রবিবার, ১ অক্টোবর, ২০১৭

ইচিং বিচিং

অলংকরণ: তুলি

ইচিং বিচিং দুই ভাই। শুয়ে ছিল কড়ইয়ের ডালে। পায়ের ওপর ঠ্যাংটা তুলে ভাবছিল আজ কী খাওয়া যায়! কলা খেতে খেতে জিভের স্বাদ কলার খোসার মতো হয়ে গেছে!
ইচিং বলল, চল, আজ নতুন কিছু ট্রাই করি! আজ থেকে আমরা মানুষের খাবার খাব। মানুষের থেকে আমরা কিছুতে কম নাকি? মানুষের মতো হাত-পা-মুখ সবাই আছে আমাদের। আবার বাড়তি একটা লেজও আছে! অতএব, আমরা মানুষের মতো খাবার খেতেই পারি!
জঙ্গল থেকে ইচিং বিচিং ছুটল লোকালয়ে। ভরদুপুরে তারা পৌঁছাল এক মফস্বলে। পৌঁছানোমাত্র সাঁই সাঁই করে তারা উঠে গেল মহল্লার ছাদে। খুঁজতে শুরু করল মানুষের খাবার!
ইচিং একবার এই বাড়িতে উঁকি দেয় তো আরেকবার বিচিং উঁকি দেয় ওই বাড়িতে। না, কোথাও কেউ কিচ্ছু খাচ্ছে না। এ সময় কেউ ঘুমাচ্ছে, কেউ বিছানায় শুয়ে শুয়ে বই পড়ছে। ইচিং বিচিং হতাশ। এমন সময় ইচিং বিচিং দেখল একটা ছোট্ট ছেলে পা টিপে টিপে ছাদে উঠে এল। হাতে আচারের বয়াম।
ইচিং বয়ামটা দেখিয়ে বলল, নিশ্চয় ওটা খেলার জিনিস! এক্ষুনি ছেলেটা ছাদে ওটা গড়িয়ে দিয়ে খেলতে শুরু করবে!
বিচিং বলল, না না। ওটা নিশ্চয় দূরে দেখার দুরবিন…এক্ষুনি চোখে ওঠাবে!
কিন্তু ইচিং বিচিং অবাক হয়ে গেল যখন তারা দেখল ছেলেটা বয়ামের মুখটা খুলে ভেতর থেকে কী সব বের করে গপাগপ খেতে শুরু করল। ছেলেটা এত মজা করে খাচ্ছিল যে ইচিং বিচিংয়ের জিভেও পানি চলে এল।
কী করবে তারা যখন ভাবছে, তখন ভেতর থেকে মায়ের কণ্ঠ ভেসে এল—দীপ্র, তুই কি আবার আচার নিয়ে পালিয়েছিস? দীপ্র বলল, না তো! বলেই বয়ামটা রেখে ছুটল নিচে। ইচিং বিচিং ভাবে, এই সুযোগ। এক্ষুনি ওটা খেতে হবে!
যে–ই ভাবা সেই কাজ! ইচিং বিচিং এক লাফে চলে এল বয়ামের সামনে। খুলে ফেলল বয়ামের মুখ। আহ্, ভেতরে কী দারুণ গন্ধ! বিচিং তাড়াতাড়ি বয়ামের ভেতর হাত ঢুকিয়ে ফেলল। তুলে নিল একমুঠো আচার। নিয়ে যে–ই না বের করতে গেল, তখনই হাতটা আটকে গেল বয়ামের ভেতর। হায় হায়, কী মুশকিলের কথা! ইচিং ধরে টান দেয়, বিচিং ধরে টান দেয়…না না, হাত বেরই হচ্ছে না! উল্টো আচারের বয়াম উল্টে যাওয়ায় ইচিং বিচিংয়ের শরীর ভরে গেল তেলে!
বিচিং বলল, ইচিং, তুই আমাকে বাঁচা…হাতটা বের করে দে!
: কিন্তু কীভাবে? হাত কাটা ছাড়া তো কোনো উপায় দেখছি না!
ইচিংয়ের কথা শুনে বিচিং আরও ভড়কে গেল। তাহলে সে কি বাঁচবে না? বিচিং ভেউ ভেউ করতে কাঁদতে শুরু করল আর তখনই সেখানে দীপ্র এসে হাজির হলো। দুই–দুইটা বানর দেখে দীপ্র প্রথমে ভয়ই পেল। কিন্তু যখন দেখল বানর দুইটা তারই আচার চুরি করে খাচ্ছে, তখন ভীষণ রেগে গেল সে। কিন্তু দীপ্র রাগলে কী হবে, ইচিং বিচিংয়ের অবস্থা তখন খারাপ। বিচিং তার হাতটা দেখিয়ে দীপ্রকে বলল, ছোট্টবন্ধু, তুমি কি বলবে হাতটা আমি কীভাবে বের করব? ঢোকানোর সময় হাতটা সুন্দরভাবে ঢুকলেও এখন আর বেরই হচ্ছে না!
দীপ্র খিলখিল করে হেসে উঠল। বলল, বয়াম থেকে হাতটা বের করা তো খুবই সহজ!
: খুবই সহজ? আমাকে শিখিয়ে দাও প্লিজ…
: শেখাব। কিন্তু তার আগে তোমাদের দুজনকেই কথা দিতে হবে, হাতটা বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বয়ামটা তোমরা আমাকে ফেরত দেবে!
: হ্যাঁ হ্যাঁ কথা দিলাম। এখন আমার হাতটা ছাড়াও তাড়াতাড়ি! কী করতে হবে আমাকে বলো বলো?
দীপ্র একটু হাসল। তারপর বলল, কিচ্ছু করতে হবে না তোমাকে। শুধু মুঠি খুলে নাও তুমি!
: কিন্তু তাতে তো আচার বের হবে না?
: তা না করলে তোমার হাতই বের হবে না!
বিচিং পড়ল মহা চিন্তায়। হাত বাঁচাবে না আচার? ইচিং বলল, দীপ্র যা বলছে তা–ই কর…
বিচিং মুঠো খুলে আচার আবার বয়ামে রেখে দেয়। আর তারপরেই হাতটা বয়াম থেকে বের করে নিতে পারে। ইচিং বিচিং দুজনেই তো অবাক! এটা কীভাবে হলো?
দীপ্র বলল, খুবই সোজা। আচার নিয়ে মুঠিটা বন্ধ করায় সেটা বড় হয়ে গিয়েছিল…তাই তো বের হচ্ছিল না বয়াম থেকে!
ইচিং বিচিং একসঙ্গে বলল, বাহ্! কী দারুণ তোমার বুদ্ধি!
দীপ্র বলল, এবার বয়ামটা দাও।
ইচিং বিচিং মন খারাপ করে বয়ামটা ফেরত দিয়ে দিল। মানুষের খাবার তাদের খাওয়া হলো না। ইচিং বিচিং যখন চলে যাচ্ছে, তখন দীপ্র বয়াম থেকে আচার বের করে দিয়ে দিল ওদের হাতে। বলল, খেয়ে দেখো, মায়ের হাতের আচার!
ইচিং বিচিং ঝটকায় আচার মুখে পুড়ে নিল। আহ্! এমন স্বাদের জিনিস তারা আগে কখনো খায়নি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন