বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৪

পার্ক বাজার


মানোয়া মাঝি ছিল এককালে, এখন একটা জাল থাকার কারণে- সে জেলে।

জালটা দিয়ে বেড়িবাঁধে মাছ মারে সে। সারারাত মাছ মেরে যা জমে তা শহরের বিভিন্ন মহল্লায় ফেরি ক’রে বিক্রি করে। তবে ডান পায়ে হঠাৎই বেকায়দা চোট পাওয়ায় ফেরি করা তার জন্য দুরূহ হয়ে পড়ল। উপায়ন্তর না দেখে ধানমন্ডি পার্কের পাশে সে মাছের ডালা নিয়ে বসে পড়ল।

ধানমন্ডি পার্কে স্বাস্থ্য সচেতনদের যথেষ্ট ভিড়। সকালের দিকে এই ভিড় বাড়তির দিকে থাকে। স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তিদের মাছপ্রীতি প্রবল। মানোয়া মাঝির বিক্রিবাট্টা ভালোই হতে লাগল। ক’দিনের মধ্যে মানোয়া মাঝির মতো আরো কিছু বিপন্ন জেলে জমে গেল পার্কের পাশে। পার্কে আসা লোকজনেরও উৎসাহ বাড়ল। সকালের জগিং শেষে মাছ নিয়ে তারা ঘরে ফিরতে শুরু করল।

 কিছুদিনের মধ্যেই জায়গাটা জমে গেল একেবারে। যারা পেশাদার মাছ বিক্রেতা তারাও সেখানে উপস্থিত। সকাল থেকে বেলা নয়টা পর্যন্ত এক লট মাছ বিক্রি ক’রে তারা পুরনো বাজারে ফিরে যায়। বাজারের থেকে বেশি দাম হাঁকায় পার্কের বাজারে- কাস্টমার খরিদও করে। দেখতে দেখতে পুরোদস্তুর মাছ বাজারে পরিণত হলো জায়গাটা।

 কিছুদিনের মধ্যেই সেখানে এল কাচা বাজারের ভ্যান। আলু, পটল, বরবটি, করলা- মিস্টি কুমরা, পুঁইয়ের ডগা, লালশাক। আম এল জাম এল কাঁঠাল এল, এল পেয়ারা সফেদা কামরাঙা।

মুস্তফা কশাই এল ভ্যানে করে গরুর মাংস নিয়ে। তার দেখাদেখি এল জিল্লুর কশাইও। পার্কের পাশে রোজ গরু পড়তে শুরু করল। স্বাস্থ্য সচেতনরা খাসির মাংসের অভাব বোধ করতে থাকলে খাসিও এল। নিয়মিত দুটো ছাগলের ছাল ছাড়ানো হতে লাগল সেখানে।

পার্ক বাজারের এক কোনায় ভ্যানে করে লুঙ্গি আর গামছা বিক্রি করতে শুরু করল এমাজুদ্দি। আন্ডারওয়্যার আর স্যান্ডোগেঞ্জি নিয়ে বসলো মতিলাল।

পার্ক বাজার রমরমা।

ফলে সরকারী ছাত্র এল। বখরা।

বিরোধী ছাত্র এল। বখরা।

স্থানীয় ভাই এল। বখরা।

বাজার স্বেচ্ছাসেবক এল। বখরা।

বখরা নিয়ে সরকারে সরকারে, বিরোধে বিরোধে, ভাইয়ে ভাইয়ে, স্বোচ্ছাসেবকে স্বেচ্ছাসেবকে মাঝে-মাঝেই খুনোখুনি হতে লাগল। বখরা বাড়তে থাকল। ফলে মাছ-সবজি-মাংসেরও দাম বাড়ল। স্বাস্থ্য সচেতনরা খুশি- বেশি দাম মানে ভালো জিনিস- ভালো জিনিস মানে ফরমালিন মুক্ত জিনিস!

পার্ক বাজারে মানোয়া মাঝি ও তার মতো জেলেরা শুধু টিকতে পারলো না। সরকারী, বিরোধী, ভাই, স্বেচ্ছাসেবকদের বখরা দেওয়ার পর তাদের নিজেদের জন্য আর কিছু থাকে না। মানোয়া মাঝি মাছ নিয়ে মহল্লায় মহল্লায় ফেরি করা শুরু করল। তার পা ততোদিনে ভালো হয়ে গিয়েছিল।

০১.০৭.২০১৩
ধানমন্ডি

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন