বুধবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৫

হলফনামা


সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীরা সবাই নিজের নিজের হলফনামা দিচ্ছেন। সেসব নিয়ে নানা রকমের কথাও শোনা যাচ্ছে। এসব কথায় ত্যক্তবিরক্ত হয়ে নিজের হলফনামা প্রকাশ করলেন আলীজানের বাপ। কোথাও প্রকাশের সুযোগ না পেয়ে আশ্রয় নিলেন রস+আলোর।
নাম: আলীজানের বাপ
কোনো একসময় তাকে রুহুইল্ল্যা বলে অনেকেই ডাকতেন। কিন্তু প্রথম সন্তানের বাবা হওয়ার পর আর সন্তানের নাম আলীজান রাখায় সবাই তাকে আলীজানের বাপ বলে ডাকতে শুরু করে। আলীজানের বাপ বলেন, ‘আমার নিজের বলতে কুনো নাম নাই, আমার নাম আমার পোলা–মাইয়াগো নামে!’
শিক্ষাগত যোগ্যতা: তিন বেলা দুই প্রহর পাস
খালপাড়ের স্কুলে ছোট ওয়ানে আলীজানের বাপ তিন দিন তিনটা বেলা লেখাপড়া করেন। তিন দিনই তিনি স্কুলে দুপুর পর্যন্ত শিশুশিক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এই তিন দিনে তিনি ‘অ’ লিখতে শিখেছিলেন। সেটা এখনো তঁার মনে আছে। বেশি লেখাপড়া করা নিয়ে তঁার মন্তব্য অত্যন্ত দার্শনিকসুলভ। তিনি বলেন, ‘পড়ালেখা শিইখা মূর্খ হওয়ার চাইতে না শিইখা মূর্খ হয়্যা থাকা ভালা!’ তিনি বলেন, ‘দ্যাশে এমুন মেয়র থাকন দরকার, যে আসলে টিপসই দিয়া কাজ চালাইব!’
ফৌজদারি মামলা: নেই
গুলমারা অর্থাৎ চাপাবাজি করা নিয়ে বন্ধু তোতা মিয়ার সঙ্গে মাথা ফাটাফাটি হলেও সেটা মামলা পর্যন্ত গড়ায়নি। তিনি বলেন, ‘আমার লগে মেয়র পদে যারা লড়তে চাইতেছে, তাদের ম্যালা ম্যালা মামলা। এত মামলা নিয়া এদের পায়ে ডান্ডাবেড়ি থাকার কথা, কিন্তু আফসোস এরা দাঁড়াইতে চায়!’ আলীজানের বাপ আশাবাদ ব্যক্ত করেন মামলামুক্ত হওয়ার ফলে তিনি বিপুল ভোটে পাস করবেন!
পেশা: ভিক্ষা
আপাতত কারওয়ান বাজারের রেললাইনের পাশে নীল পলিথিন বিছিয়ে ভিক্ষা করেন। তবে অচিরেই ঢাকা শহরের বাড়িতে গিয়ে গিয়ে ভোটের ভিক্ষা শুরু করবেন। তিনি বলেন, ভিক্ষার পেশায় তিনি অনেক দিন ধরে আছেন। অন্যরা যারা ভোটে দাঁড়ায়ছে, তারা এই লাইনে নতুন। ফলে তার সঙ্গে পেরে ওঠা অসম্ভব!
আয়ের উৎস সম্পর্কে বিবরণী: গড় আয় অনেক কম
কারওয়ান বাজার রেললাইনের পাশে সকাল সাতটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত গড় আয় ৩৫০ টাকা। অর্থাৎ মাসে গড় আয় ১০ হাজার ৫০০ টাকা। তবে এর পুরোটাই তার নয়। জায়গাটা তার স্ত্রী ও নিজের নামে বিভক্ত। ৪০ শতাংশ তার ভাগে, বাকিটা ৬০ শতাংশ তার স্ত্রীর নামে। তাই তার গড় আয় আসলে অনেক কম।
গাড়ি আছে কি না: আছে, তবে নিজের নয়
আলীজানের বাপ বলেন, তার নিজস্ব কোনো গাড়ি নেই। তবে চারটা বেয়ারিং লাগানো গাড়ি তার ছোট ছেলেটির রয়েছে। দূরে কোথাও ভিক্ষা করতে যাওয়ার ইচ্ছা হলে সেই গাড়িতে তিনি চেপে বসেন আর তার ছেলে ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে যায়। ফলে গাড়ির হিসাব পুরোটা ছোট ছেলের নামে।
বাড়ি আছে কি না: দুটি বাড়ি আছে, তবে একটি মেয়ের নামে
দুটি বাড়ির একটি গুলশানে। কোটিরুপা হাউজিংয়ের পাশেই। পুরোনো চ্যালাকাঠ ও পলিথিন দিয়ে তোলা ওই বস্তিবাড়িটা আলীজানের নামে নেই। সেটি তিনি তাঁর মেয়েকে দিয়েছেন। মেয়ে তার জামাই নিয়ে সেখানে থাকে। অন্য বাড়িটায় তিনি নিজেই থাকেন। কারওয়ান বাজার রেললাইনের পাশের বস্তিতেই সেই বাড়ি। এটিও কাঠ ও পলিথিন দিয়ে তৈরি, তবে এটিতে ঘর দুটি। আলীজানের বাপ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, শিগগিরই এই বাড়িটা তিনি তাঁর স্ত্রীর নামে লিখে দেবেন। এসব বলতে বলতে তিনি গেয়ে ওঠেন, ‘লোকে বলে, বলে রে, ঘরবাড়ি ভালা না আমার...কী ঘর বানামু আমি শূন্যেরও মাঝার... লোকে বলে...!’
গান গাওয়ার এক ফাঁকে তিনি আরও জানান, ‘মেয়র পদে পাস করলে স্থাবর–অস্থাবর সম্পদ যা আছে, সব দান কইরা দিমু!’
নির্বাচনী এলাকা: উত্তর–দক্ষিণ দুটোই
কোন এলাকার মেয়র হতে চান?—এমন প্রশ্নে আলীজানের বাপ হতবিহ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন। তারপর বলেন, তিনি উত্তর–দক্ষিণ দুই জায়গা থেকেই মেয়র হতে চান। দুই অঞ্চলেই তার ভাইবেরাদর আছে। তিনি তাদের সবার সমর্থন পাবেন। তিনি জানেন তার ভাইবেরাদররা তার জন্য জীবন পর্যন্ত দিয়ে দেবেন। তিনি সবার দোয়াপ্রার্থী।
পুনশ্চ: খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, আলীজানের বাপের দেওয়া হলফনামা নির্ভুল। তিনি কি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে অংশ নিতে পারবেন? পারলে কি ভোট পাবেন? পেলে কি জয়যুক্ত হবেন? জানতে হলে অপেক্ষা করুন।

রস+আলোয় প্রকাশিত
লিংক:
http://www.prothom-alo.com/roshalo/article/495934/%E0%A6%B9%E0%A6%B2%E0%A6%AB%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন