বুধবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৫

হবু নগরপিতার কাছে খোলা চিঠি (অসমাপ্ত)




লেখা: আহমেদ খান | আপডেট:  | প্রিন্ট সংস্করণ
এমন যদি হতো, মেয়র প্রার্থীরা যাত্রী হতেন সাধারণের মতো। একটুখানি বৃষ্টি হলেই এমন ‘পথনদী’র যাত্রীদের দেখা মিলবে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পথেঘাটে! হবু নগরপিতারা কি সেই দুঃখ বুঝবেন!হে শ্রদ্ধেয় হবু মেয়র,
শুভেচ্ছা জানবেন। হবে না হবে না করেও মিরাকলটি ঘটতে যাচ্ছে। সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হতে যাচ্ছে। দিকে দিকে একি শুনি, নির্বাচনের জয়ধ্বনি! আপনি এই নির্বাচনে জয়লাভ করে এই শহরের অভিভাবক তথা নগরপিতা হতে যাচ্ছেন। আপনাকে অভিনন্দন।
হে গুণী,
আমরা জানি, আপনি আমাদের মতোই এই শহরেরই এক বাসিন্দা। তবে আমরা জানি না, আপনি জানেন কি না, এই শহরের প্রতিটি মানুষ আসলে একেকজন মাসুদ রানা। প্রত্যেকেরই আসলে পদে পদে বিপদের হাতছানি। আমরা প্রত্যেকেই যেন এই শহরে গোপন মিশন নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছি। যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো দুর্ঘটনা আমাদের সারা জীবনের কান্না হয়ে যাবে। হয়তো নির্মাণাধীন ভবন থেকে মাথায় পড়বে নির্মাণসামগ্রী কিংবা ছুটন্ত বাস এসে উঠে যাবে আমাদের শরীরে। আমরা ভয়ে ভয়ে দিনাতিপাত করি। তার থেকেও বেশি ভয়ে করি রাত যাপন। কারণ, আমরা জানি, যে ভবনে আমরা বাস করি তা হয়তো যেকোনো দিন বালির ঢিবির মতো ভেঙে পড়বে। কিংবা চোর-ডাকাতের খপ্পরে পড়ে কুপোকাত হবে যেকোনো সময়। সন্ধ্যা হলেই ধরতে পারে ছিনতাইকারী। আমরা আমাদের কষ্টের টাকা দিয়ে কেনা ল্যাপটপ আর স্মার্টফোন নিয়ে অত্যন্ত ভীত জীবন অতিবাহিত করি। মুহূর্তে মুহূর্তে এত শঙ্কা এত রোমাঞ্চ কেবল একজন পেশাদার স্পাইয়ের জীবনেই ঘটতে পারে। আমরা একেকজন তাই উপন্যাসের পাতা থেকে উঠে আসা স্পাই। আমরা সেই ব্যক্তি, যাদের এ শহর টানে কিন্তু বাঁধনে জড়ায় না।
ছবি: প্রথম আলো, স্থান: কুড়িল, ঢাকা, তারিখ: ৭ এপ্রিল ২০১৫হে মহান হবু অভিভাবক,
আমাদের এই শহরে গ্যাসের লাইনে গ্যাস থাকে না, পানির লাইনে পানি থাকে না, বিদ্যুতের লাইন অর্থাৎ তারই থাকে না। হাত দিয়ে মশা হত্যা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে আমরা এখন ইলেকট্রিক র্যাকেট ব্যবহার করি। কিন্তু তাতেও মশা কমে না। আমরা ঘরে মশার কয়েল জ্বালিয়ে বারান্দায় রাত কাটাই। কেউ এসে একটা বার জিজ্ঞেসও করে না, তোমার চোখ এত লাল কেন? সবাই জানে রাত জাগলে চোখ লাল হবেই হবে!
অথচ নাগরিক হওয়ার সমস্ত কর আমরা দিই। পানি বিল, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল দিতে দিতে আমাদের বিলের কাগজ মুখস্থ। অন্যদিকে মাসান্তে বাড়িওয়ালা এসে জানিয়ে যায় বাড়তি বাড়িভাড়া না দিতে পারলে বাড়াবাড়ি না করে যেন বাড়ি ছেড়ে চলে যাই। আমাদের যাওয়ার জায়গা থাকলে কি হে নগরপিতা আমরা এই শহরে থাকতে আসি! আমরা বড় অসহায়। আমাদের সহায় এখন আপনি।
হে সুদূরদর্শী,
আমরা জানি সব (পড়ুন ‘কিছুই’) আপনার হাতে নেই। আইন রক্ষার ব্যাপারে পুলিশ, পানির ব্যাপারে ওয়াসা, ভবনের ব্যাপারে রাজউক, বাড়িভাড়ার ব্যাপারে কেউ না–কেউ নিশ্চয় আছেন। এসব তাঁদের দায়িত্ব। তবু আপনার কাছে একটি অনুরোধ—নির্বাচন চলাকালে আপনি এবং আপনার মতো অন্য ভোট প্রার্থীরা দেয়ালে–অদেয়ালে সুতোয় রশিতে নিজেদের যেসব পোস্টার ঝুলিয়েছেন, ভোটের পর তা দয়া করে সুষ্ঠুমতো অপসারণ করবেন। আর মশার ব্যাপারে একটু ভাববেন। মশার ব্যাপারে ভাবতে গেলে ড্রেনের ব্যাপারে ভাবতে হয়। ড্রেনের ব্যাপারে ভাবতে গেলে অবৈধ দখলের ওপর একটু ভাবতে হয়। অবৈধ দখলের ব্যাপারে ভাবতে গেলে দুর্নীতির ব্যাপারে ভাবতে হয়। দুর্নীতির ব্যাপারে ভাবতে গেলে... 

রস+আলোয় প্রকাশ

তামিম যা বোঝাতে চেয়েছেন



.পাকিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করার পর দর্শকদের উদ্দেশ্য দুই হাতের মুদ্রায় কী যেন বুঝিয়েছেন তামিম ইকবাল। অনেকেরই ধারণা, তামিম দর্শকদের চুপ থাকতে বলেছেন! কিন্তু আসলেই কি তা–ই? রস+আলো খোঁজার চেষ্টা করেছে তামিম ইকবাল আসলে কী বলতে চেয়েছিলেন!
 সেঞ্চুরি করার সঙ্গে সঙ্গে তামিম ইকবালের আসলে খিদা পেয়েছিল। হাঁসের প্যাক প্যাক করে ডাকার ভঙ্গি করে তিনি বুঝিয়েছেন হাঁস তঁার প্রিয় খাবার। তাই আঙুল নাড়িয়ে বোঝাতে চেয়েছিলেন, রাতে তিনি হাঁসের মাংস খেতে চান।
 অনেক দিন বাদে সেঞ্চুরি করার পর তাঁর নিজের বিয়ের দিনটির কথা মনে পড়েছিল। আঙুল নাড়িয়ে তামিম আসলে বিয়েবাড়ির মরিচবাতি জ্বলা–নেভার সেই ঝলমলে রাতের কথাই মনে করেছিলেন।
 সেঞ্চুরিটা করতে গিয়ে নার্ভাস নাইন্টিতে যে তিনি সত্যি খুব নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন, তাঁর বুক যে ধুকপুক করছিল, সেটা বোঝাতেই তিনি ও–রকম করে হাত দেখিয়েছিলেন।
 তামিম আসলে কিছুই বলতে চাননি! টানা ব্যাট করতে করতে আঙুলগুলো আড়ষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তাই খানিকটা আঙুলের ব্যায়াম করে নিয়েছিলেন।

রস+আলোয় প্রকাশিত

শুক্রবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৫

ফাহমিদের মোটা হওয়ার গোপন রহস্য (উইকি লিকস)


ফাহমিদ প্রথম প্রেমে পড়ে চার বছর বয়সে। পাঁচ ক্লাশ ওপরের টিনা আপার। টিনা আপার একটা গজাল দাঁত ছিল। ফাহমিদ ভেবেছিল কোনো এক রাতে, টিনা আপা ঘুমালে, চুপি চুপি টিনা আপার বিছানায় গিয়ে, ওই গজাল দাঁতটা চুরি করে নিয়ে আসবে। তারপর সেটা হরলিক্সের বয়ামে লুকিয়ে রেখে দেবে। সারাদিনে দুয়েকবার সে দাঁত চুপি চুপি দেখবে। কিন্তু ফাহমিদের ইচ্ছাপূরণ হয় নি-- তার আগেই একটা কালো ও মোটামতো লোক টিনা আপাকে বিয়ে করে ময়মনসিং থেকে বগুড়া নিয়ে চলে গেল। ফাহমিদ শূন্য বয়ামে কিছুদিন অশ্রু বিসর্জন করল। তারপর হরলিক্স খাওয়া একেবারের মতো ছেড়ে দিলো।

ক্লাশ নাইনে আবার প্রেমে পড়ল ফাহমিদ। এবারও এক বড় আপার। তবে তিন বছরের বড়। আপার নাম শাম্মী। অসাধারণ রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়। বন্যাটন্যা নস্যি। টেনের ফেয়ারওয়েলের দিন কলেজ থেকে শাম্মী আপা যেদিন গান গাইতে এল ফাহমিদদের স্কুলে, ফাহমিদ সেদিন পুরো স্কুলমাঠ একা একা অযথা দৌড়ালো। দৌড়াতে দৌড়াতে হাঁপাতে হাঁপাতে যখন ফাহমিদের হৃদয় কিছুটা শান্ত হয়ে এল তখন স্কুলগেটে মুখোমুখি হয়ে গেল শাম্মী আপার। শাম্মী আপা ঘর্মাক্ত ফাহমিদকে দেখে খুবই আশ্চর্য হলো। বলল, আরে কী পাগল, তুমি একা একা দৌড়াচ্ছো কেন?

ফাহমিদ সাথে সাথে ফিট। কেউ ভাবলো মৃগী, কেউ ভাবলো রোদ, কেউ ভাবলো দৌড়-- শুধু শাম্মী আপা ফাহমিদের চোখে আলাদা কী জানি দেখল। পরের দিন নিজের গাছের দুটো বেল নিয়ে শাম্মী আপা ফাহমিদের বাসায় গেল। ফাহমিদকে দেখতে। ফাহমিদ তখন পেপের ছবি এঁকে দিচ্ছিলো ছোট ভাইকে। শাম্মী আপা যতক্ষণ থাকলো ফাহমিদ ততক্ষণ ছোট ভাইয়ের ড্রইং খাতায় পেনসিল ঘোরাতে থাকলো। একটা কথাও বলল না। শাম্মী আপা বলল, আচ্ছা পাগলা ছেলে তো! শাম্মী আপা চলে গেল। ছোট ভাই ফাহমিদের কাছ থেকে তার ড্রইং খাতাটা কেড়ে নিলো। কারণ ফাহমিদ পেপের বদলে এতক্ষণ দুইটা বেল এঁকেছে। ফাহমিদের ইচ্ছা ছিল এই বেল দুটো সে শাম্মী আপাকে দেখাবে। শাম্মী আপার একটা পোর্ট্রেট করবে। কিন্তু তার আগেই শাম্মী আপার বিয়ে হয়ে গেল টাক আর ফরসা আর মোটামতো এক লোকের সাথে। শাম্মী আপা নিজের ঘর-বাড়ি-ময়মনসিং আর ফাহমিদকে ছেড়ে ওই লোকটার সাথে বেহায়ার মতো নারায়ণগঞ্জ চলে গেল। ফাহমিদ ছোটভাইয়ের ড্রইং খাতাটা ছিঁড়ে ফেলল এবং বেল খাওয়া বন্ধ করে দিলো।

ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার পরার সময় ফাহমিদ তৃতীয়বারের মতো প্রেমে পড়ল। এবারের মেয়েটি তারচেয়ে বয়সে ছোট। ঠিক এক বছরের ছোট। একই কলেজে পড়ে। নাম তুলি। তুলতুলে চেহারা। চোখের মণি সব সময়ের জন্য ছলছল করে। মনে হয় একটু জোরে কথা বললেই কেঁদে ফেলবে। যেন কেউ আগলে আগলে রাখবে বলেই মেয়েটার জন্ম। ফাহমিদ ঠিক করল সে-ই হবে তুলির ইজেল। সব সময় তাকে অবারিত আকাশ দিয়ে যাবে। ফলে ফাহমিদ কবিতায় এল। জীবনানন্দ আর নির্মলেন্দু গুণের দুই রেল লাইনের মাঝে স্লিপার হয়ে পড়ে রইল চারটা মাস। পঞ্চম মাসের প্রথম সকালে ফাহমিদের ভেতর থেকে একটা কবিতা বেরিয়ে এল। তরতাজা প্রেমভাঁজা এই কবিতা বুকের বাঁ পাশে, তুলির পদতলে রেখে ছুটলো তুলিরই উদ্দেশ্যে।

সারা কলেজ হন্যে হয়ে খুঁজেও যখন তুলিকে পাচ্ছে না ফাহমিদ, বুকের তাজা কবিতাটা যখন বাসি হতে শুরু করেছে, তখন প্রশাসন ভবনের পেছনে--টগবগে পুকুরের পাশে--কলমিনলের আড়ালে তুলিকে খুঁজে পেল ফাহমিদ। আর তুলির বাহুবন্ধনে পেল মোটু শহিদুলকে। যে শহিদুল ক্রিকেট খেলতে গেলে ইনজামামের মত কথায় কথায় রান আউট হয় সে শহিদুলই ফাহমিদকে ক্লিন বোল্ড করে দিলো। ফাহমিদের ইচ্ছা ছিল তুলিকে নিয়ে কাব্যনদে নাও ভাসাবে। কিন্তু সে-ই তুলিকেই কিনা পাওয়া গেল প্রবন্ধের মতো খড়খড়ে এক পুকুরপাড়ে!

ফাহমিদ তার নির্মলেন্দু গুণকে কুচিকুচি করে ছিঁড়ে ফেলল আর জীবনানন্দকে আগুনে পোড়ালো। তবু তার বুকের আগুন নিভলো না। সে ছাইভস্মের ভেতরে হিসাব করতে বসলো- তার জীবনের তিনটা যে প্রেম সেই তিনটা প্রেমই ছিনিয়ে নিয়েছে মোটা মোটা তিনটা লোক। এ ধরণী তব মেদচর্বিগণের! ফাহমিদ রোগাপটকা একটা ছেলে। জোরে কথা না বললে তার দিকে কেউ নজর পর্যন্ত দেয় না। কিন্তু এমন চলতে থাকলে সকল উর্বশী চলে যাবে ইন্দ্রপুরীতেই। ফাহমিদ তাই আবার বেল খাওয়া শুরু করল, শুরু করল হরলিক্স খাওয়া। শুধু তাই নয়, সে তার সমস্ত খাওয়াই বাড়িয়ে চলল। তিনবেলা হলো চারবেলা... চারবেলা হলো পাঁচবেলা... পাঁচবেলা হলো ছয়বেলা...! ফাহমিদ তার খাওয়া বাড়িয়েই চলল বাড়িয়েই চলল বাড়িয়েই চলল!

গত পাঁচ বছরের সাধনায় উত্তীর্ণ ফাহমিদ। তার ওজন এখন একশ সাঁইত্রিশ কেজি। ওয়েট মেশিনে উঠলে মেশিনটা কুঁইইই করে আওয়াজ করে। জবান থাকলে হয়তো বলতো এক এক কইরা আসেন ভাই... নাইলে তো মারা পড়বো! তারপর হয়তো বিপ বিপ তুলে কিছু গালিগালাজ করতো। আফসোস মেশিনের জবান থাকে না।

ফাহমিদ এখন ধীরে নড়াচড়া করে, তারচেয়েও ধীরে কথা বলে, এবং তারওচেয়ে ধীরে হাসে। সে তার সমস্ত শক্তি আর উত্তেজনা জমিয়ে রাখছে। ফাহমিদ জানে এখন সে  প্রস্তুত। এখন তার জীবনে কেউ প্রেম নিয়ে এলেই আর ফিরে যেতে পারবে না। সে তাকে ফিরে যেতে দেবে না। আষ্টেপৃষ্টে তাকে জড়িয়ে আটকে রাখবে।
ফাহমিদের ইচ্ছা তার প্রেমিকাটার তুলতুলে একটা মুখ আর একটা গজাল দাঁত থাকবে। আর তাকে দেখে ফিক করে হেসে বলবে, আরে, তুমি আচ্ছা পাগলা তো!

বুধবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৫

যে কারণে শ্রীনি বিশ্বকাপ দিয়েছেন

ভারতীয়দের কাছে শচীন টেন্ডুলকার ‘দ্য গড’ আর শ্রীনিবাসন ‘দ্য গডফাদার’! কার্টুন: সন্দ্বীপ আধওয়ারু, ভারতভারতীয়দের কাছে শচীন টেন্ডুলকার ‘দ্য গড’ আর শ্রীনিবাসন ‘দ্য গডফাদার’! কার্টুন: সন্দ্বীপ আধওয়ারু, ভারত



ট্রফি নয় টফি: শ্রীনিবাসন বিশ্বকাপের ট্রফিকে চকলেট–টফি ভেবেছেন। শৈশব থেকেই তিনি বন্ধুবান্ধবদের টফি দিতে পছন্দ করেন। এবারও তাই বিশ্বকাপ ‘টফি’টা বন্ধুদের হাতে তুলে দিতে ছুটে গিয়েছেন।

















কাপ-সাধনা: শ্রীনি আসলে গভীরভাবে মহান কাপ-সাধনায় রত। এ সাধনায় পৃথিবীর তাবৎ কাপ ছুঁয়ে একটা মন্ত্র পড়তে হয়। বিশ্বকাপ ট্রফি ছুঁয়ে শ্রীনির এ সাধনায় নির্বাণ লাভ হয়েছে।
টিভিব্রেটি: আইপিএল থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর শ্রীনিকে টিভিতে আর দেখা যাচ্ছিল না। বাংলাদেশ থেকে তঁাকে টক শোয়েও ডাকা হচ্ছিল না। নিজেকে টিভিতে দেখানোর ইচ্ছায় তিনি গিয়েছিলেন বিশ্বকাপ দিতে। নিজেকে তিনি টিভিব্রেটি করে তুলতে চান।
রেপ্লিকা ট্রফি: প্রেসিডেন্ট পদটা ফেরত পাওয়ার জন্য বিসিসিআইকে একটা বিশ্বকাপ ট্রফির রেপ্লিকা উপহার দিতে চান শ্রীনিবাসন। ট্রফিটা ধরে আসলে তিনি মনে মনে মাপজোক করে নিয়েছেন ট্রফিটার। ধোনিরা শিগগিরই একটা বিশ্বকাপ পেতে যাচ্ছে। যেটা তাদের কখনো ফেরত দিতে হবে না।
মওকা মওকা: আইসিসির ওপর মোড়লদের প্রভাব নিয়ে আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রতিবাদ করায় শ্রীনি বিষয়টাকে ‘মওকা’ হিসেবে নিয়েছেন। বিশ্বকাপ ট্রফিটা অস্ট্রেলিয়ানদের তুলে দেওয়ার সময় শ্রীনি মনে মনে গেয়ে উঠেছেন—ফির আয়া হে মওকা মওকা... মওকা মওকা... (আবার এসেছে সুযোগ সুযোগ... সুযোগ সুযোগ...) শ্রীনি আসলে মওকাবাজ অর্থাৎ সুযোগসন্ধানী।

রস+আলোয় প্রকাশিত
লিংক:
http://www.prothom-alo.com/roshalo/article/495820/%E0%A6%AF%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A3%E0%A7%87-%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%80%E0%A6%A8%E0%A6%BF-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%AA-%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A7%87%E0%A6%9B%E0%A7%87%E0%A6%A8

হলফনামা


সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীরা সবাই নিজের নিজের হলফনামা দিচ্ছেন। সেসব নিয়ে নানা রকমের কথাও শোনা যাচ্ছে। এসব কথায় ত্যক্তবিরক্ত হয়ে নিজের হলফনামা প্রকাশ করলেন আলীজানের বাপ। কোথাও প্রকাশের সুযোগ না পেয়ে আশ্রয় নিলেন রস+আলোর।
নাম: আলীজানের বাপ
কোনো একসময় তাকে রুহুইল্ল্যা বলে অনেকেই ডাকতেন। কিন্তু প্রথম সন্তানের বাবা হওয়ার পর আর সন্তানের নাম আলীজান রাখায় সবাই তাকে আলীজানের বাপ বলে ডাকতে শুরু করে। আলীজানের বাপ বলেন, ‘আমার নিজের বলতে কুনো নাম নাই, আমার নাম আমার পোলা–মাইয়াগো নামে!’
শিক্ষাগত যোগ্যতা: তিন বেলা দুই প্রহর পাস
খালপাড়ের স্কুলে ছোট ওয়ানে আলীজানের বাপ তিন দিন তিনটা বেলা লেখাপড়া করেন। তিন দিনই তিনি স্কুলে দুপুর পর্যন্ত শিশুশিক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এই তিন দিনে তিনি ‘অ’ লিখতে শিখেছিলেন। সেটা এখনো তঁার মনে আছে। বেশি লেখাপড়া করা নিয়ে তঁার মন্তব্য অত্যন্ত দার্শনিকসুলভ। তিনি বলেন, ‘পড়ালেখা শিইখা মূর্খ হওয়ার চাইতে না শিইখা মূর্খ হয়্যা থাকা ভালা!’ তিনি বলেন, ‘দ্যাশে এমুন মেয়র থাকন দরকার, যে আসলে টিপসই দিয়া কাজ চালাইব!’
ফৌজদারি মামলা: নেই
গুলমারা অর্থাৎ চাপাবাজি করা নিয়ে বন্ধু তোতা মিয়ার সঙ্গে মাথা ফাটাফাটি হলেও সেটা মামলা পর্যন্ত গড়ায়নি। তিনি বলেন, ‘আমার লগে মেয়র পদে যারা লড়তে চাইতেছে, তাদের ম্যালা ম্যালা মামলা। এত মামলা নিয়া এদের পায়ে ডান্ডাবেড়ি থাকার কথা, কিন্তু আফসোস এরা দাঁড়াইতে চায়!’ আলীজানের বাপ আশাবাদ ব্যক্ত করেন মামলামুক্ত হওয়ার ফলে তিনি বিপুল ভোটে পাস করবেন!
পেশা: ভিক্ষা
আপাতত কারওয়ান বাজারের রেললাইনের পাশে নীল পলিথিন বিছিয়ে ভিক্ষা করেন। তবে অচিরেই ঢাকা শহরের বাড়িতে গিয়ে গিয়ে ভোটের ভিক্ষা শুরু করবেন। তিনি বলেন, ভিক্ষার পেশায় তিনি অনেক দিন ধরে আছেন। অন্যরা যারা ভোটে দাঁড়ায়ছে, তারা এই লাইনে নতুন। ফলে তার সঙ্গে পেরে ওঠা অসম্ভব!
আয়ের উৎস সম্পর্কে বিবরণী: গড় আয় অনেক কম
কারওয়ান বাজার রেললাইনের পাশে সকাল সাতটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত গড় আয় ৩৫০ টাকা। অর্থাৎ মাসে গড় আয় ১০ হাজার ৫০০ টাকা। তবে এর পুরোটাই তার নয়। জায়গাটা তার স্ত্রী ও নিজের নামে বিভক্ত। ৪০ শতাংশ তার ভাগে, বাকিটা ৬০ শতাংশ তার স্ত্রীর নামে। তাই তার গড় আয় আসলে অনেক কম।
গাড়ি আছে কি না: আছে, তবে নিজের নয়
আলীজানের বাপ বলেন, তার নিজস্ব কোনো গাড়ি নেই। তবে চারটা বেয়ারিং লাগানো গাড়ি তার ছোট ছেলেটির রয়েছে। দূরে কোথাও ভিক্ষা করতে যাওয়ার ইচ্ছা হলে সেই গাড়িতে তিনি চেপে বসেন আর তার ছেলে ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে যায়। ফলে গাড়ির হিসাব পুরোটা ছোট ছেলের নামে।
বাড়ি আছে কি না: দুটি বাড়ি আছে, তবে একটি মেয়ের নামে
দুটি বাড়ির একটি গুলশানে। কোটিরুপা হাউজিংয়ের পাশেই। পুরোনো চ্যালাকাঠ ও পলিথিন দিয়ে তোলা ওই বস্তিবাড়িটা আলীজানের নামে নেই। সেটি তিনি তাঁর মেয়েকে দিয়েছেন। মেয়ে তার জামাই নিয়ে সেখানে থাকে। অন্য বাড়িটায় তিনি নিজেই থাকেন। কারওয়ান বাজার রেললাইনের পাশের বস্তিতেই সেই বাড়ি। এটিও কাঠ ও পলিথিন দিয়ে তৈরি, তবে এটিতে ঘর দুটি। আলীজানের বাপ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, শিগগিরই এই বাড়িটা তিনি তাঁর স্ত্রীর নামে লিখে দেবেন। এসব বলতে বলতে তিনি গেয়ে ওঠেন, ‘লোকে বলে, বলে রে, ঘরবাড়ি ভালা না আমার...কী ঘর বানামু আমি শূন্যেরও মাঝার... লোকে বলে...!’
গান গাওয়ার এক ফাঁকে তিনি আরও জানান, ‘মেয়র পদে পাস করলে স্থাবর–অস্থাবর সম্পদ যা আছে, সব দান কইরা দিমু!’
নির্বাচনী এলাকা: উত্তর–দক্ষিণ দুটোই
কোন এলাকার মেয়র হতে চান?—এমন প্রশ্নে আলীজানের বাপ হতবিহ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন। তারপর বলেন, তিনি উত্তর–দক্ষিণ দুই জায়গা থেকেই মেয়র হতে চান। দুই অঞ্চলেই তার ভাইবেরাদর আছে। তিনি তাদের সবার সমর্থন পাবেন। তিনি জানেন তার ভাইবেরাদররা তার জন্য জীবন পর্যন্ত দিয়ে দেবেন। তিনি সবার দোয়াপ্রার্থী।
পুনশ্চ: খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, আলীজানের বাপের দেওয়া হলফনামা নির্ভুল। তিনি কি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে অংশ নিতে পারবেন? পারলে কি ভোট পাবেন? পেলে কি জয়যুক্ত হবেন? জানতে হলে অপেক্ষা করুন।

রস+আলোয় প্রকাশিত
লিংক:
http://www.prothom-alo.com/roshalo/article/495934/%E0%A6%B9%E0%A6%B2%E0%A6%AB%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE

ভারতের পরাজয়ের ময়নাতদন্ত

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেমিফাইনালে হেরে গেছে ভারত। এই হারের কারণ খুঁজছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ও সাধারণ জনগণ। রস+আলো এগিয়ে এসেছে কারণগুলো শনাক্তের জন্য।
লেখা: আহমেদ খান
.‘এ’ ফ্যাক্টর
‘এ’–তে আনুশকা, ‘এ’–তে আলিম দার
প্রথমজনের উপস্থিতি এবং দ্বিতীয়জনের অনুপস্থিতি ম্যাচে বড় একটা পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। বিরাট কোহলি মাঠে নামার পরই জায়ান্ট স্ক্রিনে আনুশকাকে দেখানো হয়। অত বড় পর্দায় মেকআপহীন আনুশকাকে দেখে কোহলি একটা বিরাট ধাক্কা খান। ভূত দেখার মতো চমকে ওঠেন। মেকআপের রাগ বলের ওপর ঝাড়তে যান কোহলি। কিন্তু ভুল শটের বিষয়টিও মেকআপ করতে পারেন না। ড্রেসিংরুমে ফিরে আসেন ক্যাচ দিয়ে। ফলে কোহলির উঠিয়ে দেওয়া ক্যাচ আর ঝুলে যাওয়া ম্যাচ থেকে কখনোই ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি টিম ইন্ডিয়া। আর ওই না পারার আরেকটি কারণ আম্পায়ার আলিম দার। তিনি থাকলে কোহলিসহ আরও অন্তত দুজন ব্যাটসম্যানের আউটে তিনি নো বল ডাকতেন। আর তাহলেই ম্যাচে ফিরে আসত টিম ইন্ডিয়া।
.

‘আর’ ফ্যাক্টর
‘আর’-এ রুবেল, ‘আর’-এ রোহিত শর্মা
টিম ইন্ডিয়ার বোলারদের বেধড়ক পেটাচ্ছেন টেলএন্ডার মিচেল জনসন। কে বাঁচাবে টিম ইন্ডিয়াকে? তাদের কাছে নেই ইয়র্কমাস্টার রুবেল। একজন রুবেল মানে হলো ঝাঁকে ঝাঁকে জাটকার মতো ঝাঁকে ঝাঁকে ইয়র্কার। রুবেলের মতো ডেথ ওভার স্পেশালিস্ট না থাকার কারণেই টিম ইন্ডিয়াকে পঞ্চাশ রান বেশি দিতে হয়েছে। দলটির বোলারদের উচিত রুবেলের কাছে টিপস নিতে আসা। ওদিকে আরেক ‘আর’ রোহিত শর্মা সাধারণত কিস্তিতে আউট হয়ে অভ্যস্ত। প্রথম কিস্তিতে আউট হওয়াটা তিনি ধর্তব্যের মধ্যেই নেন না। বাংলাদেশের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচেও তা হয়েছে। দ্বিতীয় বা তৃতীয় কিস্তিতে যখন আম্পায়াররা রোহিতকে চক্ষুলজ্জায় আউট দিতে বাধ্য হন, ততক্ষণে তিনি সেঞ্চুরি করে বসেন। এই ম্যাচে আম্পায়াররা ভুলবশত রোহিতকে প্রথম কিস্তিতেই আউট দিয়ে দেন। টিম ইন্ডিয়ার মহান ব্যাটিং লাইনআপ এই ভুল মেনে নিতে পারেনি।
.‘এম’ ফ্যাক্টর
‘এম’-এ মাহমুদউল্লাহ 
‘এম’-এ মুশফিক
ব্যাটিংয়ে প্রথমে তিন–চারটা উইকেট হারানোর পরও দলের রান কীভাবে ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে হয় তার ওপর পিএইচডি লাভ করেছেন মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিক। মাহমুদউল্লাহ হলেন রান–নায়ক। একবার রান করা শুরু করলে আর থামতে পারেন না। কেউ তাঁকে আউটও করতে পারে না। অন্যদিকে মুশফিক হলেন ছক্কাপটীয়সী। খেলতে খেলতে ঠাশঠুশ করে কখন যে তিনি ছক্কা হাঁকিয়ে বোলারের মেরুদণ্ড ভেঙে দেন, বোঝা যায় না। আফসোস, তাঁদের মতো একটা ব্যাটসম্যান ছিল না টিম ইন্ডিয়ার। যদি থাকত, তাহলে সেমিফাইনালটা তারা জিততে পারত।
‘এক্স’ ফ্যাক্টর
আর এই ম্যাচে ভারতের পরাজয়ের সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর ছিল বাংলাদেশের জনগণ। কোয়ার্টার ফাইনালে অনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে পরাজিত করার পর এই জনগণ টিম ইন্ডিয়াকে সমর্থন করেনি; বরং ১৬ কোটি মানুষের সমর্থন ছিল অস্ট্রেলিয়ার প্রতি। অস্ট্রেলিয়া এর আগে কখনো এত বৃহৎ জনগোষ্ঠীর সমর্থন পায়নি। ওই সমর্থন পেয়ে তারা ছিল উজ্জীবিত। বাংলাদেশকে তারা নিরাশ করতে চায়নি।
.‘সি’ ফ্যাক্টর
‘সি’-এ ক্যাপ্টেন
বাংলাদেশ দলের ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মুর্তজা মাঠে নামার আগে সবাইকে চাঙা রাখেন। কখনো বলেন, ‘ধরে দিবানি’, কখনো বলেন, ‘রক্তের শেষ বিন্দু দিয়ে খেলব’। ম্যাচ চলাকালে বোলারদের পিঠ চাপড়ে, ঘাড়ে হাত দিয়ে, বুকে বুক মিলিয়ে উজ্জীবিত রাখেন সবাইকে। সবার ভেতরের আগুনকে তিনি বের করে নিয়ে আসেন সুনিপুণভাবে। মাশরাফি হলেন ক্যাপ্টেন ফায়ার। অন্যদিকে টিম ইন্ডিয়ার ক্যাপ্টেন ধোনি হলেন ক্যাপ্টেন কুল। মাঠে যা–ই ঘটুক না কেন, তার মুখে উজবেকিস্তানি দার্শনিকতা। তিনি দৌড়ে বোলারের পিঠও চাপড়ে দেন না, মাথার চুলও এলোমেলো করে দেন না, শূন্যে লাফিয়ে বুকের সঙ্গে বুকও মেলান না। এসব ব্যাপার তিনি উঠিয়ে রাখেন বিজ্ঞাপনের জন্য। ফলে সেমিফাইনাল ম্যাচে টিম ইন্ডিয়ার খেলোয়াড়দের আগুনটা বেরিয়ে আসেনি। ইশ্, তাদের যদি মাশরাফির মতো ক্যাপ্টেন থাকত! তাহলে তারাও হয়তো অস্ট্রেলিয়াকে বলতে পারত, ‘ধরে দিবানি!’



রস+আলোয় প্রকাশিত
লিংক:
http://www.prothom-alo.com/roshalo/article/489811/%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A7%9F%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%A6%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4