শনিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৫

জেরির কাছে টমের চিঠি


প্রিয় জেরি,
বর্ষাধোয়া নরম নরম দিনের তুলতুলে শুভেচ্ছা জানিয়ো। তুমি সেই যে তোমার মামাবাড়িতে আম কুড়ানোর নাম করে এলে, ধান চুরি করতে গেলে আর তো ফিরলে না। আমার রাত-দিন কাটে এখন দরজার দিকে তাকিয়ে। ভাবি, এই বুঝি তুমি এলে, এই বুঝি এলে! আমার অবস্থা এখন বাংলা সিনেমার নায়িকার মতো। মিউ মিউ করে গাইতে ইচ্ছা করছে—সে যে কেন এল না, কিছু ভালো লাগে না...যাহোক, তোমার না থাকায় আমার ছোটাছুটি কমে গেছে, শুয়ে-বসে হাই তুলে দিন কাটাতে কাটাতে ‘মেদ-ভুঁড়ি কী যে করি’-টাইপ অবস্থা! ডাক্তার বলেছে, এভাবে শুয়ে-বসে দিন কাটালে মানুষের মতো আমাকেও নানা রকম রোগব্যাধিতে ধরবে। তখন সকাল সকাল জগিংটগিং করতে হবে। জগিংয়ের কথা ভাবলে এখনই আমার হাই ওঠে। ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসতে চায়। এত পরিশ্রম কীভাবে করা সম্ভব! বিড়ালেরা পৃথিবীতে এসেছে লেপের ওমে দিন কাটিয়ে দেওয়ার জন্য। পার্কে পার্কে জগিং করার কাজ মানুষের!
সে যাহোক, শুনে খুশি হবে যে আমি একটা মানুষকে পোষ্য নিয়েছি। অবাক হলে নাকি? অবশ্য মানুষেরা এই চিঠি পড়লে হইহই করে উঠবে। বলবে, মানুষ কারও পোষ্য হয় না, বরং মানুষই প্রাণীদের পোষে। গাধাগুলা এখনো বুঝতে পারেনি অন্য প্রাণী আর বিড়ালদের মধ্যে পুঁটি আর ইলিশ মাছের তফাত। মাছের রাজা যদি ইলিশ হয় তো প্রাণীর রাজা বিড়াল অর্থাৎ আমরা। তাই আমরা বিড়ালেরাই মানুষকে পোষ মানাই, গাধা মানুষেরা আমাদের নয়!
এই তো সেদিনই আমার কথিত মনিব আমার জন্য মাছ নিয়ে এল। গন্ধ শুঁকেই বুঝলাম ফরমালিন দেওয়া মাছ। আমি নাক কুঁচকে রেখে দিলাম। মনিব আমাকে নানাভাবে খাওয়ানোর চেষ্টা করল ঠিকই কিন্তু আমি দূরে জাস্ট থাবা গেড়ে বসে থাকলাম। বুঝতে হবে, আমার আর বাঘের রক্ত এক! আমাদের একটা প্রেস্টিজ আছে। ফরমালিন দেওয়া মাছ আমার মুখে রোচে না। আমি কয়েকবার ম্যাও ম্যাও বলে তা বোঝানোর চেষ্টা করলাম। গাধাটা গুরুত্বই দিল না। তুমি তো জানোই, গুরুত্ব না পেলে বিড়ালেরা কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে! তবু আমি আরও কয়েকবার ম্যাও ম্যাও করে জানালাম, ভাই রে ঠিকঠাক খাইতে দে, নইলে খবর আছে! কিন্তু ইন্দুরের বাচ্চা ইন্দুর (তুমি আবার মাইন্ড কইরো না!) আমাকে অন্য কিছু খেতে না দিয়ে শুয়ে পড়ল। অথচ আমি জানি, ফ্রিজে বোতলভর্তি দুধ আছে। ওই দুধ খাব বলে সকাল থেকে আমি মুখ মুছে যাচ্ছি, জিব চেটে যাচ্ছি! (তুমি আবার ভেবো না এই দুধ খাওয়ার জন্যই আমি মাছ খাইনি।) মানুষটা যখন আমাকে উপেক্ষা করে শুয়েই পড়ল তখন মাথাটা ধা করে জ্বলে উঠল। আমার সঙ্গে ফাজলামি? নিজেকে কী ভাবো, মনিব? দাঁড়াও তোমার মনিবগিরি ছোটাচ্ছি! কাল তোমাকে সারা দিন অফিস যেতে দেব না, ঘুমাতে দেব না, সারা দিন বাথরুমে বসে বসে কাপড় কাচবে শুধু আর ঢুলবে!
শুরু করলাম আমি আমার বিখ্যাত ডাক। ম্যাও ম্যাও ম্যাও... বেকুবটার তাতে দেখি ঘুম ভাঙে না। তখন তার ঘরে ঢুকে ড্রেসিং টেবিলের ওপর উঠলাম। চিরুনি আঁচড়াতে লাগলাম নখ দিয়ে। তাতে অদ্ভুত ক্যাঁক ক্যাঁক শব্দ তৈরি হলো। বেকুবটা তাতে পাশ ফিরে শুলো। এবার বডি স্প্রের বোতলটা ফেলে দিলাম। ঠং শব্দ করে গড়িয়ে পড়ল মেঝেতে। গড়াতেই থাকল। শব্দ হতেই থাকল। বেকুবটা এবার ধড়ফড় করে উঠে বসল। আমি তখন একটা করুণ শব্দ করে ম্যাও বললাম। বেকুব মনে হয় রাগ হলো তাতে! আমাকে একটা গালি দিল, তারপর ধাওয়া করল। আমি তো দিনভর ঘুমিয়েছি, রাতভর ছোটাছুটি করতে আমার আপত্তি কী? এ ঘর-সে ঘর ছুটি আর মাঝে মাঝে ম্যাও ম্যাও বলে ডাকি। বুকশেলফ থেকে বই ফেলে দিই, ঝাড়ু নিয়ে টানাটানি করি, মোবাইল ফোনের চার্জারে মারি হ্যাঁচকা টান!
বেকুবটার ঘুম চটকে গেল। শেষে সর্বস্বান্ত হয়ে যেন সোফায় বসে ঝিমোতে লাগল। আমি তখন তার সোফার ওপর গিয়ে ছোট্ট করে হিসু করে দিলাম! বেকুবটা গগনবিদারী চিৎকার করে উঠল। আর তার স্ত্রী উঠে এসে ফ্রিজ থেকে দুধ বের করে আমাকে খেতে দিল, আমিও চুকচুক করে খেতে থাকলাম! চেটেপুটে খেয়ে আমি ঘুমাতে চলে গেলাম! বেকুবটা তখন বাথরুমে নিজের জামাকাপড় পরিষ্কার করছিল! জেরি ব্রো, এখন তুমিই বলো কে কাকে পোষ মানিয়েছে এই বাড়িতে?
যাহোক, চিঠি পাওয়ামাত্র তুমি এ বাড়িতে চলে আসবে, একটুও দেরি করবে না! দুজন মিলে এবার আরও অনেককে পোষ মানাব!
ইতি
তোমার বন্ধু টম
জেরির উত্তর
টম,
তোমার নানা ভাব নেওয়া কথা শুনলাম। পড়ে মনে হচ্ছে ওই বাড়িতে তুমি রাজা হয়ে আছ! আসলে আমি খবর পেয়েছি ওরা প্রতিদিনই নাকি তোমাকে গোসল করিয়ে দেয়? প্রতিদিনই নাকি তুমি ভেজা বিড়াল হয়ে যাও? যা হোক, তোমার দাওয়াত গ্রহণ করতে পারলাম না। কারণ, আমি জানি, আমি তোমার কাছে গেলেই তুমি আমাকে তোমার পেটের ভেতর দেখতে চাইবে!
ইতি
জেরি
প্রকাশ: রস+আলো

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন