শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

বইমেলায় পুলিশ

রস+আলো রিমান্ডে
রস+আলোর পাঠক, আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, শুরু হয়ে গেছে আমাদের সবার প্রিয় একুশে বইমেলা। আপনারা নিশ্চয়ই এ-ও জানেন যে এবারের বইমেলার বই পুলিশও পড়ে দেখবে। কোথাও কোনো অসংগতি আছে কি না, তা বোঝার জন্য। কিন্তু আপনারা নিশ্চয়ই এটা জানেন না যে বই পড়তে আমাদের পুলিশদের কেমন লাগছে! রস+আলোর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে সেসব অজানা তথ্য। জানাচ্ছেনআহমেদ খান: বইমেলার শুভেচ্ছা। কেমন আছেন?
: খুব প্রেশারে আছি, ভাই।
: বুঝতেই পারছি। জননিরাপত্তামূলক কাজ করেন আপনারা, প্রেশার তো একটু বেশি থাকবেই।
: আরে নাহ্‌! সেসব তো গা-সওয়া হয়ে গেছে। এখন যোগ হইছে নতুন প্রেশার—বই পড়া!
: বই পড়তে ভালো লাগছে না?
: সব বই কি আর পড়া যায়, বলেন? গতকালকে পড়তে হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী অধিবিদ্যার ফলাফল। সাড়ে তিন শ পৃষ্ঠার বই। সব কথা গেল টুপির ওপর দিয়ে! দাঁত যে এখনো মাড়িতে আছে, সেইটা ছোটবেলায় নিমের দাঁতন ব্যবহার করার ফল!
: আর কী পড়েছেন?
বাস্তুতত্ত্ব পড়লাম। বিরাট বিজ্ঞান। ঘরের আসবাবপত্র কীভাবে রাখতে হয়, জানাই ছিল না এদ্দিন। বইয়ের সেই জ্ঞান বাসায় ফলাতে গিয়ে অবশ্য ধরা খাইছি! যেই না বাসার খাট চেঞ্জ করা ধরছি, বউয়ে দিছে কড়া ধমক। বলেছে, আমি নাকি অল্পবিদ্যা ভয়ংকরি, কথায় কথায় পালঙ্ক ধরি!
: আপনি কী বললেন?
: আমি আর কী বলব, একটা বই ধরায়ে দিছি তারও হাতে। বলেছি, আমার হয়ে তুমিই বুক রিভিউ করে দাও এইটার।
: কী বই?
: অক্সফোর্ড ডিকশনারি, এই রকম মোটা। সাত দিন অন্তত চুপ থাকবে! এর মধ্যেই ১১টা বাজে ও উসকানিমূলক শব্দ বাইর করে ফেলছে! এইগুলা নিয়ে টিম মিটিংয়ে বসব অতি দ্রুত।
: তাহলে অক্সফোর্ড ডিকশনারি বাতিল হয়ে যাবে নাকি?
: বলা তো যায় না কিছু। এইটা নির্ভর করতেছে অনেক কিছুর ওপর। অত সহজে তো আমরা ছাইড়া দিতে পারি না।
: তা তো ঠিকই। তা আজকে কিছু পড়ছেন না?
: পড়ব না আবার? এইটাই তো চাকরি! আজ পড়ছি তরুণ কবির কবিতার বই ঘটি নিয়ে লটঘট। নামের মধ্যেই একটা বেয়াড়া রকমের উসকানি আছে। কিন্তু উসকানিটা ঠিক কোথায়, ধরতে পারতেছি না। উসকানিটা ধরতে পারলেই কবিরে ধরব! তার লটঘট তখন চটপট চম্পট দিবে!
: বাহ্‌! আপনি তো দেখছি এর মধ্যেই ছন্দে ছন্দে কথা বলা শুরু করে দিয়েছেন!
: বই খুবই ভয়ংকর জিনিস রে ভাই। খুবই প্রভাবিত কইরা ফেলে! জানেন না আমাদের কমিশনার স্যারের কাহিনি?
: না তো। কী হয়েছে তাঁর?
: স্যারের মাথায় অল্পবিস্তর ছিট দেখা দিয়েছে!
: বলেন কী?
: হুম। এই ছিটের নাম হিমু ছিট। হ‌ুমায়ূন আহমেদ বলে এক রাইটার আছেন, সেই রাইটারের একটা ক্যারেক্টার আছে হিমু। জানেন আপনি?
: জি, জানি।
: কমিশনার স্যার জানতেন না। না জানলেই বোধ হয় ভালো হইতো।
: কেন?
: আমাদের বস এক রাত্রে হিমুর সাত-সাতটা বই পইড়া ফেলছেন। তারপর কাউকে কিছু না বইলা নদীর পাড়ে মাটি খুঁড়ে গর্ত করে সেই গর্তের ভেতর ঢুকে বসে আছেন। শুধু মাথাটা বাইরে। প্রকৃতির সাথে নাকি থাকতে চান। আমি ভাবতেছি, উনি প্রকৃতির সাথে আছেন ভালো কথা, কিন্তু এর মধ্যে যদি প্রকৃতির ডাক আসে, তাইলে তখন কেমনে কী?
: তাই তো! তখন তো ঘটি নিয়ে লটঘট করারও উপায় নাই!
: একদম না। আমরা সবাই মিলে স্যারকে ওঠাতে গেছিলাম মাটি থেকে।
: উঠেছেন?
: না। হিমুর আরও বই চাইতেছেন। ওদিকে আরেকজনও নাকি হিমু অ্যাফেক্টেড হইছে। পুলিশের ইউনিফর্ম পইরা খালি পায়ে নাকি ঘুরতেছে। বলেন, কেমনে কাজ চলবে?
: সত্যিই মুশকিল!
: আরও মুশকিল আছে! ধরেন নজরুল তাঁর সাম্যবাদী কবিতায় লিখছেন, ‘বন্ধু, যা খুশি হও,/ পেটে পিঠে কাঁধে মগজে যা খুশি পুঁথি ও কেতাব বও...’—এই রকম আরও অনেক অনেক লাইন এই দুখু মিয়ার আছে। দুখু মিয়া লেইখা গেছেন আর দুঃখে পড়ছি আমরা!
: কেন, দুঃখ কেন?
: দুঃখ না? ধরেন কাজী নজরুল ইসলামের লেখার ভেতর তো উসকানির শেষ নাই! এখন বলেন, নজরুল ইসলামকেও কি ব্যান করব আমরা? বলেন, সিদ্ধান্ত দেন?
: না না, এইটা তো আপনাদের সিদ্ধান্ত। আপনারা কী বলেন?
: আমরা আর কী বলব? ছোটবেলা থেইকা পড়াশোনা কইরা পুলিশে ভর্তি তো হইছিলাম যেন আর পড়াশোনা করতে না হয়! আর এখন দেখেন, নতুন কইরা আবার পড়াশোনা! কদ্দুর আর ভাল্লাগে কন? একটু পরেই একটা গবেষণাগ্রন্থ পড়তে হবে। নাম শুনবেন? বিলুপ্তপ্রায় পান্ডা ও সবুজ কচি বাঁশ! বলেন, এই বই পড়তে কেমন লাগার কথা?
: ইন্টারেস্টিং হতে পারে। বাঁশ, পান্ডা, গুন্ডা—এগুলো তো আপনাদের জন্য ইন্টারেস্টিং হওয়ার কথা!
: ইন্টারেস্টিং না? দাঁড়ান এইখানে, এই যে নেন বইটা, পড়েন। পইড়া আমারে রিভিউ দেন। এই বইয়ের মধ্যে কোনো উসকানি আছে কি না দেখেন, পড়েন!
: না না, কী বলেন এই সব! শোনেন, আমার কথা শোনেন...
: কোনো শোনাশুনি নাই! দাঁড়ায় দাঁড়ায় চুপচাপ বইটা শেষ করেন!
: ভাই শোনেন, মামা...
: রাখেন আপনারা মামা! এই, কে আছিস, একটা দড়ি নিয়ে আয়! আইজকা রিপোর্টাররে বাইন্ধা এইখানেই বই পড়ামু! আরও ১০টা বই নিয়া আয়। মোটা মোটা বই নিয়া আয়...

পাদটীকা: এরপর কী হয়েছে, তা আর জানার চেষ্টা করবেন না। আমরা সেসব প্রকাশে অক্ষম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন