বুধবার, ১ জুলাই, ২০১৫

দ্য টাইগার শো

: হ্যালো, এটা একটা সুন্দর ঝকঝকে দিন, যদিও দূরে একটু মেঘের ঘনঘটা আছে। আর আমরা এখন মিরপুর স্টেডিয়ামে। স্বাগত জানাচ্ছি আমাদের ‘টাইগার শোয়ে’। আমি ব্রায়ান আর সঙ্গে আছে আমার সুন্দরী স্ত্রী লরা।
: হাই! আমি লরা। আর আমাকে সুন্দরী বলার জন্য ধন্যবাদ, সোনা!
: এটা সব সময় কাজে দেয়, আপনারা তো জানেনই। কিন্তু আপনারা জানেন না, এখানে আসাটা ছিল কতটা ঝক্কির!
: হ্যাঁ, এটা খুব ঝামেলার ছিল, আর ভয়ানকও।
: এখানে আসতে আমাদের একটি চলতি বাসে উঠে যেতে হয়েছিল, যার কোনো হাতল ছিল না। রাস্তা ছিল ত্রুটিপূর্ণ, আর খুবই দুর্গম। আমরা একে অন্যের গায়ে ধাক্কা লাগতে লাগতে যখন থামলাম, ভেবেছিলাম আমরা বোধ হয় পৌঁছে গেছি। কিন্তু ও ঈশ্বর! সেটা ছিল একটা ভ্রম! ভয়ানক ভ্রম!
: আমরা আসলে জ্যামে আটকা পড়েছিলাম। আর জ্যামটা ছিল অভাবনীয়। একটা বৃহৎ অজগরের চেয়েও লম্বা আর বড়। জ্যামটার লেজ ছিল কিন্তু কোনো মাথা ছিল না!
: এটা ছিল অস্বস্তিকর। কিন্তু আমাদের কিছুই করার ছিল না।
: আমরা অসহায় ছিলাম।
: তবে আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছি।
: এটাই বড় কথা। আমরা পৌঁছাতে পেরেছি।
: এখন মিরপুর স্টেডিয়ামে আমরা দেখব টাইগার বাহিনীকে।
: আমি টাইগার বাহিনী দেখার জন্য খুবই উদ্গ্রীব, সোনা।
: একটু পরেই তারা মাঠে নামবে, তুমি চিন্তা কোরো না। আর নেমেই তারা শিকার শুরু করে দেবে!
: ওয়াও! আমরা কি সরাসরি শিকার দেখতে পারব? এটা হবে খুবই রোমহর্ষক!
: আর রোমাঞ্চকরও! আর ওই যে দেখো, দুটি টাইগার মাঠে।
: ওয়াও! টাইগার দুটোকে কী কিউটই না লাগছে!
: কিউট দেখালেও ওরা খুবই বিপজ্জনক। বয়সে একটু বড় যে টাইগারকে দেখছ, তাঁর নাম টাইগার তামিম। সে চাইলে এক থাবায় শত্রুপক্ষের সব প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে দিতে পারে।
: বাপরে! শুনেই তো গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে... দেখো দেখো...!
: কিন্তু এখনো অনেক টাইগার বাকি, সোনা! শান্ত হও। টাইগার তামিমের সঙ্গেই যে লম্বা টাইগারটাকে দেখছ, সে আসলে এক চূড়ান্ত আবিষ্কার!
: সে-ও কি থাবায় বল গুঁড়িয়ে দেয়?
: সে উড়িয়ে দেয়। সে পিচের ওপর দাঁড়িয়ে ইচ্ছামতো একেকটা বল ডানে-বাঁয়ে অত্যন্ত ক্ষিপ্রতা আর সাহসিকতার সঙ্গে উড়িয়ে দিতে পারে। এবং খুবই আশ্চর্যের বিষয়, এসব থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত তার নাম!
: তার নাম শুনতে আমি খুবই উদ্গ্রীব, হানি!
: ঝড়ের বেগে শত্রুপক্ষকে ধ্বংস করে দিলেও তার নাম সৌম্য। মানে শান্ত! এটা আজব আর ভাবনার মতো বিষয়ও!
: আমার খুবই ভয় লাগছে।
: এই রোমাঞ্চের জন্য তো আমরা এসেছি, সোনা। আর ওই যে ওখানে দেখো আরেকটা টাইগার।
: আরে ওটা তো সব্বার চেয়ে বাচ্চা!
: হ্যাঁ কিন্তু সবার চেয়ে বিধ্বংসী! ওর নাম মুশফিক! এই বাহিনীর সবচেয়ে ধারাবাহিক শিকারি।
: দেখে কিন্তু মোটেও তেমন মনে হয় না।
: ওটা তাঁর ক্যামোফ্লেজ। যেন শত্রুপক্ষ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ও হামলা করতে পারে।
: বুঝেছি, কিন্তু ওই যে মাঠে যাকে ইচ্ছা তাকে থাবা মারছে, সে কে?
: তার সম্পর্কে বলতে আমার গলাটা কেঁপে উঠছে। দেখো, আমার হাতটাও কাঁপছে, দেখেছ?
: হ্যাঁ, তুমি কি অসুস্থ বোধ করছ?
: এটা একটা ভয়াবহ অভিজ্ঞতা, লরা। টাইগার সাব্বিরকে মুখোমুখি দেখা!
: সাব্বির? ও কি খুবই ভয়ংকর?
: ওকে দেখে আমার শরীর হিম হয়ে আসছে! ও পিটিয়ে প্রতিপক্ষের সমস্ত বোলারকে স্রেফ ছাতু বানিয়ে দিতে পারে!
: ও ঈশ্বর! ও তাহলে খুবই মারাত্মক!
: আর দেখো প্যানথারের গতিতে একটা টাইগার ছুটছে, ওই যে ওখানে, দেখেছ?
: ওকে খুব একটা খুশি দেখাচ্ছে না...
: ও ওরকমই থাকতে পছন্দ করে। তবে ও যখন দৌড়ে গিয়ে গোলা ছোড়ে, শিকার তখন কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। বোঝার আগেই শিকার মরে যায়। ও ইয়র্কমাস্টার রুবেল। তুমি তো দেখছি তার ওপর থেকে চোখই সরাচ্ছ না?
: হ্যাঁ রুবেল আমার হৃদয় জয় করেছে। আমি কি ওর প্রেমে পড়ে গেলাম?
: ওর প্রেমে সবাই পড়ে যায়। কিন্তু তোমাকে এবার চোখ ফেরাতেই হবে! কারণ, দেখো, ওই যে মাঠের ওই এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছে টাইগার সাকিব।
: ওকে আমি চিনি!
: ওকে কে না চেনে? পৃথিবীর প্রায় সমস্ত জঙ্গলে ও শিকার করে এসেছে। মরু থেকে মেরু পৃথিবীর সমস্ত অঞ্চলে ও সেরা। তার আছে র্যাটল স্নেকের মতো শীতল চোখ আর ঠোঁটের কোনায় আছে সম্মোহনী হাসি।
: এই হাসি দিয়েই কি সে বিশ্ব জয় করেছে?
: হ্যাঁ। কিন্তু এই হাসি হাসার আগে সে শত্রুপক্ষকে টেনে নিজের আয়ত্তের ভেতরে নিয়ে আসে। সে তখন হয়ে ওঠে ভয়ংকর শিকারি। তারপর সে শিকারিকে ক্রমাগত আক্রমণ করে বসায় মরণকামড়। তারপর সে হাসে। সে হাসি বড় রোমহর্ষক!
: আমি শিউরে উঠছি, হানি!
: দেখো, ওই যে ওই টাইগারটিকে, টাইগার বাহিনীতে ওই সবচেয়ে নতুন!
: ওকে ঠিক পূর্ণবয়স্ক টাইগার মনে হয় না, মনে হয় যেন শাবক...
: একদম ভুল ধারণা! বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের সুন্দরবনবিধৌত সাতক্ষীরা থেকে এসেছে ওই টাইগার। ওকে যতই শাবক মনে হোক না কেন, শিকার করে ও ঠিকই সবার নজর কেড়েছে। ও কাটার নামের একটা গোলা ছোড়ে, তাতে মেশানো থাকে প্রাণঘাতী সায়ানাইড।
: বাপ রে বাপ...
: হ্যাঁ, ওর বিপক্ষে যারাই লড়েছে, সবাই তাকে বাপ বলেই ডেকেছে। এই ক্রিকেট সাফারিতে ও নতুন বাপ। ও মুস্তাফিজুর! এক বিষাক্ত সরল ঘাতক!
: অভাবনীয় আর দুর্দান্ত! এটা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ টাইগার শো!
: কিন্তু সোনা, আমাদের শো এখনো শেষ হয়নি। এই টাইগার বাহিনীতে রয়েছে এক নেতা!
: সে-ও নিশ্চয়ই খুব দুর্ধর্ষ?
: সে কিলার। কিন্তু তার হৃদয় সিংহের মতো। ওই যে দেখো মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে সবাইকে বুঝিয়ে দিচ্ছে কে কীভাবে শিকার করবে! সে ছক কষে নিচ্ছে। তার মস্তিষ্ক চলে এক অদম্য নিয়মে আর অদ্ভুত উপায়ে। সেখানে ভয়ডর বলে কিছু নেই। তার পায়ে আঘাত এসেছে অসংখ্যবার, কিন্তু সে প্রতিবারই লড়াইয়ে ফিরে এসেছে। কখনো হার মানেনি। জয়ের ইচ্ছা তার রক্তের ভেতর টগবগ করে ফোটে। সে এই সম্পূর্ণ টাইগার বাহিনীকে উজ্জীবিত রাখে। এই অঞ্চলের সবাই তাকে ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে...
: কী নাম তার? তার নাম শোনার জন্য আমি ব্যাকুল...
: তার নাম আমার কাছ থেকে না শুনলেও হবে। এই উষ্ণ অঞ্চলের যেকোনো জায়গায় গিয়ে যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই তুমি পেয়ে যাবে তার নাম। শুধু জিজ্ঞেস করবে, ‘হেই, তোমাদের সবচেয়ে প্রিয় টাইগার কে?’
: আর এখানেই আজকের মতো শেষ হচ্ছে আমাদের টাইগার শো। কিন্তু শেষ করার আগে আপনাদের কাছে প্রশ্ন, আপনাদের প্রিয় টাইগার কে?


প্রথম প্রকাশ: রস+আলো
লিংকhttp://www.prothom-alo.com/roshalo/article/564718/%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%97%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%B6%E0%A7%8B#comments

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন