মঙ্গলবার, ৯ মে, ২০১৭

একদিন এক ভ্যাটকানো রাস্তায়

অাঁকা: িশখাঅাঁকা: িশখামুসলিম ভাইদের প্রতি সালাম, হিন্দু ভাইদের প্রতি নমস্কার এবং অন্যান্য ধর্মের লোকদের প্রতি আবু মজমাদারের শুভেচ্ছা। আজকে আমি আপনাদের সামনে নিয়া হাজির হইছি আজব এক জিনিস। এই যে আমার কালো ব্যাগ দেখতে পাচ্ছেন ব্রাদার, কী মনে হয়, এর ভিতর কী আছে? কী আছে? জায়গায় দাঁড়ায়া আওয়াজ দেন ভাই, কী মনে হয়, এই ব্যাগের ভিতর আছে কোন সে আজব জিনিস! সাপ নাকি শাপ? ব্যাঙ নাকি ব্যাংক? ভুল করলেন ভাইটি আমার! আকরাব আকরাব! খোল খোল, এই ব্যাগ…খোল! এই যে দেখেন ভাই, ভালো কইরা দেখেন, দেখেন, না, কোনো থলের বিড়াল না এইটা, কোনো রকেট বামও না, দাঁতের মাজনও না এইটা কিন্তু ভাই! কোনো সর্বরোগহারী অব্যর্থ মলমও কিন্তু না! তাইলে কী এইটা? আকরাব! আকরাব!! এইটা হইল ভ্যাট! ভ্যাট!!

এই দাঁড়া…খাড়া এইখানে, কই যাস তুই! এ বড় পিছলা ভাই! খালি হাত থেইকা ফসকায়া যাইতে চায়, আর খালি দৌড়ায় আর বড় বড় লম্ফঝম্ফ দেয়! আমার ওস্তাদ এরে সেই এভারেস্টের গুহার ভিতরে প্রথম আবিষ্কার করছিল! তারপর থেইকা এই ভ্যাট খালি লাফাইতে চায়! ওস্তাদরে বলছিলাম, ওস্তাদ, এই ভ্যাট নিয়া আমরা কী করব? এরে কি অলিম্পিকে পাঠায়ে দিব? এ তো লাফাইতে লাফাইতে বাইড়া যাইতেছে! অলিম্পিকে দীর্ঘ লম্ফে খাড়াইলে নিশ্চয় স্বর্ণপদক পাইব!

ওস্তাদ কী বলছিল, জানেন? ওস্তাদ বলছিল, ওরে নাদান, ওরে আমার পেয়ারের আবু, তুই এখনো এই ভ্যাটরে চিনতে পারস নাই! এরে অলিম্পিকে পাঠানোর দরকার নাই! কী নাই? অলিম্পিকে পাঠানোর দরকার নাই! এরে তুই নিজের কাছেই রাখ। আর বছর বছর সময়মতো তোর কালো ব্যাগ থেইকা বাহির কর! দেখবি, এই ভ্যাট তোর জন্য স্বর্ণপদক না হীরার পদক নিয়া আসবে! হীরার পদক!

তা এই হীরার পদক আনা ভ্যাট দিয়া আপনারা কী করবেন, ভাই? আছে কোনো চিন্তা? এই ভ্যাট কী উপকারে লাগব আপনাদের, ভাবছেন কিছু? ভাবেন নাই। আমি তাইলে কই। বাড়ির গিন্নি-বউ-মা-বোনেরা রান্নায় বেশি তেল দিয়া দিতাছে না? কী, দিতাছে? না দিতাছে না, কন! উত্তর দেন না ক্যান? দিতাছে না? আর সেই বেশি তেল খাইয়া আপনার পেট খারাপ, মন খারাপ, মাথা খারাপ! সারা দিন বস আর পাতিবসদের জি স্যার জি স্যার বলিয়া তেল দেওয়ার পর আর কোনো তেলই আপনার সহ্য হইতেছে না! তেল খাইলেই বদহজম। গ্যাস্ট্রিক আর বদঢেকুর! আর এই সব থেইকা মুক্তির উপায় হইল এই ভ্যাট!

এই ভ্যাট রান্নার ওই তেলের সঙ্গে আমি যুক্ত কইরা দিতাছি! আর দেখেন, তখনই আপনি বাড়িতে বলতে পারবেন তেলের দাম বাইড়া গেছে, তেল খাওয়া নিষেধ! যে কাজ আপনি নিজে এত দিন বইলা করাইতে পারেন নাই, দাম বাইড়া গেছে শুনলেই বাড়িতে তেল খাওয়া দেখবেন অটোমেটিক কইমা গেছে! এখন দরকারি জিনিসের দাম অনেক বেশি হওয়ার কথা। কিন্তু এই ভ্যাট শুধু কোম্পানির প্রচারের জন্য এইবার মাত্র ১৫ পার্সেন্ট…১৫ পার্সেন্ট…১৫ পার্সেন্ট!
আপনারা যদি আরও মনে করেন এই ভ্যাট আপনাদের কী কাজে লাগবে, তাইলে ব্রাদার, একটু খেয়াল করেন। আপনার প্রতিদিনের জিনিসপত্রের সঙ্গে এই ভ্যাট লাগায়ে দিলেই আপনার প্রয়োজনীয় সব জিনিসের দাম হাতের নাগালের বাইরে চলে যাবে! তখন কী হবে? কী ভাই, উত্তর দেন না কেন? কী হবে তখন? এই দেশে যখন আপনি আর হাতের নাগালে জিনিস পাবেন না, তখন তা কিনতে চলে যাবেন দেশের বাইরে। একই জিনিস দেশের বাইরে থেকে আপনারা কিনে আনবেন অনেক সস্তায়। সপ্তাহে সপ্তাহে তখন আপনাদের বিদেশ ভ্রমণ নিশ্চিত! কী, আপনারা বিদেশ ভ্রমণ করতে চান না, ভাই? চান কি চান না, বলেন? যাঁরা বিদেশে যাইতে চান, জায়গায় খাড়ায়া আওয়াজ দেন খালি। কোম্পানির প্রচারের জন্য এই ভ্যাট এইবার শুধু ১৫ পার্সেন্ট…১৫ পার্সেন্ট…১৫ পার্সেন্ট…
এই যে বছরে এতগুলা উৎসব আর প্রতিটা উৎসবে নতুন নতুন জামাকাপড় কিনার হিড়িক। উৎসব আসা মানেই আপনার পকেট থেইকা টাকা পাখির মতো ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ কইরা উইড়া যাইতেছে। এইটা যদি বন্ধ করতে চান, তাইলে এই ভ্যাট হইল আপনার জীবনের শেষ চিকিৎসা মানে দ্য লাস্ট ট্রিটমেন্ট! এই ভ্যাট লাগানো মাত্রই আপনাদের পোশাকের দাম এক লাফে লম্বা হইয়া যাবে। আর দাম লম্বা হইলেই আপনার পরিবারের মানুষদের বুঝায়ে বলার সুযোগ পাইবেন আপনি। বলবেন, গত বৈশাখের পাঞ্জাবি এই বৈশাখে প্রয়োজনে শার্ট বানায়ে পরো! আপনাকে আর নতুন জিনিস কিনতেই হইব না, ব্রাদার! আকরাব! আকরাব! এক্সট্রা খরচ থেইকা যে এইবার বাঁচতে চায়, সে জায়গায় খাড়ায়া আওয়াজ দেন খালি। কোম্পানির প্রচারের জন্য এই ভ্যাট এইবার শুধু ১৫ পার্সেন্ট…১৫ পার্সেন্ট…১৫ পার্সেন্ট…
ভ্যাট! ভ্যাট!! ভ্যাট!!! আছেন কোনো সহৃদয় ব্যক্তি, আছেন? থাকলে জায়গায় খাড়ায়া আওয়াজ দেন! কোম্পানির প্রচারের জন্য এইবার শুধু ১৫ পার্সেন্ট…১৫ পার্সেন্ট…১৫ পার্সেন্ট!!!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন