শুক্রবার, ১৫ মে, ২০১৫

সম্ভাবনা


একটা বন্ধ দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে হাজারটা সম্ভাবনার কথা ভাবি।
ভাবি ওপারে একটা নরোম দুপুর তন্দ্রার রাঙে মুড়ে পড়ে আছে টবের গোড়ায়। পাশে হামা দেয়া অলস বেড়াল চোখটা কুঁচকে নিয়ে শরীরটা পাল্টে দেয়। তাতে শাদা কামিজের ওই মেয়েটি আরেকটিবার উঁকি দেয় ওপাশের নীল দরজায়। আর তারপর হাট হাট খুলে যায় একেকটা দরজা। খুলে যেতে যেতে দালানের পর দালান বিল্ডিঙের পর বিল্ডিং খুলে যায়। দরজা থেকে দরজা থেকে দরজা একটা লম্বা টানেলের মতো খুলে যায় এই শহরের। শহর খুলে গ্রাম গ্রাম খুলে নদী নদী খুলে হাড়শাদা আকাশ খুলে যায়। পৃথিবীর ভেতর দিয়ে এক মহাজাগতিক টানেল দূরে আরো আরো দূরে চলে যায়। চলে চলে যায়।
শুধু একটা দরজা, সমস্ত সম্ভাবনা নিয়ে, এপাশে বন্ধ থাকে।

এসএসসি'র কবর


[একচুয়েলি সব পরীক্ষারই কবর রচিত হয়েছে। এসএসসি উসিলামাত্র। জসীমউদ্দিনের কবর কবিতাটা আবার মনে পড়ল। ফলে একটা প্যারোডিও হলো--]

এইখানে তোর এসএসসি'র কবর গুলবাগিচার তলে
একেকটা মাস ভিজায়ে রেখেছি কেরোসিন পেট্রলে।
ভেবেছিনু তারে এই বৎসরে লইয়া করিব শেষ
হরতালে হায় দেরী হয়ে যায় জ্বলে পুড়ে যায় দেশ।
এখানে ওখানে ঘুরিয়া ফিরিছি ভেবে হইতেছি সারা,
সারা দেশ ভরি পেট্রল বোমা ছড়াইয়া দিল কারা।
কারা ছড়াইল এই আতঙ্ক কারা করে সন্ত্রাস
পথে-ঘাটে লোক মরে পড়ে থাকে কারা ফেলে এই লাশ?
এমন করিয়া কেহ লোক মারে কেন ঝগড়ায় পিষে?
হরতাল আর অবরোধ মাঝে হারা হয়ে গেনু দিশে।
কী করিয়া তোর পড়ালেখা হবে কী করিয়া হবে পাশ
চারিদিকে যেন ওরাং ওটাং চারিপাশে যেন বাঁশ!
টিভিটা হইতে খবর আসিছে হরতাল হবে ফের
সব আয়োজন সারা করা গেছে এসএসসি কবরের।
জোড়হাতে দাদু মোনাজাত কর, আয় খোদা, রহমান
ঠিক সময়েই এসএসসি'টা যেন থাকে চলমান!

পা নেই বলে


শার্ট হাঁটে না, শার্টের পা নেই। ফলে কখনো হলো না তার মুখোমুখি বসিবার ঘনঘটা। হাজার হাজার বছর হাঁটিবার পর, শুধু পা নেই বলেই, পাখির নীড়ের মতো ঠিকানা তার হলো না পাওয়া। দুদণ্ড শান্তি পেয়ে যাওয়া হলো না ট্রাম লাইনের দিকে।

পা নেই বলেই রোমশ বিশাল বপু টানটান বোতামে তাকে শরীরে আঁটকে নিলো, ছুটে পালাতে পারলো না পা নেই বলে।

ধরো এর অধিক কী প্রয়োজন!



ধরো
বাতাস তো আছে
বিশেষত মনে
আর কিছু কিছু গাছে

ফুল আছে ফল
আছে কিছু কিছু
আম জাম লিচু

পাখি ডাকে শাখে
কাকই বিশেষত
আর মেঘ আছে কত
মধু না থাক মৌচাকে
ধরো
মোম আছে

পেঁপের ডাঁটায় ভরে
বেশ এক বিজ্ঞানে
জ্ঞানালোক জ্বালি
ধরো ঘরে ঘরে ।

মারমেড



যেদিন তোমায় দেখলাম তুমি ভিজে গেছো আর তোমার চুলে কুয়াশার মতো ঘ্রাণ, তোমার চোখে গলা কাজলের ছোপ, শীতার্ত আহ্বান অধরের ভাঁজে- কম্পমান, গ্রীবায় পারদের বৈভব, তোমার শরীরে পিছলে পরা নীলাভ জ্যোত্‍স্না, আর পা দুইটা মোড়ানো এক কিংখাব, জানলাম তুমি জলপরী এক; সেদিন থেকে আবার মেঘের আশে থাকি, আবার একটা বৃষ্টি যেন হয়, তোমাকে আবার যেন ভেজাতে পারি রিমঝিম, তুমি যেন আবার জলপরী হয়ে ওঠো।

পতনপ্রবণ


ছিলাম মুখে মুখে
আদরে সরসে
দৈন্য হলে দিন
মেঘের বিসুখে
নদীও শুকায়
পাথুরে শ্যাওলা মরে যায়
আর ঝরে যাই আমি

আমিও যাচ্ছি ঝরে
পতনপ্রবণ
বিশ্বাসী শাখা থেকে
বাতাসে বেদনা রেখে
মৃদু নেচে মৃত্যুর দিকে কেঁপে উঠছি ব্যথা
কেঁপে উঠছি সভয়ে
এক ব্যর্থ বিষণ্ণ পাতা

সবার হয়ে গেলে আমিও দাঁড়াই


সবার হয়ে গেলে আমিও দাঁড়াই।
ছড়ানো রয়েছে বীজ উত্তম ফসলের আশায়।

বুটজুতা পরে চলে গেছে দেশ।
মাটি লেগে আছে লাল লাঙলের ফলায়।

টুংটাং ব্ল্যাকহোয়াইট কাঠিবরফের সাথে চলে যায়
দূর আকাশের কাছে এক আঙুলের পথ।

ধা করে ফ্ল্যাশব্যাক সেঁটে আসে দেহে
সম্মুখে ছড়ানো দেবতার দেহ অতিকায়

ছর ছর ছর পতনের শব্দ বাজে নগরে সানাই
সবার হয়ে গেলে শেষে আমিও দাঁড়াই ॥

মঙ্গলবার, ১২ মে, ২০১৫

টক শো কোচিং সেন্টার


কথা একটি শিল্প। আর কোনো শিল্পই শিক্ষা ছাড়া হয় না। ইদানীং দেখা যাচ্ছে, শিক্ষার অভাবে টক শোতে ঘটে চলেছে নানা রকম ঘটনা, দুর্ঘটনা, অপঘটনা! কেউ কারও দিকে আঙুল তুলে কথা বলছে তো কেউ কারও দাঁত ফেলে দিতে চাইছে! কেউ কেউ তো মেরেই বসছেন অন্যকে। এমন ঘটনা এড়াতেই
আমরা এসে হাজির হয়েছি।
দি ওয়ান অ্যান্ড অনলি
সুপার কোচিং সেন্টার—

টক শো কোচিং সেন্টার!
এখানে যা শিখবেন (সাধারণ)
l  কী করে ক্যামেরায় তাকিয়ে কথা বলতে হয়
l  কী করে শার্টের কলারে মাইক্রোফোন থাকার পরও নিশ্বাসের শব্দ আড়াল করতে হয়
l  কেমন করে কথা বললে সামনের ব্যক্তির মুখে থুতু না লাগে
l  সঞ্চালকের কোন ইশারায় কথা বলা বন্ধ করতে হবে, তার নিয়ম
l  বিজ্ঞাপন বিরতির ফাঁকে করণীয়​
l  টক শো চলার সময় ফেসবুক, টুইটার ও ভাইবার ব্যবহার করার বিভিন্ন বাহানা
l  কখন পানি খাবেন, কখন ঢোঁক গিলবেন, সেসবের নিয়ম
l  লাইভ অনুষ্ঠানে প্রকৃতির ডাক অগ্রাহ্য করার কৌশল
l  কিছুই না জানা বিষয়ে কথা চালিয়ে যাওয়ার সূত্র
l  কেউ কথা বলার সুযোগ না দিলে কী করে সবার মনোযোগ নিজের দিকে ফেরাতে হয়

এখানে যা শিখবেন (এক্সক্লুসিভ)
l  কেউ গালিগালাজ করলে নিজেকে শান্ত রাখার উপায়
l  কেউ বারবার আঙুল তুলে দেখালে করণীয়
l  কেউ ব্যক্তিগত আক্রমণ করলে তা প্রতিহত করার কৌশল
l  কেউ ঘুষি চালালে যা করণীয়

সপ্তাহে তিন দিন ক্লাস। মাত্র তিন দিনের ক্লাসে আপনি জেনে যাবেন টক শোর এ টু জেড। আপনি দ্রুত হয়ে উঠবেন টক শোবিশারদ। রাত-বিরাতে আপনার ডাক পড়বে বিভিন্ন টক শোতে। ঘণ্টায় ঘণ্টায় আপনাকে দেখা যাবে একাধিক চ্যানেলের পর্দায়। আপনি হয়ে উঠবেন একজন টক শো সেলিব্রিটি। বলা যায় না একদিন হয়তো আপনার ডাক পড়বে বিবিসি কিংবা সিএনএনের মতো চ্যানেলেও। তাই এক্ষুনি ভর্তি হয়ে যান টক শো কোচিং সেন্টারে!

ভর্তি ফি
সাধারণ দুই হাজার টাকা ও এক্সক্লুসিভ চার হাজার টাকা*
*এক্সক্লুসিভ ক্লাসে চীন থেকে আগত ব্ল্যাক বেল্ট কারাতে মাস্টার দিয়ে কারাতে ও জুজুৎসু শেখানো হয়। আমাদের কোথাও কোনো শাখা নেই।

রস+আলোয় প্রকাশিত
লিংক:

হিমুর হাতে কয়েকটি ব্যালট পেপার

..গতকালই ছোট খালা এসেছিলেন হিমুর কাছে। ভোটার নম্বর দিয়ে গেছেন। হিমু নির্বিকার। ছোট খালু ভোটে দাঁড়িয়েছেন। সবাই সুন্দর সুন্দর প্রতীক পায়, ছোট খালু পেয়েছেন গাধা। এ নিয়ে ছোট খালা অনেক চিল্লাফাল্লা করেছেন, লাভ হয়নি। ছোট খালু অবশ্য মেনে নিয়েছেন। গম্ভীর মুখে বলে বেড়াচ্ছেন, ‘গাধা উপকারী প্রাণী। গাধা মার্কায় দিলে ভোট, শান্তি পাবে নগরের লোক!’
পোস্টারে গাধার ছবির  ছোট খালুর হাস্যমুখ ছবি। পোস্টার দেখে হিমু প্রথমে খালুকে চিনতেই পারেনি। ছোট খালা বলেছিলেন, ‘চোখ পিটপিট করে কী দেখছিস? নিজের রক্তের খালুকে চিনতে পারছিস না নাকি?’
হিমু ছোট্ট করে একটা নিশ্বাস ফেলেছিল। খুব এক্সাইটমেন্ট থাকলে ছোট খালার কথার ঠিক–ঠিকানা থাকে না। গত রাতে যেমন যেমন ভোটার নম্বর দিতে এসে বললেন, ‘শোন, তুই আমার পর কেউ না, তোর খালুও তোর পর না!’
: এটা নতুন করে বলার কী আছে!
: আছে। অবশ্যই আছে। মিথ্যা কথা বারবার বলতে হয়। তোকে এত দিন পর করে রেখেছিলাম, এখন তোর খালু ভোটে দাঁড়িয়েছে বলে আবার আপন করতে আসছি।
এতটুকু বলে ছোট খালা যেন কয়েকবার খাবি খেলেন। মুখটা ডাঙায় ওঠা মাছের মতো ছোট-বড় হলো। তারপর বললেন, ‘শোন, মানুষ নিজের লোকের জন্য কত কী করে, তুইও আমাদের জন্য করবি।’
: আমি কী করব?
: আরে গাধা, ভোট দিবি। গাধা মার্কায় সিল মারবি। গাধা মার্কায় দিলে ভোট, শান্তি পাবে দেশের লোক।
: দেশের লোক মানে? নির্বাচন জাতীয় পর্যায়ে হচ্ছে নাকি?
: চুপ, গাধা! নির্বাচন যে পর্যায়ই হোক, সব সময় দেশের লোক টেনে কথা বলতে হয়। এতে প্রার্থীর ওজন ভারী হয়।
: ছোট খালু তো এমনিতেই ছোটখাটো পর্বত। এর চেয়ে বেশি ওজন হলে কুমড়োপটাশ হয়ে যাবে না?
: চুপ, বেয়াদব! খালু তোর শালা লাগে যে ইয়ার্কি করছিস! সে তোর রক্তের খালু!
হিমু আরেকবার নিশ্বাস ফেলল। বুঝতে পারল, ছোট খালা খুবই উত্তেজনার মধ্যে আছেন। তাঁর নাকের পাটা কিছুক্ষণ পর পর ফুলে উঠছে। ছোট খালা এক তাড়া কাগজ বাড়িয়ে দিলেন হিমুর দিকে। বললেন, ‘নে এগুলো।’
: এগুলো কী?
ছোট খালা ষড়যন্ত্র করার মতো বললেন, ‘ব্যালট ব্যালট!’
হিমু খুবই বিস্মিত হলো। বলল, ‘ব্যালট মানে? ভোট তো কাল! আজ তুমি ব্যালট পেলে কোথায়?’
ছোট খালা বিরক্তমুখে বললেন, ‘কোথায় পেলাম, কীভাবে পেলাম তোর জানার দরকার নাই। দশটা ব্যালট আছে। দশটাতেই গাধা মার্কায় সিল মেরে বাক্সে ভরে আসবি, বুঝলি?’
হিমু বুঝল কি না, বোঝা গেল না। ছোট খালা বললেন, ‘তুই এই দশটা ভোট দিলে ঢাকা-থাইল্যা´ঢাকা প্লেনের টিকিট ফ্রি! কোনো বান্ধবীকে নিয়ে তিন দিন লটর-ঘটর করে আসতে পারবি!’
: আমার তো কোনো বান্ধবী নাই।
: তাহলে কোনো বন্ধুকে নিয়ে যাবি, গাধা!
বলেই ছোট খালা মনে মনে কাটলেন। বললেন, ‘তোকে বারবার গাধা বলা ঠিক হচ্ছে না। তোর খালু শুনলে খুব মাইন্ড করবে। ভোটে দাঁড়ানোর পর লোকটা কথায় কথায় মাইন্ড করে। আমি আছি মহা যন্ত্রণায়!’
আজ ভোট। হিমুর হাতে ছোট খালার দেওয়া ফাকা ব্যালট পেপার। হলুদ পাঞ্জাবি পরে হিমু এসেছে ভোটকেন্দ্রে। পাঞ্জাবিতে পকেট নেই বলে ব্যালট পেপারগুলো হিমুকে হাতেই ধরে রাখতে হচ্ছে। ভোটকেন্দ্রের গেটেই একজন পুলিশ। সে লেবুপানিঅলার কাছ থেকে লেবুপানি খাচ্ছে। বিক্রেতা ছেলেটা খুবই করুণ মুখ নিয়ে পুলিশের দিকে তাকিয়ে আছে। সে ধরেই নিয়েছে, এই লেবুপানির টাকা সে পাবে না। হিমু পুলিশের দিকে এগিয়ে গেল। পুলিশটা কিছুক্ষণ চোখ পিটপিট করল। বলল, ‘আপনি কে? সাংবাদিক? আপনার ক্যামেরা কই?’
: আমি সাংবাদিক না। আমার কোনো ক্যামেরা নাই।
পুলিশের চোখের সন্দেহ আiI গাঢ় হলো। বলল, ‘পাঞ্জাবির ভেতরে লুকায় রাখছেন নাকি? আপনাদের তো কোনো বিশ্বাস নাই। এখানে–সেখানে ক্যামেরা রাইখা আমাদের সাথে কথা বলতে আসেন। তারপর কইরা দেন চিচিং ফাঁক!’
: ক্যামেরা না। অন্য একটা ব্যাপার আছে।
পুলিশ হিমুকে এক পাশে টেনে নিয়ে গেল। বলল, ‘কী ব্যাপার? ক্যান্ডিডেট আছে কেউ?’
: জি, আছে।
পুলিশের মুখটা চকচক করে উঠল। বলল, ‘কে?’
হিমু বলল, ‘গাধা মার্কা।’
পুলিশ উদাসকণ্ঠে বলল, ‘তাইলে আর কী! যানগা, ভোট দেন! আমি ভাবলাম ডুপ্লিকেট মারতে আসছেন!’
: আমার হাতে জাল ভোট। ১০টা। গাধা মার্কায় দেওয়ার জন্য।
: ও আচ্ছা। চুপচাপ সিল মাইরা চইলা আসেন।
হিমু চুপচাপ সিল মারার জন্য ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ঢুকল। লম্বা একটা লাইন। হিমু সেই লাইনে দাঁড়িয়ে ভেতরের লোকজন দেখতে লাগল। চাiদিকে গাধা মার্কার লোকজন। সবার বুকে গাধার ছবি, মাথায় গাধার ফেট্টি। মনে হচ্ছে সবাই যেন গাধা হতে পেরে খুশি। হিমু ছোট খালুর প্রতিদ্বশকুন মার্কার লোকদের দেখতে পেল না। না পোলিং এজেন্ট, না অন্য কেউ। ভেতরে প্রিসাইডিং অফিসার বসে আছেন। হিমু তার কাছে গিয়ে বলল, ‘হ্যালো, গুড মর্নিং। আমার কাছে জাল ভোট আছে।’
প্রিসাইডিং অফিসার অবিরক্তমুখে বললেন, ‘সবার কাছেই আছে। এতে এত গর্ব করার কিছু নাই। যান, ভোট দিয়ে চলে আসেন।’
বলেই প্রিসাইডিং অফিসার পিচিক করে থুতু ফেললেন। হিমু তার হাতের ব্যালট পেপারগুলো নিয়ে তৈরি। হঠাৎ হইচই। দশ–বারোটি ছেলে দড়াম করে দরজা খুলে ভোটকেন্দ্রের ভেতর ঢুকে গেল। তাদের হাতে লাঠিসোটা। সবার মধ্যেই অস্থিরতা। একটা ছেলে বলে উঠল, ‘কত আসছে, কত আসছে, অ্যাঁ? দুপুরের মধ্যে এখানে দশ হাজার লাগবে!’
প্রিইডিং অফিসার মিনমিন করে বললেন, ‘কিন্তু এই কেন্দ্রে তো ভোট মাত্র আট হাজার!’
ছেলেটা ধমকে উঠল। বলল, ‘আর দুই হাজার ভোট তাইলে পয়দা করেন। কেমনে করবেন, আমরা জানি না!’
প্রিইডিং অফিসারের কণ্ঠ খাদের কিনারায় নেমে গেল। প্রায় ফিসফিস করে বললেন, ‘সম্ভব না।’
ছেলেটা বলল, ‘কী করে সম্ভব হয় আমরা দেখাইতেছি। আপনারা বইসা বইসা খালি দেখেন!’
সঙ্গে সঙ্গে অন্য ছেলেরা তাদের হাতের লাঠি দিয়ে টেবিল আর বেঞ্চে আঘাত করতে লাগল। ভয়ংকর পরিবেশ। কয়েকজন আবার ভোটের বাক্সগুলো তুলে নিয়ে গেল। হিমু ভোটকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে এল। তার হাতে জাল ভোট। সে এগিয়ে গেল লেবুপানিঅলার কাছে। বলল, ‘এই জাল ভোটগুলোর বদলে আমাকে এক গ্লাস লেবুপানি দেওয়া যাবে?’
লেবুপানিঅলা বলল, ‘তিয়াস লাগছে, মাগনা পানি খান। এইসব হাবিজাবি জিনিস নিয়া আমি কী করব!’
ভোটকেন্দ্রের ভেতর নারকীয় । হিমু ঢকঢক করে লেবুপানি খাচ্ছে। নেব না নেব না করেও লেবুপানিঅলা ছেলেটা জাল ভোটগুলো নিল। সেগুলো দিয়ে সে তার স্টোভ জ্বালানোর চেষ্টা করছে।

(হু্মায়ূন আহমেদের ‘হিমু’ চরিত্রের ছায়া অবলম্বনে)

রস+আলোয় প্রকাশিত
লিংক:
http://www.prothom-alo.com/roshalo/article/518758/%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%B0-%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A6%9F%E0%A6%BF-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%9F-%E0%A6%AA%E0%A7%87%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%B0

রবিবার, ৩ মে, ২০১৫

স্ত্রীর কাছে জনৈক পাকিস্তানি ক্রিকেটারের পত্র


     
সংলাপ: সাফায়াত হোসেন l ছবি: এএফপি 


প্রিয় অমুক,

আশা করি, তোমরা সকলে ভালো আছো। আমরাও আছি একরকম। জানোই তো, এই কদিন আগেই ঘটনা ঘটে গেছে। তোমরা নিশ্চয় টিভিতে দেখেছ...আমরা পর পর চার চারটা ম্যাচ হেরে গেছি। অন্য কোনো দেশের বিপক্ষে হারলে এটা হোয়াইটওয়াশ হতো। এখানে এভাবে হেরে গেলে ‘বাংলাওয়াশ’ বলে। আমরা ক্রিকেটকে যেমন ক্যাচ মিস, বাজে ফিল্ডিং ইত্যাদি দিয়েছি, বাংলাদেশ তেমনি দিয়েছে ‘বাংলাওয়াশ’। এ বহুত লজ্জার ঘটনা!
বাংলাওয়াশ মানে বাংলায় ধোলাই। অথচ আমাদের ইতিহাস বলে, আমরা এই বাংলাই চাইনি একসময়। আমাদের প্রাচীন নেতা জিন্নাহ সাহেব বহুত দূরদর্শী মানুষ ছিলেন। তিনি তখনই বুঝতে পেরেছিলেন কোনো একদিন এ রকম ঘটনা ঘটতে পারে। তাই তিনি সে সময়ই বলেছিলেন, বাংলা নয়, উর্দুই হবে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। হায়, তা–ই যদি হতো, তাহলে আজ আমাদের আর বাংলাওয়াশ হতে হতো না!
মনটা ভালো নেই। বাংলাওয়াশ হওয়ার পর মাথাটাও কাজ করছে না। স্কুলে–কলেজে থাকতে আমরা শিক্ষাসফরে যেতাম। বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান দেখে নানা রকম শিক্ষা গ্রহণ করতাম। বাংলাদেশের এই সফরটাকেও আমাদের ‘শিক্ষাসফর’ মনে হচ্ছে। সফরের প্রথম দিন থেকেই ক্রিকেটের ওপর নানান শিক্ষা পেতে পেতে আমাদের দিন পার হচ্ছে। বাংলাদেশি খেলোয়াড়গুলো ব্যাটিংয়ে নামলে পিটিয়ে আমাদের বোলারদের তামাতামা বানিয়ে ফেলছে। আর বোলিংয়ের সময় আমাদের ব্যাটসম্যানদের দু–পাঁচটা রানও ঠিকমতো করতে দিচ্ছে না। আমাদের দলে এখন সবচেয়ে সুখী খেলোয়াড় টুয়েলভ ম্যান। হায়, আমি যদি টুয়েলভ ম্যান হতে পারতাম!
সফরে আসার আগে আমরা প্লেনের ভাড়া চেয়েছিলাম। ওরা তা দিয়েওছিল। কিন্তু প্লেনের কয়েকটা টিকিটের জন্য এমন নির্মমভাবে ওরা আমাদের হারাবে, আমরা ভাবিনি। টিম মিটিংয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কোনো দিন কারও কাছে আমরা আর প্লেনের টিকিট চাইব না। আমাদের সকল দুশ্চিন্তা এখন দেশে ফেরত যাওয়া নিয়ে। ওরা আমাদের যাওয়ার টিকিট দেবে কি না, বুঝতে পারছি না। চাইতেও পারছি না...যদি অন্য কোনো ওয়াশ করে ফেলে!
ভালো থেকো, আর বাচ্চাদের টিভির কাছে ঘেঁষতে দিয়ো না।
ইতি
তোমার ক্রিকেটার তমুক

ক্রিকেটারের স্ত্রীর উত্তর
বাংলাওয়াশে যদি ধোলাই ভালো হয়, তাহলে কয়েক প্যাকেট নিয়ে এসো। এখানকার বাজারের ওয়াশিং পাউডারে কাপড় পরিষ্কার হয় না!

রস+আলোয় প্রকাশিত। লিংক:
http://www.prothom-alo.com/roshalo/article/513526/%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%80%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%9B%E0%A7%87-%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A7%88%E0%A6%95-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BF-%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0