শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

পুট্টুস নামের কুট্টুসটা

অলংকরণ: তুলি
তার মানে তোমরা বলছ কুট্টুসদের তোমরা চেনো না? দেখোইনি কোনো দিন? আরে বাবা, এই তো সেদিনই আমার সঙ্গে তাদের দেখা হয়ে গেল। আমাকে দেখেই ডাগর ডাগর চোখে তাকিয়ে খিলখিল করে পেট চেপে হাসতে শুরু করল। 
আচ্ছা শোনো, বাড়ি থেকে বেরিয়ে কু-ঝিকঝিক ট্রেনে চেপে তোমরা যদি ঠিক ঠিক যেকোনো একটা দিকে নামতে পারো, আর নেমেই যদি যেতে পারো এক শ বাইশ কিলোমিটার, আর যেতে যেতেই যদি সন্ধ্যা হয়ে আসে, আর সন্ধ্যা হলেই যদি সূর্যটা ডুবতে শুরু করে, আর যেখানে সূর্য ডোবে ডোবে সেখানে যদি উঁচু একটা টিলা মতন থাকে, তখন তুমি শুধু ওই টিলার ওপর দাঁড়িয়ে দেখো-কী হয়!
যেই না ডুববে সূর্যটা, অমনি চলে আসবে কুট্টুসেরা। তোমাদের যে পুতুলগুলো আছে, কুট্টুসেরা তার চেয়ে এই একটু হয়তো বড়। মানুষের মতোই মাথা আর শরীর। মাথার ভেতর চোখ-মুখ সবই আছে, শুধু নাক নেই। কুট্টুসগুলো তাই কোনো কিছুর গন্ধ পায় না।
আর জানো তো কট্টুসগুলোর একটা করে চিকন চিকন লেজও আছে! চিকন, কিন্তু কী যে শক্ত! কুট্টুসগুলো তো কখনো কখনো ওই লেজের ভরেই দৌড়ায়। আবার কখনো কখনো গাছের সঙ্গে লেজটা লেপটে সিলিং ফ্যানের মতো বনবন করে ঘোরে। অনেকক্ষণ ঘোরা হলে ধপ ধপ করে মাটিতে ছিটকে পড়ে আর তখন তারা ঠিকমতো হাঁটতেও পারে না। টলতে টলতে চলতে চলতে ওরা তখন খিলখিল করে হাসে। কুট্টুসগুলো কিছু হলেই হাসে। সারা বছর হাসে!
আচ্ছা, তোমরা নিশ্চয়ই বিশ্বাস করছ না আমার কথা! ভাবছ আমি কার কাছ থেকে জানলাম এত সব! আরে, পুট্টুসের সঙ্গে যে আমার বন্ধুত্ব। এখন আবার বোলো না যে পুট্টুস কে? পুট্টুস হলো কুট্টুসদের মধ্যে সবচেয়ে দুষ্টু। আমি যেদিন প্রথমবার গেলাম কুট্টুসদের কাছে সেদিনই পুট্টুস লেজের সাহায্যে তিড়িং করে লাফিয়ে বিড়িং করে আমার ঘাড়ে উঠে বসল। বসেই বলল, ‘হ্যাল্লো! আমি হলাম পুট্টুস! তুমি কে?’
আমি যে-ই না আমার নাম বলতে যাব অমনি পুট্টুস বলল, ‘থাক থাক। তোমার আর নাম বলতে হবে না। তুমি গল্প জানো?’
আমি রাগের স্বরে বললাম, না।
পুট্টুস বলল, জানো না? গল্প না জানলে তুমি এখান থেকে যাবে কীভাবে?
: মানে?
: মানে…কুট্টুসদের কাছ থেকে যেতে গেলে তাদের গল্প শোনাতে হবে।
পুট্টুসের সঙ্গে অন্য কুট্টুসগুলো তখন খিলখিল করে হেসে উঠল। আর মুখে বলল, ঠিক ঠিক!
আমি পড়লাম মহাবিপদে। ভাবলাম পুট্টুস তো পিচ্চি, তাকে একটা পুরোনো গল্প শুনিয়ে দিই। শুরু করলাম ডালিমকুমারের গল্প। পুট্টুস বলল, উহহু, এই গল্প তো পুরোনো। নতুন কোনো গল্প বলো…
: একটা ছিল জাদুর চেরাগ…
: ধুর! এটাও পুরোনো। চেরাগের ভেতর থাকে জিন। নতুন কোনো গল্প বলো না…!
: এক ছিল ব্যাঙ আর রাজকন্যা…!
: থামো থামো। কী সব পুরোনো গল্প বলছ তুমি?
: তোমরা তো সব গল্পই জানো। আর তাহলে নতুন গল্প কোথায় পাব?
: যতক্ষণ নতুন গল্প না শোনাতে পারবে, ততক্ষণ কোথাও যেতে পারবে না তুমি! 
ভয়ংকর বিপদ। আমি তো আর তোমাদের মতো না যে ধুমধাম করে গল্প বানিয়ে ফেলব! কিন্তু নতুন গল্প না বলতে পারলে তো এরা যেতেও দেবে না। তাই অনেক চিন্তা করে বললাম, এক দেশে ছিল এক পুট্টুস!
পুট্টুস লেজ নাড়িয়ে বলল, রাজা না রানি না, দৈত্য না ভূত না…এক দেশে ছিল এক পুট্টুস? দারুণ তো। নতুন নতুন মনে হচ্ছে। বলো, তারপরে বলো…
আমি বললাম, পুট্টুসটা ছিল ভীষণ চঞ্চল আর ভারী দুষ্টু!
: ও তাই নাকি? বাহ! দুষ্ট পুট্টুসের গল্প?
: সে শুধু সবার কাছে গল্প শুনতে চাইত!
: তাই নাকি? তারপর?
আমি কু-ঝিকঝিক ট্রেনে চেপে কী করে কুট্টুসদের সঙ্গে দেখা করলাম তা বলতে থাকলাম। কী করে পুট্টুস আমার ঘাড়ে উঠে আমার গল্প শুনতে শুরু করল সেটাও বলতে থাকলাম। পুট্টুস গল্প শুনতে শুনতে বলতে থাকল, বাহ্! দারুণ! দারুণ! খুবই নতুন গল্প! এমন গল্প আগে কখনো শুনিনি।
পুট্টুসকে পুট্টুসের গল্প শুনিয়ে সেদিন আমি বাড়ি ফিরে এসেছিলাম। আজকে খবর পেলাম পুট্টুস নাকি তাদের সঙ্গী-সাথি নিয়ে বাংলাদেশ ভ্রমণে বেরিয়েছে। সবার বাড়িতে ঢুকে ঢুকে নাকি বলছে, ‘হ্যাল্লো, আমার নাম পুট্টুস। তুমি কি গল্প জানো? নতুন কোনো গল্প?’
আচ্ছা, তোমাদের কাছে নতুন গল্প আছে তো? পুট্টুস তো তোমাদের বাড়িতেও আসতে পারে, তাই না?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন