সেই ছেলেবেলা থেকে বৃদ্ধকাল পর্যন্ত আপনার আত্মীয়স্বজন কতই না প্রশ্ন করে যান আপনাকে। যুগে যুগে, কালে কালে এই প্রশ্নগুলোর তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। অপরিবর্তিত প্রশ্নগুলো আজ ফাঁস করা হলো রস+আলোয়!
বয়স: ০০-০৩ওম্মা, কী কিউটই না হইছে! ওলে আমার বাবুটা...আসো আসো, কোলে আসো। কী নাম বাবুটার? বড় হয়ে কী হবা বাবু তুমি? কী হবা? ডাক্তার হবা নাকি ইঞ্জিনিয়ার? ইশ্, কী কিউট নাক!
শিশুকালে এ জাতীয় প্রশ্ন করতে করতে আপনার গাল-নাক টিপে, কোলে ঝুলিয়ে, আকাশে উঠিয়ে অদ্ভুত আচরণ করতে থাকবেন তাঁরা। আপনি ভ্যাঁ করে কেঁদে দিলেও কোনো লাভ হবে না। শেষ অস্ত্র হিসেবে আপনাকে যেটা করতে হবে, সেটা হলো ব্যক্তিটির কোল ভিজিয়ে ফেলতে হবে!
বয়স: ০৪-০৬আপনি যে মনের সুখে স্বাধীনভাবে বেড়ে উঠছেন, তা আপনার আত্মীয়ের সহ্য হবে না। তিনি প্রশ্ন তুলবেন আপনার স্বাধীনতায়। বলবেন, এরে এখনো স্কুলে ভর্তি করাও নাই? কেন ভর্তি করাও নাই? ছেলেকে মূর্খ বানাতে চাও নাকি? এমনিতেও এর মাথার সাইজ ছোট—ভেতরে ব্রেইন বলতে আলাদা কিছু আছে কি না সন্দেহ! এখনই যদি এরে স্কুলে ভর্তি না করাও, তাইলে কম্পিটিশনে নির্ঘাত ফেল করবে! তোমরা কি তা-ই চাও?
কোনো এক জঘন্য দিনে আপনি খেয়াল করবেন, আপনাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আপনার বড় বড় চোখ বড়জোর ছলছল করে উঠবে। এর চেয়ে বেশি আর আপনার কীই-বা করার আছে!
বয়স: ০৭-১৩জানপ্রাণ দিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন। স্কুলের পড়ালেখা সেই সঙ্গে টিউশন টিচারের এক্সট্রা লার্জ হোমওয়ার্ক—সবই করছেন আপনি। এ সময় কোনো এক আত্মীয় বা প্রতিবেশী এসে আপনার পড়ালেখাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবেন। বলবেন, ক্লাসে কেমন রেজাল্ট করে? কী, এক শতে মাত্র পঁচানব্বই? এই ছেলেকে দিয়ে কী হবে? না হতে পারবে ডাক্তার, না পারবে ইঞ্জিনিয়ার হতে! এর পুরা লাইফটাই তো শেষ! আমাদের বাসার মালিকের ছেলেটা—এই এত্তটুকু! এখনই ফট ফট করে ইংরেজিতে কথা বলে! আর এই ছেলের মুখে ইংরেজি দূরে থাক, বাংলা শব্দই পাওয়া যায় না! আপনাদের সবাইকে বলে রাখছি, এখনই যদি এর পড়াশোনার দিকটা টেক কেয়ার না করেন, তাহলে কিন্তু খারাবি আছে। আমার কলিগের এক ছেলে, একদম এ রকমই ছিল, পরে বোর্ডিং স্কুলে পাঠিয়ে দিয়ে তবে শান্তি! একেও বোর্ডিং স্কুলে পাঠাতে হবে নাকি?
আগামী তিন মাস আপনি এই আতঙ্কে থাকবেন যে আপনাকে বোধ হয় বোর্ডিং স্কুলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে!
শিশুকালে এ জাতীয় প্রশ্ন করতে করতে আপনার গাল-নাক টিপে, কোলে ঝুলিয়ে, আকাশে উঠিয়ে অদ্ভুত আচরণ করতে থাকবেন তাঁরা। আপনি ভ্যাঁ করে কেঁদে দিলেও কোনো লাভ হবে না। শেষ অস্ত্র হিসেবে আপনাকে যেটা করতে হবে, সেটা হলো ব্যক্তিটির কোল ভিজিয়ে ফেলতে হবে!
বয়স: ০৪-০৬আপনি যে মনের সুখে স্বাধীনভাবে বেড়ে উঠছেন, তা আপনার আত্মীয়ের সহ্য হবে না। তিনি প্রশ্ন তুলবেন আপনার স্বাধীনতায়। বলবেন, এরে এখনো স্কুলে ভর্তি করাও নাই? কেন ভর্তি করাও নাই? ছেলেকে মূর্খ বানাতে চাও নাকি? এমনিতেও এর মাথার সাইজ ছোট—ভেতরে ব্রেইন বলতে আলাদা কিছু আছে কি না সন্দেহ! এখনই যদি এরে স্কুলে ভর্তি না করাও, তাইলে কম্পিটিশনে নির্ঘাত ফেল করবে! তোমরা কি তা-ই চাও?
কোনো এক জঘন্য দিনে আপনি খেয়াল করবেন, আপনাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আপনার বড় বড় চোখ বড়জোর ছলছল করে উঠবে। এর চেয়ে বেশি আর আপনার কীই-বা করার আছে!
বয়স: ০৭-১৩জানপ্রাণ দিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন। স্কুলের পড়ালেখা সেই সঙ্গে টিউশন টিচারের এক্সট্রা লার্জ হোমওয়ার্ক—সবই করছেন আপনি। এ সময় কোনো এক আত্মীয় বা প্রতিবেশী এসে আপনার পড়ালেখাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবেন। বলবেন, ক্লাসে কেমন রেজাল্ট করে? কী, এক শতে মাত্র পঁচানব্বই? এই ছেলেকে দিয়ে কী হবে? না হতে পারবে ডাক্তার, না পারবে ইঞ্জিনিয়ার হতে! এর পুরা লাইফটাই তো শেষ! আমাদের বাসার মালিকের ছেলেটা—এই এত্তটুকু! এখনই ফট ফট করে ইংরেজিতে কথা বলে! আর এই ছেলের মুখে ইংরেজি দূরে থাক, বাংলা শব্দই পাওয়া যায় না! আপনাদের সবাইকে বলে রাখছি, এখনই যদি এর পড়াশোনার দিকটা টেক কেয়ার না করেন, তাহলে কিন্তু খারাবি আছে। আমার কলিগের এক ছেলে, একদম এ রকমই ছিল, পরে বোর্ডিং স্কুলে পাঠিয়ে দিয়ে তবে শান্তি! একেও বোর্ডিং স্কুলে পাঠাতে হবে নাকি?
আগামী তিন মাস আপনি এই আতঙ্কে থাকবেন যে আপনাকে বোধ হয় বোর্ডিং স্কুলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে!
বয়স: ১৪-২৫এটা যে আপনার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়, সেটা আপনি কোনো না কোনো আত্মীয়ের কাছ থেকে জানতে পারবেন। সঙ্গে এ-ও জানতে পারবেন যে এই সময়টা যদি আপনি কাজে না লাগান, তাহলে সারা জীবন হয়তো রিকশা চালিয়ে খেতে হবে। আত্মীয়টি বিভিন্নভাবে আপনার ব্যক্তিগত জীবনের খোঁজ নেবেন এ সময়। বারবার প্রশ্ন করবেন, আপনি প্রেম করছেন কি না। আপনার বন্ধুবান্ধব কেমন। জানতে চাইবেন, বাসায় ফিরতে আপনার সন্ধ্যা পার হয়ে যায় কি না। বাসায় অভিভাবকদের জানাবেন যে তাঁর এক সহকর্মীর ছেলে ঠিক এভাবেই সন্ধ্যা পার করে বাসায় ফিরত, পরে জানা গেল ছেলেটা আসলে একটা মেয়েকে ভালোবাসে। মেয়েটার সঙ্গে প্রেম করতে করতে ছেলেটা পরীক্ষায় ফেল করল আর মেয়েটা পাস করে চলে গেল বিদেশে। মেয়েটা এখন অস্ট্রেলিয়ায় ভালো চাকরি করে আর ছেলেটা একটা মুদি দোকান দিয়েছে! এরপর আপনার দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করবেন, তুমিও মুদি দোকান দিবা নাকি?
বয়স: ২৬-৩৫এ সময় আত্মীয়রা এসে বারবার জানতে চাইবেন, আপনার পড়ালেখা শেষ হয়েছে কি না! যদি না হয়ে থাকে, তাহলে কেন হচ্ছে না! অমুকের বয়সও তো প্রায় আপনার সমান, সে তো এক বছর হয় চাকরি করছে, আপনি কেন শেষ করতে পারছেন না! তাহলে কি আপনি ফেল করেছেন পরীক্ষায়?
যদি পড়ালেখা শেষ হয়ে থাকে, তাহলে তাঁরা জানতে চাইবেন, আপনি চাকরি করছেন না কেন? করছেন না, নাকি পাচ্ছেন না? রেজাল্ট ভালো না হলে চাকরি পাওয়া যে মুশকিল, তা-ও তাঁরা জানিয়ে দেবেন। এ দেশে চাকরি পেতে যে মামা-খালুর শক্ত জোর লাগে, এ ধরনের তথ্য জানাতে জানাতে তাঁরা আপনার জীবনটা অতিষ্ঠ করে তুলবেন!
বয়স: ৩৬-৪৫জীবনে এ পর্যায়ে প্রথম যে প্রশ্নের মুখোমুখি আপনি হবেন, তা হলো, কোথায় চাকরি করছ? দ্বিতীয় প্রশ্নটি হলো, চাকরিটা কেমন? (এ প্রশ্নের ভেতরে লুকানো আছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি, সেটি হচ্ছে স্যালারি কত!) আপনি যদি এ প্রশ্ন না বুঝে বলতে থাকেন ভালোই তো...অফিসটা কাছেই ইত্যাদি, তাহলে তাঁরা অত্যন্ত তীক্ষ্ণ স্বরে জানতে চেয়ে বলবেন, ওসব রাখো, স্যালারি কী রকম দেয়, সেইটা বলো!
আপনি একটা অঙ্ক উল্লেখ করামাত্র তুলনামূলক বিচারে পড়ে যাবেন। জানতে পারবেন আপনার আত্মীয়ের কোনো এক কলিগের ছেলেটির বয়স আপনার চেয়েও কম, অথচ সে আপনার চেয়ে বেশি বেতনের চাকরি করে! এত পড়ালেখা করে, এত কষ্ট করে, এত ভালো রেজাল্ট করে তাহলে আপনার কী লাভ হলো?
আপনিও যখন ভাবতে বসবেন যে সত্যিই কী লাভ হলো, তখন আত্মীয়টি প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়বেন আপনার ওপর। জানতে চাইবেন, পড়ালেখা হয়ে গেছে, চাকরি চলছে এখন তাহলে কিসের অপেক্ষা! আপনি বিয়ে করছেন না কেন?
জীবনের এই বয়সে এসে ‘আপনি বিয়ে করছেন না কেন’ ধরনের প্রশ্নের এত বেশি মুখোমুখি হবেন যে এই প্রশ্ন যেন কেউ আর না করেন, সে জন্যই আপনি দুম করে একটা বিয়ে করে বসবেন!
বয়স: ৪৬-৫৫এ সময় আপনাকে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে, সেগুলো এ রকম—
বিয়ে তো করলে, তা ছেলেমেয়ে কবে নেবে?
ছেলেমেয়ে তো নিলে, কিন্তু তাদের ভর্তি করাবে কোথায়?
ভর্তি তো করালে, কিন্তু পড়ালেখাটা ঠিকমতো হচ্ছে তো?
ছেলেমেয়েরা তো বড় হয়ে গেল, তাদের চাকরিবাকরির কী করলে?
ছেলেমেয়েরা চাকরিবাকরি তো পেল, কিন্তু তাদের বিয়ে-শাদি করাবে না?
বয়স: ২৬-৩৫এ সময় আত্মীয়রা এসে বারবার জানতে চাইবেন, আপনার পড়ালেখা শেষ হয়েছে কি না! যদি না হয়ে থাকে, তাহলে কেন হচ্ছে না! অমুকের বয়সও তো প্রায় আপনার সমান, সে তো এক বছর হয় চাকরি করছে, আপনি কেন শেষ করতে পারছেন না! তাহলে কি আপনি ফেল করেছেন পরীক্ষায়?
যদি পড়ালেখা শেষ হয়ে থাকে, তাহলে তাঁরা জানতে চাইবেন, আপনি চাকরি করছেন না কেন? করছেন না, নাকি পাচ্ছেন না? রেজাল্ট ভালো না হলে চাকরি পাওয়া যে মুশকিল, তা-ও তাঁরা জানিয়ে দেবেন। এ দেশে চাকরি পেতে যে মামা-খালুর শক্ত জোর লাগে, এ ধরনের তথ্য জানাতে জানাতে তাঁরা আপনার জীবনটা অতিষ্ঠ করে তুলবেন!
বয়স: ৩৬-৪৫জীবনে এ পর্যায়ে প্রথম যে প্রশ্নের মুখোমুখি আপনি হবেন, তা হলো, কোথায় চাকরি করছ? দ্বিতীয় প্রশ্নটি হলো, চাকরিটা কেমন? (এ প্রশ্নের ভেতরে লুকানো আছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি, সেটি হচ্ছে স্যালারি কত!) আপনি যদি এ প্রশ্ন না বুঝে বলতে থাকেন ভালোই তো...অফিসটা কাছেই ইত্যাদি, তাহলে তাঁরা অত্যন্ত তীক্ষ্ণ স্বরে জানতে চেয়ে বলবেন, ওসব রাখো, স্যালারি কী রকম দেয়, সেইটা বলো!
আপনি একটা অঙ্ক উল্লেখ করামাত্র তুলনামূলক বিচারে পড়ে যাবেন। জানতে পারবেন আপনার আত্মীয়ের কোনো এক কলিগের ছেলেটির বয়স আপনার চেয়েও কম, অথচ সে আপনার চেয়ে বেশি বেতনের চাকরি করে! এত পড়ালেখা করে, এত কষ্ট করে, এত ভালো রেজাল্ট করে তাহলে আপনার কী লাভ হলো?
আপনিও যখন ভাবতে বসবেন যে সত্যিই কী লাভ হলো, তখন আত্মীয়টি প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়বেন আপনার ওপর। জানতে চাইবেন, পড়ালেখা হয়ে গেছে, চাকরি চলছে এখন তাহলে কিসের অপেক্ষা! আপনি বিয়ে করছেন না কেন?
জীবনের এই বয়সে এসে ‘আপনি বিয়ে করছেন না কেন’ ধরনের প্রশ্নের এত বেশি মুখোমুখি হবেন যে এই প্রশ্ন যেন কেউ আর না করেন, সে জন্যই আপনি দুম করে একটা বিয়ে করে বসবেন!
বয়স: ৪৬-৫৫এ সময় আপনাকে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে, সেগুলো এ রকম—
বিয়ে তো করলে, তা ছেলেমেয়ে কবে নেবে?
ছেলেমেয়ে তো নিলে, কিন্তু তাদের ভর্তি করাবে কোথায়?
ভর্তি তো করালে, কিন্তু পড়ালেখাটা ঠিকমতো হচ্ছে তো?
ছেলেমেয়েরা তো বড় হয়ে গেল, তাদের চাকরিবাকরির কী করলে?
ছেলেমেয়েরা চাকরিবাকরি তো পেল, কিন্তু তাদের বিয়ে-শাদি করাবে না?
বয়স: ৫৬-বাকিটাএ সময় আপনি হঠাৎ করে বুঝতে পারবেন আপনি আপনার সারাটা জীবন অন্যের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতেই কাটিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু আপনারও তাঁদের কাছে একটা প্রশ্ন ছিল, আর প্রশ্নটা হলো—ভাই, আপনাদের কোনো কাজ নাই?
কিন্তু এই প্রশ্নটা আপনি তাঁদের করতে পারবেন না। কারণ, তার আগেই তাঁরা পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে প্রশ্নপত্র নিয়ে ছুটেছেন অন্য কোনো ভুবনে!
কিন্তু এই প্রশ্নটা আপনি তাঁদের করতে পারবেন না। কারণ, তার আগেই তাঁরা পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে প্রশ্নপত্র নিয়ে ছুটেছেন অন্য কোনো ভুবনে!
প্রথম প্রকাশ- রস+আলো
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন