শনিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৫

জেরির কাছে টমের চিঠি


প্রিয় জেরি,
বর্ষাধোয়া নরম নরম দিনের তুলতুলে শুভেচ্ছা জানিয়ো। তুমি সেই যে তোমার মামাবাড়িতে আম কুড়ানোর নাম করে এলে, ধান চুরি করতে গেলে আর তো ফিরলে না। আমার রাত-দিন কাটে এখন দরজার দিকে তাকিয়ে। ভাবি, এই বুঝি তুমি এলে, এই বুঝি এলে! আমার অবস্থা এখন বাংলা সিনেমার নায়িকার মতো। মিউ মিউ করে গাইতে ইচ্ছা করছে—সে যে কেন এল না, কিছু ভালো লাগে না...যাহোক, তোমার না থাকায় আমার ছোটাছুটি কমে গেছে, শুয়ে-বসে হাই তুলে দিন কাটাতে কাটাতে ‘মেদ-ভুঁড়ি কী যে করি’-টাইপ অবস্থা! ডাক্তার বলেছে, এভাবে শুয়ে-বসে দিন কাটালে মানুষের মতো আমাকেও নানা রকম রোগব্যাধিতে ধরবে। তখন সকাল সকাল জগিংটগিং করতে হবে। জগিংয়ের কথা ভাবলে এখনই আমার হাই ওঠে। ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসতে চায়। এত পরিশ্রম কীভাবে করা সম্ভব! বিড়ালেরা পৃথিবীতে এসেছে লেপের ওমে দিন কাটিয়ে দেওয়ার জন্য। পার্কে পার্কে জগিং করার কাজ মানুষের!
সে যাহোক, শুনে খুশি হবে যে আমি একটা মানুষকে পোষ্য নিয়েছি। অবাক হলে নাকি? অবশ্য মানুষেরা এই চিঠি পড়লে হইহই করে উঠবে। বলবে, মানুষ কারও পোষ্য হয় না, বরং মানুষই প্রাণীদের পোষে। গাধাগুলা এখনো বুঝতে পারেনি অন্য প্রাণী আর বিড়ালদের মধ্যে পুঁটি আর ইলিশ মাছের তফাত। মাছের রাজা যদি ইলিশ হয় তো প্রাণীর রাজা বিড়াল অর্থাৎ আমরা। তাই আমরা বিড়ালেরাই মানুষকে পোষ মানাই, গাধা মানুষেরা আমাদের নয়!
এই তো সেদিনই আমার কথিত মনিব আমার জন্য মাছ নিয়ে এল। গন্ধ শুঁকেই বুঝলাম ফরমালিন দেওয়া মাছ। আমি নাক কুঁচকে রেখে দিলাম। মনিব আমাকে নানাভাবে খাওয়ানোর চেষ্টা করল ঠিকই কিন্তু আমি দূরে জাস্ট থাবা গেড়ে বসে থাকলাম। বুঝতে হবে, আমার আর বাঘের রক্ত এক! আমাদের একটা প্রেস্টিজ আছে। ফরমালিন দেওয়া মাছ আমার মুখে রোচে না। আমি কয়েকবার ম্যাও ম্যাও বলে তা বোঝানোর চেষ্টা করলাম। গাধাটা গুরুত্বই দিল না। তুমি তো জানোই, গুরুত্ব না পেলে বিড়ালেরা কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে! তবু আমি আরও কয়েকবার ম্যাও ম্যাও করে জানালাম, ভাই রে ঠিকঠাক খাইতে দে, নইলে খবর আছে! কিন্তু ইন্দুরের বাচ্চা ইন্দুর (তুমি আবার মাইন্ড কইরো না!) আমাকে অন্য কিছু খেতে না দিয়ে শুয়ে পড়ল। অথচ আমি জানি, ফ্রিজে বোতলভর্তি দুধ আছে। ওই দুধ খাব বলে সকাল থেকে আমি মুখ মুছে যাচ্ছি, জিব চেটে যাচ্ছি! (তুমি আবার ভেবো না এই দুধ খাওয়ার জন্যই আমি মাছ খাইনি।) মানুষটা যখন আমাকে উপেক্ষা করে শুয়েই পড়ল তখন মাথাটা ধা করে জ্বলে উঠল। আমার সঙ্গে ফাজলামি? নিজেকে কী ভাবো, মনিব? দাঁড়াও তোমার মনিবগিরি ছোটাচ্ছি! কাল তোমাকে সারা দিন অফিস যেতে দেব না, ঘুমাতে দেব না, সারা দিন বাথরুমে বসে বসে কাপড় কাচবে শুধু আর ঢুলবে!
শুরু করলাম আমি আমার বিখ্যাত ডাক। ম্যাও ম্যাও ম্যাও... বেকুবটার তাতে দেখি ঘুম ভাঙে না। তখন তার ঘরে ঢুকে ড্রেসিং টেবিলের ওপর উঠলাম। চিরুনি আঁচড়াতে লাগলাম নখ দিয়ে। তাতে অদ্ভুত ক্যাঁক ক্যাঁক শব্দ তৈরি হলো। বেকুবটা তাতে পাশ ফিরে শুলো। এবার বডি স্প্রের বোতলটা ফেলে দিলাম। ঠং শব্দ করে গড়িয়ে পড়ল মেঝেতে। গড়াতেই থাকল। শব্দ হতেই থাকল। বেকুবটা এবার ধড়ফড় করে উঠে বসল। আমি তখন একটা করুণ শব্দ করে ম্যাও বললাম। বেকুব মনে হয় রাগ হলো তাতে! আমাকে একটা গালি দিল, তারপর ধাওয়া করল। আমি তো দিনভর ঘুমিয়েছি, রাতভর ছোটাছুটি করতে আমার আপত্তি কী? এ ঘর-সে ঘর ছুটি আর মাঝে মাঝে ম্যাও ম্যাও বলে ডাকি। বুকশেলফ থেকে বই ফেলে দিই, ঝাড়ু নিয়ে টানাটানি করি, মোবাইল ফোনের চার্জারে মারি হ্যাঁচকা টান!
বেকুবটার ঘুম চটকে গেল। শেষে সর্বস্বান্ত হয়ে যেন সোফায় বসে ঝিমোতে লাগল। আমি তখন তার সোফার ওপর গিয়ে ছোট্ট করে হিসু করে দিলাম! বেকুবটা গগনবিদারী চিৎকার করে উঠল। আর তার স্ত্রী উঠে এসে ফ্রিজ থেকে দুধ বের করে আমাকে খেতে দিল, আমিও চুকচুক করে খেতে থাকলাম! চেটেপুটে খেয়ে আমি ঘুমাতে চলে গেলাম! বেকুবটা তখন বাথরুমে নিজের জামাকাপড় পরিষ্কার করছিল! জেরি ব্রো, এখন তুমিই বলো কে কাকে পোষ মানিয়েছে এই বাড়িতে?
যাহোক, চিঠি পাওয়ামাত্র তুমি এ বাড়িতে চলে আসবে, একটুও দেরি করবে না! দুজন মিলে এবার আরও অনেককে পোষ মানাব!
ইতি
তোমার বন্ধু টম
জেরির উত্তর
টম,
তোমার নানা ভাব নেওয়া কথা শুনলাম। পড়ে মনে হচ্ছে ওই বাড়িতে তুমি রাজা হয়ে আছ! আসলে আমি খবর পেয়েছি ওরা প্রতিদিনই নাকি তোমাকে গোসল করিয়ে দেয়? প্রতিদিনই নাকি তুমি ভেজা বিড়াল হয়ে যাও? যা হোক, তোমার দাওয়াত গ্রহণ করতে পারলাম না। কারণ, আমি জানি, আমি তোমার কাছে গেলেই তুমি আমাকে তোমার পেটের ভেতর দেখতে চাইবে!
ইতি
জেরি
প্রকাশ: রস+আলো

ইয়েবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: বিয়ে বন্ধুর জন্য ক্ষতিকর!

..কন্যার বাপ সবুর করতে পারত, কিন্তু কন্যা সবুর করতে চাইল না। সোজা বলল, ‘হয় শিহাবের সাথে বিয়ে দাও, নয় তো আমাকে কানাডা পাঠিয়ে দাও।’
কন্যার বাপ অপেক্ষাকৃত সহজ অপশনটা বেছে নিলেন। শিহাবের সঙ্গে রুনার বিয়ে হয়ে গেল।
শিহাব আমাদের বন্ধু। আমরা ছিলাম চৌমাথা। না না রাস্তার নয়, বন্ধুত্বের। শিহাব, হিমেল, বাবু আর আমি। আমরা রাস্তায়, ক্লাসে, টং দোকানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হো হো হা হা করে কাটিয়ে দিতাম। আমরা শেষের দিকে এমনকি ফেসবুকিংও একসঙ্গে করতাম। নিয়মটা ছিল এ রকম—অফিস থেকে বের হয়ে নির্দিষ্ট একটা চায়ের দোকানে বসতাম চারজনে। তারপর নিজেদের মুঠোফোন বের করে ঢুকতাম ফেসবুকে। নিজেদের অ্যাকাউন্টে ঢুকে আমরা পরস্পরের ছবি ও স্ট্যাটাসে লাইক দিতাম। বিচিত্র কোনো খবর পেলে নিজেদের ইনবক্স করতাম। এ রকমভাবে কয়েক ঘণ্টা জম্পেশ আড্ডা দিয়ে তবেই আমরা ঘরে ফিরতাম।
ছুটির দিনগুলোয় আমরা শিহাব আর হিমেলের মোটরসাইকেলে চেপে বেরিয়ে পড়তাম। সারাটা ছুটির দিন আমরা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-গাজীপুর ঘুরে একযোগে চেকইন দিতাম। সেলফি তুলতাম।
সেলফি তুললাম শিহাবের বিয়েতেও। হইহল্লা কম করলাম না। বাসরঘরে শিহাবকে ঢুকিয়ে দেওয়ার সময় সবাই মিলে বললাম, ‘দেখিস, বউ পেয়ে বন্ধুদের আবার ভুলে যাস না!’
শিহাব বলল, ‘মাথা খারাপ!’ বলেই সে তাড়াতাড়ি ঢুকে গেল ঘরে। আর বেরোল না। মানে পরের সারাটা জীবনে তাকে আমরা আর আমাদের মধ্যে পেলাম না। অফিস থেকে বের হয়ে সে সোজা বাসায় চলে যায়। আমাদের সঙ্গে বড়জোর এক কাপ চা খায়। খেতে খেতেই রুনার ফোন আসে। ওদিক থেকে কী বলে কে জানে! দেখি যে শিহাবের মুখটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে যায়। বলে, ‘আসতেছি তো, এই তো...আরে না না ওদের সাথে না...কোনো আড্ডাবাজি না...জ্যামে জ্যামে!’
ফোন রেখে আমাদের দিকে আলগা সপ্রতিভ হওয়ার চেষ্টা করতে করতে সে বলে, ‘একটা দাওয়াত আছে জন্মদিনের। তাড়াতাড়ি যেতে হবে বন্ধু!’
শিহাব চলে যায়। বাবু খুবই রাগ করে। বলে, ‘শিহাব একটা...!’ আমরা উদাস মনে আড্ডা দিই। নিজেদের মুঠোফোন বের করে ফেসবুকে ঢুকে ততোধিক উদাস উদাস স্ট্যাটাস দিই। শিহাব দূর থেকে লাইক দেয় সেসব স্ট্যাটাসে।
ছুটির দিনগুলোয়ও শিহাব আর আমাদের সঙ্গে যেতে পারে না। তারা শপিংয়ে যায়। সিনেমায় যায়। বিপদে পড়ি আমরা। শিহাব না এলে তো তার মোটরসাইকেলও আসে না। আমরা তিন প্রাণী, একটা মোটরসাইকেল। আমরা চাপাচাপি করে বসি তাতে। ট্রাফিক সার্জেন্ট রক্তচোখে তাকায়। একদিন কানে পর্যন্ত ধরাল। হিমেল বলে, ‘শিহাব নাই তাতে কী! দেখ, আমাদের ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে। আমরা এখন একটা বাইকে এ রকম ঠেলাঠেলি করে বসি, এক ব্রেকে একসঙ্গে ঝাঁকি খাই।’
আমরা বলি, ‘হু।’ কিন্তু আমাদের মন পড়ে থাকে শিহাবে।
এভাবে একটা বছর কাটতে না কাটতেই বাবুর বিয়ে হয়ে গেল। সেদিনও আমরা খুব হইচই করলাম। সেলফি তুললাম। শিহাবও এল। শিহাবের সামনেই বাবুকে বললাম, ‘বাবু দেখিস, শিহাবের মতো হয়ে যাস না!’
বাবু বলল, ‘মাথা খারাপ!’ বলেই বাবু তাড়াতাড়ি বাসরঘরে ঢুকে গেল। এবং, সে-ও আর বেরোল না! অফিস থেকে বেরিয়ে সে-ও আর আড্ডা দেয় না আমাদের সঙ্গে। এক কাপ চা খাওয়ারও সময় পায় না। শিহাব আর বাবু একসঙ্গে খুব তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যায়। যাওয়ার আগেই অবশ্য তাদের ফোন আসে। তারা প্রায় কোনো উত্তর না করে শুধু ‘হু হু’ আর ‘জ্যাম জ্যাম’ বলতে থাকে। হিমেল অত্যন্ত মেজাজ খারাপ করে। তারপর বলে, ‘এটাই ভালো হইছে, বন্ধু। এখন শুধু তুই আর আমি। আমার বাইক নিয়া সারা ছুটি ঘুইরা বেড়াব। সার্জেন্টও আর কান ধরাইতে পারবে না! শুধু তুই আর আমি!’
আমি বলি, ‘হু।’ কিন্তু আমি জানি আমার মতোই হিমেলেরও মন পড়ে থাকে শিহাব আর বাবুতে।
ছুটির দিনগুলোয় শিহাব আর বাবু তাদের স্ত্রীসহ শপিংয়ে যায়, সিনেমায় যায়। হিমেল আর আমি বিছনাকান্দি গিয়ে চেকইন দিই, সেলফি তুলি। সেই সেলফিতে আগের মতো জোশ থাকে না। হিমেল জোশ আনার চেষ্টা করে। বলে, ‘ব্যাচেলর লাইফ হলো শ্রেষ্ঠ লাইফ। এর ওপর কোনো লাইফ নাই!’
আমি শুকনা মুখে বলি, ‘হু...!’
হিমেল বলে, ‘আমি চিরদিন ব্যাচেলর থাইকা যাব!’
আজ হিমেলের বিয়ে। খুব ধুমধাম হচ্ছে। আমরাও খুব হইচই করছি। শিহাব আর বাবু তাদের বউ নিয়ে এসেছে। সবাই মিলে দেদার সেলফি তুলছি। বাসরঘরে হিমেলকে ঢুকিয়ে দেওয়ার সময় বললাম, ‘দেখিস বন্ধু, শিহাব আর বাবুর মতো আমাদের ভুলে যাস না!’
হিমেল বলল, ‘মাথা খারাপ!’ বলেই সে খুব তাড়াতাড়ি ঘরে ঢুকে গেল।
আমি বাইরে বেরিয়ে এলাম। বললাম, ‘যে যাই বলুক, ব্যাচেলর লাইফই হলো শ্রেষ্ঠ লাইফ।’
তবে আমার কথায় ‘হু’ বলার মতো কেউ তখন আশপাশে ছিল না!

প্রকাশ: রস+আলো
লিংক: http://www.prothom-alo.com/roshalo/article/671815/%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A7%81%E0%A6%B0-%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%B0

বিভিন্ন মহলে পে-স্কেল


অাঁকা: জুনায়েদ আজীম চৌধুরীবেড়েছে সরকারি চাকরিজীবীর পে-স্কেল। শুধু যে সরকারি চাকরিজীবী মহলেই এই পে-স্কেল নিয়ে আগ্রহ, তা কিন্তু নয়, বিভিন্ন মহলে এই পে-স্কেল নিয়ে নানান চিন্তাভাবনা।
গরু মহলেসরকারি চাকরিজীবীর পে-স্কেল বৃদ্ধি নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে গরু মহলে। সামনেই ঈদ। ঈদের আগে আগে গরু মহলে এমনিতেই একটা উৎসব অবস্থা বিরাজ করে। এর মধ্যে এই নতুন পে-স্কেল যেন আনন্দের বন্যা বইয়ে দিয়েছে তাদের জীবনে। জনৈক গরু লালিয়া বলেন, ‘বর্ডার পার হয়ে গরু আসছে না, এটা একটা ভালো খবর। এবার আমাদের দেশি গরুদের যথেষ্ট দাম ও দেমাগ থাকবে। আর তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বেতন বৃদ্ধির খবর। ডবল খুশি। বেতন বৃদ্ধির মানে হলো মানুষের হাতে টাকা থাকবে। বিশেষত সরকারি কর্মচারীরা দাম দিয়ে আমাদের কিনতে পারবেন। তারপর ঠিকঠাকমতো খাওয়াদাওয়া খৈলভুষিও দিতে পারবেন! আমরা খুবই আশান্বিত। আমাদের মধ্যে অনেকে তো এই ঘোষণা দিয়েই ফেলেছে যে বেসরকারি কারও ঘরে তারা যাবে না!’
ছিনতাইকারী মহলে
ছিনতাইয়ের ওপর ডিপ্লোমা ও সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী, বিশিষ্ট ছিনতাই গবেষক ও স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত ছিনতাইকারী ছোটু ছিনিয়া নিজের খুশি প্রকাশ করতে আজ অনেক দিন পর ছিনতাইয়ে নেমেছেন। ভাঙা সড়কের পাশে অকেজো ল্যাম্পপোস্টের ধারেই তিনি ছিনতাই করেন। তবে ঢাকা শহরে এমন জায়গার অভাব নেই বলে তিনি কিছুটা হতাশ। তিনি বলেন, ‘ব্যাতন বাড়ছে খুবই ভালো খবর। আগে সরকারি চাকরিজীবী দেখলেই বুঝা যাইত। বাসে ঝুলতে ঝুলতে যাইত, ভাঙা ছাতা থাকত একটা! এখন ব্যাতন বাড়ায় এরা রিকশায় যাতায়াত করবে, তাতে আমাদের ছিনতাইয়ে সুবিধা হবে। কিন্তু বেতনের বাড়ানোর সাথে সাথে সরকারের এই রাস্তাগুলানের দিকেও নজর দেওয়া উচিত। সব জায়গায় এমন ভাঙাচোরা রাস্তা আর অকামের ল্যাম্পপোস্ট থাকলে আমরা সারপ্রাইজ দিমু কোনখানে? একটা কথা মনে রাখবেন, সারপ্রাইজ হইল গিয়া ছিনতাইয়ের প্রথম শর্ত!’
কাঁচাবাজার মহলে
পে-স্কেল বৃদ্ধির খবর শুনে প্রায় বেশির ভাগ কাঁচাবাজারে মিষ্টি বিতরণ হয়। এ খবর যেন এইচএসসির ভালো রেজাল্টের মতো খুশির একটা ব্যাপার। অনেকে পরস্পরকে জড়িয়েও ধরেন। মাছ বিক্রেতা মজনু মিয়ার সঙ্গে পটোল বিক্রেতা বাবুর অনেক দিনের মন-কষাকষি থাকলেও এদিন তাঁরা গলাগলি করে হেসে ওঠেন। এত দিন সরকারি চাকরিজীবীর দুঃখ দেখে তাঁদের কান্না চলে আসত। তাঁরা বাজারে এসে দূরে দূরে দাঁড়িয়ে থাকতেন। ভয়ে ভয়ে মাছে হাত দিতেন। টিপে দেখতেও হাতটা কেঁপে উঠত তাঁদের। কারণ, তাঁদের পকেট ভারী থাকত না। তিন কেজির বদলে দেড় কেজি আলু কিনে ফিরতেন বাসায়। কিন্তু এবার দিন বদলে যাবে। তাঁরা এখন বুক ফুলিয়ে বাজারে ঢুকবেন, অল্প দামদর করেই ঝটপট বাজার করে চলে যাবেন। সরকারি চাকরিজীবীর সঙ্গে দামদর করতে করতে কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীরা ত্যক্তবিরক্ত। এবার নিশ্চয় এই বিষয়ের সমাধান হবে!
সিনেমার পরিচালক মহলে
সরকারি চাকরিজীবীর পে-স্কেল বৃদ্ধিতে কিছুটা চিন্তার রেখা দেখা গেছে সিনেমার পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার মহলে। খাইতে দিবি না যামু গা সিনেমার অস্কার দাবিদার পরিচালক মাস্টার বুলবুল বলেন, ‘সিনেমায় সরকারি চাকরিজীবীর একটা লম্বা ইতিহাস আছে। সরকারি চাকরিজীবী মানেই তাঁরা চৌধুরী সাহেবদের মতো ধনী নন। কিন্তু এ রকমভাবে বেতন বাড়তে থাকলে চলচ্চিত্রে সরকারি চাকরিজীবী ক্যারেক্টারটা তার কালার হারাবে। ক্যারেক্টার হইল প্রাণ! আমার যে নতুন ফিল্ম ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী পেঁয়াজময়, সেইখানে দরিদ্র সরকারি চাকরিজীবীর ক্যারেক্টার আছে! এখন এই ক্যারেক্টার জাস্টিফাই ক্যামনে হবে? এই ঘটনার জন্য এমনও হতে পারে যে আমি অস্কারটা পাইলাম না! তার দায়ভার তখন কে নেবে?’
বেসরকারি মহলে
এ মহলে এখন পর্যন্ত কেউ কথা বলতে রাজি হননি। তাঁরা অত্যন্ত দুশ্চিন্তার মধ্যে আছেন। তাঁরা ভাবছেন, এই পে-স্কেল বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কি তাঁদেরও পে-স্কেল বৃদ্ধি পাবে? এটাই এখন তাঁদের অন্তরের কথা। কিন্তু কথাটি তাঁরা কাউকে বলতে না পেরে মুখ শুকিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

প্রকাশ: রস+আলো

বাজেটে যে দুটি খাতে বরাদ্দ থাকা উচিত

.প্রেম খাতপ্রেম অত্যন্ত পুরোনো ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হওয়া সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত কোনো অর্থবছরের বাজেটে এর উল্লেখ দেখা যায়নি। লাইলি-মজনু, রোমিও-জুলিয়েটের করুণ প্রেমের ঘটনা কে না জানে! তাদের প্রেমের করুণ পরিণতির একমাত্র কারণ প্রেম খাতে কোনো বাজেট না থাকা। আমাদের এবারের বাজেটে প্রেমের জন্য একটা বিশেষ বাজেট বরাদ্দ থাকতে পারে। একজন প্রেমিক বা প্রেমিকা যখন কোনো রেস্তোরাঁয় কফি খেতে যাবে, কোনো সিনেমা হলে সিনেমা দেখতে যাবে কিংবা কোনো নদীর তীরে ঘুরতে যাবে, তখন অবশ্যই তাদের শুল্কমুক্ত প্রেম বরাদ্দের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তাদের যাতায়াতের অর্থ, খাওয়ার অর্থ, ঘোরা ও সিনেমার অর্থ—সব এই বাজেট নিশ্চিত করবে। এমনকি যখন তারা প্রেমপর্ব শেষে বিয়ে পর্বে যাবে, তখনো তাদের জন্য বরাদ্দ করা বাজেটের আওতায় সব সম্পন্ন হবে। প্রেম স্বর্গীয় ব্যাপার, সেটার সঙ্গে যুক্ত হলে বাজেটেরও স্বর্গপ্রাপ্তি ঘটবে!

যানজট খাতযানজট খাতে বাজেট বরাদ্দ এখন সময়ের ব্যাপার। প্রতিটি যানজটেই ‘জ্যামঅপ্রিয়’ মানুষেরা সময় কাটায় হয় বিরক্ত হয়ে ঝগড়া-বিবাদ করে, না–হয় অন্যের ঘাড়ের ওপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে। এ বিশাল জনশক্তি ও সময়কে কাজে লাগাতে চলতি অর্থবছরেই থাকা উচিত একটি বিশেষ বরাদ্দ। যেন যানজটে আটকা পড়া মানুষেরা উৎপাদনশীল হয়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রে উল দিয়ে সোয়েটার বোনানোর কাজ সবচেয়ে কার্যকর হতে পারে। সারা বছর সোয়েটার বুনে বছর শেষে সাইবেরিয়ায় আমরা সোয়েটারগুলো রপ্তানি করে দিতে পারি। তাতে আমাদের কাছে আসবে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। চলতি বাজেটে এক হাজার মেট্রিক টন উল কিনে যানজট খাতকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হবে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

প্রকাশ: রস+আলো
লিংক: http://www.prothom-alo.com/roshalo/article/542551/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A7%87%E0%A6%9F%E0%A7%87-%E0%A6%AF%E0%A7%87-%E0%A6%A6%E0%A7%81%E0%A6%9F%E0%A6%BF-%E0%A6%96%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A6-%E0%A6%A5%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BE-%E0%A6%89%E0%A6%9A%E0%A6%BF%E0%A6%A4

ফেসবুকের আগে ও পরের জীবন


..আগের জীবনঘড়ির অ্যালার্ম শুনে ঘুম ভেঙে তাড়াতাড়ি পরীক্ষা দিতে গেল মইন।
পরের জীবনসারা রাত জেগে ফেসবুকিং করেছে মইন। সকালে তাই অ্যালার্ম বাজার পরও ঘুম ভাঙল না তার। ১০ মিনিট পর আবার অ্যালার্ম বাজল। মইন উঠল না। আরও আধা ঘণ্টা পর মইনের মা এসে ডাকলেন। অনবরত ডাকের পর মইনের মাথার ভেতর ‘ওএমজি’ করে উঠল। সে ধড়ফড় করে উঠে বসল। কিছুক্ষণ কিছুই বুঝল না। তারপরেই মনে পড়ল, তার পরীক্ষা। গত রাতে এ নিয়ে সে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিল, তার মনে আছে। লিখেছিল, ‘ফ্রেন্ডস, কাল এক্সাম! বাট প্রিপারেশন নাই! এত এক্সাম কেন জীবনে?’ তারপর অনেকগুলো কষ্টের ইমো।
ঘুমানোর আগ পর্যন্ত সেই স্ট্যাটাসে ছিল এক শ সাতটা লাইক আর মাত্র চারটা কমেন্ট। মইনের মনে হলো এক্ষুনি তার রেডি হয়ে পরীক্ষার জন্য বেরোনো দরকার। কিন্তু একবার স্ট্যাটাস চেক না করেই? সে দ্রুত তার ফেসবুকে ঢুকল এবং ঢুকে একটু বিষণ্ণবোধ করল। লাইকের সংখ্যা আর মাত্র দুটি বেড়েছে। তবে মইন খুব বেশি হতাশ হলো না, কেননা সকাল হলো ফেসবুকের অফপিক সময়। সারা রাত ফেসবুকিং করে সবাই এখন ঘুমিয়েছে। মইন তাই আশায় আশায় তৈরি হতে শুরু করল।
টি-শার্ট, জিনস চাপিয়ে বের হতেই দেখল রাস্তায় হাঁটুপানি। সারা রাত বৃষ্টি হয়ে গেছে, সে কিছুই বোঝেনি। ফেসবুকেও কেউ আপ দেয়নি। নাকি তার এলাকায়ই শুধু বৃষ্টি হয়েছে? ব্যাপারটা ফেবুতে জানানো দরকার। ওদিকে এক অফিসগামী লোকের রাস্তা পার হতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে! মইন তাড়াতাড়ি ফোন বের করে ছবি তুলল। পরীক্ষা পরে, আগে এই দুর্ভোগের কথা সবাইকে জানাতে হবে! ছবি তোলার সময় লোকটা একটু অদ্ভুত দৃষ্টিতে মইনের দিকে তাকাল বটে, হয়তো আশা করছিল মইন তাকে সাহায্য করবে, কিন্তু মইন তার চেয়েও বড় ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত হলো। সে ছবিটা ফেসবুকে আপ করে দিয়ে লিখল, ‘মহাখালী এখন মহাপানি...যারা বাইর হবেন, নৌকা নিয়া বাইর হন!’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা সামাজিক কাজ করার পর মইনের মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে গেল, দিনটা শুরুই হলো একটা ভালো কাজ দিয়ে। কিন্তু মনের ভেতর একটা খচখচানি—পরীক্ষা নিয়ে দেওয়া তার স্ট্যাটাসটা হিট করল না! তাকে কেউ তেমনভাবে শুভকামনাও জানায়নি। দেবে নাকি আরেকটা স্ট্যাটাস?
দিয়েই দিল। লিখল, ‘হাই ফ্রেন্ডস, এক্সাম দিতে যাচ্ছি। দোয়া কইর!’
এবার আর দোয়া না করে বুদ্ধি কী? খুশিমনে রিকশায় চেপে বসল মইন। ওহ যানজট! যানজট আর যানজট! এই দেশের কী হবে? যানজটে বসে আছে আর বিরক্তি লাগছে মইনের। ওদিকে পরীক্ষা...দূর...ফেসবুকে কী হলো? কয়টা লাইক পড়ল তার স্ট্যাটাসে? দেখা দরকার।
না লাইক বেশি পড়েনি, কিন্তু কমেন্ট পড়েছে কয়েকটা। একজন লিখেছে, ‘ভাইজান, ভালোমতো পরীক্ষা দেন!’
আরেকজন লিখেছে, ‘পরীক্ষা দিতে যাইতেছেন, পরীক্ষা দেন...এই পরীক্ষা পরীক্ষা কইরা চব্বিশ ঘণ্টায় পঁচিশটা স্ট্যাটাস দেওয়ার মানে কী?’
তৃতীয়জন লিখেছে, ‘তুই তো পরীক্ষায় নির্ঘাত ফেল করবি! তুই পড়লি কখন! সারাক্ষণই তোরে ফেবুতে পাই!’
মনটা বিষিয়ে গেল মইনের। ফেসবুকে সব বদমানুষের ভিড়। সিদ্ধান্ত নিল আর কখনোই সে ফেসবুক ব্যবহার করবে না। এবং ব্যবহার যে করবে না এটা সে সবাইকে জানিয়ে দেবে। তাই ফেসবুকে লিখল, ‘বন্ধুরা, চিরবিদায়। না পৃথিবী ছেড়ে যাচ্ছি না...কিন্তু আর কখনো ফেসবুকে আসব না! তোমাদের সবাইকে মিস করব!’
রিকশা চলতে শুরু করেছে। মইনের মন কেমন যেন দ্রবীভূত হতে শুরু করেছে। সত্যিই কি সে আর ফেসবুকে ঢুকবে না? কিন্তু তার যে স্ট্যাটাস, সেখানে কে কে কমেন্ট করল? কেইবা লাইক দিল তার ওই বিদায়ী স্ট্যাটাসে? আহারে, কেউ কি তাকে বলবে না—ফিরে এসো!
মন খারাপ আর সঙ্গে একটা অদ্ভুত ছটফটানি নিয়ে মইন পরীক্ষা দিতে শুরু করল। প্রশ্নপত্রে যা আছে তার সবই প্রায় কমন। তবুও মনটা তার ভালো হচ্ছে না। আজ যদি সে ফেসবুক পরিত্যাগের ঘোষণা না দিত, তাহলে একটা অন্তত সেলফি তোলা হতো এখন। লিখত, ‘এক্সামফি...লল!’
কিন্তু হায়! মইনের হাত কেঁপে কেঁপে গেল। পরীক্ষা শেষ হলো তার। ভালোই হলো পরীক্ষা। কিন্তু মুখটা তার শুকনোই থেকে গেল। বন্ধু অরণী এগিয়ে এসে বলল, ‘কিরে, তুই নাকি কুইট করেছিস ফেসবুক থেকে?’
মইন মাথা নাড়ল। অরণী বলল, ‘কুইট করে লুজাররা! তুই ক্যান করবি? আমাকে দেখ, আমাকে কতজন ডিস্টার্ব করে ফেসবুকে, আমি কি কুইট করেছি?’
বুক থেকে পাথর নেমে গেল যেন মইনের। সে সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুকে ঢুকল। কতজন তাকে নিষেধ করেছে ফেসবুক ছেড়ে যেতে! মইনের চোখে পানি চলে এল। ছলছল চোখে অরণীকে বলল, ‘দোস্ত, আমার সঙ্গে একটা সেলফি তুলবি? ফেসবুকে আপ করে জানাব, আমি আবার ফিরে এসেছি...!’

প্রকাশ: রস+আলো

টিভি রিমোট চাহিয়া স্ত্রীর নিকট পত্র


বরাবর
মাননীয়া স্ত্রী
আপন নিবাস, স্বফ্ল্যাট
বিষয়: খেলা চলাকালীন টিভি রিমোট চাহিয়া আবেদন।
মহোদয়া
সবিনয় নিবেদন এই যে আমি আপনার ফ্ল্যাটের আপনার কক্ষে বসবাসকারী আপনারই স্বামী ক্রিকেটমজনু মোতালেব। আপনি জানেন, বাংলাদেশ টাইগারদের সঙ্গে খেলার জন্য ভারতীয় ক্রিকেট দল এ দেশে এসে পৌঁছেছে। শিগগিরই বহুল আলোচিত ক্রিকেট টুর্নামেন্টটি শুরু হতে যাচ্ছে। আপনি আরও জানেন, বিশ্বকাপে এই দুটি দল মুখোমুখি হয়েছিল এবং বাজে আম্পায়ারিংয়ের জন্য আমাদের প্রিয় টাইগাররা ম্যাচটা হেরে গিয়েছিল। এবার তা আর হতে দেওয়া যায় না। এবার মাঠে খেলবে ১১ জন, আর বাকিরা খেলা দেখে তাদের উৎসাহ দিয়ে যাবে। আমার বিশ্বাস, টাইগাররা আমাদের হতাশ করবে না। আমরাও খেলা না দেখে যেন তাদের হতাশ না করি। তাই আমাদের সবার নিয়মিত প্রতিটি ম্যাচ দেখা উচিত। আমি জানি, ম্যাচ চলাকালীন আর ভিনদেশি সিরিয়ালের সময় সাংঘর্ষিক। এ সময় আপনার হাতে রিমোট থাকলে আপনি নিশ্চয়ই বারবার ভিনদেশি চ্যানেলগুলোতে সিরিয়াল দেখতে চলে যাবেন এবং এতে আমার খেলা দেখায় নিদারুণ বিঘ্ন ঘটবে। জাতীয় স্বার্থে, ক্রিকেটের স্বার্থে এমন ঘটনা ঘটতে দেওয়া উচিত নয়।
বিধায় আরজ এই যে খেলা চলাকালীন টিভির রিমোট আমার হাতে দিয়ে ক্রিকেট–স্বার্থে বিশেষ ভূমিকা রাখতে মহোদয়ার মর্জি হয়।
বিনীত নিবেদক
ক্রিকেটমজনু মোতালেব
আপন নিবাস, স্বফ্ল্যাট
.স্ত্রীর জবাব
আপনার আবেদনপত্রটি পেয়েছি। ক্রিকেটের প্রতি আপনার নিবেদন প্রশংসার দাবি রাখে। এমন নিবেদন সংসারের প্রতি থাকলে আরও ভালো লাগত। যা–ই হোক, আপনার মনোবেদনা আমি বুঝেছি, এবং তার প্রতিকারও বিধান করেছি। বাংলাদেশ-ভারত টুর্নামেন্টের সব কটি ম্যাচের টিকিট আমি একটা করে কাটিয়ে রাখব। আপনি প্রতিটি ম্যাচ মাঠে বসে আরামসে দেখতে পারবেন এবং প্রতিটি ম্যাচেই টাইগারদের সঙ্গে থাকতে পারবেন।
বি.: দ্র.: দয়া করে টিভির রিমোটের দিকে নজর দেবেন না।

প্রকাশ: রস+আলো
লিংক: http://www.prothom-alo.com/roshalo/article/547705/%E0%A6%9F%E0%A6%BF%E0%A6%AD%E0%A6%BF-%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%AE%E0%A7%8B%E0%A6%9F-%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%80%E0%A6%B0-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%9F-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%80%E0%A6%B0-%E0%A6%86%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%A6%E0%A6%A8%E0%A6%AA%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0

গরম থেকে বাঁচার নাগরিক পদ্ধতি


দেশজুড়ে চলছে চরম গরম। প্রাণ আইঢাই অবস্থা! গ্রামে তবু গাছের ছায়া আছে, নদীর পাড়ে নাই নাই করেও বাতাস আছে। কিন্তু শহরে? শহরে ইট-কাঠ-পাথরের মাঝে এই গরম যেন তার সমস্ত সীমা অতিক্রম করছে! এই মাত্রাতিরিক্ত গরমে নাগরিকেরা কীভাবে ‘সারভাইভ’ করবে? অনুসরণ করুন রস+আলোর পদ্ধতি।
চিকিৎসা–পদ্ধতি
আঁকা: আসিফুর রহমাননগরের বড় বড় বেসরকারি হাসপাতালে বসেন এমন চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন, রিপোর্ট ইত্যাদি জোগাড় করুন। হাতে নিয়ে ঢুকে যান হাসপাতালগুলোতে। এসব বেসরকারি হাসপাতাল আগাপাছতলা এসিতে মোড়ানো থাকে। হাসপাতালে ঢুকেই চুপচাপ রিসিপশনে বসে থাকুন। অভিনয় পাকা করার জন্য মাঝেমধ্যে হাতের রিপোর্টগুলো নাড়াতে পারেন, মোবাইল ফোন বের করে সময় দেখতে পারেন। যেন আপনি কারও চিকিৎসা নিতে এসেছেন! ভাবটা এমন করুন যেন দেরি হয়ে যাচ্ছে। আসলে তো আপনার হাতে অফুরন্ত সময়। বসে বসে এসির হাওয়া খেয়ে তীব্র দাবদাহের দুপুরটা পার করে দিন। ঘুমাতে চাইলে সানগ্লাস ব্যবহার করুন।
খেলা দেখা–পদ্ধতি
আঁকা: আসিফুর রহমানআপনার বন্ধুর বাড়িতে এসি আছে? আপনার বন্ধু ফুটবলের খুব বড় ফ্যান? আপনি হয়তো ফুটবল একদম পছন্দই করেন না। কিন্তু সারভাইভ করতে চাইলে পছন্দ করতে হবে। অন্তত পছন্দের অভিনয় করুন। বন্ধুকে জানান আজ রাতের খেলাটা আপনি বন্ধুর বাড়িতে দেখতে চান। বন্ধুকে খুশি করতে নানান কথা বলুন। বন্ধু যদি মেসিভক্ত হয়, তাহলে রোনালদো যে কোনো ফুটবলারই না, এমন মন্তব্য করুন। বলুন, মেসি আসলে ভিন গ্রহের খেলোয়াড়। তবে বন্ধু যদি রোনালদোর ভক্ত হয় তাহলে দুর্নাম করুন মেসিকে নিয়ে। জানান, মেসি আসলে ক্লাব ফুটবলার। গ্রেট হলো রোনালদো। এবার সন্ধ্যা হতে হতেই বন্ধুর বাড়িতে ঢুকে যান। মধ্যরাতে খেলা দেখা শেষ করে ‘এত রাতে আর কীভাবে ফিরব’ বলে বন্ধুর বাড়িতেই বাকি রাতটা কাটিয়ে দিন। ভয়াবহ গরমের রাতে এসির হিম হিম বাতাসের অনুভূতি নিয়ে ভোর রাতে কাঁথা টেনে ঘুম দিন।
শপিংমল–পদ্ধতি
আঁকা: আসিফুর রহমানখুব গরম? আর পারছেন না? ঘামে শরীর ভিজে একেবারে জবজবে অবস্থা? সূর্য যেন আপনার মাথার ওপর বসে গ্যাংনাম স্টাইলে নাচছে? আর দেরি করবেন না। খুঁজে নিন কোনো শপিংমল বা সুপারশপ। ঢুকে যান তাতে। নগরের প্রতিটি শপিংমল বা সুপারশপে এসির উত্তম ব্যবস্থা আছে। আপনি ঢুকলেই দেখতে পাবেন আপনার মতো আরও অনেকেই আছে ভেতরে। তারা কিছুই কিনছে না। বিভিন্ন দোকানে অযথা ঘুরে বেড়াচ্ছে। এটা দেখছে ওটা দেখছে। আপনিও তাদের অনুসরণ করুন। যখন দেখবেন শরীর শান্ত হয়ে এসেছে, চিবুকে এসির হিম হিম বাতাস লাগছে, শরীরের সমস্ত ঘাম শুকিয়ে গেছে, তখন মল ত্যাগ করুন।
এটিএম–পদ্ধতি
আঁকা: আসিফুর রহমানআপনার কোনো এটিএম কার্ড নেই? অথবা মাত্র একটা ব্যাংকের এটিএম কার্ডই রয়েছে আপনার কাছে? বড় ভাই, ছোট ভাই, চাচা, মামাদের কাছ থেকে কেজো–অকেজো নানান রকমের নানান ব্যাংকের এটিএম কার্ড ম্যানেজ করুন। কার্ড নিয়ে ঢুকে যান এটিএম বুথে। কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করুন কার্ড। বুথের এই বোতামে ওই বোতামে চাপ দিন। তারপর বেরিয়ে আসুন। ঢুকুন আরেকটা এটিএম বুথে। এভাবে একের পর এক এটিএম বুথে ঢুকুন, এটিএম বুথের এসির বাতাসে শরীরের ঘাম শুকিয়ে নিন। যদিও এটি স্বল্পমাত্রার পদ্ধতি, তবু দারুণ কাজে দেয়। তবে ঘন ঘন একই এটিএম বুথে ঢুকলে চোর সন্দেহ উত্তম-মধ্যমের ঘটনা ঘটতে পারে। ফলে সাবধানতা অবলম্বন করে সারভাইভ করুন!

প্রকাশ: রস+আলো
লিংক: http://www.prothom-alo.com/roshalo/article/547714/%E0%A6%97%E0%A6%B0%E0%A6%AE-%E0%A6%A5%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%81%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%97%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%95-%E0%A6%AA%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A6%A4%E0%A6%BF

এই গম লইয়া আমরা কী করিব?


..খবর: ব্রাজিল থেকে আমদানি করা নিম্নমানের গম দেওয়া হচ্ছে চুয়াডাঙ্গার ডিলার, আটাকলের মালিক ও টেস্ট রিলিফ প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। তাঁদের অভিযোগ, ওই গম নিতে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা চাপ দিচ্ছেন। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁরা ‘ওপরমহলের’ নির্দেশ পালন করছেন মাত্র। (সূত্র: প্রথম আলো, ১৮ জুন ২০১৫)
ব্রাজিল থেকে নিম্নমানের গম এসেছে সুগমে। সেই গম এখন গমগম করছে সরকারি গুদামে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, এই গম মানুষের খাওয়ার অযোগ্য। কিন্তু খাওয়ার অযোগ্য গম তাহলে কী করব? কোন কাজে লাগাব আমরা?

রাস্তা উন্নয়নখানাখন্দে ভরে গেছে শহরের রাস্তা-ফুটপাত। একটু বৃষ্টি হলেই তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। বোঝাই যাচ্ছে সরকারের কাছে পর্যাপ্ত ইট-সিমেন্ট-বালু নেই সেসব খানাখন্দ সংস্কারের জন্য। এ সময় কাজে লাগতে পারে নিম্নমানের গম। রাস্তার খানাখন্দ গম দিয়ে ভরাট করা হোক। তাহলে আর পানি জমবে না। পানি জমলেও লাভ, সেখানে জন্মাবে গমের গাছ। রাস্তা ও ফুটপাত হয়ে উঠবে সবুজ।

হোয়াইটওয়াশে ব্যবহারবাংলাদেশের মাটি ধীরে ধীরে হোয়াইটওয়াশের জন্য উর্বর হয়ে উঠছে। যে দলই এখানে খেলতে আসুক না কেন, পড়ে যাচ্ছে হোয়াইটওয়াশের শঙ্কায়। কিন্তু এত হোয়াইট করার জন্য আমাদের পর্যাপ্ত রং আছে তো? না থাকলেও চিন্তা নেই। এখন হাতের কাছেই আছে নিম্নমানের গম। সেগুলো ভেঙে সাদা আটা বানিয়ে
হোয়াইটওয়াশের কাজে দারুণভাবে ব্যবহার করা যায়।

গমবাঁধতিস্তা নদীর পানি আসেনি, কিন্তু এই বর্ষায় পাড় ভেঙে যাচ্ছে কত নদীর! পাথর ফেলে বালি ফেলে সরকার যে কার্যকর উদ্যোগ নেবে তা-ও দেখা যাচ্ছে না। উচিত হবে সরকারি গুদাম থেকে গমগুলো বের করে বস্তায় বস্তায় বেঁধে নদীর পাড়ে ফেলা। এক ঢিলে দুই পাখি-পাড়ও বাঁচল, নিম্নমানের গমও কাজেও লাগানো গেল!
ঈদ আনন্দে গম
এই তো আর কদিন পরেই ঈদ। ঈদ এলেই আনন্দ প্রকাশের জন্য পটকাবাজি করতে কত কিছু ফোটানো হয়! এবার ঈদে নতুন সংযোজন হতে পারে গম। লাল-নীল-সবুজ-হলুদ এমন বিভিন্ন রঙে সেসব গম রাঙিয়ে ঈদে নেমে পড়তে হবে রাস্তায়। তারপর যে যার দিকে পারে রঙিন গম ছুড়ে মেতে উঠবে ঈদ আনন্দে। নতুন জামা-জুতোর সঙ্গে প্রত্যেকের পকেটভর্তি থাকবে রঙিন রঙিন গমে!
ফিল্মি প্রপস
সিনেমার প্রপস হিসেবে নিম্নমানের গমগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে অনায়াসে। সিনেমায় নায়ক-নায়িকার হাত ধরে যখন গান গাইবে, তখন আকাশ থেকে গমবৃষ্টি হবে। সিনেমার নাম হতে পারে ‘কাভি খুশি কাভি গম’!

ফলের রাশিফল


চলছে গ্রীষ্মকাল। বাজার ভরে গেছে ফলে। শুধু মানুষের নয়, এসব ফলেরও আছে নানা রকম রাশি, আছে রাশিফল।
.আম
আম রাজা ফলের জাতক। যেখানে যে ফলের মধ্যেই সে পড়ুক না কেন, আম তার রাজ-স্থান ধরে রাখবেই। আম দেখে ইংরেজরা সেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলেই খুব বিস্মিত হয়েছিল। তারা দেখেছিল, গাছ থেকে আম পড়লেই মানুষ ছুটে যায়। আমটা কুড়িয়ে আনতে যায়। তা সে যে অবস্থাতেই থাকুক না কেন। ইংরেজরা তাই আমের নাম দিয়েছিল ‘মানুষ যায়’। যার ইংরেজি করলে দাঁড়ায় Man Go. আমের ওপর মঙ্গলের প্রভাব থাকায় আমকে সবাই ভালোবাসে। সবাই তাকে কিনতে চায়। সব সময় সব জায়গায় সে চাহিদা তৈরি করতে পারে। চাঁদের সঙ্গে সরাসরি অবস্থানের কারণে আমের স্বাদ জ্যোৎস্নার মতো নরম। আমের ভেতরে এত রস যে ফলটা আসলেই ‘রসাল’। রম্য ক্রোড়পত্র রস+আলো আর আম সেমি মিতা।
.জাম
জামের ওপর শনির একটা প্রভাব সব সময় লক্ষ করা যায়। জাম পাড়তে তাই কেউ গাছে উঠলে ডাল ভেঙে তার নিচে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। জামের রং কালো। কারণ মহাকাশের ব্ল্যাকহোলের সঙ্গে তার প্রত্যক্ষ সংযোগ। জাম খেলে জিবে আলট্রা ভায়োলেট রং লেগে যায়। এটা শক্তির প্রতীক। তবে এই শক্তি কখনো বাটির সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রয়োজনীয় ‘জামবাটি’ হয়ে ওঠে, আবার কখনো জ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অপ্রয়োজনীয় ‘গ্যাঞ্জাম’ হয়ে ওঠে। জামের ভেতর তাই দুটি প্রবল শক্তি একই সঙ্গে খেলা করে।
কাঁঠালকাঁঠাল
বৃহস্পতির ঘরে থাকায় কাঁঠাল সব সময় তুঙ্গে থাকে। বৃহস্পতির কারণে তার আকৃতিও বিশাল। তবে শরীরে যে কাঁটা আছে, তা নিতান্ত বুধের পরিণাম। বুধ একই সঙ্গে প্রণয় আর আত্মরক্ষার প্রতীক। গরু–ছাগলের হাত থেকে বাঁচার জন্য কাঁঠাল তার কাঁটাকে কাজে লাগালেও মানুষের প্রণয় থেকে তাই কাঁঠালের মুক্তি নেই। মানুষ ‘কাঁটা হেরি ক্লান্ত কেন কাঁঠাল কিনিতে’ ভেবে দেদার কাঁঠাল কিনে থাকে। বৃহস্পতির কারণেই কখনো কখনো কাঁঠাল ভীষণ চালাক হয়ে ওঠে। তখন সেটা অন্যের মাথায় ভেঙেও খাওয়া হয়। যার মাথায় কাঁঠাল ভাঙা হয়, তার বৃহস্পতি বিনাশ হয়।
লিচুলিচু
লিচুর ওপর শুক্রের প্রবল প্রভাব। তাই এর আকৃতি ছোট। তারপরও বাজারে এর দারুণ চাহিদা। লিচু ভ্রাতৃত্ব আর একতার প্রকাশ। এরা কখনো একা থাকতে চায় না। গুচ্ছ গুচ্ছ অবস্থায় থাকাতেই এদের শক্তির জায়গা। লিচুর ওপর বুধের প্রভাবও বিদ্যমান। তাই এর শরীরেও কিঞ্চিত কাঁটা আছে। তবে কাঁটা থাকলেও গোলাপ যেমন সুন্দর, তেমনই লিচুও মিষ্ট ও স্বাদু এক ফল। কাজী নজরুল ইসলাম ‘লিচু চোর’ নামে একটি কবিতা লিখে সাহিত্যে লিচুকে চিরকালীন ঠাঁই দিয়েছেন। শুক্রের প্রভাবে লিচুর দাম উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে!
কলাকলা
খেলায় যেমন ‘দুধভাত’ থাকে, ঠিক সে রকমই ফলের ‘দুধভাত’ হলো কলা। সূর্যের জন্ম ও বিস্তার এবং কলার জন্ম ও বিস্তার প্রায় সমান্তরাল। সূর্যের আলো যেমন সব স্থানে সমানভাবে পাওয়া যায়, কলাও তেমনি সব জায়গায় সমানভাবে পাওয়া যায়। আবার সূর্যের মতোই কলা সবকিছুর কেন্দ্রে থাকতে পছন্দ করে। ডারউইনের বিখ্যাত মতবাদ সৃষ্টিতেও কলা ছিল কেন্দ্রে। ডারউইন দেখেছিলেন, বানর আর মানুষের সংযোগসেতুটি আসলে কলা। পৃথিবীতে কেবল এই দুটি প্রাণীই কলা খেতে এত পছন্দ করে! এতৎসত্ত্বেও কলা কখনো কখনো বিব্রতকর ফল। কেউ কাউকে কলা দেখাতে চাইলে সেটা মোটেও সম্মানসূচক কিছু নয়। এমনকি এর ছিলকায় পা হড়কালেও বিপদ!

প্রকাশ: রস+আলো

পেসার হান্ট: রানা সাবধান!

আঁকা: আসিফুর রহমানমতিঝিলের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত এই বিশেষ ঘরে ঢুকতে রানার বুকটা ধক করে ওঠে সব সময়। রানা, মাসুদ রানা। পৃথিবীময় ছুটে বেড়ায় গোপন মিশন নিয়ে। টানে সবাইকে, কিন্তু বাঁধনে জড়ায় না। অথচ এই ঘরে ঢুকতেই তার হাতের তালু ঘেমে যায়। এবার খুব জরুরি নির্দেশে রানাকে ডেকে পাঠিয়েছেন মেজর জেনারেল (অব.) রাহাত খান। রানার দিকে বাড়িয়ে দিয়েছেন একটা লাল ফাইল। তাতে লেখা—পেসার হান্ট। সদ্যসমাপ্ত টেস্ট ম্যাচে বাংলাদেশ মাত্র একজন পেসার নিয়ে মাঠে নেমেছিল। তার মানে বাংলাদেশে পেস বোলারের সংকট। এই সংকট কীভাবে দূর করা যায়? রানার সামনে এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ। রাহাত খানের মুখে শঙ্কার ছায়া। গম্ভীর কণ্ঠে উচ্চারণ করলেন, ‘পেসার ছাড়া চলবে না! রানা, সাবধান!’
অফিস থেকে বের হয়ে নিজের গাড়িতে উঠতেই কারা যেন রানার মাথায় আঘাত করল। চোখে সর্ষেফুল দেখল সে। জ্ঞান হারানোর আগে বুঝতে পারল কে বা কারা তাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে শহর থেকে অনেক দূরে।
জ্ঞান ফিরলে রানা নিজেকে আবিষ্কার করল একটা গুমোট ঘরে। হাত-পা বাঁধা। আর তার সামনে ঢাকাই ফিল্মের ভিলেনদের মতো তিনটি লোক। সাদা, লাল আর নীল পোশাকের। এগিয়ে এল সাদা পোশাক।
: কই? কই রাখছ তুমি প্রেশার? কই?
: প্রেশার?
: হ্যাঁ, প্রেশার। আমাদের প্রেসার লাগব। অনেক অনেক প্রেশার লাগব। প্রেশারের অভাবে আমাদের কিছুই ঠিকমতো হইতেছে না।
: প্রেশার লাগবে, প্রেশারকুকার কেনেন। আমার কাছে কী?
: আরে ওই প্রেশার না। প্রেশার প্রেশার। এমন প্রেশার, যেন সরকাররে চাপে ফেলতে পারি। ইস্যুর প্রেশার! প্রেশার চোটে সরকার গদি ছাইড়া যেন নাইমা আসে! কই রাখছ তুমি প্রেশার?
: আমি তো প্রেশার খুঁজতে বের হই নাই। আমার মিশন...
লাল পোশাক এগিয়ে আসে। বলে, ‘ওই, একদম মিথ্যা কথা বলবা না। আমাদের কাছে খবর আছে, তুমি প্রেশার খুঁজতে বাইর হইছ!’
: আমি পেসারের জন্য বের হয়েছি। ক্রিকেটে পেস বোলার পাওয়া যাচ্ছে না! আমাদের এখন নতুন নতুন পেসার তৈরি করতে হবে!
: রাখ তোমার বুজরুকি। তোমারে আমি বহুত চিনি। কাজীদার বই আমিও পড়ছি। তুমি এ রকম আটকা থাকলেই নানান ভুজুংভাজুং কথা বলো। তারপর ঝোপ বুইঝা কোপ মাইরা পালায়া যাও!
: পালানোর কিছু নেই। আমাকে ছেড়ে দেওয়াই আপনাদের জন্য ভালো। ক্রিকেটের জন্য ভালো। পেসার খুঁজে না পেলে খুব মুশকিল!
: কিসের মুশকিল? ক্রিকেটে পেসারের দরকার কী, অ্যাঁ? পেসার তো একটা ফানি ব্যাপার। হুদাই আধমাইল দূর থেইকা দৌড় দিয়া আইসা আম্পায়ারের পাশে একটা বেসম্ভব লাফ দিয়া বল ছুইড়া মারে! ক্যান? এমন কইরা বল ছোড়ার কী দরকার? অন্যরা বল করে না? স্পিনারদের কি তারা দেখতে পায় না? তারা কেমন কাছ থেইকা গুটি গুটি পায়ে বল করে; তারা কি আউট করতে পারে না?
: পারে। কিন্তু ক্রিকেটে তো দুইটাই লাগে। বৈচিত্র্যের দরকার আছে না?
নীল পোশাক এগিয়ে আসে। বলে, রাখো তোমার বৈচিত্র্য! আমি তো বলি টিমে এগারোটা স্পিনার রাখাই ভালো। এরা কম দৌড়ায়। কম হাঁপায়। কম লিগামেন্ট ছেঁড়ে! ক্রিকেটে অত দৌড়ানির জায়গা কই? এত্তটুকু মাঠ!
: এগারোটা স্পিনার? তাহলে ব্যাটসম্যান থাকবে না?
: অফকোর্স থাকবে। ব্যাটসম্যান থাকবে ব্যাটিংয়ের সময় আর স্পিনার থাকবে ফিল্ডিংয়ের সময়!
: আপনাদের ক্রিকেট জ্ঞান দেখে আমি অভিভূত।
: এত অভিভূত হওয়ার দরকার নাই, প্রেশার ছাড়ো, নাইলে তোমার ভূত ছাড়ায়া দিব! কই রাখছ প্রেশার, কই? ভালোয় ভালয় দেও, নাইলে খবর আছে তোমার!
নীল পোশাক পকেট থেকে একটা গুলতি বের করে। রানার দুই ভ্রুর মাঝখানে তাক করে। নিজেকে শান্ত করে রানা। এখন নড়েছ কি মরেছ অবস্থা! এ অবস্থা থেকে বেরোতে মাথা খেলাতে হবে। সাদা পোশাক বলে, ‘কী হইল, প্রেশার দিবি কি না বল?’
: দেব, দেব, অবশ্যই দেব।
ঠাঠা করে হেসে ওঠে তিনজনই। রানা বলে, ‘কিন্তু প্রেশার তো আমার দুই হাতে। হাত না খুললে প্রেশার কীভাবে দেব?’
তিনজন পরস্পরের দিকে তাকায়। গোল হয়ে দাঁড়িয়ে নিচু গলায় কী যেন যুক্তি–পরামর্শ করে। তারপর লাল পোশাক এসে বলে, ‘হাত খুইলা দিতেছি, কিন্তু গুলতি তোমার দিকে তাক করা থাকবে। একটু এদিক–ওদিক হইলেই খতম!’
রানার হাত খুলে দিয়েই লাল পোশাক বলে, ‘কই, দেও প্রেশার।’
রানা সঙ্গে সঙ্গে ধাম করে লোকটার মুখে একটা ঘুষির প্রেসার দিল। বাবা গো বলে কঁকিয়ে উঠল লোকটা। গুলতি থেকে গুলি ছুটে এল। শরীরটা একপাশে গড়িয়ে দিল রানা। দিয়েই পা দিয়ে একটা প্রেশার দিল সাদা পোশাককে। উল্টে গেল সে। আর দুজনের এই প্রেশার প্রাপ্তি দেখে নীল পোশাকের তলপেটে অন্য রকম প্রেশার চলে এল। ছুটে সে বাথরুমের দিকেই পালাল বোধ হয়। নিজেকে মুক্ত করে রানা বেরিয়ে এল বাইরে। পাশ দিয়ে একটা গ্রামের সরু নদী বয়ে গেছে। আর সেই নদীপারে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ক্রিকেট খেলছে। অনেক দূর থেকে দৌড়ে এসে শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে বল করছে তারা। রানার মুখে ফুটে উঠল ভুবনভোলানো হাসি। মিশন কমপ্লিট। সে বুঝতে পেরেছে, কোথায় পাওয়া যাবে পেসার!

প্রকাশ: রস+আলো
লিংক: http://www.prothom-alo.com/roshalo/article/553678/%E0%A6%AA%E0%A7%87%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%9F-%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%A8

যে কারণে আমি সাকিব আল হাসান হতে পারিনি

আঁকা: আসিফুর রহমানপাড়ার মাঠে আমিই ছিলাম সাকিব আল হাসান।
বাঁ হাতে ব্যাট করতাম, বাঁ হাতে বল। বল না ঘুরলেও, ব্যাট দিয়ে ঠাসঠুস মারতে না পারলেও মনে মনে ঠিক করে নিয়েছিলাম, ক্রিকেটই হবে আমার প্রথম কথা। আর শেষ কথা হবে সাকিব আল হাসান। সবার আগে মাঠে যেতাম আমি, আর ফিরতাম সবার পরে। থার্ডম্যানে ফিল্ডিং করতে চাইত না কেউ, কিন্তু আমি আগ্রহ নিয়ে সেখানে ফিল্ডিং করতাম। কারণ অবশ্য ক্রিকেট নয়। কারণ ছিল পরি। থার্ডম্যান অঞ্চলের পেছনেই পরি তার ঘরের জানালার ওপাশে বসে থাকত। কোলে থাকত বই, চোখে থাকত মায়া।
পরি ছিল পরির মতোই সুন্দর। জানালার আবছায়ায় তার দিকে চোরা চোখে তাকাতে তাকাতে আমার দিকে আসা ক্যাচ ছুটে যেত, মিস হয়ে যেত ফিল্ডিং। অথচ আমি তো ফিল্ডিংই দিচ্ছিলাম, তাই না? আমার পিঠের ওপর পরির নজরের তীক্ষ্ণতা আমি সব সময় বুঝতে পারতাম।
তবে রবিন ভাই সব সময় বলত, আমি নাকি ক্রিকেটের ‘ক’-ও পারি না! ব্যাটিংয়ের শুরুতেই ক্রিজে যেতে চাইতাম আমি। কিন্তু রবিন ভাই শুধু শুধুই আমাকে শেষ দিকে পাঠাত। তার এক কথা, আমি নাকি ভালো খেলি না। কত বড় সাহস! সে আমাকে...ভবিষ্যতের সাকিবকে বলে ভালো খেলে না! সিনিয়র বলে তাকে কিছু বলতাম না। কিন্তু আমাকে সে সব সময়ই ব্যাটিংয়ে পাঠাত শেষের দিকে, নয়ে কি দশে। আর ব্যাটিংয়ে গিয়েই আমার ইচ্ছা হতো একটা ছক্কা মারার। এমন ছক্কা যেন সেটা গিয়ে পড়ে পরিদের বাড়িতে। আর পড়লেই বলটা আনতে যাব আমি। পরি আমাকে বলটা কুড়িয়ে দেবে। আমি পরির হাত থেকে বলটা নেব। নিতে গিয়ে ওর হাতের সঙ্গে আমার হাতটা একটু ছুঁয়ে যাবে! আমি বলব, ‘সরি!’ পরি বলবে, ‘ইটস ওকে। আপনি না দারুণ খেলেন!’ আমি লাজুক মুখে বলব, ‘কী যে বলেন!’ পরি আবার বোঝানোর চেষ্টা করবে, ‘না না, সত্যিই আপনি সাকিব আল হাসানের মতো খেলেন!’
আমি একটু হাসব তখন। আর পরি তার হাতের তালুটা বাড়িয়ে দিয়ে বলবে, ‘একটা অটোগ্রাফ দেবেন?’
আমি চট করে পকেট থেকে কলম বের করে পরির নরম হাতে সই করে দেব। এমন একটা দিনের কথা ভেবে আমি সব সময় পকেটে কলম নিয়ে ঘুরি। কিন্তু এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে বোলার বল করে ফেলে, আমি বুঝতে পারি না! বল কোন ফাঁকে এসে আমাকে বোল্ড করে চলে যায়, সেটাও বুঝি না। ওরা হইচই করে, আমি মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়ি। পরির জানালার দিকে তাকাতে পারি না। রবিন ভাই বলেন, ‘এ জন্যই আগে পাঠাই না তোমাকে! আজকেও ডাক মারলা! প্রতিদিন ডাক মারবে আর বলবে, সে নাকি সাকিব আল হাসান! হুহ্!’
আমার ভীষণ রাগ হয়। তখন পরির কথা ভাবি আমি। পরির কথা ভাবলে আমার রাগ ঠান্ডা হয়ে যায়। কিন্তু আমার আবারও রাগ হয়, যখন দেখি রবিন ভাই আমাকে বল করতে দিচ্ছে না। আশ্চর্য! যেন আমি বল করতে জানি না। ঠিক আছে, আমার কোনো কোনো বল পিচ থেকে বেরিয়ে যায়, কিন্তু সেগুলো তো ওয়াইড না। একেবারে ডেড হয়ে যায়। কোনো কোনো বল একটু ফুলটস হয়ে যায়। তাতে কী? পৃথিবীর এমন কোনো বোলার আছে, যার বল ফুলটস হয় না? আমাদের সাকিব আল হাসানের বলও ফুলটস হয়। তাহলে? আমি বল করতে চাইলেই রবিন ভাই বলে, ‘এখন না, এখন না। আরেকটু পরে। এখন তো ব্যাটসম্যানরা মারবে!’
আরে, আমার বল মারতে পারবে নাকি? আমি একটা বল করব, পিচে পড়ে বলটা পরির বেণির মতো ঘুরে যাবে...স্যাঁৎ...ব্যাটসম্যান বোল্ড! আরেকটা ব্যাটসম্যান আসবে, এবার আমার বলটা পরির চাহনির মতো তীব্র হবে...স্যাঁৎ...ব্যাটসম্যান বোল্ড! আরেকটা ব্যাটসম্যান আসবে, এবার বলটা এমন করে দেব...পরীকে দেখলে আমার বুকের রক্ত যেমন ছলকে ওঠে তেমন করে বলটা ছলকে উঠবে ব্যাটসম্যানের সামনে...ব্যস, বোল্ড...! হ্যাটট্রিক! দুই হাত ছাড়িয়ে আমি সাকিব আল হাসানের মতো ছুটে যাব পরির জানালার দিকে। পরি...পরি...পরি!
কিন্তু বল করতে গেলে ঘটনা অন্য রকম হয়ে যায়। একটা বল করি, ব্যাটসম্যানটা এমনই শয়তান, এগিয়ে এসে ধাম করে মেরে দেয়। সোজা ছয়। আর কী নিখুঁত নিশানা! বলটা গিয়ে পড়ে ওই পরিদের বাড়িতেই। আমি ছুটে যেতে চাই বলটা আনতে, অটোগ্রাফ দেওয়ার এই তো সুযোগ! কিন্তু তার আগেই দৌড় দেয় রবিন ভাই। যে লোক ইনজামামের মতো পায়ের কাছে গড়িয়ে আসা বলটা কুড়িয়ে নেয় না, সে রীতিমতো ছুটে যায় পরিদের বাড়িতে বল আনতে। আশ্চর্য, খুবই আশ্চর্যের ব্যাপার!
কিন্তু আমি সুযোগের অপেক্ষায় থাকি। মাঠে ক্রিকেট চলে, আমার মন পড়ে থাকে থার্ডম্যানে। আর একদিন সত্যি সত্যি সুযোগটা আসে। হঠাৎ করি শুনি, পেছন থেকে পরি মিহি স্বরে ডাকছে! পরি, আমার পরি! আমি ফিল্ডিং ছেড়ে ছুটে যাই তার জানালায়। পরির হাতে একটা চিরকুট। আমার বুকে ঢিপঢিপ শব্দ। পরি হাত বাড়িয়ে চিরকুটটা দেয়। আমি কাঁপা হাতে চিরকুটটা নিই। আমি উত্তেজিত দৃষ্টিতে তাকাই পরির দিকে। পরি চোখ দিয়ে ইশারা করে রবিন ভাইকে দেখিয়ে দেয়। বুঝিয়ে দেয় এটা আমার জন্য নয়, রবিন ভাইয়ের জন্য। আমি যেন এটা রবিন ভাইকে দিয়ে আসি। আমার হাত-পা অবশ হয়ে আসে। কিন্তু পরির কথা ফেলিই বা কী করে? মাঠে ফিল্ডিংরত রবিন ভাইকে চিরকুটটা দিই। রবিন ভাই পড়ে। আমি উঁকি মেরে চিরকুটটা পড়ে ফেলি। পরি লিখেছে, ‘রবিন ভাই, আপনার চিঠি পেয়েছি। মোবাইল ফোনের যুগে আপনার সাত পাতার চিঠি পড়ে আমার এত্তগুলা ভাল্লাগছে! আরেকটা কথা...আপনার হাসি কিন্তু একেবারে সাকিব আল হাসানের মতো। আমি কিন্তু সাকিব আল হাসানের ফ্যান...আই লাভ সাকিব আল হাসান...’
তারপর একটা ছোট্ট হার্ট আঁকা। সেটার মাঝ–বরাবর একটা তির চলে গেছে। ছোট্ট তিরটা অবশ্য আমার বুকে বর্শার মতো আঘাত করে গেছে। রবিন ভাই চিরকুট দেখে হাসেন। চট করে পকেটে ঢুকিয়ে নেন। তারপর আমাকে বলেন, ‘কালকে তুমি ওয়ান ডাউনে ব্যাটিং করবা, ঠিক আছে?’
আমি বলি, ‘না, ঠিক নাই। আমি ক্রিকেট থেকে আজকে অবসর নিলাম...’
রবিন ভাই হেসে ওঠেন। তার হাসিটা সত্যিই সাকিব আল হাসানের মতো কি না, তা ভাবতে ভাবতে আমি মাঠ ছাড়ি!


প্রকাশ: রস+আলো
লিংক: http://www.prothom-alo.com/roshalo/article/678367/%E0%A6%AF%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A3%E0%A7%87-%E0%A6%86%E0%A6%AE%E0%A6%BF-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%AC-%E0%A6%86%E0%A6%B2-%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A6%B9%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A6%BF