শনিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৫

ডাইনোসরের বাচ্চা

অলংকরণ: তুলিতুলতুল আর রিমঝিম। একই ফ্ল্যাটে থাকে।
একসঙ্গে স্কুল যায়, একসঙ্গে ফেরে, হোমওয়ার্ক শেষে খেলেও একই সঙ্গে।
খেলা বলতে দেয়াল ছুঁয়ে দৌড়ানো, না হয় লুকোচুরি।
লুকোচুরি খেলতে খেলতে গ্যারেজে একদিন তারা একটা ডিম খুঁজে পেল। ডিমটা টেনিস বলের চেয়েও বড়। রংটা সবুজাভ। তুলতুল বলল, এটা কী?
রিমঝিম খুবই চিন্তিতভাবে বলল, মনে হয় ডিম।
-কিসের ডিম?
-ঘোড়ার ডিম!
-দূর! টিচার বলেছে ঘোড়ার ডিম বলে কিছু নেই।
-তাহলে?
-চলো বাবাকে দেখাই।
বাবারা বারান্দায় বসে চা খাচ্ছিল। তুলতুল বলল, বাবা দেখো, আমরা একটা ডিম পেয়েছি...
বাবারা নিজেদের গল্পে ব্যস্ত। তারা তুলতুলদের কথা ঠিকমতো না শুনেই বলল, তাই নাকি? খুব ভালো।
-ডিমটা নিয়ে আমরা কী করব বাবা?
ফুটবল বানিয়ে খেলো, না হয় পোচ করে খেয়ে নাও। যা খুশি করো। শুধু আমাদের বিরক্ত কোরো না!
বাবাদের কাছ থেকে তুলতুলেরা চলে গেল মায়েদের কাছে। মায়েরা তখন টিভি দেখছিল। রিমঝিম বলল, ‘মা দেখো, আমরা একটা ডিম পেয়েছি। কিন্তু আমরা বুঝতে পারছি না এটা কিসের ডিম!’
মা এক ঝলক রিমঝিমের হাতের দিকে তাকিয়েই আবার টিভি দেখতে শুরু করল। বলল, ‘ও রকম ডিম আমি কখনো দেখিনি। তুমি দেখেছ রুনা?’
তুলতুলের মা টিভি থেকে চোখ না সরিয়েই বলল, ‘নাহ্! আমিও দেখিনি।’
রিমঝিম আর তুলতুল ফিরে এল। তারা এবার নিজেরাই গবেষণা করতে বসল, কার হতে পারে এই ডিম? প্রথমেই তারা বাদ দিল হাঁস আর মুরগিকে। হাঁস-মুরগির ডিম তাদের ফ্রিজেই আছে, ওগুলো দেখতে একদমই এটার মতো না। কোয়েলের ডিমও তারা দেখেছে, দেখেছে টিকটিকির ডিমও। এই ডিমটা ওসব কোনো ডিমের সঙ্গেই মেলে না। তাহলে কি এটা সাপের ডিম? নাকি কুমিরের?
অনেক চিন্তার পর ডিমটা তারা নিয়ে এল নিজেদের ঘরে। মোটা একটা কাঁথার তলায় লুকিয়ে রাখল। আর একটু পর পর কাঁথা সরিয়ে ডিমটাকে দেখতে থাকল। তারা ভাবল, যদি সাপের ডিম হয়, তাহলে এক্ষুনি সাপ বেরোবে, যদি কুমিরের ডিম হয়, তাহলে এখান থেকে কুমির বেরোবে।
কিন্তু কত দিন চলে গেল, সাপ বা কুমির কিছুই বের হলো না কাঁথার ভেতর থেকে। শেষে তারা প্রায় ভুলেই গেল ডিমের কথা।
কিন্তু একদিন কাঁথার ভেতর থেকে অদ্ভুত একটা আওয়াজ শুনল তারা। তাড়াতাড়ি কাঁথাটা সরিয়ে দেখল, ডিম ফুটে বেরিয়ে এসেছে একটা বাচ্চা। বাচ্চাটা হাঁস মুরগি কোয়েল টিকটিকি সাপ বা কুমির কারও না। ছোট্ট বাচ্চাটা একটা ডাইনোসরের। মায়া মায়া চোখে তাকিয়ে আছে তুলতুল আর রিমঝিমের দিকে। রিমঝিম আর তুলতুল আনন্দের চোটে কিছুক্ষণ কথাই বলতে পারল না। তারপর ডাইনোসরের বাচ্চাটা নিয়ে তারা ছুটল বাবাদের কাছে। বলল, ‘বাবা বাবা দেখো, ডাইনোসরের বাচ্চা!’
বাবারা নিজেদের মধ্যে গল্পে ব্যস্ত ছিল। তারা খুব নিরাসক্ত গলায় বলল, ‘ও তাই নাকি। খুব ভালো।’
বাবারা ডাইনোসরের দিকে যখন ঘুরেও তাকাল না, তখন তুলতুলেরা ছুটল মায়েদের কাছে। মায়েরা তখন প্রতিদিনের মতোই টিভি দেখছে। রিমঝিম বলল, ‘মা দেখো, আমাদের নতুন খেলার সাথি! ডাইনোসরের বাচ্চা...বলো না মা, ওর নাম কী দেব?’
-দাও না যা খুশি!
-মা তাকাও না...দেখো না, বাচ্চাটা ফোকলা দাঁতে হাসছে!
-আহা, বিরক্ত কোরো না তো!
-মা, বাচ্চাটা কি আমাদের সঙ্গে থাকতে পারবে? আমরা ওর সঙ্গে খেলতে চাই।
-আগে হোমওয়ার্ক, তারপর খেলা।
-আমরা হোমওয়ার্ক করেই ওর সঙ্গে খেলব!
-তাহলে থাকুক। কিন্তু বেশি দুষ্টুমি করবে না!
টিভি দেখতে দেখতে মায়েরা তুলতুলদের দিকে তাকানোর সুযোগই পেল না। পেলে দেখত তুলতুল আর রিমঝিমের মাঝে সত্যি সত্যি একটা ডাইনোসরের বাচ্চা দাঁড়িয়ে হাসছে।
তুলতুল আর রিমঝিম নিজেদের ঘরে নিয়ে এল বাচ্চাটাকে। আজ থেকে বাচ্চাটা তাদের সঙ্গেই থাকবে, তাদের সঙ্গেই খেলবে, তাদের সঙ্গেই স্কুলে যাবে—ভর্তিও করিয়ে দেবে ডাইনোসরের বাচ্চাকে। কিন্তু স্কুলে ভর্তি করাতে গেলে তো একটা নাম দিতে হবে বাচ্চাটার।
বাচ্চাটার নাম নিয়ে মহা চিন্তায় পড়ল তুলতুল আর রিমঝিম। কোনো নামই তাদের পছন্দ হচ্ছে না। আচ্ছা শোনো তো, তোমরা কি ডাইনোসর বাচ্চাটার সুন্দর একটা নাম দিতে পারো?

প্রথম প্রকাশ: গোল্লাছুট

লিংক: http://www.prothom-alo.com/art-and-literature/article/656125/%E0%A6%A1%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%A8%E0%A7%8B%E0%A6%B8%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%9A%E0%A7%8D%E0%A6%9A%E0%A6%BE

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন