বুধবার, ১৬ মার্চ, ২০১৬

ঘুড়ির নাম ঘোরাঘুড়ি

অলংকরণ: তুলিঅলংকরণ: তুলিড্রয়িং খাতায় ঘুড়ি আঁকল তুলতুল। ঘুড়ির ভেতর বড় বড় চোখ, চোখের নিচে মুখ। রং চড়াল তাতে। বাহ্! দারুণ তো! ছুটল তুলতুল ভাইয়াকে দেখাতে। ভাইয়া তখন গেম খেলছে কম্পিউটারে। ঠাস ঠাস করে বাটন চাপায় ব্যস্ত।
: ভাইয়া দেখো, ঘুড়ি এঁকেছি!
: খুব ভালো।
: এই ঘুড়িটার নাম কী জানো? নাম হলো ঘোরাঘুড়ি। এতে চেপে আকাশে ঘোরা যায়!
: ভাগ তো এখন! শুধু বানিয়ে বানিয়ে কথা!
ঠাস ঠাস করে গেম খেলতেই থাকল ভাইয়া। তুলতুলের মনটা একটু খারাপ হলো। তার ঘুড়িটা দেখলই না ভাইয়া!
দুপুরবেলা খেয়েদেয়ে বাসার সবাই ঘুম। তুলতুল একা কী করে? ছবি আঁকবে? কিসের ছবি? মেঘের ছবি? সাদা সাদা তুলতুলে সব মেঘ? মেঘের ছবি আঁকবে বলে ড্রয়িং খাতা যেই খুলেছে তুলতুল, অমনি খাতার ভেতর থেকে বেরিয়ে এল ইয়া বড় এক প্রজাপতি।
প্রজাপতি? আরে নাহ! ওটা তো তারই আঁকা ঘুড়ি। চোখ আছে। মুখ আছে। বলছে, ‘কোনো কিছুর গন্ধই পাচ্ছি না! আমার নাক আঁকোনি কেন মেয়ে?’
: নাক?
: হ্যাঁ নাক! নাক ছাড়া আমি গন্ধ শুঁকব কীভাবে?
: তুমি কি ঘোরাঘুড়ি?
: নয়তো কী! আমি শুধু উড়ে উড়ে, ঘুরে ঘুরে বেড়াই!
: উড়তে পারো? ঘুরতে পারো?
: নয়তো কী! চলো!
বলেই ঘুড়িটা তুলতুলকে ধরে দিল টান। একঝটকায় চড়িয়ে নিল পিঠে। তুলতুল তো খুবই অবাক। বলল, আরে আরে যাচ্ছ কোথায়?
: মেঘের দেশে। তুমি না মেঘের ছবি আঁকবে!
: তুমি জানলে কীভাবে?
: সবই জানি! শুধু গন্ধ শুঁকতে পারি না। তুমি তো আমার নাক আঁকোনি।
বলতে বলতে ফড়ফড় করে ঘুড়ি বেরিয়ে গেল বাসা থেকে। ওরে বাবা! উঁচু থেকে দেখতে সবকিছু কী অদ্ভুতই না লাগছে! একটু ভয়ও হচ্ছে তুলতুলের। কিন্তু তুলতুল কিচ্ছু বলল না ঘুড়িকে। ঘুড়িটা উড়তে উড়তে চলে এল অনেক উঁচুতে। এখান থেকে নিজের বাসাটা দেখতেও পাচ্ছে না তুলতুল। শহরের সব দালানকোঠা যেন পুতুলের বাড়িঘর। অনেক নিচে ছোট ছোট পিঁপড়ের মতো গাড়ি। তুলতুলের চুল উড়ছে। খিলখিল করে হাসছে সে।
এমন সময় তার ঘাড়ের কাছে কী যেন লাগল ঠান্ডামতো। ঘাড় ঘোরাতেই দেখল সাদা ভালুকের মতো এক টুকরা মেঘ। লাফিয়ে উঠল তুলতুল। মেঘ! কী মজা! হাত বাড়িয়ে তুলতুল ধরল মেঘটাকে। কিন্তু ধরামাত্র মেঘটা পানি হয়ে গেল। হাত গেল ভিজে। কী ঠান্ডা মেঘ!
তখনই উড়ে এল একঝাঁক পাখি। তুলতুলকে দেখে তারা কিচিরমিচির করে উঠল। তুলতুল বলল, ‘দেখো, আমিও তোমাদের মতো উড়তে পারি পাখি!’
পাখিগুলো তুলতুলকে ঘিরে ঘুরতে থাকল। একপাশে মেঘ আর চারদিকে পাখি নিয়ে অনেকক্ষণ আকাশে উড়ল ঘোরাঘুড়ি আর তুলতুল। সন্ধ্যা নামতেই তারা ফিরে এল বাসায়। ঘরে আসতেই ঘোরাঘুড়িটা ছোট হয়ে ফুড়ুত করে ঢুকে গেল ড্রয়িং খাতায়। ঠিক তখনই এল ভাইয়া। ভাইয়ার মন খারাপ। গেম খেলায় সে জিততে পারছে না। ভাইয়াকে দেখে তুলতুলের মনটাও খারাপ হয়ে গেল। আচ্ছা, ভাইয়াকেও যদি ঘোরাঘুড়ির পিঠে বসানো যায়? ভাইয়া নিশ্চয় ভীষণ খুশি হবে!
: ভাইয়া, তুমি কি মেঘ দেখতে চাও?
: নাহ!
: ভাইয়া, চাইলে তুমি কিন্তু উড়তেও পারো...
: আমি তো পাখি না যে উড়ব!
: কিন্তু পাখির মতো উড়তে কী যে মজা ভাইয়া! আমি বললে ঘোরাঘুড়ি তোমাকেও ওড়াবে!
: ঘোরাঘুড়ি?
: হুম। আমার ড্রয়িং খাতাটা খোলো...
: কী হবে খাতা খুললে?
: আরে খোলোই না!
ভাইয়া ড্রয়িং খাতাটা খুলল। আর তক্ষুনি চলে গেল ইলেকট্রিসিটি। অন্ধকার ঘরে ভাইয়া কিছুই দেখতে পেল না। কিন্তু তার মনে হতে থাকল সে যেন একটা কিছুর ওপর চেপে বসেছে। আর জিনিসটা তাকে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ ভাইয়া দেখল মাথার ওপর আকাশ! আর আকাশভরা তারা!
ভাইয়া বলল, ‘আরে আরে, এটা কী?’
পাশ থেকে তুলতুল বলল, ‘ভয় পেয়ো না ভাইয়া, এটাই আমার ঘোরাঘুড়ি!’

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন