উঠে বসল। কিছুক্ষণ কিছুই বুঝল না। তারপরেই মনে পড়ল, তার পরীক্ষা। গত রাতে এ নিয়ে সে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিল, তার মনে আছে। লিখেছিল, ‘ফ্রেন্ডস, কাল এক্সাম! বাট প্রিপারেশন নাই! এত এক্সাম কেন জীবনে?’ তারপর অনেকগুলো কষ্টের ইমো।
ঘুমানোর আগ পর্যন্ত সেই স্ট্যাটাসে ছিল এক শ সাতটা লাইক আর মাত্র চারটা কমেন্ট। মইনের মনে হলো এক্ষুনি তার রেডি হয়ে পরীক্ষার জন্য বেরোনো দরকার। কিন্তু একবার স্ট্যাটাস চেক না করেই? সে দ্রুত তার ফেসবুকে ঢুকল এবং ঢুকে একটু বিষণ্ণবোধ করল। লাইকের সংখ্যা আর মাত্র দুটি বেড়েছে। তবে মইন খুব বেশি হতাশ হলো না, কেননা সকাল হলো ফেসবুকের অফপিক সময়। সারা রাত ফেসবুকিং করে সবাই এখন ঘুমিয়েছে। মইন তাই আশায় আশায় তৈরি হতে শুরু করল।
টি-শার্ট, জিনস চাপিয়ে বের হতেই দেখল রাস্তায় হাঁটুপানি। সারা রাত বৃষ্টি হয়ে গেছে, সে কিছুই বোঝেনি। ফেসবুকেও কেউ আপ দেয়নি। নাকি তার এলাকায়ই শুধু বৃষ্টি হয়েছে? ব্যাপারটা ফেবুতে জানানো দরকার। ওদিকে এক অফিসগামী লোকের রাস্তা পার হতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে! মইন তাড়াতাড়ি ফোন বের করে ছবি তুলল। পরীক্ষা পরে, আগে এই দুর্ভোগের কথা সবাইকে জানাতে হবে! ছবি তোলার সময় লোকটা একটু অদ্ভুত দৃষ্টিতে মইনের দিকে তাকাল বটে, হয়তো আশা করছিল মইন তাকে সাহায্য করবে, কিন্তু মইন তার চেয়েও বড় ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত হলো। সে ছবিটা ফেসবুকে আপ করে দিয়ে লিখল, ‘মহাখালী এখন মহাপানি...যারা বাইর হবেন, নৌকা নিয়া বাইর হন!’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা সামাজিক কাজ করার পর মইনের মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে গেল, দিনটা শুরুই হলো একটা ভালো কাজ দিয়ে। কিন্তু মনের ভেতর একটা খচখচানি—পরীক্ষা নিয়ে দেওয়া তার স্ট্যাটাসটা হিট করল না! তাকে কেউ তেমনভাবে শুভকামনাও জানায়নি। দেবে নাকি আরেকটা স্ট্যাটাস?
দিয়েই দিল। লিখল, ‘হাই ফ্রেন্ডস, এক্সাম দিতে যাচ্ছি। দোয়া কইর!’
এবার আর দোয়া না করে বুদ্ধি কী? খুশিমনে রিকশায় চেপে বসল মইন। ওহ যানজট! যানজট আর যানজট! এই দেশের কী হবে? যানজটে বসে আছে আর বিরক্তি লাগছে মইনের। ওদিকে পরীক্ষা...দূর...ফেসবুকে কী হলো? কয়টা লাইক পড়ল তার স্ট্যাটাসে? দেখা দরকার।
না লাইক বেশি পড়েনি, কিন্তু কমেন্ট পড়েছে কয়েকটা। একজন লিখেছে, ‘ভাইজান, ভালোমতো পরীক্ষা দেন!’
আরেকজন লিখেছে, ‘পরীক্ষা দিতে যাইতেছেন, পরীক্ষা দেন...এই পরীক্ষা পরীক্ষা কইরা চব্বিশ ঘণ্টায় পঁচিশটা স্ট্যাটাস দেওয়ার মানে কী?’
তৃতীয়জন লিখেছে, ‘তুই তো পরীক্ষায় নির্ঘাত ফেল করবি! তুই পড়লি কখন! সারাক্ষণই তোরে ফেবুতে পাই!’
মনটা বিষিয়ে গেল মইনের। ফেসবুকে সব বদমানুষের ভিড়। সিদ্ধান্ত নিল আর কখনোই সে ফেসবুক ব্যবহার করবে না। এবং ব্যবহার যে করবে না এটা সে সবাইকে জানিয়ে দেবে। তাই ফেসবুকে লিখল, ‘বন্ধুরা, চিরবিদায়। না পৃথিবী ছেড়ে যাচ্ছি না...কিন্তু আর কখনো ফেসবুকে আসব না! তোমাদের সবাইকে মিস করব!’
রিকশা চলতে শুরু করেছে। মইনের মন কেমন যেন দ্রবীভূত হতে শুরু করেছে। সত্যিই কি সে আর ফেসবুকে ঢুকবে না? কিন্তু তার যে স্ট্যাটাস, সেখানে কে কে কমেন্ট করল? কেইবা লাইক দিল তার ওই বিদায়ী স্ট্যাটাসে? আহারে, কেউ কি তাকে বলবে না—ফিরে এসো!
মন খারাপ আর সঙ্গে একটা অদ্ভুত ছটফটানি নিয়ে মইন পরীক্ষা দিতে শুরু করল। প্রশ্নপত্রে যা আছে তার সবই প্রায় কমন। তবুও মনটা তার ভালো হচ্ছে না। আজ যদি সে ফেসবুক পরিত্যাগের ঘোষণা না দিত, তাহলে একটা অন্তত সেলফি তোলা হতো এখন। লিখত, ‘এক্সামফি...লল!’
কিন্তু হায়! মইনের হাত কেঁপে কেঁপে গেল। পরীক্ষা শেষ হলো তার। ভালোই হলো পরীক্ষা। কিন্তু মুখটা তার শুকনোই থেকে গেল। বন্ধু অরণী এগিয়ে এসে বলল, ‘কিরে, তুই নাকি কুইট করেছিস ফেসবুক থেকে?’
মইন মাথা নাড়ল। অরণী বলল, ‘কুইট করে লুজাররা! তুই ক্যান করবি? আমাকে দেখ, আমাকে কতজন ডিস্টার্ব করে ফেসবুকে, আমি কি কুইট করেছি?’
বুক থেকে পাথর নেমে গেল যেন মইনের। সে সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুকে ঢুকল। কতজন তাকে নিষেধ করেছে ফেসবুক ছেড়ে যেতে! মইনের চোখে পানি চলে এল। ছলছল চোখে অরণীকে বলল, ‘দোস্ত, আমার সঙ্গে একটা সেলফি তুলবি? ফেসবুকে আপ করে জানাব, আমি আবার ফিরে এসেছি...!’

রস+আলোয় প্রকাশিত
লিংক: 
http://www.prothom-alo.com/roshalo/article/617722/%E0%A6%AB%E0%A7%87%E0%A6%B8%E0%A6%AC%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%86%E0%A6%97%E0%A7%87-%E0%A6%93-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%9C%E0%A7%80%E0%A6%AC%E0%A6%A8

ফেসবুকে বনলতা রিমান্ডে জীবনানন্দ

ফেসবুকে বনলতা রিমান্ডে জীবনানন্দ

     
.জীবনানন্দ দাশের ফেসবুক ফ্যানপেজে সকালবেলা আপ হলো
‘বনলতা সেন’ কবিতাটি।
হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন।
চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের ’পর
হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’
পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।
সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন
সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;
সব পাখি ঘরে আসে—সব নদী—ফুরায় এ জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।
আপ হতে না হতেই কয়েক হাজার লাইক আর কয়েক শ কমেন্ট পড়ে গেল। দুপুর গড়াতে গড়াতে শেয়ারে শেয়ারে ছড়িয়ে পড়ল সেটা। আর বিকেল গড়ানো সন্ধ্যায় কারওয়ান বাজারের আলুর দোকানের সামনে থেকে গ্রেপ্তার হলেন জীবনানন্দ। পুলিশ আর জীবনানন্দের মধ্যে কথোপকথন হলো নিম্নরূপ—
: আপনি জীবনানন্দ?
: জি।
: আপনি ‘বনলতা সেন’ লিখছেন?
: জি?
: এখন এই রকম ভ্যাবলার মতো তাকায়া আছেন ক্যান? পদ্যে তো বিরাট বিরাট কথা লিখছেন! এক হাজার বছর ধইরা নাকি আপনি হাঁটতেছেন? আপনি কি হাঁটাবাবা? নাকি আপনার বাতের ব্যথা, না হাঁটলে ঘুমাইতে পারেন না?
: জি?
.: আর ‘জি জি’ না কইরা থানায় চলেন! আপনারে ৫৭ ধারায় গ্রেপ্তার করা হইল!
থানায় বসে আছেন জীবনানন্দ। বড়কর্তা এসে বসলেন তাঁর সামনে। জীবনানন্দ করুণ মুখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘স্যার, আপনারা আমাকে ধরছেন কেন?’
: দেখেন, সকলেই কবি না, কেউ কেউ পুলিশও। কবির কাজ যেমন কবিতা লেখা, তেমনি পুলিশের কাজ ধরে নিয়ে আসা। আপনি কবিতা লিখেছেন নাটোরের বনলতা সেন নিয়ে। বনলতা তো আপনার ওপর ক্ষিপ্ত! আপনি তার মানসম্মান সব ক্ষুণ্ন করেছেন! কী যেন লিখছেন, অ্যাঁ? আমি এক ক্লান্ত প্রাণ আর চারদিকে নাকি আপনার খালি ফেনা ফেনা সমুদ্র আর তার মধ্যে নাকি বনলতা সেন আপনাকে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছে, অ্যাঁ?
: আসলে স্যার, আমি...
: শোনেন, লেখার সময় তো আপনাদের মনে থাকে না কী লিখছেন, কতটুকু লিখছেন, অ্যাঁ...এই যে আপনি বনলতার নাম নিলেন, বললেন তার চুল নাকি কবেকার অন্ধকার আর শ্রাবন্তি না কী...আবার আপনি বললেন তারে অন্ধকারে দেখেছেন, অ্যাঁ...অন্ধকারে কেমনে দেখা যায়? আপনি শেয়াল না হায়েনা? আর সেই অন্ধকারের মধ্যেই নাকি বনলতা আপনার খোঁজখবর নিছে, জিজ্ঞেস করছে যে এত দিন কোথায় ছিলেন? তা সে আপনাকে জিজ্ঞেস করার কে? তার সঙ্গে আপনার কিসের রিলেশন?
: কার সঙ্গে?
: বনলতার সঙ্গে!
: তার সাথে আমার কোনো রিলেশন নাই, স্যার!
: বাহ্! যে মেয়েটার সাথে আপনার কোনো সম্পর্কই নাই, তাকে নিয়ে এ রকম টসটসা কবিতা লিখে ফেললেন, অ্যাঁ? তা-ও আবার বনলতার সাকিন উল্লেখ করে? নাটোর? নাটোরে আপনি কয় দিন থাকছেন?
: এক দিনও না, স্যার। আমি কোনো দিন নাটোর যা-ই নাই!
: যাবেন, এইবার যাবেন। আপনার কবিগিরি এইবার ছুটে যাবে!
: স্যার, স্যার, আমি কবি না, আমি আলু-পটোলের ব্যবসা করি।
: চোপ! পুলিশের সাথে মিথ্যার ছন্দ মিলাতে আসবেন না। পুলিশ ছন্দ পছন্দ করে না। একটা অচেনা অর্ধচেনা মেয়েকে নিয়ে আপনি যা লিখেছেন...কী যেন বলছেন আপনি যে থাকে শুধু অন্ধকার মুখোমুখি বসবার বনলতা সেন! ছি ছি ছি! এই কথা লেখার আগে একবারও ভাবলেন না, বনলতা সেনেরও একটা ফ্যামিলি আছে, অ্যাঁ? তার বাবা-মা-ভাই-বোন কী মনে করবে? আপনি মানুষ? দেশের সবার সামনে আপনি একটা মেয়ের এইভাবে বদনাম করতে পারলেন? বিবেক নাই আপনার? একবারও ভাবলেন না, বনলতা সেনের এখন বিয়ে হবে কীভাবে?
: আমি ভাবব ক্যান? আমি তো এই কবিতা লেখি নাই। আমি জীবনানন্দ দাশ না, হ্যারে আমি চিনিও না! আমি জীবনানন্দ প্রামাণিক। আলু-পটোলের ব্যবসা করি। স্যার, আমারে ছাইড়া দেন! ক্ষমা করেন!
: চাইলেই কি এখন আর ক্ষমা পাওয়া যাবে, কবি সাহেব? যতই ভুজুরভাজুর বোঝান না ক্যান, লাভ নাই! দেশে এখন নতুন আইন, নতুন ধারা, বুঝলেন না, অ্যাঁ? আপনাকে নাটোরে পাঠানোর ব্যবস্থা হচ্ছে...ওখানেই সব ক্লিয়ার হবে!
: স্যার, ছাইড়া দ্যান, স্যার!
: ছাড়া না-ছাড়ার মালিক আমরা নাকি? নাটোরে যান, ওইখানে বনলতা সেনরে খুঁইজা বাইর করেন। তার কাছে আগে ক্ষমা চান, তারপর অন্য কথা! কিন্তু তার জীবন নিয়ে আপনি যে জীবনানন্দগিরি করছেন, তাতে মনে হয় না আপনার কপালে ক্ষমা আছে! যান...
জীবনানন্দ আরও কয়েকবার নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা করলেন। কিন্তু বড়কর্তা কিছুই মানলেন না। জীবনানন্দ প্রামাণিককে নিয়ে পুলিশের ভ্যান বেরিয়ে পড়ল নাটোরের উদ্দেশে, বনলতা সেনের খোঁজে।

শুক্রবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

প্রেম

লকলকে এক আগুন যেন
ধকধকে তার চোখ
আঙুল ধরে হ্যাঁচকা টানে
রক্তচোষা জোঁক

বাড়ছে আমার আমিষ খেয়ে
পরজীবীর মতো
বুকের ভেতর জমাট বাঁধা
রক্তাক্ত এক ক্ষত

বাড়ছে সে যাচ্ছে বেড়েই
বাড়ছে একা একা
বাড়ছে এক গল্প জীবন
যাচ্ছে না তো লেখা

চাবিঅলা, বসে আছে

চিনি এক চাবিঅলা
জবুথবু ম্লান
পুরনো ছায়ার নিচে বসে থাকে। সেখানে একদা গাছ আর কথা ছিলো
নদীর নামের মিতা ছিলো এক
আর ছিলো চাবিঅলা

চাবিঅলা আছে
ম্লান আর জবুথবু
পাথরবয়সী তালা নিয়ে
যদি খুলে যায় জং
যদি মিলে যায় খাঁজ
তাহলে আবার গাছ আর কথা
কথা আর গাছ আর রং
মিতা হয়ে নদী
নদী হয়ে স্রোত
স্রোত হয়ে প্রাণ
একটা আঁচল হয়ে ফিরে আসে

চাবিঅলা
বসে আছে
অতরু ছায়ায়
ম্লান পৃথিবীর
তালা নিয়ে॥

ট্রান্সফর্ম

নিয়ত বদলে যাচ্ছে
আমি ও আমরা
কখনো কাঁধের ওপর থাকে একটা বিহঙ্গ সাধ
কখনো আগুনের ডালা খুলে বসে বাজারের সাপ

সাধ কুণ্ডলি পাকিয়ে ফনা তোলে
বীনতালে নাচে শানায় বিষদাঁত
সাপ ঢুকে পড়ে নরোম বালিশে
হিস হিস করে হৃদয়ের উত্তাপ
সাধ সাপ সাপ সাধ বদলে বদলে যা য়
পলকে পলকে
ঝাপি খুলে মুঠে ধরি ভুল কোনো প্রেম।