বুধবার, ১৬ মার্চ, ২০১৬

এক যে ছিল দৈত্য

অনেক অনেক অনেক অনেক বছর আগে এই পৃথিবীতে এক দৈত্য বাস করত। দৈত্যটার ছিল বিশাল এক পেট আর ইয়া বড় বড় তিনটা মাথা। কিন্তু তিন–তিনটা মাথা হলে কী হবে, দৈত্যটার চোখ ছিল মাত্র একটা। সবাই তাকে একচোখা দৈত্য বলে ডাকত।
অতীত নথিপত্র ঘাঁটলে দেখা যায় সে সময় এই দৈত্যটা ডাংগুলি খেলা পরিচালনা করত। যদিও এই দৈত্যটার জন্মের আগে থেকেই পৃথিবীতে ডাংগুলি খেলা চলছিল। কিন্তু দৈত্যটা এমন ভাব করত যেন তার জন্যই ডাংগুলি বেঁচে আছে! সে নিজেকে ডাংগুলির মাতবর মনে করত। দৈত্যের মাথা তিনটা তো জোরে জোরেই বলত—আমরাই মোড়ল, আমরাই মোড়ল!
দৈত্যটা এই মোড়লদের সুবিধা হয় এমন সব নিয়মকানুন বানাত। হঠাৎ হঠাৎ বলত, আজ থেকে ক্রিকেট হবে এ রকম, আজ থেকে ক্রিকেট হবে ও রকম! ছোট দলগুলো মন খারাপ করে দৈত্যের কথা মেনে নিত। কিন্তু তার কথা মেনে নিলে কী হবে, ছোট দলগুলো ভালো খেলতে খেলতে এমন পর্যায়ে গেল যে মোড়ল দলগুলোকেও হারাতে শুরু করল। দৈত্য দেখল, এ তো চরম বিপদ! সে তখন ছোট দলগুলোকে বড় বড় টুর্নামেন্ট থেকে বাদ দিতে লাগল। যেভাবেই হোক তার মাথার দলগুলোকে বাঁচাতে হবে! কিছুতেই যেন না হারে!
কিন্তু ছোট দলগুলো কম বিচ্ছু না। একেকটা দলে একেকটা প্রতিভাধর খেলোয়াড় আসতে শুরু করল। তারা দৈত্যের তিনটা মাথারই ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াল। তিন মাথা এককাট্টা হয়ে অনেকক্ষণ ধরে গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুর করে অদ্ভুত অদ্ভুত সব আইন পাস করতে শুরু করল। কিন্তু তারপরও দলগুলোকে, দলের খেলোয়াড়গুলোকে থামানো গেল না। তখন দৈত্য তার শেষ অস্ত্রটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল খেলোয়াড়দের ওপর। বলল, ‘এই খেলোয়াড়, যে দারুণ দ্রুতগতিতে বল করে, যার বাউন্সার বারবার আমার মাথাগুলোতে আঘাত করছে; সে ত্রুটিপূর্ণ। আর ওই খেলোয়াড়, যার বল মোড়লদের স্পিনারদের থেকেও ভালো ঘুরছে, সে-ও ত্রুটিপূর্ণ।’ তাদের বাদ দেওয়ার জন্য দৈত্য উঠেপড়ে লাগল। সে ঠিক করেছে, তার মাথা তিনটার জন্য যে খেলোয়াড়ই হুমকি হয়ে আসবে, তাদেরই বাদ দিয়ে দেবে। যেন ক্রিকেটের সব কাপ-প্লেট-পিরিচ তার মোড়ল মাথারাই পায়।
দেখতে দেখতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেল ছোট দলগুলোর। তারা বলল, ‘আমাদের বারবার বাদ দেয় যে দৈত্য, আজ থেকে আমরাই তাকে বাদ দিলাম। আমরা আর কোনো খেলায় দৈত্যকে ডাকব না। আমরা নিজেরা নিজেরা খেলব।’ তারপর তারা নিজেদের মতো করে ডাংগুলি খেলা শুরু করল।
মাতবর দৈত্য আর মোড়ল মাথারা দেখল, এ তো খুব মুশকিল! অন্য দলগুলো যদি তাদের সঙ্গে না খেলে তাহলে তারা কার সঙ্গে খেলবে? অপেক্ষা করতে করতে তারা নিজেদের সঙ্গেই খেলতে শুরু করল। কিন্তু তিন মোড়লের খেলায় খেলার চেয়ে ঝগড়া বেশি হতে শুরু করল। দৈত্যের তিনটা মাথা পরস্পরের সঙ্গে এতটাই বিবাদে লিপ্ত হয়ে পড়ল যে দৈত্যের সার্বক্ষণিক মাথাব্যথা হতে শুরু করল। এই মাথা বলে, ‘তুই খারাপ!’ ওই মাথা বলে, ‘তোর জন্যই এই সব!’ আরেক মাথা শুধুই চিৎকার করতে থাকল ‘মওকা মওকা’ বলে!
এত অশান্তি সহ্য হলো না দৈত্যর! সে এক দিন একটা ফাঁকা মাঠে গিয়ে ডাংগুলি লাঠি দিয়ে পিটিয়ে নিজের তিনটা মাথাই ফাটিয়ে ফেলল। মাথার কচকচানি ফুরাতেই সে আবার ছোট দলগুলোর কাছে এল। কিন্তু ছোট দলগুলো দৈত্যকে হেসেই উড়িয়ে দিল। আর মনের দুঃখে সে যে কোথায় নির্বাসনে গেল, কেউ আর বলতে পারে না!
মাতবর দৈত্য আর তিন মোড়ল মাথা ছাড়া পৃথিবীর ডাংগুলি আবার আনন্দদায়ক হয়ে উঠল। পৃথিবীর ছোট-বড় সব দল সমান সুযোগ পেয়ে ডাংগুলি খেলে সুখে-শান্তিতে, মিলেমিশে বসবাস করতে শুরু করল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন