শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৪

খুন


নিচের দিকে তাকাতেই মাথাটা ঘুরে উঠল। বাপরে... মানুষগুলো বামন হয়ে গেছে সব। আমি যেন তালগাছের মাথায়, বা তারো বেশি। আমি নিজেকে বললাম, এই অসুখের নাম কি হাইফোবিয়া...
আমার ভেতরে যে আরেকটা আমি থাকি সে তাড়াতাড়ি বলল, মূর্খ... এর একটা ভালো নাম আছে ইংরেজিতে। ওইটা এরকম হাইফোবিয়ার মতো সহজ কিছু না... যারতার সাথে ফোবিয়া লাগাইয়া বললেই হইল?
আমি অপেক্ষা করছি। ভাবছি যে ওই নামটা আমার অন্যঅংশটা বলবে। কিন্তু অন্য অংশ নীরব। ছাদও নীরব। তের তলার ওপরে যে ছাদ তাতে একাধীক জন থাকলেও সরবতা আসার কথা না। ঢাকা এখান থেকে বেশ সুন্দর নগরী মনে হয়, ফলে অধিক সময় শব্দহীন থাকার কথা ভাবা যায়।
অবশ্য আমি কতক্ষণ ভাববো সেটা একটা কথা! মানে আমার বেশিরভাগ সময়ই মনে হয়েছে এই যে এত জীবনের টাইট সব গিট তার কারণ ভাবা আর ভাবি। জীবনের মোক্ষ কী? মানে সাধু না হলেও মানুষের একটা গোল থাকে, ভাবে যে অমুক.. সেটা... সেটা কি শেষাবধি ভালো থাকা স্বস্তির থাকা না? মনে হয় যে এত ভাবতে গিয়ে ওই ভালো থাকাটা আর হয় না। মাঝে মাঝে মনে হয় মূর্খের ভালো থাকা অনন্য। তখন মূর্খকে দারুণ ঈর্ষা হয়। তবে এই ঈর্ষার মধ্যে একটা রোমান্টিকতা আছে কিনা তা নিয়ে আরো পরে ভাবি... তখন বুঝি যে যত আর যাই করি এই ভাবনাটা আর আমার থেকে আলাদা হবে না। ফলে সিদ্ধান্ত নিই যে এবার আমিই ভাবনা থেকে আলাদা হয়ে যাবো। ভাবনাগুলোকে এই ফাঁকা তেরতলার ছাদে রেখে নিজে লাফিয়ে পড়ব নিচে... ভাবনার খেতাপুড়ি।
পরিকল্পনা মতোই সব হয়েছে।
না হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমার পরিকল্পনা বরাবরই খুব ভালো হয়। পরবিকল্পনার বাস্তবায়ন হয় তারচেয়েও ভালো। প্রথম খুনটার কথাই ধরুন... হা হা করে উঠলেন নাকি? খুনের মতো অপরাধের কথা অম্লানে বলছি এটা ভেবে তো... শোনেন একটা কথা-- আমার এই খুনটুনের কথা শুনে আপনারা যখন আমার কাছে আসতে চাইবেন, আমাকে পাকরাও করতে চাইবেন তার আগেই আমি এই ছাদ থেকে লাফ দিয়ে একেবারে পগারপাড়...! ফলে প্রথম খুন বা... বুঝতেই পারছেন প্রথম খুন মানে দ্বিতীয় খুনও আছে... এসব বলতে আমার তেমন কিছু যায় আসে না... তো ওই প্রথম খুনটা আমি করি বেশ অল্প বয়সেই। তখন আমি এইটে... খুনটা করেছিলাম জলিলকে। জলিল আমার ক্লাশমেট...
আচ্ছা, সময় তো একটু আছে। পুরো ব্যাপারটাই বলি... আমরা তখন ক্লাশ এইটে পড়ি। প্রচুর পড়ালেখা করছি কারণ বৃত্তি পরীক্ষা দিতে হবে। সকালবেলা এক্সট্রা ক্লাশ করি। সময় ঘনিয়ে আসছে পরীক্ষার, আর আমাদের হাত-পা যেন সেঁধিয়ে আসছে শরীরের ভেতর। আমি আর জলিল পাশাপাশি বাড়ি... ধুমসে পড়ছি। আমরা জানি, আমরা দুজনই, বৃত্তি পাবো--- ট্যালেন্টপুলেই পাবো...!
জেলা সদর চাঁপাই নবাবগঞ্জে গিয়ে বৃত্তি পরীক্ষা দিয়ে আসি আমরা। দুই দিন পরীক্ষা। প্রথম দিন দারুণ পরীক্ষা দিলাম দুজনেই। প্রশ্নপত্র মিলিয়ে দেখলাম কে কত নাম্বার পাবো... জলিল জানালো আমি নাকি তিন মার্কস কম পাবো।
দ্বিতীয় দিনের পরীক্ষার আগে ধড়ফড় করে মারা গেল জলিল। কীভাবে? হে হে হে... ওই যে বললাম না পরিকল্পনা... আমার পরিকল্পনা বরাবরই খুব ভালো...!
Like
(চলবে...)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন