মঙ্গলবার, ৯ মে, ২০১৭

বাঘমামা

বনে আর কোনোভাবেই মন টিকছে না বাঘমামার। কোথাও একটু ঘুরতে গেলে ভালো হতো! শেয়াল এসে বুদ্ধি দিল। বলল, ‘ঘুরতে যখন যাবেন তখন রাজধানীতেই যান...মানে ঢাকায়!’
: ঢাকা? কিন্তু আমি তো কিছুই চিনি না।
: কোনো চিন্তা করবেন না। আমি আপনাকে ট্রেনে উঠিয়ে দেব। পু-ঝিকঝিক করতে করতে আপনি পৌঁছে যাবেন ঢাকায়। ঘুরবেন ফিরবেন খাবেন দাবেন...আরামই আরাম।
সে রাতেই বাঘমামা উঠে গেল ট্রেনে। বসল একটা কামরায়। জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে বাঘমামা বলল, ‘শোনো, বনটা কিন্তু দেখে রেখো। আমি খুব দ্রুতই চলে আসব।’
শেয়াল বলল, ‘কোনো চিন্তা করবেন না। আমি সব দেখে রাখব।’
পোওওও আওয়াজ তুলে ট্রেনটা চলে গেল। আর শেয়ালটা হাসতে হাসতে পৌঁছাল বনে। চিৎকার করে ডেকে বনের সবাইকে বলল, ‘বনের পশুপাখি গাছপালা সবাই মন দিয়ে শোনো...আজ থেকে আমিই বনের রাজা। আমি যা বলব আজ থেকে তা-ই হবে।’
শেয়াল বনের রাজা হবে শুনে পশুপাখিদের খুব মন খারাপ হলো। বাঘমামার মতো কি আর কেউ বনটাকে আগলে রাখতে পারবে?
ওদিকে বাঘমামা নামল ট্রেন থেকে। গভীর রাত। রাস্তায় শুধু হলুদ হলুদ আলো। কিন্তু বাঘমামার পেটে খুবই খিদে। ছটফটিয়ে বাঘমামা ঢুকল এক হোটেলে। বলল, ‘হালুম, খাবার আছে কোনো?’
হোটেলের লোকজন বাঘমামাকে দেখে যে যার মতো দৌড়ে পালাল। শুধু সবচেয়ে ছোট্ট যে সে বলল, ‘বসেন আরাম করে। এখন শুধু কাচ্চি আছে, খাবেন?’
বাঘমামা বলল, ‘কাচ্চি-মাচ্চি যা পাচ্ছি তা-ই খাব!’
ছোট্ট ছেলেটা এক প্লেট কাচ্চি বিরিয়ানি দিল বাঘমামাকে। বাঘমামা হাপুস-হুপুস করে খেলো। তেল একটু বেশি কিন্তু খুব আরাম পেল খেয়ে। তারপর হেলতে-দুলতে গিয়ে শুয়ে পড়ল রাস্তার মাঝখানে। একটা হাই তুলে, থাবা দিয়ে নাকটা একবার চুলকে ঘুমিয়ে পড়ল সেখানেই।
সকালে বাঘমামার ঘুম ভাঙল চিৎকারে। চোখ মেলেই দেখল অনেক মানুষ তাকে ঘিরে রেখেছে দূর থেকে। তারা বলছে, ‘এটা নিশ্চয় চিড়িয়াখানার বাঘ, পালিয়ে এসেছে!’
একজন বলল, ‘কিন্তু একে ধরব কীভাবে?’
আরেকজন বলল, ‘দূর থেকে ইনজেকশন মেরে বাঘটাকে ঘুম পাড়িয়ে দিতে হবে। তারপরেই ঢুকিয়ে দিতে হবে চিড়িয়াখানার খাঁচায়!’
এসব শুনে তো বাঘমামার মাথা ঘোরার দশা। হালুম বলে লেজ গুটিয়ে সে দিল এক দৌড়। মানুষগুলো ছুটতে শুরু করল তার পেছনে। বাঘমামা আরও জোরে দৌড়াতে শুরু করল—দৌড় দৌড় দৌড়!
দৌড়াতে দৌড়াতে বাঘমামা ঢুকে পড়ল গুনগুনদের বাসাতে। গুনগুন তখন ড্রয়িংরুমে বসে পড়ছিল। বাঘমামা ঢুকেই বলল, ‘আমাকে বাঁচাও। ওরা আমাকে চিড়িয়াখানায় বন্দী করে দেবে।’
গুনগুন একটু ভেবে বলল, ‘শোনো আমি যা বলব তা-ই করবে, ঠিক আছে?’
বাঘমামা মাথা নাড়িয়ে শান্ত স্বরে বলল, ‘ঠিক আছে।’
একটু পরেই লোকগুলো এল ছুটতে ছুটতে। গুনগুনের পাশেই বাঘমামাকে দেখে বলল, ‘অ্যাই মেয়ে, এই বাঘটাকে দাও। আমরা চিড়িয়াখানায় নিয়ে যাব!’
গুনগুন তখন ফোকলা দাঁতে হেসেই খুন। বলল, ‘কে বাঘ? ওটা তো আমার বিল্লি!’
: কী বলো, ওইটা বাঘ। দেখছ না ওটার গায়ে ডোরাকাটা!
: ওই ডোরা তো আমিই কেটেছি...কেটে বাঘ সাজিয়েছি।
: না না ওটা বাঘ। হালুম-হুলুম বাঘ।
: না না ও তো বিল্লি। ওর নাম মিনি। মিনি ডাকো তো একবার...
বাঘমামা তখন ডেকে উঠল—মিউ মিউ!
লোকগুলো তো ভীষণ অবাক। সত্যিই তো, এমনভাবে তো বেড়ালই ডাকে। বাঘ হলে তো ডাকত হালুম বলে। লোকগুলো চলে গেল। আর তখনই বাঘমামা আর গুনগুনের বন্ধুত্ব হয়ে গেল।
আর বন্ধু হলে তো বন্ধুর উপকার করতেই হয়। গুনগুন তাই তার বাবাকে বলে বাঘমামাকে বনে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিল। ট্রেনে চেপে পরের দিনই বাঘমামা পৌঁছাল বনে। আর বনে গিয়ে দেখল এর মধ্যেই শেয়াল গাছ কাটাচ্ছে, ডাল ভাঙছে, সবকিছু তছনছ করে দিচ্ছে। বাঘমামা রেগে গিয়ে দিল ভীষণ ধমক। যারা গাছের মগডালে বসে ডাল কাটছিল তারা টুপটাপ খসে পড়ল। শেয়াল ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল, ‘আপনি এখানে কীভাবে এলেন? আপনাকে ওরা চিড়িয়াখানায় বন্দী করেনি?’
বাঘমামা বলল, ‘না। বুদ্ধিমান ছোট্ট বন্ধু আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তোমাকে এবার কে বাঁচাবে?’
বাঘমামা এক থাবায় উড়িয়ে দিল শেয়ালকে। বনের বাইরে দূরে কোথায় যে শেয়ালটা পড়ল কেউ জানে না। বনের সবাই একসঙ্গে তালি দিয়ে উঠল। বাঘমামা ফিরে এসেছে, বনটা এবার বাঁচবে!
গোলপাতায় লেখা বাঘমামার চিঠি আজকে গুনগুন পেয়েছে। চিঠিতে মামা সবাইকে তাদের দারুণ সুন্দর বনটা ঘুরতে যেতে বলেছে। গুনগুন ঠিক করেছে পরের ছুটিতেই তারা বন ঘুরতে যাবে। আর সঙ্গে নিয়ে যাবে বাঘমামার ঢাকার প্রিয় খাবার কাচ্চি বিরিয়ানি।

1 টি মন্তব্য:

  1. এই মন্তব্যটি একটি ব্লগ প্রশাসক দ্বারা মুছে ফেলা হয়েছে।

    উত্তরমুছুন