বুধবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৫

হবু নগরপিতার কাছে খোলা চিঠি (অসমাপ্ত)




লেখা: আহমেদ খান | আপডেট:  | প্রিন্ট সংস্করণ
এমন যদি হতো, মেয়র প্রার্থীরা যাত্রী হতেন সাধারণের মতো। একটুখানি বৃষ্টি হলেই এমন ‘পথনদী’র যাত্রীদের দেখা মিলবে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পথেঘাটে! হবু নগরপিতারা কি সেই দুঃখ বুঝবেন!হে শ্রদ্ধেয় হবু মেয়র,
শুভেচ্ছা জানবেন। হবে না হবে না করেও মিরাকলটি ঘটতে যাচ্ছে। সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হতে যাচ্ছে। দিকে দিকে একি শুনি, নির্বাচনের জয়ধ্বনি! আপনি এই নির্বাচনে জয়লাভ করে এই শহরের অভিভাবক তথা নগরপিতা হতে যাচ্ছেন। আপনাকে অভিনন্দন।
হে গুণী,
আমরা জানি, আপনি আমাদের মতোই এই শহরেরই এক বাসিন্দা। তবে আমরা জানি না, আপনি জানেন কি না, এই শহরের প্রতিটি মানুষ আসলে একেকজন মাসুদ রানা। প্রত্যেকেরই আসলে পদে পদে বিপদের হাতছানি। আমরা প্রত্যেকেই যেন এই শহরে গোপন মিশন নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছি। যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো দুর্ঘটনা আমাদের সারা জীবনের কান্না হয়ে যাবে। হয়তো নির্মাণাধীন ভবন থেকে মাথায় পড়বে নির্মাণসামগ্রী কিংবা ছুটন্ত বাস এসে উঠে যাবে আমাদের শরীরে। আমরা ভয়ে ভয়ে দিনাতিপাত করি। তার থেকেও বেশি ভয়ে করি রাত যাপন। কারণ, আমরা জানি, যে ভবনে আমরা বাস করি তা হয়তো যেকোনো দিন বালির ঢিবির মতো ভেঙে পড়বে। কিংবা চোর-ডাকাতের খপ্পরে পড়ে কুপোকাত হবে যেকোনো সময়। সন্ধ্যা হলেই ধরতে পারে ছিনতাইকারী। আমরা আমাদের কষ্টের টাকা দিয়ে কেনা ল্যাপটপ আর স্মার্টফোন নিয়ে অত্যন্ত ভীত জীবন অতিবাহিত করি। মুহূর্তে মুহূর্তে এত শঙ্কা এত রোমাঞ্চ কেবল একজন পেশাদার স্পাইয়ের জীবনেই ঘটতে পারে। আমরা একেকজন তাই উপন্যাসের পাতা থেকে উঠে আসা স্পাই। আমরা সেই ব্যক্তি, যাদের এ শহর টানে কিন্তু বাঁধনে জড়ায় না।
ছবি: প্রথম আলো, স্থান: কুড়িল, ঢাকা, তারিখ: ৭ এপ্রিল ২০১৫হে মহান হবু অভিভাবক,
আমাদের এই শহরে গ্যাসের লাইনে গ্যাস থাকে না, পানির লাইনে পানি থাকে না, বিদ্যুতের লাইন অর্থাৎ তারই থাকে না। হাত দিয়ে মশা হত্যা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে আমরা এখন ইলেকট্রিক র্যাকেট ব্যবহার করি। কিন্তু তাতেও মশা কমে না। আমরা ঘরে মশার কয়েল জ্বালিয়ে বারান্দায় রাত কাটাই। কেউ এসে একটা বার জিজ্ঞেসও করে না, তোমার চোখ এত লাল কেন? সবাই জানে রাত জাগলে চোখ লাল হবেই হবে!
অথচ নাগরিক হওয়ার সমস্ত কর আমরা দিই। পানি বিল, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল দিতে দিতে আমাদের বিলের কাগজ মুখস্থ। অন্যদিকে মাসান্তে বাড়িওয়ালা এসে জানিয়ে যায় বাড়তি বাড়িভাড়া না দিতে পারলে বাড়াবাড়ি না করে যেন বাড়ি ছেড়ে চলে যাই। আমাদের যাওয়ার জায়গা থাকলে কি হে নগরপিতা আমরা এই শহরে থাকতে আসি! আমরা বড় অসহায়। আমাদের সহায় এখন আপনি।
হে সুদূরদর্শী,
আমরা জানি সব (পড়ুন ‘কিছুই’) আপনার হাতে নেই। আইন রক্ষার ব্যাপারে পুলিশ, পানির ব্যাপারে ওয়াসা, ভবনের ব্যাপারে রাজউক, বাড়িভাড়ার ব্যাপারে কেউ না–কেউ নিশ্চয় আছেন। এসব তাঁদের দায়িত্ব। তবু আপনার কাছে একটি অনুরোধ—নির্বাচন চলাকালে আপনি এবং আপনার মতো অন্য ভোট প্রার্থীরা দেয়ালে–অদেয়ালে সুতোয় রশিতে নিজেদের যেসব পোস্টার ঝুলিয়েছেন, ভোটের পর তা দয়া করে সুষ্ঠুমতো অপসারণ করবেন। আর মশার ব্যাপারে একটু ভাববেন। মশার ব্যাপারে ভাবতে গেলে ড্রেনের ব্যাপারে ভাবতে হয়। ড্রেনের ব্যাপারে ভাবতে গেলে অবৈধ দখলের ওপর একটু ভাবতে হয়। অবৈধ দখলের ব্যাপারে ভাবতে গেলে দুর্নীতির ব্যাপারে ভাবতে হয়। দুর্নীতির ব্যাপারে ভাবতে গেলে... 

রস+আলোয় প্রকাশ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন