শুক্রবার, ৫ জুন, ২০১৫

একটি ঘরোয়া বাজেট এবং...


গতকালই বাজেট পেশ করেছেন মাননীয় অর্থমন্ত্রী। কিন্তু এই বাজেটই শেষ বাজেট নয়। প্রত্যেক ঘরে ঘরে প্রতি নিয়ত বাজেট পেশ চলতে থাকে। এরকম একটা ঘরোয়া বাজেটে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক-

স্ত্রী: জনাব স্বামী, শুভেচ্ছা জানাই। আজ এই সুন্দর সন্ধ্যায় আপনি আমার বাজেট শোনার জন্য সময় দিয়েছেন আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছি। না হলে এই সময়ে সাধারণত আপনি বাইরে বাইরে থাকতেই পছন্দ করেন। আপনাকে পাওয়া যায় চায়ের টং দোকানে। আপনি তখন বর্তমান রাজনীতি আর ক্রিকেট নিয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করতে বিশেষ আনন্দ পান। আর যে-ই না ঘরে ঢোকেন তখনই আপনার মুখ হঠাৎ করেই বাংলার পাঁচের মতন হয়ে যায়। ভাবা যায় না যে-মানুষটা একটু আগে এত হাসছিল...

স্বামী: মাননীয় স্ত্রী, কাজের কথায় এলে খুশি হবো। টিভিতে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ চলছে। আপনি কথা শেষ করলে সেইটা দেখতে ইচ্ছা রাখি!

স্ত্রী: ও তার মানে আপনি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দেখতে এসেছেন... আমার বাজেট শোনার জন্য না?

স্বামী: মহোদয়া, দয়া করে আপনার বাজেট পেশ করবেন কী?

স্ত্রী: হ্যাঁ করব। আবারো আপনাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বাজেট শুরু করছি। প্রথমেই বলে নেয়া দরকার গত অর্থবছরে আমার দিক থেকে বাজেট ছিল অত্যন্ত কম।

স্বামী: এই কথায় আমার ডাউট আছে মাননীয় স্ত্রী!

স্ত্রী: ডাউট থাকলে পরে বলবেন। তার আগে আমার বাজেট মন দিয়ে শুনুন। এইবার বাজেটে প্রথম যে-খাতে নজর দেয়া উচিত তা হলো মেক-আপ খাত। মেক-আপ খাতে গতবছর নজর না দেয়ায় আমার দুয়েকটা চুল দেখছি সাদা...

স্বামী: মাননীয় স্ত্রী, আপনার বয়স হয়েছে এই জন্যই...

স্ত্রী: চুপ থাকুন আপনি। এই অর্থবছরে মেক-আপের জন্য অবশ্যই অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। মাসে চার দিন চুল কাটাতে, প্রতিদিন ফেসিয়াল, ম্যানিকিউর পেডিকিওর, ভ্রুচর্চা ইত্যাদির জন্য প্রতিমাসে ৫০ হাজার টাকা হিসেবে ১২ মাসে ৬ লাখ টাকার বরাদ্দ ধরা হয়েছে।

স্বামী: কী বলছেন মাননীয় স্ত্রী?

স্ত্রী: ঠিকই বলছি। প্রয়োজনে আপনার চা-সিগারেট ও আড্ডার টাকা কমিয়ে মেক-আপ বাজেটকে মেক-আপ করতে হবে। এই বাজেট পাশ হওয়া অত্যন্ত জরুরী। আর মেক-আপ বাজেটের পরেই যে বাজেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তা হলো শপিং বাজেট। শপিং শুধুই কেনাকাটা নয়, শপিং হলো সামাজিক মেলামেশা, শপিং ঘোরাফেরা, শপিং হলো বিনোদন। তাই একটি মানুষের শপিং অধিকার হলো সবচেয়ে বড় অধিকার। এই অধিকারের জোরেই বলছি গত অর্থবছরে যেমন আমাকে শপিঙের স্বাধীনতা দেয়া হয়েছিল এই অর্থবছরেও যেন তেমনটাই থাকে। মাসে অন্তত তিনটা শাড়ি জামদানি ঘরে আমদানি না হলে ফ্ল্যাটের অন্যান্য ভাবিদের কাছে মাথা হেট হয়ে যায়। তাদের সোজা সোজা কথাবার্তাকেও বাঁকা মনে হয়। মনে রাখবেন, শাড়িই নারীর ভূষণ! পারলে তিনের অধিক শাড়ি আর সালোয়ার কামিজ গোটা সাতেক প্রতিমাসে কিনে রাখতেই হয়। এ ব্যাপারে আপনার বিশেষ সহযোগীতা কামনা করছি। আপনার যদি মনে হয় এই খাতে অধিক টাকা ব্যয় হতে পারে এবং ঘরের অন্য বাজেটের ওপর প্রভাব পরতে পারে তাহলে আপনার যাতায়াত খাতে যে বাজেট আছে সেখানে হাত দিন। সেই খরচটা কমিয়ে আনুন। প্রতিদিন যাতায়াত বাবদ কেন আপনার একশর অধিক টাকা লাগবে সেটা জানিয়ে একটা মিনি বাজেট আপনি আমাকে পরে দিতে পারেন। মাননীয় স্বামী, আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন?

স্বামী: জ্বি আমি শুনছি জনাবা। তবে আমার গলা কিছুটা শুকিয়ে গেছে। আমি কি একগ্লাস পানি পেতে পারি?

স্ত্রী: পানি ফ্রিজে আছে, আপনি উঠে গিয়ে নিয়ে আসতে পারেন, তবে এখনি পানি খাওয়া আপনার ঠিক হবে না। আপনাকে শোনানোর জন্য আরো কিছু বাজেট খাত রয়েছে আমার কাছে। আমার পরের বাজেট খাত অত্যন্ত গুরুতর। এ ব্যাপারে আগে কখনোই ঠিকমতো দৃষ্টি দেয়া হয় নি। ফলে এখন ভুগতে হচ্ছে।

স্বামী: কোন খাতের কথা বলছেন আপনি মাননীয়া?

স্ত্রী: পেট খাত।

স্বামী: মানে খাওয়া-দাওয়ার খাতের কথা বলছেন কি?

স্ত্রী: জ্বি না মাননীয় স্বামী। আপনার আইকিউ চিরজীবন খ্যাত লেভেলেই থেকে গেল দেখে আমি খুব বেশি অবাক হচ্ছি না। আপনার আর উন্নতি হবার নয়। গাছ বেড়ে ওঠে, একদিন পাতা থেকে ফুল আর ফল দেয়। আপনি নিতান্তই নিস্ফলা ফরমালিন হয়ে থেকে গেলেন!

স্বামী: ফরমালিন খুবই কাজের জিনিস মহোদয়া! কিন্তু পেটখাত বলতে আপনি আসলে কী বোঝাতে চাচ্ছেন যদি একটু খুলে বলতেন?

স্ত্রী: আপনার আরেকটি বাজে স্বভাব সবকিছুকেই আপনি খোলাখুলি পর্যায়ে নিয়ে যেতে চান। কথা ব্লাউজ না যে খুলে বলতে হবে! পেটখাত মানে আমি আমার পোষা প্রাণীগুলোর কথা বলছি। আমার গুগলু বিড়ালটার বেশ কিছু দিন থেকেই মন খারাপ। তার বিনোদনের বিশেষ অভাব। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাকে কিছুদিন সিঙ্গাপুর ঘুরিয়ে আনবো। আর আমি গেলে আমার জানের টুকরা বেবিডগটা যাবেই। সো, আমাদের তিনজনের সিঙ্গাপুর যাওয়ার ব্যবস্থাও আপনাকে করতে হবে। আর এই ব্যবস্থাটাকে নিয়মিত করে নিয়ে আসতে হবে। তিন মাসে অন্তত একবার পাঁচ ছয়দিনের জন্য আমার পেটগুলোর বিদেশভ্রমণ জরুরি। এই বিষয়ে মাননীয় স্বামী আপনার কোনো ধানাই-পানাই শুনতে আমি রাজি নই।

স্বামী: কিন্তু এত টাকা আমি কীভাবে...

স্ত্রী: সেইটা আপনার হেডেক মাননীয় স্বামী, আপনি আপনার হুদাহুদি বুড়িগঙ্গা ঘুরাঘুরি আর বন্ধুদের সাথে বারেবারে বার যাওয়া কমিয়ে দিলেই এটা হওয়া সম্ভব!

স্বামী: আমি তো ওগুলোতে আমার বিজনেস ডিল করে থাকি...

স্ত্রী: আপনি কোথায় কী ডিল করেন তার সবই আমি জানি! ডিল করে যখন বাসায় ফেরেন তখন আপনার চোখ থাকে ঝাপসা! কান থাকে গরম! আর গলা থাকে বিড়ালের বাচ্চার মতোন। সারাদিন ডিলের পর আপনি সারা রাত মিউ মিউ করেন! অতএব আপনার ডিল আপনাকে... বুঝতে পেরেছেন?

স্বামী: জ্বি জনাবা। আমি কি এবার পানি খেতে পারি? অত্যন্ত গরম পড়েছে। সঙ্গে গলাটাও শুকিয়ে গেছে। কিছু যদি মনে না করেন তাহলে এবার উঠি...

স্ত্রী: আমারও ওঠার সময় হয়ে গেছে। তবে তার আগে বাজেটের শেষ অংশ হিসেবে এখন আমি যে-খাতটির কথা বলব তা হলো বাপের বাড়ি ভ্রমণ বিষয়ক খাত। এই খাতটি গত অর্থ বছরের চেয়েও আরো স্মুথলি ডিল করতে হবে। আপনি জানেন প্রত্যেক সপ্তাহেই আমার বাপের বাড়িতে নানা রকমের অনুষ্ঠান লেগে থাকে। সেই সব অনুষ্ঠানে...

স্বামী: মাননীয়া স্ত্রী আমার অত্যন্ত পিপাসা পেয়েছে... পানি খাওয়া বিশেষ দরকার!

স্ত্রী : ঠিক আছে আপনাকে উঠবার অনুমতি দেয়া স্বামী মহোদয়!

স্বামী উঠে দাঁড়াতেই তলপেটে চাপ অনুভব করল। পেশাব চেপেছে ভীষণ। ওদিকে পিপাসাতে গলা খসখস করছে। পানি না পেশাব এই রকম দ্বন্দ্বে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে স্বামী আগে পেশাব করে এল। তারপর ফ্রিজ খুলল। কিন্তু ফ্রিজের দরজা খুলতেই নিজেকে বাথরুমে আবিষ্কার করল? স্বামীর মাথা অনেক আগে থেকেই ঘুরাচ্ছিল, এখন একেবারে চক্কর দিয়ে উঠল। এইটা যদি বাথরুম হয় তাহলে সে পেশাব করে এল কোথায়?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন