শনিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৫

বিভিন্ন মহলে পে-স্কেল


অাঁকা: জুনায়েদ আজীম চৌধুরীবেড়েছে সরকারি চাকরিজীবীর পে-স্কেল। শুধু যে সরকারি চাকরিজীবী মহলেই এই পে-স্কেল নিয়ে আগ্রহ, তা কিন্তু নয়, বিভিন্ন মহলে এই পে-স্কেল নিয়ে নানান চিন্তাভাবনা।
গরু মহলেসরকারি চাকরিজীবীর পে-স্কেল বৃদ্ধি নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে গরু মহলে। সামনেই ঈদ। ঈদের আগে আগে গরু মহলে এমনিতেই একটা উৎসব অবস্থা বিরাজ করে। এর মধ্যে এই নতুন পে-স্কেল যেন আনন্দের বন্যা বইয়ে দিয়েছে তাদের জীবনে। জনৈক গরু লালিয়া বলেন, ‘বর্ডার পার হয়ে গরু আসছে না, এটা একটা ভালো খবর। এবার আমাদের দেশি গরুদের যথেষ্ট দাম ও দেমাগ থাকবে। আর তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বেতন বৃদ্ধির খবর। ডবল খুশি। বেতন বৃদ্ধির মানে হলো মানুষের হাতে টাকা থাকবে। বিশেষত সরকারি কর্মচারীরা দাম দিয়ে আমাদের কিনতে পারবেন। তারপর ঠিকঠাকমতো খাওয়াদাওয়া খৈলভুষিও দিতে পারবেন! আমরা খুবই আশান্বিত। আমাদের মধ্যে অনেকে তো এই ঘোষণা দিয়েই ফেলেছে যে বেসরকারি কারও ঘরে তারা যাবে না!’
ছিনতাইকারী মহলে
ছিনতাইয়ের ওপর ডিপ্লোমা ও সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী, বিশিষ্ট ছিনতাই গবেষক ও স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত ছিনতাইকারী ছোটু ছিনিয়া নিজের খুশি প্রকাশ করতে আজ অনেক দিন পর ছিনতাইয়ে নেমেছেন। ভাঙা সড়কের পাশে অকেজো ল্যাম্পপোস্টের ধারেই তিনি ছিনতাই করেন। তবে ঢাকা শহরে এমন জায়গার অভাব নেই বলে তিনি কিছুটা হতাশ। তিনি বলেন, ‘ব্যাতন বাড়ছে খুবই ভালো খবর। আগে সরকারি চাকরিজীবী দেখলেই বুঝা যাইত। বাসে ঝুলতে ঝুলতে যাইত, ভাঙা ছাতা থাকত একটা! এখন ব্যাতন বাড়ায় এরা রিকশায় যাতায়াত করবে, তাতে আমাদের ছিনতাইয়ে সুবিধা হবে। কিন্তু বেতনের বাড়ানোর সাথে সাথে সরকারের এই রাস্তাগুলানের দিকেও নজর দেওয়া উচিত। সব জায়গায় এমন ভাঙাচোরা রাস্তা আর অকামের ল্যাম্পপোস্ট থাকলে আমরা সারপ্রাইজ দিমু কোনখানে? একটা কথা মনে রাখবেন, সারপ্রাইজ হইল গিয়া ছিনতাইয়ের প্রথম শর্ত!’
কাঁচাবাজার মহলে
পে-স্কেল বৃদ্ধির খবর শুনে প্রায় বেশির ভাগ কাঁচাবাজারে মিষ্টি বিতরণ হয়। এ খবর যেন এইচএসসির ভালো রেজাল্টের মতো খুশির একটা ব্যাপার। অনেকে পরস্পরকে জড়িয়েও ধরেন। মাছ বিক্রেতা মজনু মিয়ার সঙ্গে পটোল বিক্রেতা বাবুর অনেক দিনের মন-কষাকষি থাকলেও এদিন তাঁরা গলাগলি করে হেসে ওঠেন। এত দিন সরকারি চাকরিজীবীর দুঃখ দেখে তাঁদের কান্না চলে আসত। তাঁরা বাজারে এসে দূরে দূরে দাঁড়িয়ে থাকতেন। ভয়ে ভয়ে মাছে হাত দিতেন। টিপে দেখতেও হাতটা কেঁপে উঠত তাঁদের। কারণ, তাঁদের পকেট ভারী থাকত না। তিন কেজির বদলে দেড় কেজি আলু কিনে ফিরতেন বাসায়। কিন্তু এবার দিন বদলে যাবে। তাঁরা এখন বুক ফুলিয়ে বাজারে ঢুকবেন, অল্প দামদর করেই ঝটপট বাজার করে চলে যাবেন। সরকারি চাকরিজীবীর সঙ্গে দামদর করতে করতে কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীরা ত্যক্তবিরক্ত। এবার নিশ্চয় এই বিষয়ের সমাধান হবে!
সিনেমার পরিচালক মহলে
সরকারি চাকরিজীবীর পে-স্কেল বৃদ্ধিতে কিছুটা চিন্তার রেখা দেখা গেছে সিনেমার পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার মহলে। খাইতে দিবি না যামু গা সিনেমার অস্কার দাবিদার পরিচালক মাস্টার বুলবুল বলেন, ‘সিনেমায় সরকারি চাকরিজীবীর একটা লম্বা ইতিহাস আছে। সরকারি চাকরিজীবী মানেই তাঁরা চৌধুরী সাহেবদের মতো ধনী নন। কিন্তু এ রকমভাবে বেতন বাড়তে থাকলে চলচ্চিত্রে সরকারি চাকরিজীবী ক্যারেক্টারটা তার কালার হারাবে। ক্যারেক্টার হইল প্রাণ! আমার যে নতুন ফিল্ম ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী পেঁয়াজময়, সেইখানে দরিদ্র সরকারি চাকরিজীবীর ক্যারেক্টার আছে! এখন এই ক্যারেক্টার জাস্টিফাই ক্যামনে হবে? এই ঘটনার জন্য এমনও হতে পারে যে আমি অস্কারটা পাইলাম না! তার দায়ভার তখন কে নেবে?’
বেসরকারি মহলে
এ মহলে এখন পর্যন্ত কেউ কথা বলতে রাজি হননি। তাঁরা অত্যন্ত দুশ্চিন্তার মধ্যে আছেন। তাঁরা ভাবছেন, এই পে-স্কেল বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কি তাঁদেরও পে-স্কেল বৃদ্ধি পাবে? এটাই এখন তাঁদের অন্তরের কথা। কিন্তু কথাটি তাঁরা কাউকে বলতে না পেরে মুখ শুকিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

প্রকাশ: রস+আলো

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন