ইংলিশ অধিনায়ক বাটলারের উইকেট পতনের পর মাশরাফিদের উদ্যাপন পছন্দ হয়নি আইসিসির। এমন চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতের উদ্যাপন কেমন হবে দেখা যাক।
এক মিনিট নীরবতা
![.](https://lh3.googleusercontent.com/blogger_img_proxy/AEn0k_tvMQJTCEz48dFgLxuC0iXK8vAw5KfOhKewjug9bj-EvDcpAqsYi8qz6Yn_S3r6Ewyk3d9nqpXmMXyVscay7Mpy_qmp16kYMRc-VNR-I404ZW5nQbyJTsBAo-wILCdoMjF_RecWzNSs1kUYmD8jP0MFweEIiQkd4Sxr2LebK4Yvpf-GH4c3VE9qV6NSmxXV5HHkZlU1Zz2ICllPw-n75FQJzrqhzQL-vBIH4w=s0-d)
ম্যাচে তীব্র প্রতিযোগিতা। শেষ দুই বলে লাগবে ছয় রান। ব্যাটসম্যান উড়িয়ে মারলেন। চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাতের ভাষায় ‘বল চলে যাচ্ছে সীমানার বাইরে’। ঠিক এ সময় এক ফিল্ডার ছুটে এসে অনবদ্য ডাইভে বলটা তালুবন্দী করলেন। আউট আউট আউট!
কিন্তু মাঠে নেমে এল পিনপতন নীরবতা। কেউ দৌড়াল না। কেউ কাউকে জড়িয়ে ধরল না। ফিল্ডার বলটাকে নিয়ে আস্তে আস্তে বোলারের কাছে গেলেন। ক্যাপ্টেনও এলেন ধীরে ধীরে। ওদিকে মুখ শুকিয়ে উইকেটকিপার দাঁড়িয়ে থাকলেন। জায়ান্ট স্ক্রিনে লেখা উঠল, ‘ব্যাটসম্যান আউট! এক মিনিট নীরবতা!’
ব্যাটসম্যান হাসতে হাসতে চলে গেলেন প্যাভিলিয়নের দিকে। আর পিচের ওপর দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে এক মিনিট নীরবতা উদ্যাপন করতে থাকলেন বোলার ও ফিল্ডাররা।
পত্রপাঠ বিদায়
![.](https://lh3.googleusercontent.com/blogger_img_proxy/AEn0k_ufTnMhSUnwG4Qrak6NpnSmNwa0M6I9U6KTrpz8md3qUMMaIqYJ7799NuHCP7hEdZjQFwSPITd5rdo_SboO_AONPupe-U2XJBkHRLIaaoeru9ywdtHwOJEua3P9Lq7z0w8iy7R-prBwOzKUiqbemwWetAowjt59i73WpRIHWGhkH5Nt0rEtvb1blpgFoHJsGQVvHf3haEl9aPbxdJxms8srPb6XTGZwCv2uaQ=s0-d)
ব্যাটসম্যান সমানে পিটিয়ে যাচ্ছেন। বোলাররা কী করবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না। এ সময় এক পার্টটাইম বোলার এসেই বোল্ড করে ফেললেন ব্যাটসম্যানকে। মুহূর্তেই শোকের ছায়া নেমে এল ফিল্ডারদের চোখে-মুখে। কাভারে দাঁড়ানো ফিল্ডারটি তো কেঁদেই ফেললেন। পকেট থেকে রুমাল ও একটি কাগজ বের করে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে পড়তে শুরু করলেন—হে বিদায়ী ব্যাটসম্যান, বিশ্ব ক্রিকেটে আপনি এক অনন্য প্রতিভা। আপনি এতক্ষণ যে চার-ছয়ের ফুলঝুরি ছুটিয়েছেন, তা ছিল দৃষ্টিনন্দন। আপনার এই বিদায়বেলায় আমাদের বুকে যেন রচিত হয়েছে বেদনার মহাকাব্য।
আপনি ফিরে যাচ্ছেন, কিন্তু আমাদের জন্য রেখে যাচ্ছেন দুর্লভ স্মৃতি। আবার কোনো ম্যাচে, আবার কোনো মাঠে আপনার সঙ্গে আমাদের আবার হয়তো দেখা হবে। আবারও আপনি আমাদের ছয়-চার মেরে স্তব্ধ করে দেবেন, সেই আশাই করি।
পুষ্পমাল্য দান
![.](https://lh3.googleusercontent.com/blogger_img_proxy/AEn0k_vQDujkiJ4QuXRQL53niJ6NyfZQndadOMn2E0ue81kyOheCT6-Qvc2vE9NfS6t8jx-ojicjxcasRrwmI8j3FUi1pTGcRvlA9IMN8TZvsY6zEJuLEGuPxeC7ssijjbSm_0-QDJC52jZvFM5oRrsJ9bu6Cw-zlQkS1sP8HC3M8V8ZbKI7DQt860rYjFPlXO2qD2I6ZnYgNibiMJZz00nKnutufEkSfzPfP6RrEw=s0-d)
প্রচণ্ড উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচ চলছে। রান রেট উঠে গেছে আটের ওপর। টু ডাউনে নেমেই স্পিন বোলার পেয়ে ব্যাটসম্যান চলে এলেন ডাউন দ্য উইকেটে। উড়িয়ে মারতে চাইলেন। কিন্তু বল ব্যাটের কোনায় লেগে আলতোভাবে শূন্যে ভেসে চলে গেল বোলারের হাতে। কট অ্যান্ড বোল্ড। বোলার সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গেলেন ব্যাটসম্যানের দিকে। একি করছেন বোলার? তিনি কি উইকেট পাওয়ার পর উদ্যাপন করতে ভুলে গেলেন? তিনি কি এখন হাত-পা ছুড়ে উল্লাস প্রকাশ করবেন? মাঠের ফিল্ডাররা হতবাক, দর্শকদের মধ্যে উৎকণ্ঠা। কিন্তু না, বোলার ভুল করেও কোনো উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন না। বরং পকেট থেকে বের করলেন একটা বেলি ফুলের মালা। ব্যাটসম্যানের গলায় তা পরিয়ে দিলেন। ব্যাটসম্যান সেই মালা পরে আস্তে আস্তে মাঠের বাইরে চলে গেলেন। ফিল্ডার ও দর্শকের মধ্যে নেমে এল স্বস্তি। হাজার হোক, ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা!
চায়ের দাওয়াত দেওয়া
![.](https://lh3.googleusercontent.com/blogger_img_proxy/AEn0k_uAgsYzwGdh4ajILpdF7HKcmTvbp7iXUdvRlUZwmZnz8ilEniQKg3w9KdKj23BQnkrLSiDEMZEyKBp34o0N4On6yCv8z7a4ZdF7pP49A7opzbyg_Ux6PLavyHpcEYTlHoAOE1peoQmPGW9uaILYD-87R8zjHcMT5BeWAKYUuV4xjnfvdvXxr04yMGb-PnJKw5v04gwE0XXlkw2hhfjSCvzcwqP9q2AH12d3ig=s0-d)
অনেকক্ষণ থেকে খেলছেন ব্যাটসম্যান, এগিয়ে চলেছেন সেঞ্চুরির দিকে। কিন্তু তখনই ভুল করে একটা নিখুঁত বল করে ফেললেন বোলার। ব্যাটসম্যানের ব্যাটে চুমু খেয়ে বলটা চলে গেল উইকেটকিপারের হাতে। ব্যাটসম্যান গ্লাভস খুলতে খুলতে যে-ই না ক্রিজ ছাড়বেন, অমনি সব ফিল্ডার ঘিরে ধরবেন ব্যাটসম্যানকে। সমবেতভাবে আবৃত্তি করবেন ‘যেতে নাহি দিব’ কবিতাটি। ক্যাপ্টেন এগিয়ে ব্যাটসম্যানের সঙ্গে হাত মেলাবেন, তারপর কোলাকুলি করবেন। তারপর ম্যাচ শেষে অফিশিয়াল চায়ের আড্ডায় দাওয়াত জানাবেন। ব্যাটসম্যান যদি চায়ের দাওয়াত গ্রহণ না করেন, তবে ক্যাপ্টেন তাঁকে আবার ব্যাটিং করতে অনুরোধ জানাবেন।
উদ্যাপনের জন্য বাড়তি দিন
![.](https://lh3.googleusercontent.com/blogger_img_proxy/AEn0k_vBcfQY_gGcbPV04k2YEehyInqQn-EYOzdkYBQp5lM1-_UJKEpfanJ5EhnJgxvsXRIcfsA4D2TuEeAfMqJn_cya32PVvddhH5Tm5SBvMoU9yzVOBhRWb-W9uxLPDlhkGjZBJmJNzFlK6FVlyHvxC04c27IITbnRblUyxzxCyH6BHoFBhNtHSsZDLAVi9oFQWTQQ-CE9iM2USGdQ87Bf1kQWH0Wh2MfdBb8DIA=s0-d)
এসব উদ্যাপনের পর আরও উদ্যাপনের যদি কিছু থেকে থাকে, যদি খেলোয়াড়দের মন না ভরে, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে প্রতিটি সিরিজে হয়তো একটা বাড়তি দিন রাখা হবে। এই দিনে প্রথম ভাগে এক দল মাঠে নামবে। জায়ান্ট স্ক্রিনে তাদের উইকেট নেওয়া দেখানো হবে। তখন তাঁরা নাচানাচি, পরস্পরকে জড়াজড়ি করে পিঠ চাপড়াচাপড়ি করবেন। কেউ যদি ডিগবাজি খেতে চান, তবে তা-ও খেতে পারবেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে, প্রতিপক্ষ দলের চোখে যেন এসব না পড়ে। এরপর প্রতিপক্ষ দল এসে একইভাবে উদ্যাপন করতে পারবে মাঠে। এটা হবে ভদ্রলোকি উদ্যাপনের চূড়ান্ত প্রকাশ।