সোমবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৫

কে হতে চায় কোটিপতি

.: সুপ্রিয় দর্শকমণ্ডলী, আপনাদের কোটি কোটি শুভেচ্ছা। আপনারা হয়তো এরই মধ্যে জেনে গেছেন, সামনেই পৌরসভা নির্বাচন। আর সেই নির্বাচনে যেসব প্রার্থী অংশগ্রহণ করছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই কোটিপতি। বিএনপির ৫৬ জন এবং আওয়ামী লীগের ৩৩ জন। নির্বাচনের আগেই কিন্তু এই একটি ব্যাপারে বিএনপি জিতে গেছে...হা হা হা! যাহোক, চারদিকে এত যখন কোটিপতির ছড়াছড়ি, তখন আমরা আবার আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি ‘কে হতে চায় কোটিপতি’ নিয়ে! আজ আমাদের সঙ্গে হট সিটে বসবেন কানকাটা রমজান!
: আমি রমজান! কানকাটা রমজান! অন্ধকারের মানুষ। অ্যাই, কেউ আমার দিকে আলো ফেলবেন না!
: কিন্তু আলো না ফেললে আপনাকে দেখবে কীভাবে?
: হা হা হা! আমারে দেখার দরকার নাই। অন্ধকারের মানুষকে দেখতে নাই। এই যে লম্বা মানুষ, আপনার খেলা শুরু করেন!
: হ্যাঁ, এক্ষুনি খেলা শুরু করব। কিন্তু তার আগে আপনার সম্পর্কে আমরা কিছু জানতে চাই...
: ছোট মির্জারে চেনেন?
: ছোট মির্জা?
: হ্যাঁ, ছোট মির্জা। এই খেলা ছোট মির্জাও খেলাইছে একবার...তো সেই ছোট মির্জারে জিগান, এই কানকাটা রমজান আসলে কে? প্রথমে আমি তার জমিদারি দখল করি, তারে নিঃস্ব বানায়ে দিই, কিন্তু সেরের ওপরেও সোয়া সের থাকে! আজ আমি নিঃস্ব...আমারে পথে নামাইছে এক কুতুব! আমি তারে ছাড়ব না, ছাড়ব না আমি তারে...হা হা হা!
: কিন্তু আমরা তো জানি, আপনি হুরমতি আমলের মানুষ...ছোট মির্জার আমলের নন!
: হা হা হা! অন্ধকারের মানুষ হুরমতির আমলে যেমন ছিল, ছোট মির্জার আমলেও ছিল...আর এখন আপনাদের আমলেও আছে! অন্ধকারের সব মানুষই আসলে কানকাটা রমজান! খেল-তামাশা শুরু করেন!
: অ্যাঁ...হ্যাঁ হ্যাঁ...! তো লেডিস অ্যান্ড জেন্টলম্যান, শুরু হয়ে গেল আপনাদের সবার প্রিয় খেলা—কে হতে চায় কোটিপতি! কম্পিউটার মহাশয়, মিস্টার কানকাটা রমজানের জন্য প্রথম প্রশ্নটি পেশ করুন। প্রশ্নটি হলো, নেতা কীভাবে হওয়া যায়?
এ. জনগণের সঙ্গে থেকে; বি. জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে; সি. জনগণের ওপরে থেকে; ডি. জেলে গিয়ে
: এইটা কেমন প্রশ্ন? আমি অন্ধকারের মানুষ, আমি নেতাদের কথা ক্যামনে জানব!
: আপনি ইচ্ছা করলে লাইফ লাইন ব্যবহার করতে পারেন!
: হ্যাঁ হ্যাঁ, আমি লাইফ লাইন ব্যবহার করতে চাই। ফোনো-ফ্রেন্ড ফোনো-ফ্রেন্ড।
: ওকে কম্পিউটার মহাশয়, কানকাটা রমজান তার লাইফ লাইন ফোনো-ফ্রেন্ড ব্যবহার করবেন! অনুমতি দেওয়া হলো। তা আপনি কাকে ফোন করতে চান?
: আমার এক নেতাকে।
: ওকে! তো উনি কোথায় আছেন এখন?
: উনি জেলে আছেন।
: আমরা অত্যন্ত দুঃখিত, মিস্টার কানকাটা রমজান। জেলে আমরা ফোন করতে দিতে পারি না। আপনি অন্য কাউকে ফোন করুন!
: তাইলে? তাইলে কাকে ফোন দেব আমি? আমার শাগরেদরে?
: কিন্তু যে নিজেই শাগরেদ, সে কি বলতে পারবে নেতা কীভাবে হয়?
: পারবে না? এমন প্রশ্ন ক্যান করেন, যা আমিও পারি না, আমার শাগরেদও পারে না, অ্যা? এই অনুষ্ঠান দুর্নীতি আর জোচ্চুরিতে ভরা! আপনেরা সবাই ঠগ! ঠগ আপনেরা! কিন্তু কানকাটা রমজানের সঙ্গে কোনো ঠগবাজি চলবে না! কোটিপতি আমারে হতেই হবে, হতেই হবে!
: কিন্তু কেন আপনি কোটিপতি হতে চান? কী উদ্দেশ্য আপনার?
: কিছুক্ষণ আগেই বললেন না পৌর নির্বাচনের কথা! পৌর নির্বাচনে দাঁড়াইতে গেলে এখন কোটিপতি হইতে হয়। আমি যখনই নির্বাচনে দাঁড়াইতে চাই, তখনই আমার চামচারা বলে, ‘ভাই, আপনার তো কোটি টাকা নাই, তাইলে কীভাবে দাঁড়াইবেন?’ পৌর ইলেকশন করার জন্যই আমি কোটিপতি হইতে চাই! চাই চাই চাই...নাইলে দিমু ফাঁসায়া...দিমু উড়ায়া...দিমু...
: আরেএএএএ ভাই...আরে ভাই, আপনি করছেন কী? করছেন কী? আপনি হট সিট ছুড়ে ফেলছেন কেন?
: হট সিট? কিসের হট সিট? এই সিটে কোনো গরম নাই...
: আরে ভাই, আপনি উত্তেজিত হবেন না...আপনারও মনোকামনা পূরণ হবে...শোনেন ভাই...আরে...মাইরেন না রে ভাই...আমি সাধারণ পাবলিক...শোনেন ভাই...আরে চুল ধইরা টানেন ক্যান? আরে ভাই, এত্তগুলা কোটিপতি প্রার্থী দেইখা আপনি যেমন পাগল হয়ে গেছেন, আমারও তেমন মাথা গুলায়ে গেছে রে ভাই! তাই তো মিথ্যামিথ্যি কোটিপতি কোটিপতি খেলছি...ভাই থামেন...
: কোনো থামাথামি নাই। কোটিপতি না হওয়া পর্যন্ত কোনো থামাথামি নাই। তুই যদি সাধারণ পাবলিক হস, আমিও কানকাটা রমজান না! এত কোটিপতি দেখে তোর যেমন মাথা গুলাইছে, আমারও মাথা আউলায়া গেছে...কোটিপতি বানাবি কি না, বল?
: সুপ্রিয় দর্শকমণ্ডলী, আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন, এই অনুষ্ঠানে একটু টেকনিক্যাল প্রবলেম দেখা দিয়েছে! কোটিপতি দেখার জন্য এই অনুষ্ঠানের দিকে আর আপনাদের তাকিয়ে থাকতে হবে না...আপনারা পৌর নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে থাকেন! দেখেন, কীভাবে কোটিপতিরা বিলিয়নপতি হয়ে যায়! শুভ রাত্রি...শুভ রাত্রি...শুভ রাত্রি...আরে ভাই, কম্পিউটার মহাশয়কে ভাঙবেন না...ভাই...

প্রথম প্রকাশ- রস+আলো

লিংক: http://www.prothom-alo.com/roshalo/article/717940/%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%B9%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A7%9F-%E0%A6%95%E0%A7%8B%E0%A6%9F%E0%A6%BF%E0%A6%AA%E0%A6%A4%E0%A6%BF#comments

আত্মীয় স্বজনদের ফাঁস হওয়া প্রশ্ন


সেই ছেলেবেলা থেকে বৃদ্ধকাল পর্যন্ত আপনার আত্মীয়স্বজন কতই না প্রশ্ন করে যান আপনাকে। যুগে যুগে, কালে কালে এই প্রশ্নগুলোর তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। অপরিবর্তিত প্রশ্নগুলো আজ ফাঁস করা হলো রস+আলোয়!
.বয়স০০-০৩ওম্মা, কী কিউটই না হইছে! ওলে আমার বাবুটা...আসো আসো, কোলে আসো। কী নাম বাবুটার? বড় হয়ে কী হবা বাবু তুমি? কী হবা? ডাক্তার হবা নাকি ইঞ্জিনিয়ার? ইশ্‌, কী কিউট নাক!
শিশুকালে এ জাতীয় প্রশ্ন করতে করতে আপনার গাল-নাক টিপে, কোলে ঝুলিয়ে, আকাশে উঠিয়ে অদ্ভুত আচরণ করতে থাকবেন তাঁরা। আপনি ভ্যাঁ করে কেঁদে দিলেও কোনো লাভ হবে না। শেষ অস্ত্র হিসেবে আপনাকে যেটা করতে হবে, সেটা হলো ব্যক্তিটির কোল ভিজিয়ে ফেলতে হবে!

.বয়স০৪-০৬আপনি যে মনের সুখে স্বাধীনভাবে বেড়ে উঠছেন, তা আপনার আত্মীয়ের সহ্য হবে না। তিনি প্রশ্ন তুলবেন আপনার স্বাধীনতায়। বলবেন, এরে এখনো স্কুলে ভর্তি করাও নাই? কেন ভর্তি করাও নাই? ছেলেকে মূর্খ বানাতে চাও নাকি? এমনিতেও এর মাথার সাইজ ছোট—ভেতরে ব্রেইন বলতে আলাদা কিছু আছে কি না সন্দেহ! এখনই যদি এরে স্কুলে ভর্তি না করাও, তাইলে কম্পিটিশনে নির্ঘাত ফেল করবে! তোমরা কি তা-ই চাও?
কোনো এক জঘন্য দিনে আপনি খেয়াল করবেন, আপনাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আপনার বড় বড় চোখ বড়জোর ছলছল করে উঠবে। এর চেয়ে বেশি আর আপনার কীই-বা করার আছে!
.বয়স০৭-১৩জানপ্রাণ দিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন। স্কুলের পড়ালেখা সেই সঙ্গে টিউশন টিচারের এক্সট্রা লার্জ হোমওয়ার্ক—সবই করছেন আপনি। এ সময় কোনো এক আত্মীয় বা প্রতিবেশী এসে আপনার পড়ালেখাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবেন। বলবেন, ক্লাসে কেমন রেজাল্ট করে? কী, এক শতে মাত্র পঁচানব্বই? এই ছেলেকে দিয়ে কী হবে? না হতে পারবে ডাক্তার, না পারবে ইঞ্জিনিয়ার হতে! এর পুরা লাইফটাই তো শেষ! আমাদের বাসার মালিকের ছেলেটা—এই এত্তটুকু! এখনই ফট ফট করে ইংরেজিতে কথা বলে! আর এই ছেলের মুখে ইংরেজি দূরে থাক, বাংলা শব্দই পাওয়া যায় না! আপনাদের সবাইকে বলে রাখছি, এখনই যদি এর পড়াশোনার দিকটা টেক কেয়ার না করেন, তাহলে কিন্তু খারাবি আছে। আমার কলিগের এক ছেলে, একদম এ রকমই ছিল, পরে বোর্ডিং স্কুলে পাঠিয়ে দিয়ে তবে শান্তি! একেও বোর্ডিং স্কুলে পাঠাতে হবে নাকি?
আগামী তিন মাস আপনি এই আতঙ্কে থাকবেন যে আপনাকে বোধ হয় বোর্ডিং স্কুলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে!
.বয়স১৪-২৫এটা যে আপনার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়, সেটা আপনি কোনো না কোনো আত্মীয়ের কাছ থেকে জানতে পারবেন। সঙ্গে এ-ও জানতে পারবেন যে এই সময়টা যদি আপনি কাজে না লাগান, তাহলে সারা জীবন হয়তো রিকশা চালিয়ে খেতে হবে। আত্মীয়টি বিভিন্নভাবে আপনার ব্যক্তিগত জীবনের খোঁজ নেবেন এ সময়। বারবার প্রশ্ন করবেন, আপনি প্রেম করছেন কি না। আপনার বন্ধুবান্ধব কেমন। জানতে চাইবেন, বাসায় ফিরতে আপনার সন্ধ্যা পার হয়ে যায় কি না। বাসায় অভিভাবকদের জানাবেন যে তাঁর এক সহকর্মীর ছেলে ঠিক এভাবেই সন্ধ্যা পার করে বাসায় ফিরত, পরে জানা গেল ছেলেটা আসলে একটা মেয়েকে ভালোবাসে। মেয়েটার সঙ্গে প্রেম করতে করতে ছেলেটা পরীক্ষায় ফেল করল আর মেয়েটা পাস করে চলে গেল বিদেশে। মেয়েটা এখন অস্ট্রেলিয়ায় ভালো চাকরি করে আর ছেলেটা একটা মুদি দোকান দিয়েছে! এরপর আপনার দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করবেন, তুমিও মুদি দোকান দিবা নাকি?
.বয়স২৬-৩৫এ সময় আত্মীয়রা এসে বারবার জানতে চাইবেন, আপনার পড়ালেখা শেষ হয়েছে কি না! যদি না হয়ে থাকে, তাহলে কেন হচ্ছে না! অমুকের বয়সও তো প্রায় আপনার সমান, সে তো এক বছর হয় চাকরি করছে, আপনি কেন শেষ করতে পারছেন না! তাহলে কি আপনি ফেল করেছেন পরীক্ষায়?
যদি পড়ালেখা শেষ হয়ে থাকে, তাহলে তাঁরা জানতে চাইবেন, আপনি চাকরি করছেন না কেন? করছেন না, নাকি পাচ্ছেন না? রেজাল্ট ভালো না হলে চাকরি পাওয়া যে মুশকিল, তা-ও তাঁরা জানিয়ে দেবেন। এ দেশে চাকরি পেতে যে মামা-খালুর শক্ত জোর লাগে, এ ধরনের তথ্য জানাতে জানাতে তাঁরা আপনার জীবনটা অতিষ্ঠ করে তুলবেন!

.বয়স৩৬-৪৫জীবনে এ পর্যায়ে প্রথম যে প্রশ্নের মুখোমুখি আপনি হবেন, তা হলো, কোথায় চাকরি করছ? দ্বিতীয় প্রশ্নটি হলো, চাকরিটা কেমন? (এ প্রশ্নের ভেতরে লুকানো আছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি, সেটি হচ্ছে স্যালারি কত!) আপনি যদি এ প্রশ্ন না বুঝে বলতে থাকেন ভালোই তো...অফিসটা কাছেই ইত্যাদি, তাহলে তাঁরা অত্যন্ত তীক্ষ্ণ স্বরে জানতে চেয়ে বলবেন, ওসব রাখো, স্যালারি কী রকম দেয়, সেইটা বলো!
আপনি একটা অঙ্ক উল্লেখ করামাত্র তুলনামূলক বিচারে পড়ে যাবেন। জানতে পারবেন আপনার আত্মীয়ের কোনো এক কলিগের ছেলেটির বয়স আপনার চেয়েও কম, অথচ সে আপনার চেয়ে বেশি বেতনের চাকরি করে! এত পড়ালেখা করে, এত কষ্ট করে, এত ভালো রেজাল্ট করে তাহলে আপনার কী লাভ হলো?
আপনিও যখন ভাবতে বসবেন যে সত্যিই কী লাভ হলো, তখন আত্মীয়টি প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়বেন আপনার ওপর। জানতে চাইবেন, পড়ালেখা হয়ে গেছে, চাকরি চলছে এখন তাহলে কিসের অপেক্ষা! আপনি বিয়ে করছেন না কেন?
জীবনের এই বয়সে এসে ‘আপনি বিয়ে করছেন না কেন’ ধরনের প্রশ্নের এত বেশি মুখোমুখি হবেন যে এই প্রশ্ন যেন কেউ আর না করেন, সে জন্যই আপনি দুম করে একটা বিয়ে করে বসবেন!
.বয়স৪৬-৫৫এ সময় আপনাকে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে, সেগুলো এ রকম— 
বিয়ে তো করলে, তা ছেলেমেয়ে কবে নেবে?
ছেলেমেয়ে তো নিলে, কিন্তু তাদের ভর্তি করাবে কোথায়?
ভর্তি তো করালে, কিন্তু পড়ালেখাটা ঠিকমতো হচ্ছে তো?
ছেলেমেয়েরা তো বড় হয়ে গেল, তাদের চাকরিবাকরির কী করলে?
ছেলেমেয়েরা চাকরিবাকরি তো পেল, কিন্তু তাদের বিয়ে-শাদি করাবে না?
.বয়স৫৬-বাকিটাএ সময় আপনি হঠাৎ করে বুঝতে পারবেন আপনি আপনার সারাটা জীবন অন্যের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতেই কাটিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু আপনারও তাঁদের কাছে একটা প্রশ্ন ছিল, আর প্রশ্নটা হলো—ভাই, আপনাদের কোনো কাজ নাই?
কিন্তু এই প্রশ্নটা আপনি তাঁদের করতে পারবেন না। কারণ, তার আগেই তাঁরা পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে প্রশ্নপত্র নিয়ে ছুটেছেন অন্য কোনো ভুবনে!

প্রথম প্রকাশ- রস+আলো

আবার তোরা 'লাভার' হ

জুনায়েদ আজীম চৌধুরীজুনায়েদ আজীম চৌধুরীপ্রেমে ছ্যাঁকা খেয়ে বাবু দার্শনিক হয়ে গেল। তার দার্শনিকতার প্রথম প্রকাশ দেখা গেল ফেসবুকে। তার স্ট্যাটাসগুলো হঠাৎ এ রকম হয়ে গেল—‘জীবন এক রেলগাড়ি, নেই কোনো স্টেশন।’ অথবা ‘উড়ে গেছে পাখি...আজ একা একা থাকি!’ ইত্যাদি। টংদোকানে চা খেতে বসলে সে থম মেরে তাকিয়ে থাকে একদিকে। মাঝেমধ্যে একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলে। আমরা প্রশ্ন করি, ‘বাবু, চা খাবি?’
বাবু একটা দীর্ঘ নিশ্বাসের সঙ্গে জবাব দেয়, ‘কী হবে চা খেয়ে!’
অত্যন্ত দার্শনিকসুলভ উত্তর। আমরা খুবই আনন্দিত হই। আমাদের বন্ধুমহল প্রতিভাহীন। অভিভাবকেরা আমাদের দিকে তাকিয়ে নাক সিঁটকান। বলেন, ‘তোদের দিয়ে কিচ্ছু হবে না!’
বাবু যদি দার্শনিক হয়েই যায়, তাহলে বুক ঠুকে বলতে পারব, ‘দেখো, আমাদের মধ্যে একজন দার্শনিক হয়েছে! দার্শনিক...ফিলোসফার! সহজ কোনো ঘটনা না!’
তা ছাড়া বাবু যদি খুব বড় দার্শনিক হয়েই যায়, তাহলে তার খ্যাতিতে আমরাও কম খ্যাত হব না। সাংবাদিক আসবে আমাদের কাছে। বাবুর শৈশব-কৈশোর নিয়ে প্রশ্ন করবে। বাবু কেমন করে ভাবত, কখন ভাবত, ভাবতে ভাবতে আসলে কী ভাবত—এসব প্রশ্ন করবে। আমরা বলব, ‘বাবুর আসলে জন্মই হয়েছিল দার্শনিক হওয়ার জন্য। সে হাঁটতে হাঁটতে ভাবত, ক্লাসের মধ্যে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ভাবত আর সবচেয়ে বেশি ভাবত বাথরুমে। একবার বাথরুমে ঢুকলে আর বেরোতেই চাইত না!’
আমরা ভাবছিলাম এসব কথা যদি কোনো সাংবাদিক আমাদের জিজ্ঞেস না-ও করে তাহলে ‘ফিলোসফার বাবুকে যেমন দেখেছি’ এ রকম নামে আমরা একটা বই লিখে ফেলব। পরবর্তী সময়ে বই লিখতে হতে পারে ভেবে আমরা সবাই মিলে বাবুকে গভীর পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করলাম। আর তখনই ব্যাপারটা খেয়াল করলাম। ব্রেকআপের পর থেকে বাবু একা একা বিড়বিড় করছে। আর কিছুক্ষণ পর পর নিজের ফোনটা দেখছে। বিড়বিড় করে বলছে, ‘হিমা, অ্যানসার মি, হিমা! অ্যানসার মি!’
আমরা ভড়কে যাই। বাবু কী দার্শনিক না হয়ে পাগল হয়ে যাবে? ঠিক আছে কবি-দার্শনিকেরা একটু পাগলই হয়; কিন্তু ওসব কিছু না হয়ে সোজা পাগল হয়ে গেলে তো মুশকিল!
আমাদের সব মুশকিলের একমাত্র সমাধান মনু ভাই। তিনি হলেন ছোটদের অনন্ত জলিল। আমাদের মনে হয় অনন্ত জলিলের মতোই অসম্ভবকে সম্ভব করাই তার কাজ। আমরা বাবুকে নিয়ে ছুটলাম তার বাসায়। বললাম, ‘ভাই, বাবুকে বাঁচান। তার জিএফকে তার কাছে ফিরিয়ে দেন!’
মনু ভাই ভ্রু কুঁচকালেন, ‘জিএফ?’
শান্ত বলল, ‘জিএফ ভাই, জিএফ...গার্লফ্রেন্ড! বাবুকে ছ্যাঁকা দিয়া নাই!’
বাবু ছলছল চোখে তার করুণ ঘটনা বর্ণনা করল। বলল, ‘আমি ওকে বলছিলাম, যদি তুমি সত্যি আমাকে ভালোবাসো তাহলে আটটা স্টার এসএমএস করো...’
‘করে নাই?’
‘না। উল্টো ফোন অফ করে দিছে। আর ধরে না। আমরা আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম, পরপর তিন দিন কোনো যোগাযোগ না থাকলে আমাদের ব্রেকআপ! সাত দিন পার হয়ে গেছে! হিমা আর আমার লাইফে নাই! সে আর আমাকে ভালোবাসে না!’
‘তোমাদের ভালোবাসা কোনো ভালোবাসা হলো? ফেসবুক আর মোবাইল ফোনের ভালোবাসা! ভালোবাসা ছিল আমাদের সময়ে। তখন কোনো জিএফ-বিএফ ছিল না। ছিল লাভার। আমরা ছিলাম লাভার! জিএফ...এটা কোনো নাম হলো?’
শান্ত বলল, ‘নামে আর কী আসে যায়...শেক্সপিয়ারই বলেছেন...’
মনু ভাই অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘সব সময় ফটর ফটর করে কথা বলবে না। জিএফ-বিএফ আর লাভারের মধ্যে পার্থক্য আছে। লাভাররা হলো রিয়েল প্রেমিক। প্রেমিকার জন্য সব করতে পারে। প্রেমিকাকে বাসা থেকে কলেজ পৌঁছে দেওয়া...কলেজ থেকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া ছিল লাভারের নিয়মিত কর্তব্য!’
‘আমরাও তো দিই!’
‘তোরা তো তোদের জিএফদের সঙ্গে সব সময় কথা বলার সুযোগ পাস। আমাদের শুধু চোখাচোখি হতো। কোনো কথা না!’
‘কথা না হলে কীভাবে বুঝতেন সে আপনাকে পছন্দ করত?’
‘বোঝা যেত! তোদের মতো ফেসবুকীয় প্রেম ছিল না, তাই ইমোশন ঠিকই বোঝা যেত! তখন চোখে কথা হতো, মুখে মুচকি হাসি থাকত। বিকেলবেলা তাদের বাড়ির সামনে সাইকেল নিয়ে দাঁড়ালে ছাদে এসে দাঁড়াত...জানালায় হেলান দিত! আর আমরা একই রাস্তা দিয়ে সাইকেল নিয়ে ঘুরতেই থাকতাম ঘুরতেই থাকতাম, যতক্ষণ পর্যন্ত না সন্ধ্যা হতো! হয়তো তিন মাস কেটে গেছে, আমাদের তখনো কথাই হয়নি!’
‘তাইলে কথা ছাড়া নির্বাক চলচ্চিত্রের মতো প্রেম চলত?’
‘নির্বাক কিন্তু অনেক কথা বলতাম আমরা চিঠিতে! আমাদের ভাষা ছিল চিঠি। আমরা লম্বা লম্বা চিঠি লিখতাম। চিঠি লেখার ভাষা শেখার জন্য পড়তাম মোটা মোটা বই। বই থেকে কোট করতাম। আর তোরা? তোরা গুগলে সার্চ দিয়ে দু-একটা রোমান্টিক লাইন বের করে ফেসবুকে ইনবক্স করে দিস...এভাবে প্রেম টেকে?’
বাবু খুবই কাতর গলায় বলল, ‘তাইলে কী করব?’
‘চিঠি লেখ। চিঠিতে মনের সব কথা জানা। তাকে যে কেমন আছাড়ি-বিছাড়ি ভালোবাসিস, তা বল! নইলে সে জানবে কী করে? আমি তো তোদের ভাবিকে চিঠি লিখেই পটিয়েছিলাম। কী দারুণ লিখতাম! এক সঙ্গে ছাপলে উপন্যাস হয়ে যাবে...! আরে জিএফ-বিএফ ছাড়! আবার তোরা লাভার হ! লাভার! আমার মতো লাভার হ!’
ঠিক এ সময় ভাবি ঢুকলেন ঘরে। আমরা সালাম দিতে গেলাম, কিন্তু ভাবি আমাদের খেয়ালই করলেন না। মনু ভাইকে বললেন, ‘তোমাকে না বলছিলাম আলু আনতে?’
‘আহা যাচ্ছি তো! ছোট ভাইরা আসছে...আমাদের লাভস্টোরিটা শোনাচ্ছিলাম আরকি...বলছিলাম কেমন লাভার ছিলাম আমি!’
‘কেমন লাভার মানে কী? তুমি ছিলে অত্যন্ত ভ্যাবদা লাভার! আমার সঙ্গে প্রথম কথা বলতে তুমি লাগিয়েছিলে পাক্কা দেড় বছর। বেকুবের মতো শুধু পেছন পেছন ঘুরতে; আমি যেখানে যেতাম সেখানেই, অথচ কথা বলতে পারো না! এখনকার ছেলেমেয়েদের দেখ, কত্ত স্মার্ট! দেখা হলো, পছন্দ হলো, বলে দিল আমি তোমাকে পছন্দ করি! আর এইটা বলতে কি না, তুমি লাগিয়েছিলে দেড়টা বছর! গাধার গাধা একটা!’
‘কী বল এত তাড়াতাড়ি বলে ফেলবে?’
‘বলবে না? তিন বছর ধরে ঘুরে শুধু “আই লাভ ইউ”ই যদি বলে তাহলে প্রেমটা করবে কখন? ঘুরবে কখন? এক সঙ্গে কফি খাবে কখন? প্রেমটা বুঝবে কখন?’
‘এদের তো শুধু ফেসবুক! চিঠি না লিখলে প্রেমের বুঝবে কী? আমি তোমাকে কত দারুণ দারুণ চিঠি লিখতাম...’
‘তুমি লিখতে? আমি জানি না ওই চিঠি কে লিখে দিত? ওই চিঠি লিখত তোমার চাচাতো ভাই। সে লিখত তার লাভার মিতুর জন্য। তুমি সেখান থেকে কপি করতা! মিতু তো আমার মামাতো বোন...আমরা দুজন মিলে বসে বসে তোমাদের দুজনের চিঠি মেলাতাম আর হাসতাম! তারপর দুজন মিলে একই উত্তর লিখতাম তোমাকে আর তোমার চাচাতো ভাইকে!’
মনু ভাই যেন আকাশ থেকে পড়লেন। বললেন, ‘এইটা কী বললা তুমি? এই ঘটনা তুমি জানো?’
‘জানি না আবার! তুমি ছিলে এক গাধা লাভার, তোমার চাচাতো ভাই ছিল আরেক গাধা...’
মনু ভাই আর ভাবির কথোপকথন শুনতে শুনতে আমরা কনফিউজড। আবার আমরা লাভার হব নাকি জিএফ-বিএফ থেকে যাব? এ সময় বাবুর ফোনে এল তার জিএফ বা লাভারের টেক্সট, ‘স্যরি স্যরি স্যরি...এত্তগুলা স্যরি আমার বাবুটা! ফ্যামিলি ট্যুরে দুম করে ভুটান গেছিলাম। তোমাকে জানানোর সুযোগ হয়নি। স্যরি আমার, বাবুটা!’
বাবু হেসে ফেলল। আমরাও হেসে বললাম, ‘দে, একটা কড়া করে রিপ্লাই।’
বাবু কোমল গলায় বলল, ‘না, আজকে একটা চিঠিই লেখি...একবার লাভার হয়ে দেখি!’

প্রথম প্রকাশ- রস+আলো
লিংক: http://www.prothom-alo.com/roshalo/article/711907/%E0%A6%86%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%A4%E0%A7%8B%E0%A6%B0%E0%A6%BE-%E2%80%98%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E2%80%99-%E0%A6%B9

আমার আব্বা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না


Decrease fontEnlarge font
পাথরঘাটে নৌকা যখন ডাঙা পায় তখন আব্বার ঘড়ির কাঁটা এগারটার ঘরে টিমটিম করে জ্বলছে। বর্ডার তিনি পার হয়েছিলেন দিনের বেলাতেই। দুপুরের দিকে। ওদিকে মিলিটারির যাতায়াত কম। খুব মওকাবুঝে সপ্তাহে হয়ত দুয়েকবার যায় তারা, ঘণ্টা খানেকের বেশি থাকেও না। কিন্তু ক্যাম্পটা তো রহনপুরেই। হাইস্কুলটায়। আর স্কুলটা এই পুনর্ভবার ওপরেই নিজের একটা ছায়া ফেলে পাহাড়ী টঙের ভূত হয়ে ঝুলছে। আব্বাকে তাই সাবধান হতে হয়। ভোলাহাটেই কাটাতে হয় সারাটা বিকাল। মাঝিও তেমনই বলছিল—মিলিটারিরা লদীক খুব ডড়ায়। দিনে তাও আসে দু’চারইরবার মাগার সান্ধের বেলায় আসেই না!



পাথরঘাট থেকে আব্বার বাড়ি দূরে না। একটা দশধাপির সিঁড়ি উপরে উঠে গলিপথে এগুলে দুইটা বাড়ি পর নিজের বাড়ি। এই অন্ধকারের ভেতরেও নিজের বাড়িটা দেখে অদ্ভুত একটা শান্তি অনুভব করেন আব্বা। বুকে কেমন একটা ঘ্রাণ। ফুল ধরেছে নাকি বাড়ির উঠানে?



ফলে সূর্য নদীতে নাক গুঁজলে আব্বা রওনা দেন। অল্প সময়ের রাস্তা হলেও একটিন বিস্কুট নিয়ে নেন শ্যালকের দোকান থেকে। শ্যালক কোন সাহসে এখনো, এই যুদ্ধের ভেতর ভোলাহাট বাজারে দোকানদারি করে চলেছে কে জানে! আব্বার মাথায় ঢোকে না। তিনি ফিরতেই চাননি দেশে। ঢাকায় গোলাগুলি হওয়ার পরেও আব্বা বুঝতে পারেননি যুদ্ধ লেগে যাবে দেশে। তখনও তিনি মুজিবরের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। মুজিবর নিশ্চয় এমন কোনো জাদু করবে সব ঠিক হয়ে যাবে! কিন্তু আব্বা চোখের সামনেই দেখলেন উত্তাপ কমল না বরং হু হু করে বেড়েই চলল। আব্বা তার শ্যালকের মতো নিজের দোকানটা আর খুলে রাখতে পারলেন না। চাচাকেও বললেন সব গুটাতে। আগে জান তারপর জাহান! নিজের স্ত্রী, গ্যান্দা গ্যান্দা তিন সন্তান নিয়ে প্রথমে ভোলাহাট গেলেন শ্বশুরালয়ে। তারপর সেখান থেকে নদী পার হয়ে একেবারে রিফ্যুজি ক্যাম্পে। মনোহারি-মুদিখানার দোকান থেকে যতটা মালামাল সম্ভব বের করে ঢুকিয়ে রাখলেন বাড়ির একমাত্র পাকা ঘরটায়। অন্য ঘরগুলোতেও মারলেন তালা। হাতের কাছে যা টাকা-পয়সা ছিল সবই নিলেন।

কিন্তু বসে খেলে বাদশাহীও ফুরায়। রিফ্যুজি ক্যাম্পে দুই মাসের মাথায় জীবন অতীষ্ট হয়ে উঠল। খাবার নাই, স্বস্তি নাই, হাতে টাকা নাই। তার সঙ্গে ছেলেমেয়েদের শরীরে হলো ঘাঁ। দুধের অভাবে ছেলেমেয়েগুলো মুখ শুকিয়ে রাখে। এই কদিনেই তাদের চোখ বড় বড় হয়ে গেছে। লিকলিকে হয়ে গেছে হাত-পা। ওদিকে ক্যাম্প থেকেই খবর পাচ্ছেন রহনপুরে মিলিটারি ঢুকে গেছে। চলছে লুটতরাজ। আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছে কোথাও কোথাও। চলছে গরু আর ছাগল পুড়িয়ে খাওয়ার উৎসব।

মিলিটারি। শব্দটার মধ্যেই এক ধরনের গা শিরশির করা ভয় আছে। আব্বা এই ভয়ের মুখোমুখি হতে চাননি বলেই ফিরতে চাননি দেশে। কিন্তু খিদার কষ্ট সবসময়ই ভয়কে হারিয়ে দেয়। রিফ্যুজি ক্যাম্পের জীবন যখন একেবারেই ময়লা কাঁথার মতো ঘিনঘিনে হয়ে ওঠে আব্বা তখন বাধ্য হন দেশে ফিরতে। উদ্দেশ্য একটাই—গোপনে এসে কিছু টাকা-পয়সার যোগাড় করে ফিরে যাবেন।

পাথরঘাট থেকে আব্বার বাড়ি দূরে না। একটা দশধাপির সিঁড়ি উপরে উঠে গলিপথে এগুলে দুইটা বাড়ি পর নিজের বাড়ি। এই অন্ধকারের ভেতরেও নিজের বাড়িটা দেখে অদ্ভুত একটা শান্তি অনুভব করেন আব্বা। বুকে কেমন একটা ঘ্রাণ। ফুল ধরেছে নাকি বাড়ির উঠানে?

দরজা হা করে খোলা। আব্বা অবশ্য আশাও করেননি দরজায় তালাটা ঠিকঠাক থাকবে। তবু এভাবে হা-খোলা দরজা দেখে ভালো লাগে না আব্বার। ভেতরে ঢোকেন কেমন অস্বস্তিতে। নিজের বাড়িতে নিজেকেই অচেনা লাগে। এমনকি চোরও মনে হয় নিজেকে। যেন এক অনধিকার চর্চা করছেন। বাড়িতে ঢুকেই তিনি ভাঁড়ার ঘরের দিকে চলে যান। কোমরে আটকানো তিন ব্যাটারির লাইটটা খুব সন্তর্পণে মারেন ঘরটার দরজায়। তালা ভাঙা। দরজাটা হাত দিয়ে ঠেলতেই দেখেন ঘরের ভেতরটায় যেন কোনো মোরগ লড়াই হয়েছে। দোকান থেকে নিয়ে আসা মালসামানগুলো এমনভাবে সব ছড়ানো যেন কেউ গুপ্তধন খুঁজে গেছে এখানে। চাল-ডালের বস্তাগুলো নেই। সাবানের বাক্স আর দুধের টিনগুলোও লুট হয়েছে। আর লবণের বস্তাটাকে খুন করার উদ্দেশ্যে কেউ যেন তার পেট ফাঁসিয়ে দিয়েছে। এলোমেলো গড়িয়ে আছে আগরবাতি। কেরোসিন তেলের ড্রামটা ভাঙা।

আব্বা হাউমাউ করে কাঁদতে গিয়েও কাঁদলেন না। কান্নাটাকে সম্পূর্ণ গিলে মাটির ঘরগুলোতে ঢুকলেন। একটা ঘরে ঢুকলে আরো তিনটা ঘরে যাওয়া যায়। টর্চ দিয়েই একবার ঘরগুলো দেখলেন, হারিকেন জ্বালানোর উদ্যম পেলেন না। নেই। ঘরের কোথাও কোনো আসবাব নেই। নিজের বাগানের গাছ কেটে, উঠানে কাঠ চেরাই করিয়ে, নিজের চোখের সামনে খাট আর চেয়ারগুলো বানিয়েছিলেন। স্ত্রীর শখ মেটাতে একটা ড্রেসিং টেবিলও বানিয়ে ছিলেন। লম্বা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আব্বা বুক ফুলিয়ে দাঁড়াতে ভালোবাসতেন। কিছুই নাই সেসবের। শুধু আলমারিটা আছে। আলমারিটাকে কোপানো হয়েছে ধারালো কিছু দিয়ে। কাঁসার থালাবাসনের জায়গাটা এখন মিলিটারির মতো হা হা হা করে গোঁফ তাতিয়ে হাসছে। সে হাসিতে আব্বার কলিজা হিম হয়ে যায়।

পাত কুয়াতে পুরনো বালতিটা এখনো রশিসমেত আছে। আব্বা রশিটা নামিয়ে পানি উঠিয়ে আনলেন। কুকুরের মতো চুকচুক করে বালতিতে জিভ দিয়েই পানি খেলেন। তারপর মাথায় পানি ঢালেন। মধ্যরাতের সমস্ত নীরবতাকে খানখান করে যেন কলতলার শানে পানি পড়ে। রক্ত ছলকে ওঠে আব্বার। নিশ্চয় কেউ টের পেয়ে যাবে যে তিনি এসেছেন। আব্বা কিছুক্ষণ নড়তে পারেন না। হাতে শূন্য বালতিটা নিয়ে আব্বা শুধু নিজের বুকে ড্রাম পেটানো শোনেন। যেন এক্ষুনি মিলিটারিরা লেফট-রাইট লেফট-রাইট করতে করতে ঢুকবে তার বাড়িতে।

ফজরের আজানে ঘুম ভাঙে আব্বার। নিজের অজান্তেই কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলেন ঘরের মেঝেতে। ধড়ফড় করে উঠে বসতেই বাইরে কয়েকটা ছায়ামূর্তি দেখতে পান তিনি। কে? বলতে চাইলেও বলতে পারেন না। যেন কথা বলার সমস্ত অধিকার তিনি হারিয়েছেন। দেখেন ছায়ামূর্তিগুলো ঠিক ভূতের মতো ঘোরাফিরা করছে। এগিয়ে যাচ্ছে ভাঁড়ার ঘরের দিকে। ভেতরে উঁকি দিয়ে একটা ছায়া বলল, আগেই বলছিলাম এই বাড়িত আর কিচ্ছু নাই!

অন্যজন বলে, হ। রহমইত্যারা সব নিয়া গেছে!

আরেকজন বলে, সেই ভাগ তো তুমিও পাইছিলা। পাও নাই।

প্রথম জন বলে, ভাগের মাল কবেই ফুরায়। কিন্তুক শালা পুরা বাড়িটাই তো খালি! এইখানে আইসা আর লাভ নাই!

আব্বার গলার স্বর বুঁজে আসে। রাজাকার আর আলবদর বাহিনি তৈরি করেছে মিলিটারিরা। তাদের কাজই এখন বাড়ি বাড়ি ঢুকে লুটতরাজ করা। ওই ছায়াগুলো, ভূতের মতো ছায়াগুলোও নিশ্চয় মিলিটারিদের বন্ধু। মিলিটারিদের সাথে তাদের দহরম। বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড় হয়, মিলিটারির থেকে এরা নিশ্চয় আরো বেশি হিংস্র।

ছায়াগুলো বেরিয়ে আসতে থাকে। আসতে গিয়ে একটা ছায়া আটকে যায়। কী গাছ বে এটা?

হাশনাহেনার। চিনতে পারিসনি?

গন্ধ কত বে ফুলের!

হ। এই গন্ধে সাপ আসে।

কী কহছিসবে?

যে এতক্ষণ কথা বলছিল না সেই ছায়ামূর্তিটা হঠাৎ গাছটাকে মাড়াতে শুরু করে। অন্যরা বলে, কী করছিস কী করছিস?

ছায়ামূর্তিটা বলে, মাইরা ফেলব গাছটারে...উপড়ায়ে ফেলব...

ছায়ামূর্তিটা দারুণভাবে টানাটানি শুরু করে গাছটা নিয়ে। ওই সময় আব্বার কী জানি হয়। হয়ত ঘোরের ভেতর চলে যান। উঠানে একদল ছায়া তার লাগানো হাসনাহেনা গাছটাকে উপড়ে ফেলছে দৃশ্যটা কেমন স্বপ্নদৃশ্যের মতো হয়ে যায়। যেন ছায়াগুলো ভোরের আলোর ভেতর ঢুকে যাচ্ছে। আব্বা প্রচণ্ড শব্দে চিৎকার করে ওঠেন, শুয়োরের বাচ্চারা...!

ছায়াগুলো চমকায়। এ সময় কেউ ঘরের ভেতর থাকতে পারে তারা ভাবতে পারে না। তারা অনেকটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। ভোরের আলোয় ছায়াগুলো পরিচিত হয়ে ওঠে। ছায়াগুলোর কাছেও আব্বা পরিচিত হয়ে ওঠে। একটা ছায়া বলে, চল চল!

ছায়াগুলো বেরিয়ে যায়। আব্বা ওই সকালেই পুনর্ভবার সাঁতরে ওপারে গিয়ে একটা নৌকা ধরেন। ভোলাহাট দিয়ে ভারতের রিফ্যুজি ক্যাম্প চলে যান। যেখানে তার স্ত্রী আর অসুস্থ ছেলেমেয়েরা এই অপেক্ষা করছে যে তাদের জন্য তিনি খাদ্য আর পয়সা নিয়ে আসবেন। কিন্তু আব্বা এসব নিয়ে যেতে পারেন না। আব্বা নিয়ে যান শুধু একটা গল্প। যে গল্পে তিনি তার হাসনাহেনার গাছটাকে কিভাবে বাঁচিয়েছেন তার বর্ণনা থাকে। গল্পটা বলতে বলতে আব্বার ভরসা হারানো ভীত চোখগুলো অদ্ভুত উজ্জ্বল হয়ে যায়।

প্রথম প্রকাশ- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রবিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৫

বিদ্রোহী প্রার্থী


প্রচ্ছদ: জুনায়েদ আজীম চৌধুরীভূমিকা
যাঁরা দলের মধ্যে থেকেও দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কথা শোনেন না, তাঁরা বিদ্রোহী। তবে এমন বিদ্রোহী অন্যান্য সময়ে দেখা যায় না। দলের সমালোচনা বা আত্মসমালোচনায় তাঁরা নিষ্প্রভ ও নিষ্প্রাণ থাকেন। দলের ভুলগুলোও জোর গলায় ঠিক বলে চালাতে চান। দলের ‘হ্যাঁ’-এ হ্যাঁ এবং দলের ‘না’-এ না মেলান। কেবল নির্বাচনের সময়ই দল যদি তাঁদের মনোনয়ন না দেয়, তাহলে তাঁরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেন। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি দলেই বিদ্রোহী প্রার্থীদের মঞ্চে, রাস্তায়, ফুটপাতে, চা-খানায় বিদ্রোহ করতে দেখা যায়।
আকৃতি-প্রকৃতিখুবই আশ্চর্যের বিষয় যে বিদ্রোহী হলেও এঁরা দেখতে দলের অন্যদের মতোই। মঞ্চ পেলেই এঁরা ভাষণ দেন, আমজনতা পেলেই অঙ্গীকার করেন, কর্মী পেলেই মিছিলে বের হন। এঁরা দলের ব্র্যান্ড পোশাক পরেই ঘুরে বেড়ান, এবং শত কথা বললেও দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কোনো সমালোচনা করেন না।
.উপকারিতানির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী অংশগ্রহণ করলে নির্বাচন সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে আগ্রহ বাড়ে। তাঁরা নির্বাচনের খোঁজখবর রাখেন। এবং একই দলের দুই নেতার চুলোচুলি মুলোমুলি দূর থেকে বসে দেখে বেশ মজা নেন। নির্বাচনের স্বল্প সময়ে জনগণের মনে এই আনন্দ কেবল বিদ্রোহী প্রার্থীই দান করতে পারেন।
অপকারিতাইতিহাস বলে বিদ্রোহী প্রার্থীরা বেশি দিন বিদ্রোহী থাকেন না। নির্বাচনে জিতে গেলে তাঁরা আবার দলে যোগ দেন এবং বিদ্রোহী থেকে অনুগত নেতায় পরিণত হন। আর নির্বাচনে হেরে গেলে তাঁরা মুখ বন্ধ করে দলে যোগ দিয়ে বিদ্রোহী থেকে অনুগত কর্মীতে পরিণত হন। স্বল্প সময়ের এই বিদ্রোহ তাই জনগণকে দীর্ঘ সময়ের আনন্দ দিতে পারে না।
উপসংহার
ছেলে হোক মেয়ে হোক দুটি সন্তানই যেমন যথেষ্ট, তেমনি দলীয় হোক আর বিদ্রোহী হোক ভালো নেতাই আসলে প্রয়োজনীয়। নির্বাচনে নির্বাচিত হোক ভালো নেতা।

প্রকাশ: রস+আলো

ফেসবুকের মতো ভালোবাসা

আঁকা: ষুভআঁকা: ষুভএক দেশে, যেমন থাকে, তেমনি ছিলেন এক রাজা।
রাজা খুব প্রফুল্ল চিত্তের—কথায় কথায় হাসেন। রাজার অনেক সুখ। এই সুখের উৎস তাঁর তিন কন্যা। তিন কন্যাই রাজাকে খুব ভালোবাসে। বড় কন্যা রাজার মাথার চুলে বিলি কেটে দেয় আর মেজো কন্যা রাজার চুলে দেয় কলপ করে। ছোট কন্যাটা অবশ্য একটু অন্য রকম। রাজার পাশে পাশে থাকে ঠিকই; কিন্তু সারাক্ষণই সে ঘাড় গুঁজে থাকে তার মোবাইল ফোনে। রাজা বলেন, ‘কী করিস তুই মাথা নিচু করে?’
: ফেসবুক দেখি, বাবা।
: ফেসবুকে কী আছে? আয়, আমার কাছে আয়!
রাজকন্যা রাজার কাছে যায়। কিন্তু তখনো সে তাকিয়ে থাকে তার স্মার্টফোনের দিকেই। রাজা ছোট্ট করে নিশ্বাস ফেলেন। মনে মনে ভাবেন, এই ছোট মেয়েটা কেমন যেন হয়ে গেল! মেয়েটা কি তাহলে তাঁকে ভালোবাসে না?
সন্দেহ বেশি দিন ধরে রাখতে পারেন না রাজা। একদিন বসেন পরীক্ষা নিতে। কোন মেয়ে তাঁকে কেমন ভালোবাসে, সেই পরীক্ষা!
আসে বড় কন্যা। রাজা জিজ্ঞেস করেন, ‘তুই আমাকে কেমন ভালোবাসিস, মা?’
কন্যা বলে, ‘আমি তোমাকে মাথার চুলের মতো ভালোবাসি, বাবা!’
রাজার মাথায় চুল কম। নিজের কেশ-বিরল মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে রাজা হেসে ওঠেন। মাথার চুল যার যায়, সে-ই জানে চুল কতটা গুরুত্বপূর্ণ। বড় কন্যা তাহলে তাঁকে সত্যিই অনেক ভালোবাসে! রাজা খুশি হয়ে বড় কন্যাকে একটা বিএমডব্লিউ গাড়ি উপহার দেন।
এরপরে আসে মেজো কন্যা। রাজা খুশি খুশি মনে জানতে চান, ‘মা, তুই আমাকে কেমন ভালোবাসিস?’
মেজো কন্যা চটপট বলে, ‘তোমাকে তো বাবা আমি কলপের মতো ভালোবাসি!’
রাজা অত্যন্ত খুশি হন। তাঁর কেশ-বিরল মাথায় যে অল্প কটা চুল বাকি আছে, তার সবই ধবধবে সাদা। সেই চুল তো এই কলপেই কালো হয়ে থাকে। বৃদ্ধ রাজাকে কলপই তারুণ্য ফিরিয়ে দেয়। মেজো কন্যাকে রাজা খুশি হয়ে একটা চার্টার্ড প্লেন উপহার দেন।
রাজা এবার ডাকেন ছোট কন্যাকে। ছোট কন্যা স্মার্টফোনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আসে রাজার কাছে। রাজা বলেন, ‘মা, তুই আমাকে কেমন ভালোবাসিস?’
ছোট কন্যা মাথা না তুলেই চট করে বলে, ‘একেবারে ফেসবুকের মতো ভালোবাসি, বাবা!’
রাজা ভীষণ আহত হন। এই মেয়ের মাথায় ফেসবুক ছাড়া অন্য কিছু কি নেই? আহত চিত্তেই রাজা ছোট রাজকন্যাকে শাস্তি দেন। বড় মর্মান্তিক শাস্তি! নির্জন এক দ্বীপে দশ বছরের নির্বাসন।
ছোট কন্যাকে বিদায় দেওয়ার সময় রাজা বলেন, ‘তুই কি কিছু নিতে চাস সঙ্গে?’
রাজকন্যা বলে, ‘চাই। আমার স্মার্টফোন আর সেটার চার্জার!’
রাজা আরও একবার ধাক্কা খান। তিনি ভেবেছিলেন, মেয়েটা হয়তো নির্বাসনে না যাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করবে। ‘বাবা’ বলে তাকে জড়িয়ে ধরবে। রাজাও তার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে শাস্তি মওকুফ করবেন। কিন্তু তা নয়, সে চায় কিনা স্মার্টফোন আর চার্জার!
রাজার রাগ আরও বাড়ে। ছোট রাজকন্যাকে পাঠিয়ে দেন নির্বাসনে। মনে মনে বলেন, ‘আমার দুই কন্যাই যথেষ্ট! লাগবে না আমার ফেসবুকের মতো ভালোবাসা!’
রাজা বসেন সিংহাসনে। কিন্তু রাজার মুখে আর হাসি নেই। বেজার মুখে রাজকার্য করেন। করতে করতে হাঁপিয়ে ওঠেন। শুধু ছোট রাজকন্যার কথা মনে পড়ে। সে যেন তাঁর সব আনন্দ নিয়ে নির্বাসনে গেছে। আহা রে, সেই মুখটা যদি আবার দেখতে পেতেন রাজা!
মন্ত্রী দিলেন বুদ্ধি। বললেন, ‘রাজা মশাই, রাজকন্যা তো সব সময় ফেসবুকেই থাকে। আপনিও একটা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলুন! তাহলেই তাকে দেখতে পাবেন!’
রাজা বলেন, ‘ফেসবুকে ছবিও দেখা যায় নাকি মন্ত্রী?’
: হ্যাঁ রাজা মশাই। ছবি দেখা যায়, মনের কথা লেখা যায়, দিন-দুনিয়ার সব খবর পাওয়া যায়! ফেসবুক বড় কাজের জিনিস!
: বলো কী!
রাজা একটু থমকে যান। ফেসবুক যে এত কাজের জিনিস, তা তো তিনি জানতেন না! মন্ত্রীর কথায় রাজাও একটা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে ফেললেন। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালেন ছোট রাজকন্যাকে।
বাবাকে ফেসবুকে দেখে রাজকন্যাও খুব অবাক। শুরু হয়ে যায় মেয়ে-বাবার ফেসবুকে যোগাযোগ। রাজা স্ট্যাটাস দেন। মেয়ে সেই স্ট্যাটাসে কমেন্ট করে, লাইক দেয়। মেয়ের লাইক পেয়ে রাজা তো খুবই খুশি। মেয়ের লাইক পাওয়ার আশায় রাজা আরও ভালো ভালো স্ট্যাটাস খুঁজতে থাকেন। দারুণ কিছু মাথায় এলেই সেটা লেখেন ফেসবুকে। আর মেয়েটাও যেন তৈরি থাকে। সঙ্গে সঙ্গে তার লাইক পৌঁছে যায় রাজার স্ট্যাটাসের নিচে। রাজা মেয়েকে বলেন, ‘মা রে, তোকে তো এখন খুব দেখতে ইচ্ছা করছে...!’
মেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঠোঁট বাঁকানো সেলফি তুলে রাজাকে ইনবক্স করে। রাজার চোখে পানি চলে আসে। আবার মেয়ের এ রকম অদ্ভুত ভঙ্গির ছবি দেখে হেসেও ওঠেন রাজা।
রাজা হেসেছেন শুনে রাজ্যজুড়ে ধন্য ধন্য রব ওঠে। সবাই বলে, ‘ধন্য ছোট রাজকন্যা, ধন্য তার ফেসবুক!’
ওদিকে মেয়েও রাজাকে ছবি পাঠাতে বলে। রাজাও মেয়ের মতো ঠোঁট বাঁকিয়ে সিংহাসনে বসে ‘সিংহাসনফি’ তুলে পাঠান মেয়েকে। মেয়ে তো ‘এত্তগুলা’ খুশি!
রাজা আর ছোট রাজকন্যা ফেসবুকের মাধ্যমে সব সময় নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতে থাকে। কখন কী খেল, কখন কী ভাবল, কখন কী মনের অবস্থা—সব জানায় তারা। রাজা বলেন, ‘তোকে নির্বাসনে দিয়ে তো আমার বিরাট ভুল হয়ে গেছে! এখন এই বুড়া বয়সে বুড়া আঙুল দিয়ে মোবাইল ফোন চাপতে চাপতে জীবন যাওয়ার উপক্রম!’
মেয়ে ওদিক থেকে বিরাট একটা স্মাইলি পাঠায়। রাজা লেখেন, ‘তোকে আর নির্বাসনে থাকতে হবে না মা, চলে আয়...!’
কিন্তু লেখাটা পাঠানোর আগেই ফেসবুক বন্ধ হয়ে যায়। রাজা কোনোভাবেই আর লেখাটা পাঠাতে পারেন না। মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন না। রাজা দশদিকে লোক পাঠান। কী হলো? হঠাৎ করে ফেসবুক বন্ধ হয়ে গেল কেন? কেউ কিছুই বলতে পারে না। রাজার আর মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ হয় না। রাজার আর কিছুই ভালো লাগে না। তখন ছোট মেয়ের সেই কথাটা মনে পড়ে রাজার, ‘তোমাকে ফেসবুকের মতো ভালোবাসি, বাবা!’
রাজাও মনে মনে বলেন, ‘আমিও তোকে ফেসবুকের মতোই ভালোবাসি রে, মা! ফেসবুক চালু হলেই তোকে জানিয়ে দেব, তোর নির্বাসন শেষ! তখন ছুটতে ছুটতে চলে আসবি। আর তুই এলে আমরা দুজন মিলে একটা সেলফি তুলে ফেসবুকে আপ করব! সেই ছবির ক্যাপশন হবে ‘ফেসবুকের মতো ভালোবাসা!’
রাজা অপেক্ষা করেন। বন্ধ ফেসবুক নিশ্চয়ই খুব তাড়াতাড়ি চালু হবে!

প্রথম প্রকাশ- রস+আলো
লিংক: http://www.prothom-alo.com/roshalo/article/698629/%E0%A6%AB%E0%A7%87%E0%A6%B8%E0%A6%AC%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A7%8B-%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%8B%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%BE

শনিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৫

জেরির কাছে টমের চিঠি


প্রিয় জেরি,
বর্ষাধোয়া নরম নরম দিনের তুলতুলে শুভেচ্ছা জানিয়ো। তুমি সেই যে তোমার মামাবাড়িতে আম কুড়ানোর নাম করে এলে, ধান চুরি করতে গেলে আর তো ফিরলে না। আমার রাত-দিন কাটে এখন দরজার দিকে তাকিয়ে। ভাবি, এই বুঝি তুমি এলে, এই বুঝি এলে! আমার অবস্থা এখন বাংলা সিনেমার নায়িকার মতো। মিউ মিউ করে গাইতে ইচ্ছা করছে—সে যে কেন এল না, কিছু ভালো লাগে না...যাহোক, তোমার না থাকায় আমার ছোটাছুটি কমে গেছে, শুয়ে-বসে হাই তুলে দিন কাটাতে কাটাতে ‘মেদ-ভুঁড়ি কী যে করি’-টাইপ অবস্থা! ডাক্তার বলেছে, এভাবে শুয়ে-বসে দিন কাটালে মানুষের মতো আমাকেও নানা রকম রোগব্যাধিতে ধরবে। তখন সকাল সকাল জগিংটগিং করতে হবে। জগিংয়ের কথা ভাবলে এখনই আমার হাই ওঠে। ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসতে চায়। এত পরিশ্রম কীভাবে করা সম্ভব! বিড়ালেরা পৃথিবীতে এসেছে লেপের ওমে দিন কাটিয়ে দেওয়ার জন্য। পার্কে পার্কে জগিং করার কাজ মানুষের!
সে যাহোক, শুনে খুশি হবে যে আমি একটা মানুষকে পোষ্য নিয়েছি। অবাক হলে নাকি? অবশ্য মানুষেরা এই চিঠি পড়লে হইহই করে উঠবে। বলবে, মানুষ কারও পোষ্য হয় না, বরং মানুষই প্রাণীদের পোষে। গাধাগুলা এখনো বুঝতে পারেনি অন্য প্রাণী আর বিড়ালদের মধ্যে পুঁটি আর ইলিশ মাছের তফাত। মাছের রাজা যদি ইলিশ হয় তো প্রাণীর রাজা বিড়াল অর্থাৎ আমরা। তাই আমরা বিড়ালেরাই মানুষকে পোষ মানাই, গাধা মানুষেরা আমাদের নয়!
এই তো সেদিনই আমার কথিত মনিব আমার জন্য মাছ নিয়ে এল। গন্ধ শুঁকেই বুঝলাম ফরমালিন দেওয়া মাছ। আমি নাক কুঁচকে রেখে দিলাম। মনিব আমাকে নানাভাবে খাওয়ানোর চেষ্টা করল ঠিকই কিন্তু আমি দূরে জাস্ট থাবা গেড়ে বসে থাকলাম। বুঝতে হবে, আমার আর বাঘের রক্ত এক! আমাদের একটা প্রেস্টিজ আছে। ফরমালিন দেওয়া মাছ আমার মুখে রোচে না। আমি কয়েকবার ম্যাও ম্যাও বলে তা বোঝানোর চেষ্টা করলাম। গাধাটা গুরুত্বই দিল না। তুমি তো জানোই, গুরুত্ব না পেলে বিড়ালেরা কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে! তবু আমি আরও কয়েকবার ম্যাও ম্যাও করে জানালাম, ভাই রে ঠিকঠাক খাইতে দে, নইলে খবর আছে! কিন্তু ইন্দুরের বাচ্চা ইন্দুর (তুমি আবার মাইন্ড কইরো না!) আমাকে অন্য কিছু খেতে না দিয়ে শুয়ে পড়ল। অথচ আমি জানি, ফ্রিজে বোতলভর্তি দুধ আছে। ওই দুধ খাব বলে সকাল থেকে আমি মুখ মুছে যাচ্ছি, জিব চেটে যাচ্ছি! (তুমি আবার ভেবো না এই দুধ খাওয়ার জন্যই আমি মাছ খাইনি।) মানুষটা যখন আমাকে উপেক্ষা করে শুয়েই পড়ল তখন মাথাটা ধা করে জ্বলে উঠল। আমার সঙ্গে ফাজলামি? নিজেকে কী ভাবো, মনিব? দাঁড়াও তোমার মনিবগিরি ছোটাচ্ছি! কাল তোমাকে সারা দিন অফিস যেতে দেব না, ঘুমাতে দেব না, সারা দিন বাথরুমে বসে বসে কাপড় কাচবে শুধু আর ঢুলবে!
শুরু করলাম আমি আমার বিখ্যাত ডাক। ম্যাও ম্যাও ম্যাও... বেকুবটার তাতে দেখি ঘুম ভাঙে না। তখন তার ঘরে ঢুকে ড্রেসিং টেবিলের ওপর উঠলাম। চিরুনি আঁচড়াতে লাগলাম নখ দিয়ে। তাতে অদ্ভুত ক্যাঁক ক্যাঁক শব্দ তৈরি হলো। বেকুবটা তাতে পাশ ফিরে শুলো। এবার বডি স্প্রের বোতলটা ফেলে দিলাম। ঠং শব্দ করে গড়িয়ে পড়ল মেঝেতে। গড়াতেই থাকল। শব্দ হতেই থাকল। বেকুবটা এবার ধড়ফড় করে উঠে বসল। আমি তখন একটা করুণ শব্দ করে ম্যাও বললাম। বেকুব মনে হয় রাগ হলো তাতে! আমাকে একটা গালি দিল, তারপর ধাওয়া করল। আমি তো দিনভর ঘুমিয়েছি, রাতভর ছোটাছুটি করতে আমার আপত্তি কী? এ ঘর-সে ঘর ছুটি আর মাঝে মাঝে ম্যাও ম্যাও বলে ডাকি। বুকশেলফ থেকে বই ফেলে দিই, ঝাড়ু নিয়ে টানাটানি করি, মোবাইল ফোনের চার্জারে মারি হ্যাঁচকা টান!
বেকুবটার ঘুম চটকে গেল। শেষে সর্বস্বান্ত হয়ে যেন সোফায় বসে ঝিমোতে লাগল। আমি তখন তার সোফার ওপর গিয়ে ছোট্ট করে হিসু করে দিলাম! বেকুবটা গগনবিদারী চিৎকার করে উঠল। আর তার স্ত্রী উঠে এসে ফ্রিজ থেকে দুধ বের করে আমাকে খেতে দিল, আমিও চুকচুক করে খেতে থাকলাম! চেটেপুটে খেয়ে আমি ঘুমাতে চলে গেলাম! বেকুবটা তখন বাথরুমে নিজের জামাকাপড় পরিষ্কার করছিল! জেরি ব্রো, এখন তুমিই বলো কে কাকে পোষ মানিয়েছে এই বাড়িতে?
যাহোক, চিঠি পাওয়ামাত্র তুমি এ বাড়িতে চলে আসবে, একটুও দেরি করবে না! দুজন মিলে এবার আরও অনেককে পোষ মানাব!
ইতি
তোমার বন্ধু টম
জেরির উত্তর
টম,
তোমার নানা ভাব নেওয়া কথা শুনলাম। পড়ে মনে হচ্ছে ওই বাড়িতে তুমি রাজা হয়ে আছ! আসলে আমি খবর পেয়েছি ওরা প্রতিদিনই নাকি তোমাকে গোসল করিয়ে দেয়? প্রতিদিনই নাকি তুমি ভেজা বিড়াল হয়ে যাও? যা হোক, তোমার দাওয়াত গ্রহণ করতে পারলাম না। কারণ, আমি জানি, আমি তোমার কাছে গেলেই তুমি আমাকে তোমার পেটের ভেতর দেখতে চাইবে!
ইতি
জেরি
প্রকাশ: রস+আলো

ইয়েবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: বিয়ে বন্ধুর জন্য ক্ষতিকর!

..কন্যার বাপ সবুর করতে পারত, কিন্তু কন্যা সবুর করতে চাইল না। সোজা বলল, ‘হয় শিহাবের সাথে বিয়ে দাও, নয় তো আমাকে কানাডা পাঠিয়ে দাও।’
কন্যার বাপ অপেক্ষাকৃত সহজ অপশনটা বেছে নিলেন। শিহাবের সঙ্গে রুনার বিয়ে হয়ে গেল।
শিহাব আমাদের বন্ধু। আমরা ছিলাম চৌমাথা। না না রাস্তার নয়, বন্ধুত্বের। শিহাব, হিমেল, বাবু আর আমি। আমরা রাস্তায়, ক্লাসে, টং দোকানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হো হো হা হা করে কাটিয়ে দিতাম। আমরা শেষের দিকে এমনকি ফেসবুকিংও একসঙ্গে করতাম। নিয়মটা ছিল এ রকম—অফিস থেকে বের হয়ে নির্দিষ্ট একটা চায়ের দোকানে বসতাম চারজনে। তারপর নিজেদের মুঠোফোন বের করে ঢুকতাম ফেসবুকে। নিজেদের অ্যাকাউন্টে ঢুকে আমরা পরস্পরের ছবি ও স্ট্যাটাসে লাইক দিতাম। বিচিত্র কোনো খবর পেলে নিজেদের ইনবক্স করতাম। এ রকমভাবে কয়েক ঘণ্টা জম্পেশ আড্ডা দিয়ে তবেই আমরা ঘরে ফিরতাম।
ছুটির দিনগুলোয় আমরা শিহাব আর হিমেলের মোটরসাইকেলে চেপে বেরিয়ে পড়তাম। সারাটা ছুটির দিন আমরা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-গাজীপুর ঘুরে একযোগে চেকইন দিতাম। সেলফি তুলতাম।
সেলফি তুললাম শিহাবের বিয়েতেও। হইহল্লা কম করলাম না। বাসরঘরে শিহাবকে ঢুকিয়ে দেওয়ার সময় সবাই মিলে বললাম, ‘দেখিস, বউ পেয়ে বন্ধুদের আবার ভুলে যাস না!’
শিহাব বলল, ‘মাথা খারাপ!’ বলেই সে তাড়াতাড়ি ঢুকে গেল ঘরে। আর বেরোল না। মানে পরের সারাটা জীবনে তাকে আমরা আর আমাদের মধ্যে পেলাম না। অফিস থেকে বের হয়ে সে সোজা বাসায় চলে যায়। আমাদের সঙ্গে বড়জোর এক কাপ চা খায়। খেতে খেতেই রুনার ফোন আসে। ওদিক থেকে কী বলে কে জানে! দেখি যে শিহাবের মুখটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে যায়। বলে, ‘আসতেছি তো, এই তো...আরে না না ওদের সাথে না...কোনো আড্ডাবাজি না...জ্যামে জ্যামে!’
ফোন রেখে আমাদের দিকে আলগা সপ্রতিভ হওয়ার চেষ্টা করতে করতে সে বলে, ‘একটা দাওয়াত আছে জন্মদিনের। তাড়াতাড়ি যেতে হবে বন্ধু!’
শিহাব চলে যায়। বাবু খুবই রাগ করে। বলে, ‘শিহাব একটা...!’ আমরা উদাস মনে আড্ডা দিই। নিজেদের মুঠোফোন বের করে ফেসবুকে ঢুকে ততোধিক উদাস উদাস স্ট্যাটাস দিই। শিহাব দূর থেকে লাইক দেয় সেসব স্ট্যাটাসে।
ছুটির দিনগুলোয়ও শিহাব আর আমাদের সঙ্গে যেতে পারে না। তারা শপিংয়ে যায়। সিনেমায় যায়। বিপদে পড়ি আমরা। শিহাব না এলে তো তার মোটরসাইকেলও আসে না। আমরা তিন প্রাণী, একটা মোটরসাইকেল। আমরা চাপাচাপি করে বসি তাতে। ট্রাফিক সার্জেন্ট রক্তচোখে তাকায়। একদিন কানে পর্যন্ত ধরাল। হিমেল বলে, ‘শিহাব নাই তাতে কী! দেখ, আমাদের ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে। আমরা এখন একটা বাইকে এ রকম ঠেলাঠেলি করে বসি, এক ব্রেকে একসঙ্গে ঝাঁকি খাই।’
আমরা বলি, ‘হু।’ কিন্তু আমাদের মন পড়ে থাকে শিহাবে।
এভাবে একটা বছর কাটতে না কাটতেই বাবুর বিয়ে হয়ে গেল। সেদিনও আমরা খুব হইচই করলাম। সেলফি তুললাম। শিহাবও এল। শিহাবের সামনেই বাবুকে বললাম, ‘বাবু দেখিস, শিহাবের মতো হয়ে যাস না!’
বাবু বলল, ‘মাথা খারাপ!’ বলেই বাবু তাড়াতাড়ি বাসরঘরে ঢুকে গেল। এবং, সে-ও আর বেরোল না! অফিস থেকে বেরিয়ে সে-ও আর আড্ডা দেয় না আমাদের সঙ্গে। এক কাপ চা খাওয়ারও সময় পায় না। শিহাব আর বাবু একসঙ্গে খুব তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যায়। যাওয়ার আগেই অবশ্য তাদের ফোন আসে। তারা প্রায় কোনো উত্তর না করে শুধু ‘হু হু’ আর ‘জ্যাম জ্যাম’ বলতে থাকে। হিমেল অত্যন্ত মেজাজ খারাপ করে। তারপর বলে, ‘এটাই ভালো হইছে, বন্ধু। এখন শুধু তুই আর আমি। আমার বাইক নিয়া সারা ছুটি ঘুইরা বেড়াব। সার্জেন্টও আর কান ধরাইতে পারবে না! শুধু তুই আর আমি!’
আমি বলি, ‘হু।’ কিন্তু আমি জানি আমার মতোই হিমেলেরও মন পড়ে থাকে শিহাব আর বাবুতে।
ছুটির দিনগুলোয় শিহাব আর বাবু তাদের স্ত্রীসহ শপিংয়ে যায়, সিনেমায় যায়। হিমেল আর আমি বিছনাকান্দি গিয়ে চেকইন দিই, সেলফি তুলি। সেই সেলফিতে আগের মতো জোশ থাকে না। হিমেল জোশ আনার চেষ্টা করে। বলে, ‘ব্যাচেলর লাইফ হলো শ্রেষ্ঠ লাইফ। এর ওপর কোনো লাইফ নাই!’
আমি শুকনা মুখে বলি, ‘হু...!’
হিমেল বলে, ‘আমি চিরদিন ব্যাচেলর থাইকা যাব!’
আজ হিমেলের বিয়ে। খুব ধুমধাম হচ্ছে। আমরাও খুব হইচই করছি। শিহাব আর বাবু তাদের বউ নিয়ে এসেছে। সবাই মিলে দেদার সেলফি তুলছি। বাসরঘরে হিমেলকে ঢুকিয়ে দেওয়ার সময় বললাম, ‘দেখিস বন্ধু, শিহাব আর বাবুর মতো আমাদের ভুলে যাস না!’
হিমেল বলল, ‘মাথা খারাপ!’ বলেই সে খুব তাড়াতাড়ি ঘরে ঢুকে গেল।
আমি বাইরে বেরিয়ে এলাম। বললাম, ‘যে যাই বলুক, ব্যাচেলর লাইফই হলো শ্রেষ্ঠ লাইফ।’
তবে আমার কথায় ‘হু’ বলার মতো কেউ তখন আশপাশে ছিল না!

প্রকাশ: রস+আলো
লিংক: http://www.prothom-alo.com/roshalo/article/671815/%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A7%81%E0%A6%B0-%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%B0