রাজার মুখে হাসি নেই। রাণী আর মন্ত্রীর দুঃশ্চিন্তার অন্ত নেই। রাজ্যজুড়ে মোবাইলে এসএমএস করে জানিয়ে দেয়া হল রাজার মুখে যে হাসি ফোটাতে পারবে তাকে দেয়া হবে সহস্র স্বর্ণ মুদ্রা।
বিরস মুখে দরবারে বসে আছেন রাজা। সঙ্গে আছেন রাণী, আরো আছেন মন্ত্রী। রাজাকে হাসাতে এল বদলপুরের বাঘের বাচ্চা। লম্বা শরীরে একটা মুখোশ আর একটা লেজ বেঁধে এসেছে সে। রাজা জিগ্যেস করলেন, কী নাম তোমার?
- বাঘের বাচ্চা।
- কী করবে?
- আপনাকে হাসাবো রাজামশাই।- না হাসাতে পারলে গর্দান যাবে!
বাঘের বাচ্চা শুরু করল নাচতে। তার নাচে দরবার কেঁপে উঠল। আকাশ নেমে এল। গরগর করে মেঘ ডাকল। শেষের দিকে একটু বৃষ্টিও হল- কিন্তু রাজা যেমন ছিলেন তেমনি বাঁকা হয়ে সিংহাসনে বসে রইলেন। একটা পেয়াদা এসে বাঘের বাচ্চাকে ধরে নিয়ে গেল। রাজা হাই তুললেন। রাণী হাই তুললেন। মন্ত্রীও হাই তুললেন।
রাজা বললেন, বাজে নাচ।
রাণী বললেন, বিচ্ছিরি নাচ।মন্ত্রী বললেন, জঘন্য নাচ। দেখা যায় না।
এল আরেকজন। পরনে সাদাসিদা পোশাক। রাজা জিগ্যেস করলেন, কী নাম হে তোমার?
- আজ্ঞে রাজামশাই, কোকিল।
রাজা বললেন, কী বিদঘুটে নাম! কোকিল একটা বেহুদা পাখি- তার নামে নাম রাখতে হবে কেন?
রাণী বললেন, কী যে বাজে নাম। এমন নাম বাপেরকালেও শুনিনি! মন্ত্রী বললেন, খুব বাজে নাম। নাম বদলে দিতে হবে। আজ থেকে তোমার নাম চিংড়ি, বুঝলা?
কোকিল চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকল। রাজা বললেন, তা তুমি কী করবে? নাচবে না কুতবে?
- গান করব রাজামশাই।- তা বেশ। গাও।
কোকিল গান ধরল। সূর্য হাসল গানে। চাঁদমামাও উঁকি দিয়ে দিয়ে হাসল ফিচকি ফিচকি। ফুল হাসল। বাতাস ঘুরে ঘুরে নাচতে লাগল। শুধু রাজা গান শুনতে শুনতে সিংহাসনেই ঘুমিয়ে গেলেন, নাক ডাকাতে লাগলেন। কোকিল হঠাৎ একটা সুর ধরল জোরে- অমনি রাজার ঘুম গেল ভেঙে। কাচা ঘুম ভেঙে রাজা হলেন ব্যাজার। সুরুৎ করে মুখের লালা টেনে বললেন, কে রে? কে আমার ঘুম ভাঙিয়ে দিল অ্যা?
রাণী বললেন, দাদারকালেও এত বেসুরো গান শুনিনি...!
মন্ত্রী বললেন, খুব কুৎসিত সুর! এই কোকিলের বোবা হওয়াই ভালো, এই কে আছিস, ওর জিবটা কেটে দে!পেয়াদা এসে কোকিলকে ধরে নিয়ে গেল।
রাজার মেজাজ খারাপ। এমন সময় ডাক পড়ল আরেকজনের। পেয়াদা ডাকল, সংপুরের বজ্জাত এসে হাজির হও...
আর সঙ্গে সঙ্গে চোঙার মতো টুপি পরে, ঢোলাঢালা রঙচঙে আলখেল্লা পরে এল একজন। বাঁকা নাক, লম্বাটে থুতনি। এসেই মাথা ঝুঁকিয়ে বলল, রাজার জয় হোক, রাজার জয় হোক।
শুনে রাজা কিন্তু খুশি। বললেন, তুমিই বজ্জাত?
বজ্জাত বলল, জ্বি রাজামশাই!
রাজা বললেন, বাহ্ কী খাসা নাম... অসাধারণ, অসাধারণ!!
রাণী বললেন, মিষ্টি একটা নাম!মন্ত্রী বললেন, চমৎকার নাম... এমন নাম সচরাচর শোনা যায় না!
বজ্জাত মাথা নিচু করে মিটিমিটি হাসল। রাজা জিগ্যেস করলেন, তা তুমি কী করবে? নাচন-কুদন, নাকি গান?
বজ্জাত বলল, না না রাজা মশাই ওসব ফালতু জিনিস...
রাজা বললেন, ঠিক বলেছ, ওসব খুবই ফালতু জিনিস... বিশ্রী জিনিস! তো তুমি কী করবে তাহলে?
বজ্জাত বলল, আপনাকে হাসাবো মহাশয়!
মন্ত্রী বললেন, না হাসাতে পারলে কিন্তু গর্দান যাবে মনে রেখ।
বজ্জাত বলল, আর হাসাতে পারলে স্বর্ণমুদ্রা মহোদয়, ওটাও মনে রাখবেন।রাজা বললেন, হ্যাঁ হ্যাঁ শুরু কর তাড়াতাড়ি।
বজ্জাত অমনি তার আলখেল্লার পকেট থেকে বের করল লম্বা লম্বা দুটো পালক। তারপর এক লাফে চলে গেল সিংহাসনের সামনে। রাজার দিকে ঝুঁকে পালক দিয়ে রাজার গলায়, বগলে, পেটে দিতে লাগল সুড়সুড়ি। রাজা প্রথমে মুচকি মুচকি হাসলেন, তারপর হাসলেন ফিকফিক করে, তারপরে হাসলেন হো হো করে। হাসতে হাসতে রাজার চোখের পানি নাকের পানি একাকার। রাজার সঙ্গে রাণী হাসলেন, মন্ত্রী হাসলেন।রাজা হাসতে হাসতে শুয়ে পড়লেন, তারপর হঠাৎ লাফিয়ে সিংহাসনে দাঁড়িয়ে গেলেন, হাত-পা ছুঁড়তে লাগলেন। সবাই বজ্জাতকে ধন্য ধন্য বলতে লাগল। রাজা হাসতে হাসতে কোনোমতে বললেন, এই বজ্জাতকে মুদ্রা দাও-টাকা দাও, ঘোড়া দাও-গাড়ি দাও, বাড়ি দাও-ব্রিজ দাও... নইলে আমাকে মেরেই ফেলবে হাসিয়ে...
এরপর থেকে বজ্জাতের কিছু প্রয়োজন হলেই পালক নিয়ে সে রাজদরবারে হাজির হয়ে যেত।
নীতিকথা- সুড়সুড়ি ছাড়া রাজাদের আনন্দ দেয়া যায় না।
বিরস মুখে দরবারে বসে আছেন রাজা। সঙ্গে আছেন রাণী, আরো আছেন মন্ত্রী। রাজাকে হাসাতে এল বদলপুরের বাঘের বাচ্চা। লম্বা শরীরে একটা মুখোশ আর একটা লেজ বেঁধে এসেছে সে। রাজা জিগ্যেস করলেন, কী নাম তোমার?
- বাঘের বাচ্চা।
- কী করবে?
- আপনাকে হাসাবো রাজামশাই।- না হাসাতে পারলে গর্দান যাবে!
বাঘের বাচ্চা শুরু করল নাচতে। তার নাচে দরবার কেঁপে উঠল। আকাশ নেমে এল। গরগর করে মেঘ ডাকল। শেষের দিকে একটু বৃষ্টিও হল- কিন্তু রাজা যেমন ছিলেন তেমনি বাঁকা হয়ে সিংহাসনে বসে রইলেন। একটা পেয়াদা এসে বাঘের বাচ্চাকে ধরে নিয়ে গেল। রাজা হাই তুললেন। রাণী হাই তুললেন। মন্ত্রীও হাই তুললেন।
রাজা বললেন, বাজে নাচ।
রাণী বললেন, বিচ্ছিরি নাচ।মন্ত্রী বললেন, জঘন্য নাচ। দেখা যায় না।
এল আরেকজন। পরনে সাদাসিদা পোশাক। রাজা জিগ্যেস করলেন, কী নাম হে তোমার?
- আজ্ঞে রাজামশাই, কোকিল।
রাজা বললেন, কী বিদঘুটে নাম! কোকিল একটা বেহুদা পাখি- তার নামে নাম রাখতে হবে কেন?
রাণী বললেন, কী যে বাজে নাম। এমন নাম বাপেরকালেও শুনিনি! মন্ত্রী বললেন, খুব বাজে নাম। নাম বদলে দিতে হবে। আজ থেকে তোমার নাম চিংড়ি, বুঝলা?
কোকিল চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকল। রাজা বললেন, তা তুমি কী করবে? নাচবে না কুতবে?
- গান করব রাজামশাই।- তা বেশ। গাও।
কোকিল গান ধরল। সূর্য হাসল গানে। চাঁদমামাও উঁকি দিয়ে দিয়ে হাসল ফিচকি ফিচকি। ফুল হাসল। বাতাস ঘুরে ঘুরে নাচতে লাগল। শুধু রাজা গান শুনতে শুনতে সিংহাসনেই ঘুমিয়ে গেলেন, নাক ডাকাতে লাগলেন। কোকিল হঠাৎ একটা সুর ধরল জোরে- অমনি রাজার ঘুম গেল ভেঙে। কাচা ঘুম ভেঙে রাজা হলেন ব্যাজার। সুরুৎ করে মুখের লালা টেনে বললেন, কে রে? কে আমার ঘুম ভাঙিয়ে দিল অ্যা?
রাণী বললেন, দাদারকালেও এত বেসুরো গান শুনিনি...!
মন্ত্রী বললেন, খুব কুৎসিত সুর! এই কোকিলের বোবা হওয়াই ভালো, এই কে আছিস, ওর জিবটা কেটে দে!পেয়াদা এসে কোকিলকে ধরে নিয়ে গেল।
রাজার মেজাজ খারাপ। এমন সময় ডাক পড়ল আরেকজনের। পেয়াদা ডাকল, সংপুরের বজ্জাত এসে হাজির হও...
আর সঙ্গে সঙ্গে চোঙার মতো টুপি পরে, ঢোলাঢালা রঙচঙে আলখেল্লা পরে এল একজন। বাঁকা নাক, লম্বাটে থুতনি। এসেই মাথা ঝুঁকিয়ে বলল, রাজার জয় হোক, রাজার জয় হোক।
শুনে রাজা কিন্তু খুশি। বললেন, তুমিই বজ্জাত?
বজ্জাত বলল, জ্বি রাজামশাই!
রাজা বললেন, বাহ্ কী খাসা নাম... অসাধারণ, অসাধারণ!!
রাণী বললেন, মিষ্টি একটা নাম!মন্ত্রী বললেন, চমৎকার নাম... এমন নাম সচরাচর শোনা যায় না!
বজ্জাত মাথা নিচু করে মিটিমিটি হাসল। রাজা জিগ্যেস করলেন, তা তুমি কী করবে? নাচন-কুদন, নাকি গান?
বজ্জাত বলল, না না রাজা মশাই ওসব ফালতু জিনিস...
রাজা বললেন, ঠিক বলেছ, ওসব খুবই ফালতু জিনিস... বিশ্রী জিনিস! তো তুমি কী করবে তাহলে?
বজ্জাত বলল, আপনাকে হাসাবো মহাশয়!
মন্ত্রী বললেন, না হাসাতে পারলে কিন্তু গর্দান যাবে মনে রেখ।
বজ্জাত বলল, আর হাসাতে পারলে স্বর্ণমুদ্রা মহোদয়, ওটাও মনে রাখবেন।রাজা বললেন, হ্যাঁ হ্যাঁ শুরু কর তাড়াতাড়ি।
বজ্জাত অমনি তার আলখেল্লার পকেট থেকে বের করল লম্বা লম্বা দুটো পালক। তারপর এক লাফে চলে গেল সিংহাসনের সামনে। রাজার দিকে ঝুঁকে পালক দিয়ে রাজার গলায়, বগলে, পেটে দিতে লাগল সুড়সুড়ি। রাজা প্রথমে মুচকি মুচকি হাসলেন, তারপর হাসলেন ফিকফিক করে, তারপরে হাসলেন হো হো করে। হাসতে হাসতে রাজার চোখের পানি নাকের পানি একাকার। রাজার সঙ্গে রাণী হাসলেন, মন্ত্রী হাসলেন।রাজা হাসতে হাসতে শুয়ে পড়লেন, তারপর হঠাৎ লাফিয়ে সিংহাসনে দাঁড়িয়ে গেলেন, হাত-পা ছুঁড়তে লাগলেন। সবাই বজ্জাতকে ধন্য ধন্য বলতে লাগল। রাজা হাসতে হাসতে কোনোমতে বললেন, এই বজ্জাতকে মুদ্রা দাও-টাকা দাও, ঘোড়া দাও-গাড়ি দাও, বাড়ি দাও-ব্রিজ দাও... নইলে আমাকে মেরেই ফেলবে হাসিয়ে...
এরপর থেকে বজ্জাতের কিছু প্রয়োজন হলেই পালক নিয়ে সে রাজদরবারে হাজির হয়ে যেত।
নীতিকথা- সুড়সুড়ি ছাড়া রাজাদের আনন্দ দেয়া যায় না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন