বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৪

ইজিজি











 
১.
‘মেয়েটি ছোট থেকেই যেন কেমন, আর পাঁচটা বাচ্চার মতো না। চুপচাপ থাকে। যেখানে বসিয়ে রাখা হয়, সেখানেই বসে থাকে। একা একা বিড়বিড় করে। স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড বলতে একমাত্র যা, তা হলো পিঁপড়ার সাথে খেলে। পিঁপড়াকে ডাকে ইজিজি। আর মেয়েটা, ধরা যাক তার নাম মেঘলা, আঙুলে পিঁপড়া নিয়ে অনবরত কথা বলতেই থাকে, বলতেই থাকে। শিশুদের অর্থহীন ভাষাতে বললেও পিঁপড়াগুলো মনেহয় সে ভাষা বুঝতে পারে। পিঁপড়া মেঘলার শরীর বেয়ে কাঁধে উঠে যায়। মেঘলা সুড়সুড়ি পাবার আনন্দে হি হি করে হাসে।’

এ পর্যন্ত লিখে থামে রায়হান। ল্যাপটপের স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে অক্ষরগুলো। সিগারেট ধরাবে কি ধরাবে না সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
          ‘কফি কফি...’
          কফির কাপ নিয়ে ঘরে ঢোকে বৃষ্টি। অল্প ক’দিন হলো তারা বিয়ে করেছে। কফির কাপের দিকে তাকিয়ে রায়হানের মনে হয় তার আসলে কফির তৃষ্ণাই পেয়েছিল।
           ‘কী করো?’ কফির কাপ দিতে দিতে বৃষ্টি প্রশ্ন করে।
           ‘আর কি...!’ কাপে ছোট্ট চুমুক দেয় রায়হান। ‘লিখি বেগম সাহেবা... ঈদসংখ্যার গল্প! সম্পাদক মাথা খারাপ করে দিলো, বুঝছো!’
           ‘কী লেখো? শোনাও আমাকে...!’
‘আরে পত্রিকায় ছাপলে পড়ে নিও।’
‘আমি লেখক হলে এমন ত্যাড়ামি করতাম না মিস্টার... শোনাও না প্লি-জ...’
শেষের বাক্যে ঢঙ মিশ্রিত আব্দার ঝরে পড়ে।
           ‘হুম, আচ্ছা শোনো, এটা একটা মেয়ের গল্প...’
‘না না এভাবে না। যেমন লিখেছ তেমনি পড়ে শোনাও।’
‘ওকে!’
মেকি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রায়হান। তারপর পড়তে শুরু করে, ‘মেয়েটা ছোট থেকে যেন কেমন... ’
হাতের ওপর থুতনি রেখে গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনতে থাকে বৃষ্টি।


২.
‘জন্মের বছর দুই শেষ হতে না হতেই মেঘলার মা মারা যান।

দুপুরে ভাত খেয়ে একটু ঘুমানোর অভ্যাস ছিল মেঘলার মায়ের। মেঘলাকে বুকে নিয়ে দুধ দিতে দিতে ঘুমিয়ে গিয়েছিলেন। সেই ঘুম ভাঙলো একবুক জ্বালা নিয়ে। শ্বাসের জন্য ঘরের সমস্ত বাতাস টেনে নিতে চাইলেন, পারলেন না। ডাক্তার বদ্যি ডাকার সুযোগ না দিয়ে, মুখে ফেনা তুলতে তুলতে, মারা গেলেন বিকেলে। মেঘলা তখনো দুধ খাচ্ছিল।

মাস তিনেক পরই মেঘলার ছোট খালাকে বিয়ে করেন বাবা। দুধের শিশুটিকে খালা প্রাণ দিয়ে আগলে রাখতেন। বাবা তো সারাদিনই বাইরে বাইরে, এই ব্যবসা সেই ব্যবসা নিয়ে হন্তদন্ত; খালাই তাকে মায়ের আদর-যত্ন দিয়ে বড় করেন। ইশকুলে পাঠান। হ্যাঁ, সাড়ে চার বছর বয়সেই মেঘলা ইশকুল যাওয়া শুরু করে। কিন্তু শিশুসুলভ নটখট, ওজর-আব্দার, চিৎকার ছিল না মোটেই। ইশকুলে গিয়ে, এক কোণের এক বেঞ্চে চুপচাপ বসে পড়তো। কারো সাথে ঝগড়া বা মারামারি নয়, কারো সাথে সদ্ভাবও নয়; তবে ক্লাস থ্রিতে একজন আসে— নাম রুমা। কী সুন্দর ফুটফুটে মেয়ে। বড় বড় চুল। দু’দিকে দুটো বেণী ঝুলিয়ে, মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে, পড়ে। তাকে দেখলেই মেঘলার মন যেন ভালো হয়ে যায়। মেঘলাকে দেখলে রুমাও ছুটে আসে।

ব্যস, তাদের বন্ধুত্ব হয়ে গেল। ক্লাসে মেঘলা ফার্স্ট আর রুমা সেকেন্ড। আইশা আপা তো তাদের নাম দিয়ে ফেললেন মানিকজোড়! ফাইভে দু’জন বৃত্তি পেয়ে একই গার্লস হাইস্কুলে ভর্তি হলো। সিক্সটা ভালোই কাটলো, কিন্তু সেভেনে ভীষণ জ্বর হয়ে তিন মাস ইশকুলে যেতে পারলো না মেঘলা।

রুমা তাকে রোজ দেখতে আসতো, পাশে বসে বসে নতুন বাংলা বইয়ের ছড়া কবিতা শোনাতো। কিন্তু রুমাকে আর ভালো লাগতো না মেঘলার। সেভেনে রুমা ফার্স্ট হয়েছিল, আর সে সেকেন্ড— সেকেন্ড হওয়াটা সে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিল না।

জ্বর ভালো হলেও মন ভালো হলো না মেঘলার। আর একদিন রুমারা বদলি হয়ে অন্য জায়গায় চলে গেল। অনেক পরে মেঘলা জানতে পেরেছিল রুমা নাকি ছাদ থেকে পড়ে মারা গেছে। কেন কে জানে, মেঘলার মন সেদিন ভালো হয়ে গিয়েছিল।’

কলিংবেলের শব্দ। বৃষ্টি ল্যাপটপ বন্ধ করে দরজা খোলে। রায়হান।

           ‘কি ঘুমিয়ে ছিলে নাকি?’ ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে রায়হান জিজ্ঞেস করে।
           ‘হুম।’
           ‘আজ অফিস থেকে আগেই ছাড়া পেয়ে গেলাম বুঝছো... অন্যসময় হলে একটু আড্ডাবাজি করতাম, কিন্তু ঘরে যে নতুন বউ..’
           ‘থাক আর আহ্লাদ দেখাতে হবে না... চা খাবা?’
           ‘কফি হলে জমে যায়।’
           ‘তুমি জামাকাপড় ছাড়ো, এক্ষুণি কফি দিচ্ছি!’
           ‘ল্যাপটপ বিছানায় কেন?’
           ‘বিয়ের ছবিগুলো দেখছিলাম।’
           ‘ও। ছবিগুলো বেশ তুলেছে, কি বলো?’
           ‘হুম।’


৩.
রায়হান নেই। বিছানার মাঝখানে ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে বৃষ্টি। ছবির ফোল্ডারটা ওপেন করে কিছুক্ষণ এ-ছবি ও-ছবিতে ক্লিক করে। কিন্তু পরক্ষণেই ফোল্ডারটা মিনিমাইজ করে রায়হানের লেখার ফাইলটা খোলে। গল্পটা কই? কোন পর্যন্ত যেন পড়েছিল সে? এই তো—

‘মেঘলার খ্যাতি এখন মফস্বল জুড়ে। ভাল ছাত্রী সে ছিলই, এবার মৌসুমী প্রতিযোগীতায় ড্রইংয়ে রাজশাহী বিভাগে প্রথম হয়েছে— এখন যাবে একেবারে ঢাকায়। ঢাকা! এর আগে কখনো সে ঢাকা যায় নি। কী যে উত্তেজনা তার! অবশ্য তার সব উত্তেজনা আর ভালোলাগা ছেলেবেলার সেই খেলার সাথী ইজিজিদের সাথে। হরলিক্সের খালি একটা বয়ামে সে তার বন্ধুদের ঢুকিয়ে রেখেছে। সেটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বলে, জানিস ইজিজি, আজ রাতে আমি ইয়া বড় একটা বাসে চড়বো। সাত ঘণ্টা চলার পর পৌঁছাবো ঢাকায়। হ্যাঁরে হ্যাঁ ঢাকা। রাজধানী। ঠাকুর স্যার আমাদের নিয়ে যাবেন। হ্যাঁ অবশ্যই... তোরাও যাবি... তোদের না খালি বড় বড় কথা! সামনে ম্যাট্রিক পরীক্ষা তো কী হয়েছে! দেখিস, আমি স্ট্যান্ড করবো! ওমা... মিষ্টি খাওয়াবো না আবার!’

মোবাইল বাজছে। হাতের কাছেই রাখা। কিন্তু ফোনটা ধরতে একদম ইচ্ছা করছে না বৃষ্টির। ডিসপ্লেতে দেখে রায়হানের নাম। অবশ্য নাম দেখার দরকার ছিল না। রায়হান ছাড়া অন্য কেউ তার নাম্বার জানেও না। আর জানবেই বা কে? সাতকূলে তো তার কেউ নেইও। ফোন রিসিভ করে বৃষ্টি।

‘হ্যালো, কী করছিলে?’
           ‘এইটা জানার জন্য ফোন দিয়েছো?’
           ‘আরে নাহ্, ধন্যবাদ দেয়ার জন্য ফোন দিয়েছি।’
           ‘কোন খুশিতে?’
           ‘আজকের লাঞ্চে চিংড়ি মাছের ভর্তাটা ফাটাফাটি ছিল...’
           ‘চিংড়ি মাছ না, জানো তো?’
           ‘হ্যাঁ হ্যাঁ জানি...’
           ‘লেখক হয়ে এমন ভুল করবে?’
           ‘শোনো, তিন মাসের বৈবাহিক অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, বিয়ের পর লেখক আর লেখক থাকে না...’
           ‘কী হয়?’
           ‘হয় প্রেমিক না হয় শ্রমিক হয়ে যায়।’
           ‘তা তুমি কী হয়েছো?’
           ‘প্রেমিক ও শ্রমিক- যুগপৎ!’
           ‘ও আচ্ছা... তাহলে বিয়ের পর প্রেমিক হয়েছেন আপনি, আগে না?’
‘আরে না— আগেও তো প্রেমিক ছিলাম... উফ্ তুমি না খালি ভুল ধরো আমার!’
‘তা প্রেমিক সাহেব কখন আসবেন?’
           ‘তাড়াতাড়ি। যত দ্রুত সম্ভব। ঠিক আছে এখন রাখি।’
           ‘ওকে রাখো। বাই।’
‘বাই।’


৪.
‘মেঘলার ছোট খালা, মানে ছোট মা, মারা যান।

মেঘলা যেদিন ঢাকা থেকে ফিরলো, সেই রাতে। মেঘলা ঢাকায় জিততে পারে নি। সে জানে, সে ভালো ছবি এঁকেছিল। তবু সে পারে নি। ফিরতে ফিরতে ঠাকুর স্যার বলেছিলেন, মেঘলা মা, মন খারাপ করিস না। আমার নজরে তুই-ই সেরা। ওরা কারচুপি করছে করুক। জীবনটা তো আর কারচুপি না।
এ কথাটা মেঘলার খুব মনে ধরেছিল। জীবনটা তো আর কারচুপি না। মেঘলা ঘরে এসে, ব্যাগ থেকে বয়াম বের ক’রে, টেবিলে বইয়ের আড়ালে রেখে, শুয়ে গিয়েছিল।

ছোট মা’র গোঙানি পাওয়া গেল একটু পরেই। এত বছর পর, অনেক ডাক্তার কবিরাজের পর, ছোটমা’র পেটে বাচ্চা এসেছিল। সেই ফোলানো ফাঁপানো পেট ধরে গড়াগড়ি যেতে যেতে ছোট মা চিৎকার করে মেঘলাকে ডাকতে লাগলেন। মেঘলা বোধহয় ঘুমিয়েই গিয়েছিল, শুনতে পেল না। মৃত-বাচ্চা প্রসব করতে করতে, রক্তগঙ্গার ভেতর ছোট মা মারা গেলেন। ডাক্তার নিয়ে বাবা উপস্থিত হলে মেঘলার ঘুম ভাঙলো। ততক্ষণে মহল্লা তোলপাড়! দিক দিক থেকে মানুষ আসছে। মেঘলা বয়ামটা নিয়ে চুপচাপ বসেছিল নিজের ঘরের এক কোণে।

পরদিন সকালে ছোট মা’কে যখন তার মায়ের পাশে কবর দেয়ার কথা ঠিকঠাক হল, মেঘলা নিষেধ করলো তার বাবাকে। মেঘলার চোখে বাবা কী দেখলেন কে জানে, তবে দ্রুতই কবরের স্থান পরিবর্তন করলেন।’

এ পর্যন্ত লেখা। বৃষ্টি ল্যাপটপ বন্ধ করে উঠে বসলো। পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল ড্রেসিং টেবিলের সামনে। ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার খুলে বের করলো একটা হরলিক্সের বয়াম। তাতে অসংখ্য পিঁপড়া। বয়ামটা উঁচু করে আয়নার সামনে ধরে বললো, রায়হান কী করে জানলো? তোরা বলেছিস? ...আবার নাকে নাকে বলছিস আমরা কিছুই বলি নি! তোরা না বললে কে বলবে? তোরা ছাড়া কে আছে আমার? কি? বলিস নি? মিথ্যা কথা মিথ্যা কথা মিথ্যা কথা!

টুংটাং। টুংটাং। কলিংবেলের শব্দ। বৃষ্টি তাড়াতাড়ি বয়ামটা ড্রয়ারের ভেতরে রাখলো। আয়নায় নিজের চুলটুল ঠিক করে নিলো। দরজাটা খুললো ঝটকায়। দেখলো কাজের বুয়া।
‘ও তুমি..’
‘হ আফা পোড়া কপাইল্যা আমিই। আর কে আইবো কন... কাম করতে করতে হাতে পইড়লো ফোস্কা, তাও কাম শ্যাষই হইলো না। কী, কাপড় ধোয়ান লাগবো, নাকি খালি ঘর মুছবো— কন।’
কথা বলতে বলতে বুয়া ঘরের ভেতরে ঢোকে। পানি নেয়ার জন্য বাথরুমের দরজা খুলেই চিৎকার দিয়ে ওঠে, ‘ও আল্লা গো... ও আফা গো... দেখেন দেখেন, কত পিঁপড়া কত্ত পিঁপড়া... লাক লাক পিঁপড়া... ও মাগো... আফা ঘরে কি কেরোসিন আছে?’

বুয়া মগে পানি নিয়ে পিঁপড়াগুলোর উপর ঢালতে থাকে। বৃষ্টি দৌড়ে এসে এক ধাক্কায় বুয়াকে সরিয়ে দেয়। চিৎকার করে বলে, ওদের মারবি না খবরদার। যা যা এখান থেকে হারামজাদি! যা।

স্পষ্ট গালিগালাজ করতে করতে বুয়া চলে যায়। যাওয়ার আগে বৃষ্টির কাণ্ড দেখে হতবাক হয়ে যায়। পানিতে ভেসে যাওয়া পিঁপড়াগুলোকে বৃষ্টি তখন ছেঁকে ছেঁকে উদ্ধার করে আনছে পরম মমতায়।


৫.
রাতের খাবারের পর ঝুলবারান্দায় গিয়ে রায়হান সাধারণত একটা সিগারেট খায়। আজ পরপর দুটা টানলো। মাথা কাজ করছে না। গল্পের পরের অংশ ভাবতে চেষ্টা করছে, পারছে না। অথচ কালই গল্পটা পাঠাতে হবে। বৃষ্টি এসে দাঁড়িয়েছে। রান্নাঘরের কাজ বোধহয় শেষ। বিদ্যুৎ গেল। রায়হান উঠে গিয়ে চার্জারলাইট অন করে।

বৃষ্টি বলে, কী হয়েছে, মুড অফ?

রায়হান চার্জারলাইট টেবিলের উপর রাখে। ঘর আধো অন্ধকার। হালকা বাতাস হচ্ছে। ঝুলবারান্দা লাগোয়া ঘরের জানালার পর্দাগুলো অল্প অল্প কাঁপছে। রায়হান বলে, পর্দাগুলো বদলাতে হবে। আরেকটু ভারী পর্দা দরকার।
           ‘এই জন্য তোমার মুড অফ?’
           ‘আরে না... মুড অফ ঠিক না... গল্পটার শেষ পাচ্ছি না, বুঝছো?’
           ‘কোন গল্পের?’
           ‘ওই যে তোমাকে শুনিয়েছিলাম... মেঘলার গল্প!’
           ‘আমি বলি গল্পের শেষটা?’
           ‘তুমিও যে গল্প লেখো তা তো জানতাম না... পেটে লাথ-টাথ মারার ইচ্ছা আছে নাকি! হা হা...!! ’
           ‘বলবো নাকি বলো... মেঘলার ছোট মা মারা গেল... তারপর তো?’
           ‘তুমি পড়েছ?’

রায়হানের কথা যেন ঠিক শুনতে পায় না বৃষ্টি। কেমন ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছে সে। তার চোখ ধীরে ধীরে যেন দূর অন্য কোনো দিগন্তের সন্ধানে স্থির হয়ে গেছে।
কেমন রিনরিনে কণ্ঠে বলে, ‘ঢাকা থেকে ফিরলো যে রাতে, সে রাতেই মেঘলার ছোট মা মারা গেলেন। কেন? বাচ্চা হতে গিয়ে। কিন্তু মেঘলার কি কোনো দোষ ছিল তাতে? ছিল না।

ম্যাট্রিকে মেঘলা কথা রাখে— স্ট্যান্ড করে। বাবা খুব খুশি হন। শহর থেকে মিষ্টি আসে। প্যাকেট প্যাকেট মিষ্টি বিলি হয় পাড়ায় পাড়ায়। মেঘলার বয়ামের পিঁপড়াগুলো যে কী ভীষণ খুশি হয়! বয়ামটা টেবিলের ওপর রেখে মেঘলা তাদের জিজ্ঞেস করে, কি মিষ্টি কেমন হয়েছে? ভালো তো হবেই! আব্বা নিয়ে এসছে শহর থেকে। আমি আমার কথা রাখলাম, এবার তোরা তোদের কথা রাখ! কী, না না কিসের শক্ত কাজ! আব্বা রোজ মটর সাইকেল নিয়ে বাজারে যায় না, তাহলে? শোন, ঠাকুর স্যারের ওই কথাটা মনে আছে তো? হ্যাঁ হ্যাঁ জীবনটা কারচুপি না। যে কারচুপি করবে, তার ফল তো ভোগ করতেই হবে! সব জেনে না জানার ভাব করিস না। মনে নাই, ছোটখালা আর আব্বা মিলে মাকে বিষ খাইয়েছিল। আছে, মনে আছে... তাইলে? আরো মিষ্টি পাবি... আরে আমি এনে দিবো! আর এখানে আমি থাকবো নাকি? ঢাকা চলে যাবো! ওখানে কত গাড়ি, কত বাড়ি, কত বইয়ের দোকান... ওখানে অনেক পড়ালেখা করা যাবে। বড় বড় কলেজও আছে। হ্যাঁ হ্যাঁ তোরাও যাবি আমার সঙ্গে, তোরা ছাড়া আমার আর কে আছে?’

‘পরেরদিন সকালে বাবা রোজকার মতো বাইরে যান। যাওয়ার আগে মেঘলাকে জিজ্ঞেস করেন কিছু নিয়ে আসতে হবে কিনা! বৃষ্টি মুচকি হেসে বলে, আব্বা তুমি ফিরে এসো তাহলেই হবে!
বাবা হাসতে হাসতে বেরিয়ে যান মটরসাইকেল নিয়ে। বাজারের মোড়টা পেরোতেই একটা ট্রাক হঠাৎ কোথা থেকে উদয় হয়ে ধাক্কা দিয়ে মটর সাইকেলটাকে চ্যাপ্টা করে চলে যায়। বাবা হেলমেট পরে ছিলেন না, থাকলেও বাঁচতেন না। ট্রাকের একটি চাকা তার বুক ও মাথার উপর দিয়ে গিয়েছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলে মাথাটা নাকি বেলের মতো ফটাশ আওয়াজে ফেটে যায়।’

জোরে বাতাস হচ্ছে। জানালার পাশে ছোট্ট টেবিলের উপর রাখা সিরামিকের ফুলদানিটা মেঝেতে পড়ে ফটাশ শব্দে। ভাঙে না, মেঝেতেই এদিক ওদিক গড়াগড়ি খায়। রায়হান কিছুক্ষণ ফুলদানিটার এদিক ওদিক গড়াগড়ি দেখে। তারপর জানালা বন্ধ করে দেয়। ফুলদানিটা আবার উঠিয়ে রাখে জায়গা মতো। বলে, তাহলে বাবাও মরলো...?
বৃষ্টি আগের মতোই ঘোর লাগা কণ্ঠে বলে, ‘হ্যাঁ আব্বাও মরলো। আর কোনো বাধা ছিল না। নিজের যা কিছু সঞ্চয় সব নিয়ে ঢাকায় চলে আসে মেঘলা। ঠাকুর স্যার এ সময় খুব হেল্প করেন। মহিলা হোস্টেলে ওঠা, কলেজে ভর্তি করা। এমনকি একটা পত্রিকা অফিসে শিক্ষানবিশ হিশেবে ছোট একটা চাকরিও জুটিয়ে দেন তিনি। ঠাকুর স্যারের জন্য কৃতজ্ঞতায় মন ভরে যায়। কিন্তু এইচএসসি পরীক্ষার পর, ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির সময়, ঠাকুর স্যার খুব ঘন ঘন আসতে লাগলেন। সপ্তাহে দুবার, তিনবারও। একদিন এক আধা অন্ধকার রেস্তরাঁয় ঠাকুর স্যার হাত ধরে ফেললেন মেঘলার। বললেন, মেঘলা, শোনো, তুমি আর আমার ছাত্রী নও। আর ছাত্রী থাকলেই বা কি, তাই না? তোমাকে আমি বিয়ে করবো। তুমি কী বলো?

মেঘলা আর কী বলবে, চুপ করে তারকার পতন দেখে। হাতটি সে সরিয়ে নেয় না। ঠাকুর স্যার তাতে আরেকটু সাহস পান। বলেন, শোনো, তুমি যদি চাও তবে তোমার কাকিমাকে ডিভোর্স দিয়ে দেবো... তুমি এমনটা চাইতেই পারো, তাই না?

মেঘলা হাসে একটু। তারপর বলে, না ডিভোর্স দেয়ার দরকার নাই। কাকিমা আর আমি একসাথেই সংসার করতে পারবো, পারবো না?
           ‘খুব পারবে, খুব পারবে। তুমি আসলেই খুব বুদ্ধিমান মেয়ে। খুউব বুদ্ধিমান!’

ঠাকুর স্যারের সাথে মেঘলার আর কখনো দেখা হয় নি। শুনেছিল মধ্যরাতে বুকে ব্যথা নিয়ে তিনি মারা যান। ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক। সম্প্রতি ঠাকুর স্যারের মাংসপ্রীতি খুব বেড়েছিল। নিরামিষভোজী ঠাকুর স্যার হঠাৎই কাবাব আর মুরগির গ্রিলের ভক্ত হয়ে গিয়েছিলেন।

সেরা বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তি হতে পারে মেঘলা। না পারার তো কোনো কারণ নেই। সেরা ছাত্রী সে। থার্ড ইয়ারের শেষের দিকে পরিচিত হয় এক ছেলের সাথে। কর্পোরেট কবি। হ্যাঁ এ নামেই তাকে ডাকতো সে। কী যে মিষ্টি ছেলেটার হাসি, চুল। এমনকি তার চোখের চশমাটা পর্যন্ত সুন্দর। শাহবাগ, রমনা, টিএসসি করে খুব বেশি দিন না কাটিয়ে বিয়ে করে ফেললো তারা। দুজনারই কেউ নাই, তাই বিয়েতে কোনো হাঙ্গামা হলো না। ছোট্ট একটা ফ্ল্যাটে উঠে এলো তারা। কিন্তু এই বিয়েতে খুব কষ্ট হলো মেঘলার ইজিজিদের। হ্যাঁ, বয়াম-ভরা সেই পিঁপড়াগুলোর। মেঘলা আগে সারা দিনরাত ওদেরকেই সময় দিতো, ভালোবাসতো, কথা বলতো; কিন্তু স্বামী পাবার পর সেই ভালোবাসা কই, সেই সময় কই? ড্রেসিংটেবিলের ড্রয়ারে, অন্ধকারে, তাদের দিন কাটে। তাদের কোনো কিছু ভালো লাগে না। তাই তারা মেঘলার হাজব্যান্ডকে একদিন সব জানিয়ে দিলো। মেঘলার জীবনের সব ঘটনা এক এক করে বলে ফেললো। তারা ছাড়া মেঘলার জীবনের আর সাক্ষী কে?

মেঘলা কি রাগ করলো? কে জানে! ইজিজিদের সাথে তার খুব ক’রে ঝগড়া হলো। একদিন হাজব্যান্ডকে নিয়ে বেড়াতে বের হলো মেঘলা। রিকশায় ঘুরতে তাদের কী যে ভালো লাগছিল! হঠাৎ কোন দিক থেকে একটা বাস এসে ধাক্কা দিল রিকশাটাকে। মেঘলা কিভাবে কিভাবে যেন রিকশাতেই বসে থাকলো, কিন্তু স্বামী বেচারা পড়ে গেল। গড়াতে গড়াতে গিয়ে আটকালো নর্দমার পাশে। আর একটা মাইক্রোবাস কোনোভাবেই ব্রেক কষতে না পেরে উঠে গেল তার ওপর। সেদিন মেঘলা তার বয়ামটা বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে এলো। এরচেয়ে বেশি কিছু করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না।’

বিদ্যুৎ এসেছে। ঘর আলোয় ঝলমল করে উঠলো। রায়হান চার্জারলাইট বন্ধ করে। বলে, বাহ, তোমার এ গুণের কথা তো জানতাম না! দারুণ বলেছো গল্পটা। এখন হুবহু লিখতে পারলেই হয়! ফাটিয়ে দেয়া একটা গল্প হবে!
বৃষ্টি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। বলে, রায়হান, এটা গল্প না, সত্যি...!

           ‘দেখো এই ভররাত্রে মশকরা ক’রো না। আমি ল্যাপটপটা নিয়ে আসি। তুমি পাশে থেকে দেখো, গল্পটা ঠিক ঠিক যাচ্ছে কিনা!’

হঠাৎই চিৎকার করে উঠলো বৃষ্টি, ‘বললাম না এটা গল্প না, সত্যি ঘটনা!’ বৃষ্টির চোখ দিয়ে যেন আগুন বেরোচ্ছে। তার এমন চেহারা কখনো দেখেনি রায়হান। রায়হান বিস্ময়ের সাথে জানতে চাইলো, কী হয়েছে তোমার?

বৃষ্টি একছুটে পাশের ঘর থেকে পিঁপড়াভর্তি বয়ামটা নিয়ে আসে। রায়হানের সামনে রাখে। ঘাড় বাঁকা ক’রে, চোখে অদ্ভুত শূন্যতা ধরে রেখে বলে, দেখো... ইজিজির বয়ামটা দেখো। আমার নামই মেঘলা। গ্রামে আমাকে সবাই মেঘলা নামেই চিনতো! ঢাকায় এসে পরিচয় গোপনের জন্য মেঘলা থেকে বৃষ্টি হই আমি। তুমি যাদের কথা লিখেছো, আমি যাদের কথা বলেছি, কাউকেই আমি মারিনি। অবশ্যই আমি মারিনি। না, আমার ইজিজিরাও মারেনি। তারা মরেছে নিজেদের পাপে। ইজিজিরা অনেক ভালো, অনেক ভালো। তুমি আসার আগে তারাই আমার জীবনের সব ছিল, সব। কিন্তু তুমি সাবধান, রায়হান, সাবধান। তোমাকে ভালোবাসার পর তারা কেমন বদলাতে শুরু করেছে। আমার কথাও ঠিকমতো শোনে না। রায়হান, তোমাকে যেমন আমি ভালোবাসি, ওদেরও ভালোবাসি। প্লিজ, তুমি রাগ করো না ওদের মতো..’

রায়হানের দৃষ্টি এলোমেলো। সে একবার বৃষ্টিকে দেখছে, একবার বয়ামটা দেখছে। বৃষ্টির চোখ থেকে করুণ প্রার্থনা ঠিকড়ে পড়ছে।


৬.
কাইসারের সাথে পূর্বপরিচয় ছিল রায়হানের। এক সময় একই এলাকায় বসবাস করতো তারা। কাইসার বাইরে থেকে পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরে প্র্যাকটিস শুরু করেছে। সাইক্রিয়াটিস্ট। মনোরোগবিশেষজ্ঞ। বৃষ্টিকে কাইসারের কাছে নেয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় রায়হানের জানা ছিল না।

কাইসার একটু পরীক্ষা-টরীক্ষা করলো বৃষ্টিকে। তারপর বললো, সব ঠিক আছে।

বৃষ্টিকে পাশের ঘরে বসতে দিয়ে সিগারেট খাবার কথা বলে দু’জনে একটু আলাদা হলো। চেম্বারের পেছনে ছোটমতো একটা বারান্দা আছে, সেখানেই দাঁড়ালো তারা। নিচ দিয়ে গাড়ির সমুদ্র বয়ে যাচ্ছে লাখ লাখ পিঁপড়ার মতো। উপমাটা ভেবে একটু হাসলো রায়হান। তা দেখে কাইসার জিজ্ঞেস করলো, হাসছো কেন?
রায়হান সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললো, রাস্তার গাড়িগুলো দেখো, ঠিক যেন পিঁপড়ার সারি!
কাইসার চুইংগামের র‌্যাপার খুলতে খুলতে বললো, ফরেনে গিয়ে এই লাভটাই হয়েছে শুধু, সিগারেটটা ছাড়তে পেরেছি! যাই হোক, বৃষ্টির যে শারীরিক কোনো সমস্যা নাই এটা তুমিও ভালো জানো। সমস্যা মনের। এখন তুমি যা বলেছো আমাকে, তার সোজা অর্থ দাঁড়ায় তোমার গল্পের চরিত্র আর নিজেকে সে একাকার করে ফেলেছে। এটা ডাবলক্যারেক্টার প্লে করা। বাইরে এরকম অনেক কেস ফেস করেছি, স্টাডি করেছি আমরা। ইনফ্যাক্ট, সাইক্রিয়াটিস্টদের কাছে এরকম কেস বলা যায় নর্মালই।

রায়হান সিগারেটের ছাই ফেলতে ফেলতে বলে, নর্মাল? এইটা নর্মাল? মেঘলাকে রীতিমত আত্মস্থ করে ফেলেছে বৃষ্টি!

          ‘একা একা থাকে বাসায়। তোমার গল্প পড়তে পড়তে একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেছে। ছেলেবেলায় যখন ফিল্ম দেখতাম আমরা, একটা ফিল্ম দেখা শেষ করার পর কিছুক্ষণের জন্য হলেও ওই ফিল্মের হিরো মনে হতো না নিজেকে? কত বাচ্চাদের দেখবে তাদের প্রিয় কার্টুন ক্যারেক্টার প্রিটেন্ড-প্লে করছে! শৈশবে তো আমি নিজেকে স্পাইডারম্যান ভাবতাম! শূন্যে হাত ছুঁড়ে দিয়ে জাল বের হচ্ছে কিনা দেখতাম। বৃষ্টি ঠিক তাই করছে। মেঘলার ভিতর হয়তো নিজের কোনো ছায়া পেয়েছে। বৃষ্টির মাও তো শৈশবেই মারা গেছে... সো... বুঝতেই পারছো!
           ‘আর পিঁপড়া ভর্তি ওই বয়ামটা?’
           ‘মধ্যবিত্ত বাঙালির ঘরে-ঘরেই হরলিক্সের বয়াম আছে। খোঁজ করলে তোমার ঘরেও দু’চারটা পাওয়া যাবে। তোমার গল্প পড়ার পর বৃষ্টি নিজে নিজেই ওই বয়ামে পিঁপড়া ভরেছে, সেটাই স্বাভাবিক না? দুশ্চিন্তা ক’রো না। কিছু মেডিসিন তো দিচ্ছিই, তবে সবচে’ প্রয়োজন রেস্ট আর কী বলে বাংলায়... হ্যাঁ, সহমর্মিতা। ওকে সময় দাও। সাথে সাথে থাকো। ঠিক হয়ে যাবে।’

কাইসারের কাছে বিদায় নিয়ে বৃষ্টি ও রায়হান বেরিয়ে আসে। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টি দেখেই বৃষ্টির মন ভালো হয়ে যায়। বলে, দেখো দেখো... বৃষ্টি শুরু হয়েছে... ও কর্পোরেট কবি, আমি কিন্তু ভিজবো... ভিজবো ভিজবো ভিজবো!

রায়হান হাসে। একটা রিকশাওয়ালাও জুটে যায়। রিকশায় বসতে বসতেই ঝেপে বৃষ্টি নামে। রাস্তা জুড়ে শহুরে মানুষদের ছোটাছুটি। সবাই আড়াল চায়, ছাদ চায়। কিছুক্ষণের মধ্যে রাস্তা বেশ ফাঁকা হয়ে আসে। রিকশাওয়ালা তার মাথার ক্যাপ খুলে রিকশার হ্যান্ডেলের সাথে আটকে নেয়। বলে, সার, আইজ ধুমায়ে বিরিস্টি হইবো...
রায়হান বলে, একটু সাবধানে চালাও...!
বৃষ্টি তার হাত সামনে বাড়িয়ে বৃষ্টির ফোঁটা ধরার চেষ্টা করছে। গানও গাইছে নাকি গুনগুন করে?

রিকশা বড় রাস্তা ছেড়ে একটা উপরাস্তায় নেমে আসে। বৃষ্টির গতি রিকশার গতির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। এরমধ্যেই রাস্তায় পানি জমতে শুরু করেছে। হঠাৎই, পেছন থেকে রিকশাটাকে, কে যেন ধাক্কা মারে। রিকশাওয়ালা হ্যান্ডেল প্যাডেল ফসকে পড়ে যায়। ছিটকে পড়ে রায়হানও। ডাস্টবিনের পাশ দিয়ে গড়াতে গড়াতে একবারে নালার পাশে ঘাড়ে বেদম একটা ধাক্কা খেয়ে থামে। ঝটপট ওঠার চেষ্টা করে রায়হান। বৃষ্টির কিছু হলো কিনা দেখার চেষ্টা করে। বৃষ্টির প্রবল ধারার মধ্যে ঝাপসাভাবে দূরে বৃষ্টিকে দেখতে পায়। রিকশায় সে ঠাঁয় বসে আছে। আর তখনই, সেই রাত্রে বলা বৃষ্টির গল্পের শেষ অংশ, মনে পড়ে যায় রায়হানের।

বাম হাতের কব্জিতে সে প্রথম পিঁপড়াটা দেখে, তারপর বাহুতে দেখে আরেকটা। মাথার চুলের ভেতর থেকে অসংখ্য পিঁপড়া যেন বেরিয়ে আসছে যাদুমন্ত্রবলে। কী কারণে ঘাড়টা বাঁকায় জানে না রায়হান, কিন্তু বাঁকিয়েই দেখতে পায় রাস্তার বিপরীত দিক থেকে একটা মাতাল মাইক্রোবাস সোজা তার দিকেই ছুটে আসছে। বিহ্বল রায়হান আরেকবার বৃষ্টিকে দেখতে চায়, তার মনে হয় বৃষ্টি কাঁদছে। তবে এ দেখা তার কল্পনা প্রসূত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কেননা এত বৃষ্টির মধ্যে বৃষ্টির কান্না দেখতে পাবার কথা না রায়হানের।

২টি মন্তব্য: