শনিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৫

ফলের রাশিফল


চলছে গ্রীষ্মকাল। বাজার ভরে গেছে ফলে। শুধু মানুষের নয়, এসব ফলেরও আছে নানা রকম রাশি, আছে রাশিফল।
.আম
আম রাজা ফলের জাতক। যেখানে যে ফলের মধ্যেই সে পড়ুক না কেন, আম তার রাজ-স্থান ধরে রাখবেই। আম দেখে ইংরেজরা সেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলেই খুব বিস্মিত হয়েছিল। তারা দেখেছিল, গাছ থেকে আম পড়লেই মানুষ ছুটে যায়। আমটা কুড়িয়ে আনতে যায়। তা সে যে অবস্থাতেই থাকুক না কেন। ইংরেজরা তাই আমের নাম দিয়েছিল ‘মানুষ যায়’। যার ইংরেজি করলে দাঁড়ায় Man Go. আমের ওপর মঙ্গলের প্রভাব থাকায় আমকে সবাই ভালোবাসে। সবাই তাকে কিনতে চায়। সব সময় সব জায়গায় সে চাহিদা তৈরি করতে পারে। চাঁদের সঙ্গে সরাসরি অবস্থানের কারণে আমের স্বাদ জ্যোৎস্নার মতো নরম। আমের ভেতরে এত রস যে ফলটা আসলেই ‘রসাল’। রম্য ক্রোড়পত্র রস+আলো আর আম সেমি মিতা।
.জাম
জামের ওপর শনির একটা প্রভাব সব সময় লক্ষ করা যায়। জাম পাড়তে তাই কেউ গাছে উঠলে ডাল ভেঙে তার নিচে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। জামের রং কালো। কারণ মহাকাশের ব্ল্যাকহোলের সঙ্গে তার প্রত্যক্ষ সংযোগ। জাম খেলে জিবে আলট্রা ভায়োলেট রং লেগে যায়। এটা শক্তির প্রতীক। তবে এই শক্তি কখনো বাটির সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রয়োজনীয় ‘জামবাটি’ হয়ে ওঠে, আবার কখনো জ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অপ্রয়োজনীয় ‘গ্যাঞ্জাম’ হয়ে ওঠে। জামের ভেতর তাই দুটি প্রবল শক্তি একই সঙ্গে খেলা করে।
কাঁঠালকাঁঠাল
বৃহস্পতির ঘরে থাকায় কাঁঠাল সব সময় তুঙ্গে থাকে। বৃহস্পতির কারণে তার আকৃতিও বিশাল। তবে শরীরে যে কাঁটা আছে, তা নিতান্ত বুধের পরিণাম। বুধ একই সঙ্গে প্রণয় আর আত্মরক্ষার প্রতীক। গরু–ছাগলের হাত থেকে বাঁচার জন্য কাঁঠাল তার কাঁটাকে কাজে লাগালেও মানুষের প্রণয় থেকে তাই কাঁঠালের মুক্তি নেই। মানুষ ‘কাঁটা হেরি ক্লান্ত কেন কাঁঠাল কিনিতে’ ভেবে দেদার কাঁঠাল কিনে থাকে। বৃহস্পতির কারণেই কখনো কখনো কাঁঠাল ভীষণ চালাক হয়ে ওঠে। তখন সেটা অন্যের মাথায় ভেঙেও খাওয়া হয়। যার মাথায় কাঁঠাল ভাঙা হয়, তার বৃহস্পতি বিনাশ হয়।
লিচুলিচু
লিচুর ওপর শুক্রের প্রবল প্রভাব। তাই এর আকৃতি ছোট। তারপরও বাজারে এর দারুণ চাহিদা। লিচু ভ্রাতৃত্ব আর একতার প্রকাশ। এরা কখনো একা থাকতে চায় না। গুচ্ছ গুচ্ছ অবস্থায় থাকাতেই এদের শক্তির জায়গা। লিচুর ওপর বুধের প্রভাবও বিদ্যমান। তাই এর শরীরেও কিঞ্চিত কাঁটা আছে। তবে কাঁটা থাকলেও গোলাপ যেমন সুন্দর, তেমনই লিচুও মিষ্ট ও স্বাদু এক ফল। কাজী নজরুল ইসলাম ‘লিচু চোর’ নামে একটি কবিতা লিখে সাহিত্যে লিচুকে চিরকালীন ঠাঁই দিয়েছেন। শুক্রের প্রভাবে লিচুর দাম উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে!
কলাকলা
খেলায় যেমন ‘দুধভাত’ থাকে, ঠিক সে রকমই ফলের ‘দুধভাত’ হলো কলা। সূর্যের জন্ম ও বিস্তার এবং কলার জন্ম ও বিস্তার প্রায় সমান্তরাল। সূর্যের আলো যেমন সব স্থানে সমানভাবে পাওয়া যায়, কলাও তেমনি সব জায়গায় সমানভাবে পাওয়া যায়। আবার সূর্যের মতোই কলা সবকিছুর কেন্দ্রে থাকতে পছন্দ করে। ডারউইনের বিখ্যাত মতবাদ সৃষ্টিতেও কলা ছিল কেন্দ্রে। ডারউইন দেখেছিলেন, বানর আর মানুষের সংযোগসেতুটি আসলে কলা। পৃথিবীতে কেবল এই দুটি প্রাণীই কলা খেতে এত পছন্দ করে! এতৎসত্ত্বেও কলা কখনো কখনো বিব্রতকর ফল। কেউ কাউকে কলা দেখাতে চাইলে সেটা মোটেও সম্মানসূচক কিছু নয়। এমনকি এর ছিলকায় পা হড়কালেও বিপদ!

প্রকাশ: রস+আলো

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন