শুক্রবার, ১৩ মার্চ, ২০১৫

অতি আবেগের সাথে বলছি




অতি আবেগ ভালো কিছু না, চিন্তার জন্য তো খুবই খারাপ কথা।

কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে আমি অতি আবেগাক্রান্ত থাকি। চিন্তাও করি অত্যন্ত আবেগ দিয়ে, যা দুয়েক লাইন লিখি সেখানেও থাকে আবেগের বাড়াবাড়ি।

অন্যক্ষেত্রে যা হয়, নিজের আবেগ সংযত রাখাটাকেই শ্রেয় জ্ঞান করি। আবেগাক্রান্ত কিছু করে বসলে বেশ লজ্জা হয়। সেই লজ্জা কখনো কখনো মুহূর্ত থেকে ছড়িয়ে যায় বছর বছর পর্যন্ত। এক যুগ আগের অতি আবেগে করা কোনো ঘটনার কথা ভেবে এখনো কান লাল হয়ে যায় আমার। অথচ বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে অতি আবেগ নিয়ে আমার কোনো সংকোচ নেই কোনো লজ্জা নেই। মনে হয়, থাক, এই একটা জায়গায় আমি না হয় আমার মধ্যে থাকলাম না। এই একটা জায়গায় আমি হয়তো তরল থাকলাম, কী আসে যায়!

আমি হৃদয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য হাজার হাজার পদ্ম ফুটিয়ে বসে থাকি। মনে হয় আমার হৃদয় এক সরোবর-- যে সরোবর থরোথর কাঁপছে উত্তেজনায়। ক্রিকেটের টানটান রোমাঞ্চে। ক্রিকেট আমার ভেতর এমনভাবে আছে।

বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে কম কথা কম জন বলে নি। প্রাজ্ঞ থেকে মূর্খ সবার মুখে খইয়ের মতো ফুটেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে কটুক্তি। আমি কোনো প্রতিবাদ করি নি। বলেছে, বলুক। তাদের বলায় আমরাও যদি গলা চড়াই তাতে লাভের লাভ তো কিছু হবে না। আমি চুপ থেকেছি, কিন্তু আমার হৃদয়ে পদ্মফোটা যে সরোবর তাতে হিন্দোল উঠেছে, ঝড় উঠেছে। তবু চুপ থেকেছি। মাঠের কথা মাঠের মধ্যে শেষ করে না দিতে পারলে তা বড় কানে লাগে।

ক'দিন আগেও নানা কথা হয়েছে বাংলাদেশের জয় নিয়ে। গতকাল একজন স্ট্যাটাস দিয়েছেন বাঘবেড়ালের তত্ত্ব নিয়ে। আমার মনে হলো এরা কেন এরকম বলে-- এটা কি ঈর্ষা, নাকি ঘৃণা, নাকি হতাশা?

রমিজ রাজাদের দেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বন্ধ আছে। এরা ভেবেছিল বাংলাদেশের মাথায় হাত বুলিয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে নিজেদের দেশে নিয়ে ট্যুর করিয়ে আবার ক্রিকেটটা চালু করবে! সে আশার গুঁড়েবালি। পাকিস্তানের অর্থনীতির মতো ক্রিকেটেও ফুরিয়ে যাচ্ছে। সেখান থেকে হতাশা বাড়ছে রমিজদের। হতাশাগ্রস্থরা পৃথিবীর কোথাও পজেটিভ কিছু দেখতে পায় না। রমিজ এখন আন্ডারওয়ারে সুতাসাপ দেখে, টুপিতে বারুদবোমা-- ইন্ডিয়ার তোষামোদী করে তার পেট চলছে, সংসার চলছে, ভবিষ্যতেও চলবে।

পাকিস্তানের প্রতিপক্ষ এক সময় ইন্ডিয়া ছিল। ইন্ডিয়া এখন তাদের ছাড়িয়ে অনেক দূরে চলে গেছে। রমিজরা এখন প্রতিপক্ষহীন হতাশাগ্রস্থ বিকারজীব। তারা এখন তাই প্রতিপক্ষ খুঁজছে। বাংলাদেশকে প্রতিপক্ষ ভাবা তাদের রক্তের ভেতরই আছে। ৭১ তাদের জন্য জন্মদাগ। তারা কখনো তা ভুলতে পারে নি আসলে। তাই রক্তের স্রোতের ভেতরের ঘৃণাটা, ক্রিকেট থেকে বঞ্চিত হবার হতাশাটা, আর প্রতিপক্ষহীনতার আশংকাটা তাদের বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বলিয়ে নিচ্ছে!

কিন্তু এই প্রসেনজিত বা তার আগে শেবাগ আর সিধুর কেসটা কী?

সিধুকে ব্যক্তিগতভাবে আমি মানুষ হিশেবে গণ্য করি না। যাকে মানুষ হিশেবে গণ্য করি না তার কথায় কী আর আসবে যাবে। মনে আছে সিধু একবার কেকেআরের ফাইনালে খেলা ও দল নিয়ে কথা বলেছিল। শাহরুখ তার ইস্ক্রু টাইট দিয়েছিল পরে। সিধু হাসতে হাসতে, যেমন সে হাসে সব কিছুতে, শাহরুখের দেয়া বাঁশ নিয়েছিল। তো সিধু তখনো বলেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে, এখনো বলছে। পাগলে তো কত কিছুই বলেরে ভাই! কিন্তু কেন বলছে?

সিধুর বা শেহবাগের কিংবা হালের প্রসেনজিতের প্রবলেম হলো বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে ঘৃণা ও আশংকা। এই ঘৃণাটার জন্য টিম ইন্ডিয়াকে প্রথম রাউন্ড থেকে বের করে দেয়ার পর। ওটা ওরা কখনোই মেনে নিতে পারে নি। তারা ভেবেছিল সেবার তারা চাম্পিয়ান হবে। শচিনের হাতে বিশ্বকাপ উঠবে। সেই স্বপ্নকে ধুলায় মিশিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ঘৃণাটা প্রবাহিত এখন ওদের রক্তের ভেতর। আর আশংকা?

আশংকা ঘটনাটার পুনরাবৃত্তির। যদি বাংলাদেশ আবার টিম ইন্ডিয়াকে বিশ্বকাপ থেকে ভাগো দিল্লী বলে বের করে দেয়?

ভারত এখন পাকিস্তানের সাথে হার মেনে নিতে পারে, এমনকি আফগানস্তানের সাথেও হার মেনে নিতে পারে... কিন্তু বাংলাদেশের সাথে হার মানতে পারে না। বাংলাদেশের সাথে হারলেই ভারতের শরীর গুলায়, বিবমিষা জাগে, পা ভারী ভারী লাগে!

কিন্তু এই রকম অবস্থার কারণ কী?

ধরুন দুই প্রতিবেশী। একটা বেশ বড়লোক। বড় তার বাড়ি। বিরাট তার কারবার। এলাকার মাতব্বর সে হয়ে উঠছে। পকেটে ঝনঝন করে রূপার পয়সা বাজে। বাড়ি গমগম করে পারিষদ দলে। আর তার পাশেই একটা দরিদ্র কুটির। তিনবেলা খাবার জোটে কি জোটে না। প্রচুর পরিশ্রম করে পেট চলে। মাথা নিচু করে থাকে সেই প্রতিবেশী। বড়লোক প্রতিবেশী কখনো কখনো তাকে দুটো খেতে দেয়-- দিয়ে করুণার আরাম পায়। কখনো কখনো দুয়েকটা পুরনো জামাকাপড় গরীব প্রতিবেশীটিকে দেয়-- দিয়ে দানের আনন্দ পায়।

একদিন সেই মহল্লায় ঘোড়দৌড়ের আয়োজন করা হলো। বড়লোকটির তো এরাবিক হর্স। আর ওই গরীব প্রতিবেশীর আছে এক না খেতে পাওয়া জিরজিরে ঘোড়া। দুটো ঘোড়ায় দৌড়ে নাম লেখালো। দৌড় শুরু হলো। প্রবল শক্তিতে জিতে গেল গরীবের ঘোড়াটি। বড়লোক প্রতিবেশীর তখন কেমন লাগবে? বড়লোক প্রতিবেশীর মনে হবে তার ধুতি কেউ খুলে দিয়েছে। সে চাইবে ওই গরীব প্রতিবেশীর ঘোড়াটা মরুক, না খেতে পেয়ে গরীবটায় মরুক, শেষে কিছুতেই কিছু না হলে গরীবটার ঘরে বড়লোকটি আগুন লাগাবে!

বাংলাদেশ নিয়ে ভারত এই রকম অবস্থায় আছে। ধূতি গড়াগড়ি যাচ্ছে। আর বাংলাদেশের ক্রিকেটের ঘোড়া দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।

অতি আবেগের সাথেই বলছি, ভাই সাহেবরা, জানেন তো ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা। যদি ভদ্র থাকতে না পারেন দাদাভাইয়েরা, তাহলে খেলাটা ছেড়ে দিন। নাহলে অন্তত কমেন্ট করা তো ছাড়ুন। ন্যাংটো হয়ে যাচ্ছেন যে!!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন