বুধবার, ১ জুলাই, ২০১৫

গুনগুনের জ্যান্ত টিয়ে


অলংকরণ: মাসুক হেলালমন খারাপ গুনগুনের। বাবার কাছে সে-ই কবে থেকে একটা পাখি চেয়ে আসছে সে। যে পাখিটার চোখ আছে, ঠোঁট আছে, আর আছে ডানা। বাবা গত রাতেই ফিরেছে একটা পাখি নিয়ে। পাখিটা একটা সবুজ টিয়ে। পাখিটার চোখ আছে ঠোঁট আছে এমনকি ডানাও আছে। কিন্তু পাখিটা তাকায় না, ডাকে না, উড়তেও পারে না। পাখিটা প্লাস্টিকের। বাবার মাথায় যে এত বুদ্ধি কম গুনগুন বুঝতেও পারেনি। এখন এই প্লাস্টিকের টিয়ে নিয়ে গুনগুন কী করবে?
গুনগুন ভেবেছিল পাখিকে তার ফ্রেন্ড বানাবে। তার সঙ্গে কথা বলবে, ইচ্ছে হলে গানও গাইবে। কিন্তু এই প্লাস্টিকের পাখিটা নড়ে না, চড়ে না, ওড়ে না! গুনগুনের কান্না চলে আসে। পাখিটাকে বিছানায় ছুড়ে দিয়েই গুনগুন বারান্দায় চলে যায়। তার চোখ ভরা কান্না।
বারান্দায় ছোট্ট একটা আকাশ। আকাশে কোনো পাখি নেই। ইশ্, আকাশ থেকে একটা পাখি এসে বসত যদি বারান্দায়! উঠত যদি ডেকে। বলত যদি, ‘হ্যালো গুনগুন, কেমন আছ?’
ইশ্, এমন যদি হতো!
এমন সময় কে যেন সত্যি সত্যি ডেকে উঠল। বলল, ‘অ্যাই মেয়ে, তুমি আমাকে ছুড়ে ফেললে কেন?’
গুনগুন ফিরে তাকাল। আরে, ওই প্লাস্টিকের টিয়েটা। বারান্দায় দাঁড়ানো! বেশ রাগী রাগী চোখে, ডানা দুটো কোমরে উঠিয়ে, গুনগুনকে দেখছে। গুনগুন অবাক হয়ে বলল, কী, তুমি হাঁটতে পারো?
: পারি না আবার? না পারলে বিছানা থেকে এখানে এলাম কীভাবে?
: মানে তুমি জ্যান্ত পাখি?
: কী মুশকিল! জ্যান্ত না হলে তোমার সঙ্গে কথা বলছি কীভাবে?
: কিন্তু বাবা যে বলল তুমি প্লাস্টিকের?
: ধুর, বাবারা কিছু জানে নাকি বোকা? আর তুমিও বাবাকে এসব বলতে যেয়ো না! বাবারা খুব বোকা তো এসব বিশ্বাস করে না!
: তাহলে তুমি খেলবে আমার সঙ্গে, গান গাইবে, কথা বলবে? আচ্ছা, তুমি উড়তে পারো?
: পারি না আবার?
বলেই টিয়েটা ফড়ফড় করে উড়তে লাগল। উড়ে বারান্দার গ্রিলে গিয়ে বসল। হাততালি দিয়ে উঠল গুনগুন। টিয়েটা এবার গুনগুনের কাঁধে এসে বসল। বলল, কী গান শুনবে বলো?
: টুইংকেল টুইংকেল পারো?
: ধুর, ওইটা তো ওল্ড গান! নতুন কিছু গাই?
: গাও!
টিয়েটা গলা খাকারি দিল। তারপর অদ্ভুত সুরের একটা গান গাইতে শুরু করল। এমন সুর কখনো শোনেনি গুনগুন। গুনগুনের ইচ্ছে হলো একবার জিজ্ঞেস করে টিয়েটা এমন অদ্ভুত গান কোথায় শিখল? কিন্তু গানের সুরে এতই হারিয়ে গেল যে কিছুই মনে থাকল না।
২.
রাতের বেলা বাবা ফিরল খাঁচা নিয়ে। খাঁচায় ভরা এক টিয়ে। জ্যান্ত। কিন্তু টিয়েটা ডাকে না, ওড়ে না, ঠিকমতো তাকায়ও না। টিয়েটাকে দেখেই গুনগুনের মন খারাপ হয়ে গেল। বলল, ‘বাবা, টিয়েটা ছেড়ে দাও।’
: ছেড়ে দেব? তুই না টিয়ে টিয়ে করে মাথা খারাপ করে দিচ্ছিলি!
: আমার তো টিয়ে আছেই!
: আরে ওটা তো প্লাস্টিকের টিয়ে...জ্যান্ত না!
গুনগুন মুখটিপে হাসে, বাবাবে কিছু বলে না। কিন্তু খাঁচার টিয়েটার দিকে তাকাতেই তার মন খারাপ হয়ে যায়। টিয়ে ডাকে না, কথা বলে না, ওড়ে না। জ্যান্ত হয়েও টিয়েটা জ্যান্ত না।
খাঁচাটা ধরে বাবাকে টানতে টানতে বারান্দায় নিয়ে গেল গুনগুন। তারপর খাঁচার মুখটা দিল খুলে। ফুড়ুৎ করে উড়ে গেল টিয়েটা। গুনগুন হাসল, বাবা হাসল। উড়ে যাওয়া টিয়েটা দেখিয়ে গুনগুন বলল, ‘এখন থেকে ওই টিয়েটা জ্যান্ত। টিয়েটা এখন উড়বে, কথা বলবে, গান গাইবে; তাই না বাবা?’
: আর তুই? তুই খেলবি কার সঙ্গে? গান গাইবি কার সঙ্গে?
তখনই গুনগুনের ঘরের ভেতর থেকে একটা অদ্ভুত সুরের গান ভেসে এল। বাবা খুবই অবাক। বললেন, ‘এ রকম অদ্ভুত সুরে কে গান গাচ্ছে?’
গুনগুন আবারও মুখটিপে হাসে। কিচ্ছু বলে না। কিন্তু গুনগুন না বললেই কি আমরা জানি না ও রকম অদ্ভুত সুরে আসলে কে গান গাইছে!

প্রথম প্রকাশ: গোল্লাছুট।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন