শনিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৫

পেসার হান্ট: রানা সাবধান!

আঁকা: আসিফুর রহমানমতিঝিলের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত এই বিশেষ ঘরে ঢুকতে রানার বুকটা ধক করে ওঠে সব সময়। রানা, মাসুদ রানা। পৃথিবীময় ছুটে বেড়ায় গোপন মিশন নিয়ে। টানে সবাইকে, কিন্তু বাঁধনে জড়ায় না। অথচ এই ঘরে ঢুকতেই তার হাতের তালু ঘেমে যায়। এবার খুব জরুরি নির্দেশে রানাকে ডেকে পাঠিয়েছেন মেজর জেনারেল (অব.) রাহাত খান। রানার দিকে বাড়িয়ে দিয়েছেন একটা লাল ফাইল। তাতে লেখা—পেসার হান্ট। সদ্যসমাপ্ত টেস্ট ম্যাচে বাংলাদেশ মাত্র একজন পেসার নিয়ে মাঠে নেমেছিল। তার মানে বাংলাদেশে পেস বোলারের সংকট। এই সংকট কীভাবে দূর করা যায়? রানার সামনে এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ। রাহাত খানের মুখে শঙ্কার ছায়া। গম্ভীর কণ্ঠে উচ্চারণ করলেন, ‘পেসার ছাড়া চলবে না! রানা, সাবধান!’
অফিস থেকে বের হয়ে নিজের গাড়িতে উঠতেই কারা যেন রানার মাথায় আঘাত করল। চোখে সর্ষেফুল দেখল সে। জ্ঞান হারানোর আগে বুঝতে পারল কে বা কারা তাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে শহর থেকে অনেক দূরে।
জ্ঞান ফিরলে রানা নিজেকে আবিষ্কার করল একটা গুমোট ঘরে। হাত-পা বাঁধা। আর তার সামনে ঢাকাই ফিল্মের ভিলেনদের মতো তিনটি লোক। সাদা, লাল আর নীল পোশাকের। এগিয়ে এল সাদা পোশাক।
: কই? কই রাখছ তুমি প্রেশার? কই?
: প্রেশার?
: হ্যাঁ, প্রেশার। আমাদের প্রেসার লাগব। অনেক অনেক প্রেশার লাগব। প্রেশারের অভাবে আমাদের কিছুই ঠিকমতো হইতেছে না।
: প্রেশার লাগবে, প্রেশারকুকার কেনেন। আমার কাছে কী?
: আরে ওই প্রেশার না। প্রেশার প্রেশার। এমন প্রেশার, যেন সরকাররে চাপে ফেলতে পারি। ইস্যুর প্রেশার! প্রেশার চোটে সরকার গদি ছাইড়া যেন নাইমা আসে! কই রাখছ তুমি প্রেশার?
: আমি তো প্রেশার খুঁজতে বের হই নাই। আমার মিশন...
লাল পোশাক এগিয়ে আসে। বলে, ‘ওই, একদম মিথ্যা কথা বলবা না। আমাদের কাছে খবর আছে, তুমি প্রেশার খুঁজতে বাইর হইছ!’
: আমি পেসারের জন্য বের হয়েছি। ক্রিকেটে পেস বোলার পাওয়া যাচ্ছে না! আমাদের এখন নতুন নতুন পেসার তৈরি করতে হবে!
: রাখ তোমার বুজরুকি। তোমারে আমি বহুত চিনি। কাজীদার বই আমিও পড়ছি। তুমি এ রকম আটকা থাকলেই নানান ভুজুংভাজুং কথা বলো। তারপর ঝোপ বুইঝা কোপ মাইরা পালায়া যাও!
: পালানোর কিছু নেই। আমাকে ছেড়ে দেওয়াই আপনাদের জন্য ভালো। ক্রিকেটের জন্য ভালো। পেসার খুঁজে না পেলে খুব মুশকিল!
: কিসের মুশকিল? ক্রিকেটে পেসারের দরকার কী, অ্যাঁ? পেসার তো একটা ফানি ব্যাপার। হুদাই আধমাইল দূর থেইকা দৌড় দিয়া আইসা আম্পায়ারের পাশে একটা বেসম্ভব লাফ দিয়া বল ছুইড়া মারে! ক্যান? এমন কইরা বল ছোড়ার কী দরকার? অন্যরা বল করে না? স্পিনারদের কি তারা দেখতে পায় না? তারা কেমন কাছ থেইকা গুটি গুটি পায়ে বল করে; তারা কি আউট করতে পারে না?
: পারে। কিন্তু ক্রিকেটে তো দুইটাই লাগে। বৈচিত্র্যের দরকার আছে না?
নীল পোশাক এগিয়ে আসে। বলে, রাখো তোমার বৈচিত্র্য! আমি তো বলি টিমে এগারোটা স্পিনার রাখাই ভালো। এরা কম দৌড়ায়। কম হাঁপায়। কম লিগামেন্ট ছেঁড়ে! ক্রিকেটে অত দৌড়ানির জায়গা কই? এত্তটুকু মাঠ!
: এগারোটা স্পিনার? তাহলে ব্যাটসম্যান থাকবে না?
: অফকোর্স থাকবে। ব্যাটসম্যান থাকবে ব্যাটিংয়ের সময় আর স্পিনার থাকবে ফিল্ডিংয়ের সময়!
: আপনাদের ক্রিকেট জ্ঞান দেখে আমি অভিভূত।
: এত অভিভূত হওয়ার দরকার নাই, প্রেশার ছাড়ো, নাইলে তোমার ভূত ছাড়ায়া দিব! কই রাখছ প্রেশার, কই? ভালোয় ভালয় দেও, নাইলে খবর আছে তোমার!
নীল পোশাক পকেট থেকে একটা গুলতি বের করে। রানার দুই ভ্রুর মাঝখানে তাক করে। নিজেকে শান্ত করে রানা। এখন নড়েছ কি মরেছ অবস্থা! এ অবস্থা থেকে বেরোতে মাথা খেলাতে হবে। সাদা পোশাক বলে, ‘কী হইল, প্রেশার দিবি কি না বল?’
: দেব, দেব, অবশ্যই দেব।
ঠাঠা করে হেসে ওঠে তিনজনই। রানা বলে, ‘কিন্তু প্রেশার তো আমার দুই হাতে। হাত না খুললে প্রেশার কীভাবে দেব?’
তিনজন পরস্পরের দিকে তাকায়। গোল হয়ে দাঁড়িয়ে নিচু গলায় কী যেন যুক্তি–পরামর্শ করে। তারপর লাল পোশাক এসে বলে, ‘হাত খুইলা দিতেছি, কিন্তু গুলতি তোমার দিকে তাক করা থাকবে। একটু এদিক–ওদিক হইলেই খতম!’
রানার হাত খুলে দিয়েই লাল পোশাক বলে, ‘কই, দেও প্রেশার।’
রানা সঙ্গে সঙ্গে ধাম করে লোকটার মুখে একটা ঘুষির প্রেসার দিল। বাবা গো বলে কঁকিয়ে উঠল লোকটা। গুলতি থেকে গুলি ছুটে এল। শরীরটা একপাশে গড়িয়ে দিল রানা। দিয়েই পা দিয়ে একটা প্রেশার দিল সাদা পোশাককে। উল্টে গেল সে। আর দুজনের এই প্রেশার প্রাপ্তি দেখে নীল পোশাকের তলপেটে অন্য রকম প্রেশার চলে এল। ছুটে সে বাথরুমের দিকেই পালাল বোধ হয়। নিজেকে মুক্ত করে রানা বেরিয়ে এল বাইরে। পাশ দিয়ে একটা গ্রামের সরু নদী বয়ে গেছে। আর সেই নদীপারে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ক্রিকেট খেলছে। অনেক দূর থেকে দৌড়ে এসে শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে বল করছে তারা। রানার মুখে ফুটে উঠল ভুবনভোলানো হাসি। মিশন কমপ্লিট। সে বুঝতে পেরেছে, কোথায় পাওয়া যাবে পেসার!

প্রকাশ: রস+আলো
লিংক: http://www.prothom-alo.com/roshalo/article/553678/%E0%A6%AA%E0%A7%87%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%9F-%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%A8

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন